সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩

সবুজের বুকে লাল , সে তো উড়বেই চিরকাল...।

  • ৫ ফেব্রুয়ারি রাত। রাজধানীর রাজারবাগে বাগানবিলাসে ঢাকা দোতলা বাড়িটার উপরের তলায় আলো জ্বলছে। খাবার টেবিলে আলোচনা চলছে রাজাকার কাদের কসাইয়ের রায় নিয়ে। মৃন্ময়ী , কিশোর আর মৃন্ময়ীর মা চন্দ্রকথা কে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার। মৃন্ময়ীর মা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন তাঁর একমাত্র ছেলে সাগরকে। স্বামী একাত্তরের পর বেঁচে ছিলেন আরও এগারো বছর , কিন্তু কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের অত্যাচারের স্মৃতি কখনও মুছে ফেলতে পারেন নি। মৃন্ময়ীর জন্ম একাত্তরের অনেক পরে - ১৯৮২ সালে। তার জন্মের কিছুদিন পরই মারা যান বাবা। মেয়ে মৃন্ময়ীকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকেন মা চন্দ্রকথা। এই মেয়েটাই যে পৃথিবীতে তাঁর একমাত্র অবলম্বন। মৃন্ময়ীকে বাঁচানোর জন্য গার্মেন্টস এ চাকরি নেন মা , অকথ্য পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে বড় করে তোলেন মেয়েকে। মেয়ের দিকে তাকালে তিনি শুধু নিজের মেয়েকেই দেখতে পান না - দেখতে পান একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে। দেশ মায়ের জন্য পরিবারের মায়া ত্যাগ করে যে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল , নির্ভুল নিশানায় আঘাত হেনে যে পরাজিত করত পাকিস্তানি হায়েনাদের - সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার ছায়া দেখতে পান চন্দ্রকথা মৃন্ময়ীর মাঝে। মৃন্ময়ীকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা - মা ডাক শেখানোর আগে শিখিয়েছেন জয় বাংলা বলতে। মৃন্ময়ী যখন বাসায় সাজিয়ে রাখা ফ্যামিলি ফটো থেকে বাবার কিংবা ভাইয়ের ছবি বের করে জানতে চেয়েছে এরা কে , অশ্রুজলে ঝাপসা চোখে মেয়েকে মা জানিয়েছেন এদের পরিচয়। ছোট্ট শিশু মৃন্ময়ীর বুকে বাসা বেঁধেছে এক নিদারুন প্রতিশোধস্পৃহা। রাজাকারদের প্রতি এক তীব্র ঘৃণা।

শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলার পলিমাটির বুকে পায়ের ছাপ পরে গেছে প্রজন্ম চত্বরের। এ ইতিহাস মোছে কার সাধ্য ?

মহাকালের কাঁটা ঘুরে চলে তার নিজস্ব গতিতে , দিনের পর দিন -মাসের পর মাস -বছরের পর বছর - শতাব্দীর পর শতাব্দী হয়ে। এই গতিশীল জীবন প্রবাহের মাঝেই লেখা হয় অনেক ইতিহাস , সময়ের ডায়রিতে কিছু বিশেষ দিন অক্ষয় হয়ে থাকে চিরকাল। একটি জাতির পথচলায় নানারকম ঘটনার মাঝে অক্ষয় হয়ে থাকার মত কিছু ইতিহাস থাকে , যা ঠাই পায় কালের সংরক্ষণাগারে। হয়ত বা অনেক বছর, অনেক শতাব্দী পরে এই ঘুমিয়ে থাকা ইতিহাস কথা বলে উঠবে আবার , জাত...িকে জানিয়ে দেবে তার নিজস্ব আত্মপরিচয়ের কথা। বায়ান্ন যেভাবে জাগ্রত হয়েছিল উনসত্তরে , উনসত্তর যেভাবে জাগ্রত হয়েছিল একাত্তরে এসে, একাত্তরের ইতিহাস যেভাবে জাগ্রত হয়েছিল ২০১৩ তে এসে ... 

ফেব্রুয়ারি মাস আরও অনেক আসবে , কিন্তু ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারি আর কখনও আসবে না। সেই উত্তাল মিছিল , রাত -দিন শাহবাগে অবস্থান, লক্ষ কণ্ঠে এক ই দাবি -"রাজাকারের ফাসি চাই" , এই আগুনঝরা দিনগুলোকে হয়ত প্রত্যেক ফেব্রুয়ারিতেই আমরা স্মরণ করব - কিন্তু দিনগুলোকে আর ফিরে পাব না। ডিসেম্বর বার বার আসবে , কিন্তু ২০১৩ সালের ১২ ই ডিসেম্বর বারবার আসবে না। প্রথম কোন রাজাকারের ফাসি হয়েছে , এবং সেই ফাসি আদায় করতে দশ মাস ধরে আন্দোলন করতে হয়েছে প্রজন্ম চত্বরে - এই গৌরব বারবার আসবে না। দুই শুন্য এক তিন - সালটা আসলেই একটা ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের পর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়ের ইতিহাস... 

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ , চুনি উঠলো রাঙ্গা হয়ে

  1. জীবনের প্রতি পাতায় পাতায় ছড়িয়ে থাকে যুদ্ধের ইতিহাস , সাদা - কালো পাতা রং তুলির ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে জীবন্ত। কখনও সে রং বিপ্লবের ,আবার কখনও বা বন্ধুত্বের, কখনও প্রেমের , কখনও বা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের। প্রতিটা ইট -কাঠ কিংবা পাথরের মাঝে লুকিয়ে থাকে এক একটি জীবন যুদ্ধের ইতিহাস, নরম সবুজ পলিমাটির বুকে চিরন্তন পথচলায় মাটির বুকে পায়ের ছাপ থেকে যায় অন্ধকারে খাঁ খাঁ সীমান্তে বুকে হেঁটে শত্রুর আস্তানার দিকে ছুটে... যাওয়া মুক্তিসেনার। বন্ধুর হাতে তারার মত জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার যে শহীদ বন্ধুর রক্তের দামেই লেখা। কিংবা কোন এক নিভৃত পল্লীতে ছোট্ট কুঁড়েতে বসে স্বামী- হারা , সন্তানহারা মা গোনেন অপেক্ষার প্রহর। মায়ের একজন সন্তানের মৃতদেহের উপরে তত দিনে জমা হয়ে গেছে আরও শত শত সন্তানের মৃতদেহ। স্বাধীন বাংলাদেশ হয়েছে , খুনির ফাঁসি হয়েছে - পার হয়ে গেছে অনেকটা সময়।

    বিয়াল্লিশ দিন , বিয়াল্লিশ মাস , বিয়াল্লিশ বছর চলে যায় , মায়ের অপেক্ষার প্রহর যে আর শেষ হয়না। "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়" বলে যে সন্তান মুক্তির সংগ্রামের সন্ধানে ঘর ছেড়েছিল - নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হেনে মুক্ত করেছিল বাংলার মাটিকে, নিস্তব্ধ রাতের নীরবতা ভেদ করে শত্রুর বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়ে গেছে তার বুক। মা , মা করে ষোল বছর বয়সের সেই কিশোর টি আর ছুটে আসবে না দুঃখিনী মায়ের কোলে , যেমনভাবে আর কখনও মায়ের কোলে ফিরে আসবে না ক্র্যাক প্লাটুনের শহীদ দুর্ধর্ষ গেরিলারা। "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়" -হ্যা বাংলায় বারবার ফিরে আসেন বটে শহীদ রুমী - বদি -আজাদ - আলতাফ মাহমুদ , কখনও পুলিশের উদ্যত অস্ত্রের মুখে জয় বাংলা স্লোগানে রাজপথ কাঁপানো তরুণী হয়ে , কখনও রাতের অন্ধকার ভেদ করে রাজাকারের আস্তানায় হানা দিয়ে "রাজাকার" তিলক পরিয়ে আসা অকুতোভয় তরুণ হয়ে। 

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

Merry Christmas and Happy New Year to all...

