- ৫ ফেব্রুয়ারি রাত। রাজধানীর রাজারবাগে বাগানবিলাসে ঢাকা দোতলা বাড়িটার উপরের তলায় আলো জ্বলছে। খাবার টেবিলে আলোচনা চলছে রাজাকার কাদের কসাইয়ের রায় নিয়ে। মৃন্ময়ী , কিশোর আর মৃন্ময়ীর মা চন্দ্রকথা কে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার। মৃন্ময়ীর মা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন তাঁর একমাত্র ছেলে সাগরকে। স্বামী একাত্তরের পর বেঁচে ছিলেন আরও এগারো বছর , কিন্তু কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের অত্যাচারের স্মৃতি কখনও মুছে ফেলতে পারেন নি। মৃন্ময়ীর জন্ম একাত্তরের অনেক পরে - ১৯৮২ সালে। তার জন্মের কিছুদিন পরই মারা যান বাবা। মেয়ে মৃন্ময়ীকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকেন মা চন্দ্রকথা। এই মেয়েটাই যে পৃথিবীতে তাঁর একমাত্র অবলম্বন। মৃন্ময়ীকে বাঁচানোর জন্য গার্মেন্টস এ চাকরি নেন মা , অকথ্য পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে বড় করে তোলেন মেয়েকে। মেয়ের দিকে তাকালে তিনি শুধু নিজের মেয়েকেই দেখতে পান না - দেখতে পান একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে। দেশ মায়ের জন্য পরিবারের মায়া ত্যাগ করে যে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল , নির্ভুল নিশানায় আঘাত হেনে যে পরাজিত করত পাকিস্তানি হায়েনাদের - সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার ছায়া দেখতে পান চন্দ্রকথা মৃন্ময়ীর মাঝে। মৃন্ময়ীকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা - মা ডাক শেখানোর আগে শিখিয়েছেন জয় বাংলা বলতে। মৃন্ময়ী যখন বাসায় সাজিয়ে রাখা ফ্যামিলি ফটো থেকে বাবার কিংবা ভাইয়ের ছবি বের করে জানতে চেয়েছে এরা কে , অশ্রুজলে ঝাপসা চোখে মেয়েকে মা জানিয়েছেন এদের পরিচয়। ছোট্ট শিশু মৃন্ময়ীর বুকে বাসা বেঁধেছে এক নিদারুন প্রতিশোধস্পৃহা। রাজাকারদের প্রতি এক তীব্র ঘৃণা।
জীবনের প্রতি পাতায় পাতায় ছড়িয়ে থাকে যুদ্ধের ইতিহাস , সাদা - কালো পাতা রং তুলির ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে জীবন্ত। কখনও সে রং বিপ্লবের ,আবার কখনও বা বন্ধুত্বের, কখনও প্রেমের , কখনও বা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের। প্রতিটা ইট -কাঠ কিংবা পাথরের মাঝে লুকিয়ে থাকে এক একটি জীবন যুদ্ধের ইতিহাস, নরম সবুজ পলিমাটির বুকে চিরন্তন পথচলায় মাটির বুকে পায়ের ছাপ থেকে যায় অন্ধকারে খাঁ খাঁ সীমান্তে বুকে হেঁটে শত্রুর আস্তানার দিকে ছুটে... যাওয়া মুক্তিসেনার। বন্ধুর হাতে তারার মত জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার যে শহীদ বন্ধুর রক্তের দামেই লেখা। কিংবা কোন এক নিভৃত পল্লীতে ছোট্ট কুঁড়েতে বসে স্বামী- হারা , সন্তানহারা মা গোনেন অপেক্ষার প্রহর। মায়ের একজন সন্তানের মৃতদেহের উপরে তত দিনে জমা হয়ে গেছে আরও শত শত সন্তানের মৃতদেহ। স্বাধীন বাংলাদেশ হয়েছে , খুনির ফাঁসি হয়েছে - পার হয়ে গেছে অনেকটা সময়।
বিয়াল্লিশ দিন , বিয়াল্লিশ মাস , বিয়াল্লিশ বছর চলে যায় , মায়ের অপেক্ষার প্রহর যে আর শেষ হয়না। "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়" বলে যে সন্তান মুক্তির সংগ্রামের সন্ধানে ঘর ছেড়েছিল - নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হেনে মুক্ত করেছিল বাংলার মাটিকে, নিস্তব্ধ রাতের নীরবতা ভেদ করে শত্রুর বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়ে গেছে তার বুক। মা , মা করে ষোল বছর বয়সের সেই কিশোর টি আর ছুটে আসবে না দুঃখিনী মায়ের কোলে , যেমনভাবে আর কখনও মায়ের কোলে ফিরে আসবে না ক্র্যাক প্লাটুনের শহীদ দুর্ধর্ষ গেরিলারা। "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়" -হ্যা বাংলায় বারবার ফিরে আসেন বটে শহীদ রুমী - বদি -আজাদ - আলতাফ মাহমুদ , কখনও পুলিশের উদ্যত অস্ত্রের মুখে জয় বাংলা স্লোগানে রাজপথ কাঁপানো তরুণী হয়ে , কখনও রাতের অন্ধকার ভেদ করে রাজাকারের আস্তানায় হানা দিয়ে "রাজাকার" তিলক পরিয়ে আসা অকুতোভয় তরুণ হয়ে।
বিয়াল্লিশ দিন , বিয়াল্লিশ মাস , বিয়াল্লিশ বছর চলে যায় , মায়ের অপেক্ষার প্রহর যে আর শেষ হয়না। "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়" বলে যে সন্তান মুক্তির সংগ্রামের সন্ধানে ঘর ছেড়েছিল - নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হেনে মুক্ত করেছিল বাংলার মাটিকে, নিস্তব্ধ রাতের নীরবতা ভেদ করে শত্রুর বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়ে গেছে তার বুক। মা , মা করে ষোল বছর বয়সের সেই কিশোর টি আর ছুটে আসবে না দুঃখিনী মায়ের কোলে , যেমনভাবে আর কখনও মায়ের কোলে ফিরে আসবে না ক্র্যাক প্লাটুনের শহীদ দুর্ধর্ষ গেরিলারা। "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়" -হ্যা বাংলায় বারবার ফিরে আসেন বটে শহীদ রুমী - বদি -আজাদ - আলতাফ মাহমুদ , কখনও পুলিশের উদ্যত অস্ত্রের মুখে জয় বাংলা স্লোগানে রাজপথ কাঁপানো তরুণী হয়ে , কখনও রাতের অন্ধকার ভেদ করে রাজাকারের আস্তানায় হানা দিয়ে "রাজাকার" তিলক পরিয়ে আসা অকুতোভয় তরুণ হয়ে।