  1. আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশ নরম পলিমাটিতে হাজারো মানুষের দৃপ্ত পদচারণা। ধর্ম - বর্ণ -জাতি বিভেদ সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের বাঙালি পরিচয়। এদেশে চিরকাল হিন্দু - বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান - মুসলমান সব ধর্মের মানুষ একসাথে কেঁদেছে , হেসেছে , মেতেছে উৎসবের আনন্দে। আমি জানি ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী চায়না বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকুক - সেজন্য তারা ধর্মকে পুঁজি করে প্রতি মুহূর্তে ছড়াতে চায় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। কিন্ত...ু তারা কখনই সফল হতে পারবে না কারণ , এই দেশটার নাম বাংলাদেশ। হিন্দু - বৌদ্ধ - মুসলিম - খ্রিষ্টান সবাই এই বাংলা মায়ের সন্তান। বাঙালি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে , বাঙালি দল -মত - পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে শাহবাগ আন্দোলন করে রাজাকারের ফাসি নিশ্চিত করেছে। বাংলার হিন্দু , বাংলার বৌদ্ধ , বাংলার খ্রিষ্টান - আমরা সবাই বাঙালি।

    আজ লড়াই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সাথে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির। প্রজন্ম চত্বর বাঙ্গালিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কে আমাদের বন্ধু আর কে আমাদের শত্রু। তাই লড়াই সে শত্রুদের বিরুদ্ধে। আজকে যুদ্ধটা সরাসরি পাকিস্তানের সাথে। খুনি পাকিস্তানিদের তো মাতৃভূমি থেকে একাত্তরেই বিতাড়িত করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আজ ২০১৩ তে এসে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর নিশ্চিত করেছে রাজাকারের ফাসি। ফাসি হয়ে গেছে কিছুদিন আগে বারই ডিসেম্বরে, আনন্দ রয়ে গেছে এখনও। আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারি একাত্তরের হায়েনাদের আমরা ক্ষমা করিনি , কখনও করব না। রাজাকারের ফাসি হয়েছে , দাবি জানানো হয়েছে পাকিস্তানের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার । দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন চলছে পাকিস্তানি পন্য বর্জনের জন্য। এ প্রজন্ম যে হারতে জানে না , মাতৃভূমির প্রশ্নে কোনরকম আপোষ করতে জানে না।

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

প্রজন্মকে পিছনে ঠেলে দিতে চায় কে বা কারা ?

প্রজন্ম চত্বর একটি মহাবিস্ফোরণের নাম যে বিস্ফোরণ ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সবরকম অহংকারকে। প্রজন্ম চত্বর শুধু একটি জায়গার নাম নয় , এটি একটি চেতনার মহাসমুদ্রের নাম যা ঘর থেকে বাইরে বের করে এনে প্রাণের দাবি জানাতে উৎসাহী করেছে বিয়াল্লিশ বছর ধরে অভ্যস্ত নীরবতায় আচ্ছন্ন থাকা জাতিকে। প্রজন্ম চত্বর সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়ার নাম যে বাঙালি এ...খনও জেগে আছে , চিরকাল জেগে থাকবে। প্রজন্ম চত্বর লাল - সবুজে আচ্ছন্ন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের অক্ষয় চেতনার নাম , প্রজন্ম চত্বর মা জাহানারা ইমামের স্বপ্ন পূরণের নাম , প্রজন্ম চত্বর লাল -সবুজ শাড়ি পরা তরুণীর কণ্ঠে দুর্জয় স্লোগানের নাম , প্রজন্ম চত্বর দেশদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে জেগে থাকার নাম , প্রজন্ম চত্বর খুনি রাজাকারের গলায় ফাঁসির দড়ির নাম।

প্রজন্ম চত্বরে বাঙ্গালির নবজাগরণের কারণেই আদায় হয়েছে রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসি। পাঁচ লক্ষ মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ - প্রজন্ম চত্বরের জন্যই। প্রজন্ম চত্বর ঘুম ভাঙ্গা জাতির কণ্ঠে তুলে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অমর স্লোগান - জয় বাংলা। রাজাকাররা আর তাদের দোসর জামাত - শিবির প্রজন্ম চত্বরের বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক , তাদের নির্মম আক্রমনে শহীদ হয়েছেন রাজীব - দীপ - জগতজ্যোতি - জাফর মুন্সিরা , স্লোগান দিতে দিতে মৃত্যুবরণ করেছেন শান্ত ,প্রজন্ম চত্বরের কতজন যোদ্ধা যে আহত হয়েছেন আন্দোলনের পথযাত্রায় তার নির্দিষ্ট সংখ্যা করাও সম্ভব না। সবশেষে কিছুদিন আগেই পুলিশ নির্লজ্জ আক্রমন চালিয়েছে এই যোদ্ধাদের উপর। কিন্তু এ প্রজন্ম যে জীবন বাজি রেখেই লড়াই এ নেমেছে , জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার হলেও বাঙালি যে মাথা নোয়াবার নয়।

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩

প্রজন্মের আহ্বান , নিপাত যাক পাকিস্তান

ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে এসেছে গণজাগরণ মঞ্চ। আন্দোলনের পথযাত্রায় শহীদ হয়েছেন যোদ্ধারা, সহযোদ্ধার মৃত্যুশোককে শক্তিতে পরিণত করে পরমুহূর্তেই রাজপথ কাঁপিয়েছেন আবার প্রজন্মযোদ্ধারা। স্বাধীনতাবিরোধীদের বার বার আক্রমণ , স্বার্থান্বেষীদের অযৌক্তিক বিরোধিতা - কোন কিছুই শাহবাগের এই মুক্তির পথযাত্রাকে থামাতে পারেনি। আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারি আমরা মা জাহানারা ইমামের স্বপ্ন সফল করতে পেরেছি , স্বাধীন বাংলাদেশে খুনি রাজাকারের ফাসি কার্যকর হয়েছে । স্বপ্নের সিঁড়ি নির্মাণের যে প্রত্যয় নিয়ে প্রজন্ম চত্বরের যাত্রা শুরু হয়েছিল সে সিঁড়ি নির্মাণের শেষ ধাপটি সম্পন্ন  হয়েছে রাজাকারের ফাসির মধ্যে দিয়ে - সময় এই সিঁড়িটিকে স্থায়ী করে ধরে রাখার , সময় সেই সিঁড়ি বেয়ে নতুন আগামীর পথযাত্রার।

সেই নতুন পথযাত্রার পথেই বাধা হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল একাত্তরের পরাজিত হায়েনার দল পাকিস্তান। কিন্তু সে প্রচেষ্টা সফল হতে দেয়নি বাংলার প্রজন্ম। পুলিশের নির্লজ্জ আক্রমন সত্ত্বেও তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন, জয় বাংলা স্লোগানে কাঁপিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানিদের ভিত। এই প্রজন্মযোদ্ধাদেরকে হারাতে পারে এমন আগ্নেয়াস্ত্র এখনো আবিষ্কার হয়নি। শত শত আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়েও স্লোগানকন্যা শাম্মি আপু জয় বাংলা স্লোগানে সেদিন কাঁপিয়ে তুলেছেন গুলশান চত্বরকে। এক একজন সহযোদ্ধার উপরে পুলিশ কিরকম নির্মমভাবে আক্রমন করেছে , তারপরেও প্রজন্ম চত্বর জেগে আছে , জেগে থাকবে। শাহবাগ জেগে থাকবে প্রতিবাদের অগ্নিশিখা হয়ে , বাংলাদেশের হৃদয়স্পন্দন হয়ে।

শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩

শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না ...

স্বাধীন বাংলাদেশ , স্বাধীন লাল -সবুজ পতাকা আমাদের অগ্রজেরা রক্তের বিনিময়ে অর্জন করে দিয়ে গেছেন আমাদের। হাতের মুঠোয় মৃত্যু , চোখে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ছিলেন। নিশ্চিত জীবনের আশ্বাস , মা - বোনের অশ্রুসজল চোখ সবকিছুকে দূরে সরিয়ে দেশ মায়ের ডাকে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, আমাদের জন্য এনে দিয়েছেন সোনালি স্বদেশ - যার প্রতি কনা মাটিতে মিশে... আছে শহীদের রক্ত , বীরাঙ্গনা মায়ের অশ্রু। স্বর্গের চেয়ে প্রিয় এ জন্মভূমির স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব আজ আমাদের , ২০১৩ সালের নবপ্রজন্মের। অন্ধকারে খা খা সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক জেগে আছে আজও। এ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি , রাজাকাররাও এ প্রজন্মের যুদ্ধ দেখেনি - দেখিয়ে দেয়ার এখনি সময়।

একাত্তরের রনাঙ্গনে যুদ্ধাহত একজন মুক্তিযোদ্ধা - শত্রুর বুলেটের আঘাতে মারা যাচ্ছেন তিনি। মৃত্যুর আগে সহযোদ্ধাদের কাছে তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল , মুক্ত ভূমিতে যাতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। সহযোদ্ধারা এই বীর শহীদের লাশ কাঁধে নিয়ে খুঁজতে লাগলেন মুক্ত ভূমি। একজন প্রশ্ন করলেন , এখানে মুক্ত ভূমি কোথায় পাওয়া যাবে , মুক্তিযোদ্ধারা উত্তর দিলেন , মুক্ত ভূমি না থাকলে এই শহীদকে কবর দেয়ার জন্য আমাদের এক খণ্ড মাটি হলেও মুক্ত করতে হবে। এসব ইতিহাস শুনলে নিজের অজান্তে কাঁদি আর বলি , এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করতেই হবে। মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রান হল বলিদান , লিখা আছে অশ্রুজলে...। এই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জেগে আছে , জেগে থাকবে যুগ যুগ ধরে।

'হাত দিয়ে বলো সূর্যের আলোকে রুধিতে পারে কি কেউ / আমাদের মেরে ঠেকানো যাবে না গনজোয়ারেরে ঢেউ

অদৃশ্য বাধা ভাঙ্গার কোন মন্ত্র এখনও আবিস্কার হয়নি কেন ?আমি সত্যি আর সহ্য করতে পারছি না ... এসব কি হচ্ছে কিছু মানতে পারছি না। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা , সহিংসতা যে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা করেনা এটা সারা বাংলাদেশ ভাল করেই জানে। সেই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর এইরকম আক্রমন এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। পরিবারের শৃঙ্খলে হাত -পা বাধা আমার , এক্ষনি ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে আমার ভাইদের আড়াল করে দাড়াই ... নিজের উপ...র লজ্জা হচ্ছে চরম -কেন মেয়ে হয়ে জন্মালাম ? কেন পারছি না ভাইদের মত জয় বাংলা চিৎকারে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করতে ছুটে যেতে ? কেন পারছি না বাংলা মায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য পুলিশের আঘাত বুক পেতে নিতে।

বিবেকের শাস্তি কখনও আমাকে ক্ষমা করবে না আজকে আমার ভাইদের উপর পুলিশ যখন লাঠিচার্জ করছে তখন আমি ঘরে বসে আছি এ অপরাধে । কিন্তু বিবেক কি সেই পুলিশকে ক্ষমা করবে যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আঘাত করল , গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর আঘাত করল। কাকে দোষ দিব ? স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আজকে ইমরান ভাই , বাধন ভাই আই সি ইউ তে - শাম্মি আপু ,শিপ্রা আপু অনন্য আজাদ সহ আরও সহযোদ্ধারা গ্রেফতার - অর্ণব ভাই , আরিফ নূর ভাই আরও অনেকে আহত। সান্ত্বনার কোন ভাষা নাই , শুধু এই প্রশাসনের প্রতি ধিক্কার জানানোর আর ঘৃণা জানানোর ভাষা আছে।

গণজাগরণ মঞ্চ - এক চির উন্নত মমশির

গণজাগরণ মঞ্চের প্রত্যেকটা যোদ্ধা জীবন বাজি রেখে প্রতিবাদ জানাতে জানে, বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়কে তুলে ধরে ন্যায্য দাবি জানাতে জানে তার প্রমাণ আজকের পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচী। রাজাকারের ফাসির জন্য রাজীব, দীপ, জগতজ্যোতি , জাফর মুন্সি , শ...ান্ত ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিলেন - আজকে পাকিস্তানী পার্লামেন্টে কাদের কসাইয়ের ফাসি নিয়ে অযাচিত নিন্দা প্রস্তাব পাশের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী , বাপ্পাদা , বিন্দু ,অর্ণব , অনু , রিয়াজ , জিসান , আকাশ ভাইরা আহত হলেন।কিন্তু এই রক্ত যে বাঙ্গালির রক্ত - এই প্রজন্ম যে হার মানতে জানে না আর সেজন্যই সব বাধা অতিক্রম করে মিছিল এগিয়ে গেল পাকিস্তান দূতাবাসের দিকে। ঘেরাও হল পাকিস্তান দূতাবাস। পরবর্তীতে পুলিশ এসে ক্ষমা চাইল তাদের ভূমিকার জন্য ।

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ।

আমাদের প্রিয় বাংলা মা হতে পারে অনেক ছোট একটা দেশ , হতে পারে অনেক গরীব একটা দেশ - কিন্তু ছোট্ট সবুজ এই দেশটা অপরিসীম প্রাণশক্তিতে ভরা। আর তার প্রমাণ ই আমরা দিলাম গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আর ন্যাশনাল প্যারেড গ্রাউন্ডে একই দিনে দুই দুইটা বি...শ্ব রেকর্ড করে। ফেব্রুয়ারিতে রাজাকারের ফাসির দাবিতে যেভাবে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ছুটে এসেছিল বাংলার মানুষ, গতকাল ঠিক একইভাবে বাংলা মায়ের পরিচয় সারা বিশ্বে তুলে ধরার প্রচেষ্টার অংশ হতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছিল লাখো জনতার ঢল। গণজাগরণ মঞ্চ , সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম , বিজয় ২০১৩ মঞ্চ , মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ ,বিজয় ৪:৩১ মঞ্চের ডাকে বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিলেন বাঙ্গালিরা , বাংলাদেশের পরিচয় বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ছিল বাঙালি পরিচয় , সব স্লোগানের উপরে ছিল জয় বাংলা স্লোগান।

একটি দেশের একজন মানুষও যখন সারা বিশ্বে নাম লেখানোর মত বড় কোন অর্জন করে , তখন সেই দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের একটা নৈতিক দায়িত্ব থাকে সেই মানুষটাকে সমর্থন জানানো। একটা ছোট্ট দেশ বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ যখন নিজেদের দেশের পরিচয় সারা বিশ্বে তুলে ধরতে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় , তখন আমার মনে হয় বাংলাদেশের যে কোন মানুষের উচিত এই পাঁচ লক্ষ মানুষের সঙ্গে থাকা। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি গতকাল বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে ৫ লাখ মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে যে বিশ্ব রেকর্ড আমরা করেছি , সেটাকে সাপোর্ট দেয়ার বদলে এই বাংলাদেশের ই কিছু মানুষ সেটার বিরোধিতাই করে যাচ্ছে -সত্যি কষ্ট লাগে।

বিজয় -২০১৩ ; বিজয়ের সূর্যোদয় , বাংলাদেশ বিশ্বময়

ইতিহাস আমাদের আত্মপরিচয় জানায় , আমাদের গৌরবময় ইতিহাস আমাদের বলতে শেখায় - "আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি।" বাংলাদেশের ইতিহাস এক সাগর রক্তরাঙ্গা ইতিহাস। সেই রক্তের সমুদ্রে স্নান করে জন্ম নিয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে আমাদের জন্য এনে দিয়েছেন সোনালি স্বাধীন দেশ। সেই আত্মত্যাগের ফলেই আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। স্বাধীনতা...র আনন্দে আজ আমরা গাইতে পারি -জয় বাংলা বাংলার জয় , হবে হবে হবে - হবে নিশ্চয়। কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে নতুন সূর্য ওঠার এইত সময়।

একাত্তরে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কেটে গেছে বিয়াল্লিশটি বছর। বর্তমান প্রজন্মের জন্য , আমাদের জন্য জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয় দিবস হল ২০১৩ সালের আজকের দিনটি ।২০১৩ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর -স্মৃতির পাতায় অক্ষয় হয়ে থাকবে কারন এবারের বিজয় দিবসের আগে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর অর্জন করেছে মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রেষ্ঠ বিজয় - রাজাকার কসাই কাদেরের ফাসি। আর এবারের বিজয় দিবসেই তিন লাখ বাঙালি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেই ঐতিহাসিক বিজয়ের ক্ষন বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে সমবেত কণ্ঠে গেয়েছি আমাদের প্রানের জাতীয় সঙ্গীত , গড়েছি নতুন বিশ্ব রেকর্ড - অতিক্রম করেছি ভারতকে।

সকালে হেঁটে যাওয়ার কারনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছাতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। যাওয়ার পর পরই কোথা থেকে একখানা আইডি কার্ড ম্যানেজ হয়ে গেল , Fariha তাহার গেঞ্জি আমাকে দিয়ে দিলেন আর এরপর আমি কাজ খুঁজতে থাকলাম কি করা যায়। ছেলে সহযোদ্ধাদের উপর মাঝে মাঝে আসলেই রাগ হয়। এনারা এক একজন সব কাজ করে করে জ্বর বানায় ফেলছেন , আর মেয়ে হওয়ার কারনে আমি ফ্যামিলির বাধা পার হয়ে আসতে আসতেই শেষ। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের যে সমুদ্র ছিল তা সত্যি প্রমাণ করে বাঙালি জেগে আছে। বাঙালি জেগে থাকবে আজীবন। জেগে থাকবে পাঁচ লক্ষ মানুষের শপথ - "যারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করবে , আমরা তাদের বর্জন করব।"

আমরা ভলান্টিয়াররা দাঁড়িয়ে আছি , বাঁশের বেড়া ভেঙ্গে মানুষ ঢুকে যাচ্ছে ভিতরে। এত মানুষ , বিভিন্ন প্রবেশপথে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু বাঙালি। ছোট শিশু থেকে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধা মা সবার কণ্ঠে মুহুর্মুহু স্লোগান - জয় বাংলা। সামনে মঞ্চে কখনও চলছে কনসার্ট ফর ফ্রিডম , কখনও চলছে জাগরনের গান , কখনও চলছে স্লোগান। এইদিকে আমরা ভলান্টিয়াররা হিমশিম খাচ্ছি এই জনতার স্রোতকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে। বিকাল ৪ টা ১৫ মিনিটে দেখানো হল পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের উপর প্রামান্য অভিনয়। সেই দলিল সাক্ষর হয়ার সাথে সাথে সারা উদ্যান যেভাবে জয় বাংলা বলে চিৎকার করে উঠেছিল তাতে স্বাধীনতাবিরোধী যে কোন অপশক্তি কেঁপে উঠতে বাধ্য।

এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষন। বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিট। যে যেখানে আছি সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। গাইলাম আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত , অদ্ভুত মায়াভরা সেই গান -"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।" এরপর শপথ গ্রহণ - শপথ পাঠ করালেন মহান মুক্তিযুদ্ধের উপ- অধিনায়ক বীর উত্তম এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খোন্দকার। সত্যি এই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া আর শপথ গ্রহণের সময় চোখের কোণে নিজের অজান্তে অশ্রু জমা হচ্ছিল আর মনে হচ্ছিল , আমরা পেরেছি। আমরা আর কখনও হারব না। বাংলাদেশকে আর কেউ কখনও হারাতে পারবে না। বাংলাদেশ রক্তের দামে স্বাধীন হয়েছে , বাংলাদেশ অশ্রুর দামে স্বাধীন হয়েছে , বাংলাদেশ আন্দোলনের দামে রাজাকার কসাইমুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ জেগে আছে।

শপথ গ্রহনের পর পতাকা হস্তান্তর। একাত্তরের দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম শফিউল্লাহ এবং বীর উত্তম এ কে খোন্দকার পতাকা হস্তান্তর করলেন এই প্রজন্মের দুইজন বীরযোদ্ধা ইমরান ভাইয়া এবং বাধন ভাইয়ার কাছে। প্রতীকী অর্থে তাঁরা রক্তের দামে কেনা এই পতাকা হস্তান্তর করলেন ২০১৩ এর প্রজন্মের কাছেই। এই পতাকার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য আমাদের জেগে থাকতে হবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য প্রতি মুহূর্তে। এবারের বিজয় দিবস রাজাকারের ফাসির আনন্দ নিয়ে প্রথম বিজয় দিবস। এবারের বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিজয় দিবস। কারন সেই পরাজিত হায়েনাদের উপর প্রতিশোধ আমরা নিতে পেরেছি। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা মায়ের অশ্রুর বদলা আমরা নিতে পেরেছি। সময় এখন নতুন আগামীর পথযাত্রার।

সব দেশের সেরা দেশ - বাংলাদেশ , বাংলাদেশ।
সব গানের সেরা গান -স্লোগান , স্লোগান।
জামাত শিবিরের রাজনীতি , আইন করে বন্ধ কর।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা , হারিয়ে যেতে দেব না।
একাত্তরের হাতিয়ার , গর্জে উঠুক আরেকবার।
আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালবাসি।
জয় ... বাংলা...।

বিজয় আজ প্রজন্ম চত্বরের , বিজয় আজ শহীদজননীর , বিজয় আজ বাঙ্গালির...।

২১ফেব্রুয়ারি , ১৯৫২  - স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়নি তখনও। পাকিস্তানিরা কেড়ে নিতে চেয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি বাঙ্গালির মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার , মা বলে ডাকার অধিকার। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠলো বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের আমতলায় সমবেত হল তারা। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারিতে পথে নেমে আসলো বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানেরা। মায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য , মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রাজপথে নামলো দামাল সন্তানেরা। এক একটা বাংলা অক্ষর যে এক একজন বাঙ্গালির জীবন। আন্দোলন ছড়িয়ে পরল দেশের প্রতি প্রান্তে। রাজপথে নামলো ছাত্র -জনতার মিছিল। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগানে মুখরিত বাংলাদেশ। পাকিস্তানি পুলিশ গুলি চালাল মিছিলের উপর। বাংলা মায়ের বুকে শেষ আশ্রয় নিলেন শহীদ রফিক -শফিক-বরকত -জব্বার। রক্তে প্লাবিত হল বাংলার মাটি। একসময় আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাঙালি পেল মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। আজ আমরা মাকে যে মা বলে ডাকি , সে অধিকারটাও রক্তের দামে আদায় করা।
 
৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৩ - যুদ্ধাপরাধীদের ফাসির দাবি জানিয়েছিলেন আম্মা জাহানারা ইমাম ১৯৯২ সালেই। গণআদালত গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাসির রায়ও দিয়েছিলেন। এজন্য তৎকালীন স্বাধীনতাবিরোধী সরকারের হাতে শহীদজননীকে সহ্য করতে হয়েছে অনেক নির্যাতন , পেতে হয়েছে দেশদ্রোহীর অপবাদ। অনেক বছর পরে হলেও যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শুরু হয়েছে  , ৪০০ এরও অধিক বাঙালি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কাদের কসাই এর ফাসি হলনা সেই বিচার প্রক্রিয়ায়। প্রতিবাদে ফুসে উঠলো বাংলার জনতা। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে আবার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার শপথ নিয়ে পথে নামলো তারা - জানিয়ে দিল -"এই পথে আজ জীবন দেব , রক্তের বদলা ফাসি নেব"। রক্ত , হ্যা অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে এই পথে। শহীদ রাজীব , দীপ , জগতজ্যোতি , জাফর মুন্সি , শান্ত - ত্রিশ লাখ শহীদের সাথে মিশে আছেন দূর আকাশের নক্ষত্রগুলোর মধ্যে। আর দেখছেন , তাদের রক্তদান সফল হয়েছে। কাদের কসাইয়ের ফাসির জন্য দশ মাস ধরে  আম্মা জাহানারা ইমামের সন্তানেরা মায়ের স্বপ্ন বুকে নিয়ে চালিয়েছে আন্দোলন। কত বাধা , কত আঘাত সবকিছুকে দূরে ঠেলে দিয়ে বাংলার আপামর জনতা ছুটে এসেছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে , একবার নয় বারবার। ফাসির রায় থেকে শুরু করে ফাসি -আন্দোলন করে আদায় করতে হয়েছে সবকিছুই। তারপরেও , শাহবাগ জেগে আছে -শাহবাগ ঘুমায় না।

সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

কোটি প্রান একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে নতুন সূর্য ওঠার এইত সময়

সেই ফেব্রুয়ারি থেকে আজ ডিসেম্বর ... যুগ যুগান্তর ধরে অক্ষয় থাকার মত একটা ইতিহাস । কাদের কসাইয়ের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে , এখন যে কোন দিন ফাঁসি ...। দশ মাসের আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। এখন অনুভূতিটা অনেকটা সেই সময়ের মত , ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে যখন একের পর এক স্বাধীন হচ্ছিল বাংলাদেশের এক একটি এলাকা, স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছিল গোটা জাতি , যে কোন সময় পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করবে ...... মুক্তিবাহিনী -মিত্রবাহিনী প্রবেশ করেছে ঢাকায় ...। এখন ঠিক সেই অনুভূতিটা মনে হচ্ছে অনুভব করতে পারছি। কাদের কসাইয়ের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে... যে কোন সময় ফাঁসি।।

বায়ান্ন দেখিনি , উনসত্তর দেখিনি , একাত্তর দেখিনি ... দেখেছি শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর। তাই হেলায় হারাতে পারিনি ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার এই দুর্লভ সুযোগটিকে ...। অনেক অপপ্রচার , প্রতি পদে পদে অনেক বাধা সব উপেক্ষা করে বারবার ছুটে গিয়েছি শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে। আজকে মনে হচ্ছে সেই সব অপমান , সব শাস্তি সবকিছুর বদলা নেয়া হয়ে গেছে ... আজকে মনে হচ্ছে শহীদ দীপ , রাজীব , জাফর মুন্সি , জগতজ্যোতি , শান্ত তো এই দিনগুলোর জন্যই জীবন দিয়েছিলেন। আজকে দূর আকাশের কোন নক্ষত্র থেকে মা জাহানারা ইমাম আমাদের দিকে চেয়ে আছেন আর হাসছেন তাঁর পাগল ছেলেমেয়েদের কাজ দেখে...।

রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

আলোকের পথে শুভযাত্রা ...।

বিজয়ের মাসে একের পর এক বিজয় সংবাদ...।রাজাকার কাদের কসাই এর মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে ... জলপাই রঙ ট্রাকে করে লাল কাপড়ে মোড়ানো এই মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো হয়েছে ...। লাল কাপড়ে মোড়া পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে গেছেন ট্রাইব্যুনালের উপনিবন্ধক অরুণাভ চক্রবর্তী ।---তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের কাছেও অনুলিপি পাঠিয়েছেন। বাকি আনুষ্ঠানিকতা কারা কর্তৃপক্ষ করবে। এই সুখবর শোনার পর অন্তর থেকে আপনাআপনি বের হয়ে আসে বুকফাটা চিৎকার ... জয় বাংলা...।

নিয়ম অনুযায়ী,এখন কারা কর্তৃপক্ষ কাদের মোল্লার কাছে জানতে চাইবে সে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে কি না।ক্ষমা ভিক্ষা চাইলে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতাকে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যে আবেদন জানাতে হবে। তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এখন শুধু ফাসির অপেক্ষা...। দশ মাসের আন্দলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ...শুধু ফাসির অপেক্ষা...। যে কোন দিন এখন কার্যকর হবে কাদের কসাইয়ের ফাসি...।

প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন আর বীরাঙ্গনা মা মোমেনা বেগমের সাক্ষ্যেই মূলত রচনা হচ্ছে বাংলা মায়ের বিয়াল্লিশ বছরের কলঙ্কমুক্তির এই পথ ...। দুই বছরের ছোট ভাইকে আছড়ে মারা, দুই বোনকে জবাই, এক বোনকে ধর্ষণ, মাকে গুলি করে মারা- এতগুলো দৃশ্য দেখে নিজে ধর্ষিত হওয়ার পর মোমেনা বেগমের স্বাভাবিক থাকাটাই হতো অস্বাভাবিক।একাত্তরে একদিনে এতগুলো ঘটনার পর পাগলই হয়েছিলেন এই নারী। তবে সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে হাজির হয়েছিলেন তিনি।

চোখের সামনে মা-ভাই-বোনদের মৃত্যু দেখলেও সেদিন ধরে নেয়ার পর বাবা হযরত আলী লস্করের কোনো খবর আর পাননি মোমেনা। তাই সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো কাদের মোল্লার প্রতি মোমেনার প্রশ্ন ছিল- “আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই- আমার বাবা কোথায়?” বীরাঙ্গনা মা মোমেনা বেগম হয়ত জানতে পারবেন না কখনই তাঁর বাবা কোথায় ... কিন্তু সেই খুনির ফাসি তো দেখতে পারবেন... এই ফাসিটাই হল ২০১৩ এর প্রজন্মের পক্ষ থেকে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা -বীরাঙ্গনাদের প্রতি উপহার ...।

জয় বাংলা ... জয় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ...।

স্বপ্নের পথযাত্রা

স্বপ্নের সিঁড়ি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে আজ ... জলপাই রঙ ট্রাকে করে কাদের কসাই এর ফাঁসির রায় আপীল বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে গেছে আজ দুপুর ১২ টায়। জলপাই রঙ ট্রাকে করে একদিন এই পাকিস্তানিরা , রাজাকারেরা ভেঙ্গে তছনছ করেছিল বাঙ্গালির স্বপ্নের বাগান ... শিশু -কিশোর -যুবক -বৃদ্ধ কাউকে ছেড়ে দেয়নি এরা ... মা -বোনদের উপর অত্যাচার করেছে... কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে..। গুলিতে -বোমা -বেয়নেটে রক্তের সমুদ্র বইয়েছে সবুজ বাংলার বুকে...।

চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করেছে শহীদ মুনির চৌধুরী , শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ... আরও অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে ...। এই জলপাই রঙ ট্রাকে করে আজকে এল রাজাকার কাদের কসাই এর ফাসির পূর্ণাঙ্গ রায়। ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে গেছে রায় , এখন শুধু মৃত্যু পরোয়ানা জারির পালা... এরপরই কোন এক শুভ সকালে দেখব স্বাধীন বাংলার আকাশে নতুন সূর্য ... রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশের সূর্য ...।

যাক , অবশেষে আমরা পারলাম। সেই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ... স্লোগান , মিছিল , রাতভোর অবস্থান ... সবকিছু আজ মনে হচ্ছে সার্থক । অপেক্ষায় আছি কবে ফাসিটা কার্যকর হবে ...। গতকাল ফেসবুকেই দেখলাম যে কাদের কসাই এর ফাসির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ঐতিহাসিক ফাসির মঞ্চ ... সেই ফাসির মঞ্চ যেখানে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাসি দেয়া হয়েছিল , বালির বস্তা দিয়ে হচ্ছে ফাসির প্র্যাকটিস। সবকিছু নির্দেশ করছে , অচিরেই ফাসিতে ঝুলবে কাদের কসাই...।

কাদের কসাইয়ের ফাসি কার্যকরের মধ্যে দিয়ে ৪২ বছরের কলঙ্কমুক্তি হবে বাংলাদেশের ... এরপর পিছনের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে নতুন আগামীর দিকে। ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা মা পাবেন ন্যায়বিচার ... স্বপ্ন পূরণ হবে শহীদজননীর ... স্বপ্ন পূরণ হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সন্তানহারা লক্ষ লক্ষ জননীর ... স্বপ্ন পূরণ হবে প্রজন্মযোদ্ধার রক্তের ... স্বপ্ন পূরণ হবে কলেজ পালিয়ে শাহবাগে ছুটে আসা কিশোর -কিশোরীর । সে শুভদিনের অপেক্ষায় এখন প্রতি মুহূর্ত...।

ভাবছি যে কয়েদি কসাই কাদেরের ফাসি কার্যকরের ভার পাবেন তিনি কত বড় ভাগ্যবান। যাই হোক এখন প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের ... কাদের কসাইয়ের কবর স্বাধীন বাংলার মাটিতে হবে না। আজকে একটা কথা বারবার মনে পড়ছে ... রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা- "যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তখনি সে / পথকুক্কুরের মত সঙ্কোচে সত্রাসে যাবে মিশে।" আসলেই, বাঙালি জেগে উঠেছিল দেখেই তো পাকিস্তানিরা বিতাড়িত হয়েছিল , আজ রাজাকারের ফাসিও হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে সেই জাগরনের কারনেই...।

জয় বাংলা ... জয় বাংলা... জয় বাংলা... কত মধুর না এই স্লোগানটা...।

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

হাতে কোন সময় নাই , ডিসেম্বরে কাদের কসাইয়ের ফাসি কার্যকর চাই।

ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তেভেজা বাংলার মাটি ... রক্তের দাম দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ কে স্বাধীন করেছেন ... দুই লক্ষ মা -বোন হয়েছেন নির্যাতিতা ...। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে , বাবার সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করেছে পাকিস্তানি হায়েনা আর তাদের দোসর রাজাকার -আল বদরেরা। মায়ের কোল থেকে সদ্য জন্ম নেয়া শিশু সন্তানকে কেড়ে নিয়ে বেয়োনেটের আঘাতে রক্তাক্ত করেছে সদ্য জন্ম নেয়া প্রাণকে ... পবিত্র কুরআন ...পাঠরতা মহিলার কোল থেকে কুরআন শরীফ ফেলে দিয়ে হায়েনারা সেই মাকে ধর্ষণ করেছে , হত্যা করেছে। হিন্দু - মুসলিম - বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান সব ধর্মের , কামার -কুমার -জেলে -চাষি -মজুর সব শ্রেণী পেশার মানুষের ভালোবাসার বাংলাদেশকে এরা রক্তাক্ত করেছে বোমা -গুলি -বেয়োনেট ... ধ্বংসযজ্ঞের সবরকম মারণাস্ত্রের আঘাতে ...।

এই হায়েনাদের হাত থেকে বাংলা মাকে রক্ষা করার জন্য হাসিমুখে নিজেদের সন্তানদের দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন বাংলার মায়েরা। বলেছেন, "যা তোকে দেশের জন্য কুরবানি করে দিলাম , যা তুই যুদ্ধেই যা।" ছেলের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছেন মা , ভাইয়ের জন্য অপেক্ষায় বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছে বোন , স্বামীর জন্য স্ত্রী ...। এদিকে তীরহারা ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে লড়ে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ঘরবাড়ির ঠিকানা নাই , দিনরাত্রি জানা নাই - যুদ্ধ , শুধুই যুদ্ধ ... দেশ মায়ের মুক্তির জন্য যুদ্ধ । নিশ্চিত ভবিষ্যৎ কে নিজ হাতে দূরে সরিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন শহীদ রুমী -আজাদের মত অনেক মুক্তিযোদ্ধা ... নববধূকে ঘরে রেখে মুক্তিযুদ্ধে ছুটে এসেছেন স্বামী...নিজের সর্বোচ্চ সাধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন বাংলার আপামর জনতা ...।

শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমি একবার দেখি , বারবার দেখি ... দেখি বাংলার মুখ

চেতনায় একাত্তর ... হৃদয়ে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ...। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে । আজকে মনে পরছে প্রজন্ম চত্বরের সেই আগুনঝরা দিনগুলোকে ... চারপাশে যেদিকে চোখ যায় শুধুই জনসমুদ্র ... সে জনসমুদ্রের মাঝে আমি চিনি না কাউকেই , কিন্তু সবাইকে মনে হচ্ছিল জন্ম -জন্মান্তরের আপন ... স্লোগান , মিছিল , শপথ , অশ্রুভেজা জাতীয় সঙ্গীত , বীর শ...হীদদের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা , লক্ষ লক্ষ মোমবাতির আলোয় আলোকিত শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ... স্মৃতির পাতাতে অক্ষয় হয়ে থাকবে আজীবন ...। সেই প্রজন্ম চত্বর , জেগে ওঠার গণজাগরণ মঞ্চ ...।

Eshita মনে আছে সিস্টার আমাদের করা প্রথম ব্যানার টা যেদিন নিয়ে গিয়ে আটকে রাখলেন আর অভিভাবক ডাকলেন , সেদিনই আমরা দুইজন গিয়ে আবার কাপড় কিনলাম - আবার ব্যানার বানালাম মাত্র একদিনের মধ্যেই প্রজন্ম চত্বরে যাওয়ার জন্য ? মনে পড়ে আমাদের বানানো সায়েন্স ভিত্তিক স্লোগানগুলোর কথা ? সমাকলন , ব্যবকলন , আইনস্টাইনের সূত্র সব কিছুর রাজাকারের ফাসি সংস্করন বানানোর কথা ? আমার উপর তখন কি এসে ভর করেছিল জানতাম না , শুধু জানতাম যত বাধাই আসুক আমাকে প্রজন্ম চত্বরে যেতেই হবে । জানিস সেই ব্যানার টা এখনও আছে আমার কাছে । তোর স্মৃতি , আমার শাহবাগের স্মৃতি ...।

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন সূর্য ওঠার এইত সময় ...।

ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত আন্দোলন চলছে বাংলা মায়ের কলঙ্কমুক্তির দাবিতে ... আন্দোলন চলছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে রাজাকারের ফাসির দাবিতে। বিজয়ের ধারাবাহিকতায় আরেকটি বিজয় আসলো আজ , কাদের কসাই এর ফাসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হল আপিল বিভাগ থেকে ফাসির রায় আসার আড়াই মাস পরে। বাংলা মাকে রাজাকারমুক্ত করার এই সংগ্রামের সূচনা মা জাহানারা ইমামের হাত ধরে ... এবার হয়ত মায়ের সেই বিশ্বাস আমরা রক্ষা করতে পারব ...। চারপাশে শুধু মৃত্যুর খবরের মধ্যে এই রায় প্রকাশ একটা শান্তির প্রলেপ ... একটা আশার বাণী ...।

পাঁচ ফেব্রুয়ারিতে কসাই এর হাতে বিজয় চিহ্ন মানতে না পেরে যে সংগ্রামের সূচনা তা আজ প্রায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা হোক রাজাকারের দম্ভকে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে কার্যকর চাই কাদের কসাইয়ের ফাঁসি। বিশ্ব দেখুক একাত্তরের স্মৃতি বহন করে প্রজন্ম চত্বরে জেগে থাকা বাঙ্গালির বিজয় ... দেখুক বাঙালি জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার হলেও মাথা নোয়াবার নয় ।বাঙালি যে জীবন দিয়ে হলেও দাবি আদায়ের জাতি...। শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না। ফাসি কার্যকর হোক কসাইয়ের ... ন্যায়বিচার পাক ত্রিশ লাখ শহীদ , দুই লাখ বীরাঙ্গনা মা।

সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলাদেশ , অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে।

স্বপ্ন দেখি ... ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে দাঁড়িয়েও আমরা স্বপ্ন দেখি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ... যে বাংলাদেশে স্থান হবে না কোন রাজাকার - আলবদরের। ইস , পনেরই আগস্ট , ১৯৭৫ দিনটা যদি আসলেই একটা দুঃস্বপ্ন হত শুধু - যদি সত্যিকারেই এমন হত যে আমরা পুরো বাঙালি জাতি একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম আসলে ... বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন , তাজউদ্দিন আহমেদ বেঁচে আছেন , জাতীয় চার নেতা বেঁচে আছেন - কত সুন্দর ই না হত তাহলে ব্যাপারটা । তাহলে আর আমাদের দেখতে হত না রাজাকারের বিচারের জন্য গণআদালত গঠন করায় শহীদজননীকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেয়া , আমাদের দেখতে হত না রাজাকারদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা ... অনেক কিছুই দেখতে হত না - বাবা তার সন্তানদের আগলে রাখতেন দেশদ্রোহীদের হাত থেকে ...। যদি সেদিন ফারুক - রশিদ - মোশতাক - জিয়া - নূর - ডালিম -হুদারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করত , তাহলে আজকে হয়ত আমাদের দেখতে হত না মনির -নাহিদ দের লাশ , অন্তঃসত্ত্বা মায়ের গায়ে পেট্রোল বোমা ছোড়া হত না ... স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি দেশের প্রধান বিরোধী দল হতে পারত না ...। বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ করেছিলেন জামাত -শিবিরকে , স্বাধীন বাংলায় আর কখনও শুনতে হত না রাজাকারদের দম্ভভরা পদধ্বনি ...।

কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট দুঃস্বপ্ন নয় , সত্য। . স্বাধীনতা নামক লাল -সবুজ পাখিগুলো নীল আকাশের বুকে উড়তে উড়তে কোথায় হারিয়ে যায় ... শেষ পাখিটা চলে যাবার আগে বলে যায় , কেউ নেই আর... বঙ্গবন্ধু নেই , তাজউদ্দিন আহমেদ নেই , জাতীয় চার নেতার কেউ বেঁচে নেই , মেজর খালেদ মোশাররফ নেই ... মুক্তিযোদ্ধারা , বীরাঙ্গনারা বেঁচে আছেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে , বেঁচে আছেন জীবনযুদ্ধের মধ্যে । শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন বাঙ্গালির অন্তরে ... স্মৃতিসৌধে ... শহীদ মিনারে। দেশের হালটা ধরার জন্য নেই সত্যিকার অর্থে কেউ ...। মা জাহানারা ইমাম ছিলেন , চলে গেছেন এদেশের মানুষের প্রতি শেষ চিঠি রেখে - " এই আন্দোলনকে সুদূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। আমি জানি জনগণের চেয়ে বিশ্বস্ত কেউ নেই । জয় আমাদের হবেই...।" এরপর বাংলাদেশ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে ঝরে গেছে অনেকগুলো পাতা ... ক্ষমতার পালাবদল , রক্তের নেশায় উন্মাতাল রাজনীতি আর তার বলি সাধারন মানুষ ... এসবের মধ্যে দিয়ে কেটে গেছে বিয়াল্লিশ টি বছর ...। বিয়াল্লিশটি বছর নীরবতার , সহ্য করার - এর মধ্যে ১৯৯২ সাল একটা আলোর ঝলক , একটা সাক্ষী যে বাংলাদেশ বেঁচে আছে...।।

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলাদেশের ছবি এঁকে দিও মাগো , আমার দুটি চোখে ...।

রক্তের সমুদ্রের মাঝখান থেকে একদিন পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় সবুজ একটি বদ্বীপ। সেদিন রাত্রিশেষে ভোরের সূর্যটা ওঠে আরও বেশি লাল হয়ে - ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত হয়ে , দুই লাখ বীরাঙ্গনা মাএর সাক্ষী হয়ে। রাতের কালিমা মুছে অবুঝ শিশুর মত হেসেছিল রাঙ্গা সকাল , আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম হায়েনার আক্রমন থেকে - প্রাণের স্বদেশটাকে ফিরে পেয়েছিলাম একান্ত আপন করে। এই বাংলাদেশ , যার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা । এই আমাদের বাংলাদেশ ... যার প্রতিটা ধূলিকণায় মিশে আছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত , বীরাঙ্গনা মায়ের কান্না...। এই আমার বাংলাদেশ...।।

শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৩

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি ?

নির্বাচন , গণতন্ত্র , রাজনীতি - অনেক উচ্চ পর্যায়ের শব্দ এগুলো। এসব বোঝার জন্য আমাদের জন্ম হয়নি , আমাদের জন্ম হয়েছে এসবের বলি হওয়ার জন্য। এই ঘৃণ্য খেলায় খেলোয়াড় না হওয়াটাই অপরাধ , শীতের কাপড় কিনতে যাওয়া অপরাধ , জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হওয়া অপরাধ। সবকিছুর মূল্য আছে - গণতন্ত্র , রাজনীতি সবকিছুর মূল্য আছে - মূল্যহীন শুধু মানুষ , মূল্যহীন শুধু মনির , নাহিদ , রবিন কিংবা বার্ন ইউনিটের আরও মানুষগুলো , ...মূল্যহীন শুধু মানুষের জীবন। অমূল্য গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে সবকিছুই সম্ভব - সম্ভব না শুধু কিছু সাধারন মানুষের জীবন রক্ষা করা। সম্ভব না শুধু রক্তের খেলা থামানো... সম্ভব না শুধু মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ...।।

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

একাত্তরের চিঠি - ইতিহাসের জ্বলন্ত সাক্ষী

'একাত্তরের চিঠি'র প্রচ্ছদে একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রায় মলিন হয়ে আসা চিঠির মাঝে জ্বলজ্বলে অক্ষরে এক একটি বাংলা অক্ষর , আর সেই চিঠির ওপর টকটকে লাল রক্ত। এই চিঠিরা ইতিহাস , ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতি, অসঙ্খ্য মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি। ইতিহাসের ভেতর থেকে উঠে আসে আরেক ইতিহাস - রনাঙ্গনের নানা ছোট - বড় স্মৃতি , কিংবা মা এর কাছে আকুল আবেদন -"মা , মাগো। দুটি পায়ে পড়ি মা। তোমার ছেলে ও মেয়েকে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে... ঘরে আটকে রেখ না। ছেড়ে দাও স্বাধীনতার উত্তপ্ত রক্তপথে। শহীদ হয়ে অমর হব , গাজী হয়ে তোমারই কোলে ফিরে আসব মা। মাগো, জয়ী আমরা হবই। দোয়া রেখ। জয় বাংলা।" এই ইতিহাসকে বুকে নিয়েই আমরা বেঁচে থাকি , এই রক্তভেজা ইতিহাসের জন্যই আমরা নিজেদেরকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি... মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি...। মোরা নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি...।

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

রক্তচোষা জানোয়ার , এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়

সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ করে কিসের রাজনীতি ? জীবন্ত মানুষের গায়ে আগুন দিয়ে কিসের রাজনীতি ? আমি একটা সোজা হিসাব বুঝি না - একজন মানুষ কিভাবে আরেকজন মানুষের গায়ে আগুন দিতে পারে। ঢাকা  মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে অসহ্য যন্ত্রণায় যে মানুষগুলো কাতরাচ্ছেন তারাও তো কারও মা - বাবা - ভাই - বোন, নাকি ?জামাত - শিবিরের রক্তচোষা জানোয়ারদের রক্তের নেশা মেটানোর জন্য কি এভাবে বলি হতে হবে সাধারন মানুষকে ? একাত্তর থেক...ে আজ পর্যন্ত এই রাক্ষস দের , এই দেশদ্রোহীদের রক্তের পিপাসা মেটেনি, আর সেইজন্য প্রতিনিয়ত বলি হতে হচ্ছে মনিরদের ... এই দুঃস্বপ্নের অবসান কোথায় ?

একবার ভাবুন , অবরোধে কিন্তু স্কুল - কলেজ - অফিস -আদালত কিছু বন্ধ থাকে না। জীবন এগিয়ে চলে তার নিজের গতিতেই। জীবিকার প্রয়োজনেই মানুষকে রাস্তায় বের হতে হবেই - আর দিনশেষে কি ঘরে ফেরার পরিবর্তে ঠিকানা হবে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট? আজকে যে মানুষগুলো আগুনে পুড়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তাদের কেউ হয়ত জীবিত ফিরে যাবেন পরিবারের কাছে , কেউ ফিরবেন না  , কাউকে হয়ত পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হবে সারাজীবনের জন্য ... কি অপরাধ এই মানুষগুলোর ? বাঙালি হওয়া , পাকিস্তানি  না হওয়া ?
 

একাত্তরে সারা বাংলাদেশে এক ই ভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী , জ্বালিয়ে দিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম , পুড়িয়ে মেরেছিল জীবন্ত মানুষকে। সারা বাংলাদেশকে পরিনত করেছিল বার্ন ইউনিটে। পাকিস্তানি হায়েনারা ভুলিস না এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে রাখা প্রজন্ম। এই প্রজন্ম রাজাকারের ফাসির দাবিতে জেগে উঠে দাবি আদায় করে নিতে জানে - দিনের পর দিন , রাতের পর রাত প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান নিতে পারে রাজাকারের ফাসির দাবিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানিরা যেভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল , এই প্রজন্মের কাছে তোদের সেই পরাজয়ও আসন্ন। কাদের কসাই এর ফাসি , বাংলার মাটিতে তোদের চূড়ান্ত পরাজয় এখন সময়ের  ব্যাপার মাত্র।
 

এ প্রজন্ম মুক্তিকামী জনস্রোত ...
নেবেই নেবে একাত্তরের  প্রতিশোধ ...
একাত্তরের হাতিয়ার , গর্জে উঠুক আরেকবার ...
রাজাকারের ফাসি হোক , শহীদরা পাক ন্যায়বিচার।

জয় বাংলা।

বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

সাবাশ বাংলাদেশ , এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় , জ্বলে - পুড়ে - মরে ছারখার , তবু মাথা নোয়াবার নয়।

একটি প্রজন্মের যখন জাগরণ হয় , তখন সে জাগরণের জোয়ারে সবরকম অপশক্তি পরাজিত হতে বাধ্য। একটি জাতির তরুণ সমাজ যখন জেগে উঠতে জানে , তখন সেই জাতিকে দমাতে পারে এমন শক্তি নেই। বাঙালি এমন একটা জাতি যে জাতির জন্ম বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে। প্রতিটা বাঙালি জন্ম থেকে বিপ্লবের সাথে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ - আর সেজন্যই মুখ বুজে সহ্য করার স্বভাব বাঙ্গালির নেই। বাঙালি জাতি এমন একটি জাতি , মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার অধ...িকারটাও যাদের সংগ্রাম করে আদায় করতে হয়েছে , রক্ত ঝরিয়ে আদায় করতে হয়েছে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা , বাংলাদেশ নামক ছোট্ট সবুজ দেশটি রক্তের দামে কেনা , মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করে নেয়া , ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের দামে , দুই লাখ বীরাঙ্গনা মাএর সম্ভ্রমের দামে কেনা এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ ...। সেজন্যই তো বাংলাদেশ কে নিয়ে , বাঙ্গালিকে নিয়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন - "সাবাশ বাংলাদেশ , এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/ জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার , তবু মাথা নোয়াবার নয়।"

বাংলাদেশ এমন একটা দেশ , চিরদিন যে দেশের নরম পলিমাটিতে জন্ম নেয় সচেতনতার ধান - শত জরা , মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে অনন্ত অক্ষত মূর্তিতে বাংলাদেশ জাগতে জানে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের দিয়াশলাই বাংলাদেশের প্রতিটা তরুন প্রাণে সদা জাগ্রত । তাই বাংলা মায়ের কলঙ্কমোচনের প্রশ্নে ভিসুভিয়াসের মহাবিস্ফোরণের মত বাঙালি বারবার জেগে উঠেছে, উঠবে। '৫২ , '৬২ , '৬৬ , '৬৯ , '৭১ , '৯০ , '৯২ , '২০১৩ - এক একটা সাল - রক্তের দামে লাল - সবুজ মানচিত্র আঁকার এক একটি বছর। শহীদ সালাম - বরকত - রফিক - শফিক - জব্বার কিংবা শহীদ রুমী -বদি -আজাদ - সুরকার আলতাফ মাহমুদ - ক্রিকেটার জুয়েল - অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী - মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী - জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা কিংবা নাম না জানা আরও ত্রিশ লাখ শহীদ , কিংবা শহীদ রাজীব , দীপ , জগতজ্যোতি , জাফর মুন্সি - কি সুন্দর থোকা থোকা পুষ্পগুচ্ছের মত এক একটি নাম, এক একজন শহীদের নাম যাদের রক্তস্রোতে প্লাবিত বাংলার মাটি।

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

আমার প্রতি নিঃশ্বাসের বিষে , বিশ্বের যন্ত্রনার ভাষা...

প্রজন্ম চত্বরে জাফর ইকবাল স্যারের বক্তৃতাটা শুনে সেইদিনও কেঁদেছিলাম , আজও মাঝে মাঝেই ঐ বক্তৃতাটা শুনি আর কাঁদি, অনেক হতাশার মাঝেও স্যারের কথাগুলো আশা জাগায় , নতুন করে ভাবতে শেখায়। স্যার বলেছিলেন -"জাহানারা ইমামের ছবি আছে , জাহানারা ইমাম উপর থেকে দেখছেন ... আজকে ত্রিশ লক্ষ শহীদ উপর থেকে দেখছেন , আর বলছেন - থ্যাঙ্ক ইউ , থ্যাঙ্ক ইউ ... তোমাদেরকে ধন্যবাদ ...। আমরা অনেক সৌভাগ্যবান একটা জাতি। যখন বঙ্গবন...্ধুকে দরকার ছিল , বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছি ... যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে , তাজউদ্দিন আহমেদ আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন , এখন তোমাদের দরকার তোমাদের পেয়েছি ... এই বাংলাদেশ কে আর কেউ হারাতে পারবে না ...। "

যখন থেকে রাজ রাণীর গল্প পড়ার স্তর থেকে বের হয়ে সবরকম গল্পের বই পড়া শুরু করেছি , তখন থেকে জাফর ইকবাল স্যার আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক। একজন কিশোরের মনের কথাগুলো স্যার কিভাবে বুঝেন জানি না, কিন্তু সত্যি ওনার বইগুলো পড়লে মনে হয় আমার যে এইরকম বকুলাপু হতে ইচ্ছা করে সেটা স্যার কিভাবে জানলেন ? আর সায়েন্স ফিকশনের ব্যাপারে যদি বলতে চাই - এত সুন্দর করে বিজ্ঞানকে আমাদের সামনে তুলে ধরা জাফর ইকবাল স্যার ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব না। আমেরিকায় নিশ্চিত জীবন সবকিছু ছেড়ে স্যার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ কে আঁকড়ে পরে আছেন .....।

সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৩

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর ... বয়ে আনুক নতুন বিজয়...

প্রতিটা দিন নতুন নতুন সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয় ... নতুন নতুন প্রতিযোগিতা , নতুন নতুন সংবাদ । প্রতিটা সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মাঝে লেখা হয় জীবনের অনেক ইতিহাস ... বাংলাদেশের নরম পলিমাটির বুকে মাটির মানুষের পথ চলা.....। প্রতিটা দিনের সূচনা একটা আশা নিয়ে - হয়ত আজই পাব সুখবর ... ধাপে ধাপে প্রত্যেকদিন একটু একটু করে স্বপ্নের রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ আমাদের হাতে এসে ধরা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত ... গতকাল পূর্ণাঙ্গ রায়... লেখা শেষ হল, কিছুক্ষন আগে সমকাল অনলাইন নিউজে দেখলাম রায় আগামী তিনদিনের মধ্যেই প্রকাশ হতে যাচ্ছে ... এরপর আর কি - দিন গণনা শুরু ... এই রায় কার্যকরে জেল কোড মানে ২১ থেকে ২৮ দিনের হিসাব নাকি কার্যকর হবে না শুনছি - তাহলে তো এবারের বিজয় দিবসের মধ্যেই কসাই এর ফাসি কার্যকরের আশাটুকু আমরা করতেই পারি , নাকি ???
 

সেজন্যই বলি প্রতিটা দিন নতুন নতুন সম্ভাবনার সূচনা ...। শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের সেই গনজাগরনে যখন গিয়েছিলাম প্রথম , তখন কি কল্পনা করতে পেরেছিলাম নয় মাস পরে একদিন ফাসি কার্যকরের এত কাছাকাছি চলে আসব আমরা ? কিন্তু হ্যা , আমরা পেরেছি। এ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি , রাজাকার রাও এ প্রজন্মের যুদ্ধ দেখেনি , দেখিয়ে দেয়ার এখনি সময়...। প্রজন্ম চত্বরের সেই ব্যানারে লেখা কথাগুলো বাস্তবে পরিণত করার জন্যই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর জেগে আছে , জেগে থাকবে। প্রজন্ম চত্বর জেগে আছে সারা বিশ্বের বাঙ্গালিকে একটি অন্যরকম বিজয় আনন্দ উপহার দেয়ার জন্য ... কাদের কসাই এর ফাসি উপহার দেয়ার জন্য। এবারের 'বিজয় ২০১৩' - বিশ্বজুড়ে বাংলার বিজয় ছড়িয়ে যাবে সারা বিশ্বে। সারা পৃথিবী অবাক হয়ে দেখবে বাঙালি জ্বলে - পুড়ে - মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয় ...। 
 

আসছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।  মহান এই বিজয়ের মাসে কার্যকর হোক ঘৃণ্য রাজাকার কসাই কাদেরের ফাসি। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন পূর্ণতা পাক বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এসে ...। স্বপ্ন পূরণ হোক বাঙ্গালির , বিয়াল্লিশ বছরের কলঙ্কের অবসান ঘটুক প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের মত করে অমর হয়ে থাক ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসও ...। এক ই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই এর বিজয়চিহ্ন ধারক হয়ে বেচে থাকুক বাংলাদেশ ... বেঁচে থাকুক রক্তে ভেজা ইতিহাসের পাতা ... জেগে থাকুক শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর।
 

জয় বাংলা।

রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৩

মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় , রাজাকারের ঠাই নাই...

প্রত্যেকটা প্রতীক্ষার ই একটা অবসান আছে ... প্রত্যেকটা যুদ্ধের ই একটা শেষ আছে ... প্রত্যেকটা সংগ্রামেরই একটা সমাপ্তি আছে ... শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের রাজাকারবিরোধী আন্দোলন হয়ত এবার এগিয়ে যাচ্ছে সব প্রতীক্ষার অবসান করে মহান বিজয়ের দিকে ... কাদের কসাই এর ফাসি কার্যকরের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ..।। অনেক অনেক মাস ধরে আন্দোলন চলার পর একদিন আইন সংশোধন করে কসাই এর রায় এসেছে ফাসির। সেই রায় প্রকাশের ৬৭ দিন পর আজক...ে পূর্ণাঙ্গ রায় লিখা শেষ হয়েছে ... যে কোন দিন প্রকাশ হবে এই রায় এখন- এরপর? এরপর দি গ্রেট কাউন্টডাউন স্টার্টস ... ৩০ দিন , ২৯ দিন করে একসময় জিরো আওয়ারে এসে থামবে ঘড়ির কাটা। কসাই এর ফাসি কার্যকর হবে... আমার সোনার বাংলা কলঙ্কমুক্ত হবে চিরকালের মত...।

শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৩

আর তো কিছুই চাইনা ওদের ফাসি ই দিয়ে দেন না...

প্রতীক্ষা ... একটি নতুন ভোরের জন্য , প্রতীক্ষা একটা সুন্দর সকালের জন্য - যে নতুন ভোরে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলার লাল- সবুজ পতাকা বুকে জড়িয়ে ছুটে যাব শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ...শুধু রাজাকারের ফাসির দাবি নিয়ে নয় , রাজাকারের ফাসির দাবি পূরণ হওয়ার আনন্দে। অপেক্ষা... অসহ্য এই অপেক্ষা। বিয়াল্লিশ বছর তো হল অপেক্ষা , তিল তিল করে জমে ওঠা পাহাড়প্রমাণ ক্ষোভের বিস্ফোরণও হল শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে, ফাসির র...ায়ও হল ... চূড়ান্ত বিজয় টার জন্য আর কতদিন ? আর কতমাস কিংবা আর কত বছর ? যত বছর ই প্রয়োজন হোক সব কয়টা রাজাকারকে ফাঁসিতে ঝুলাতে আমরা জেগে থাকব অবশ্যই ... কিন্তু দশ মাস ধরে একটা আন্দোলন চলার পরে , মুক্তিযুদ্ধের পর ৪২ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরে , অন্তত একটা রাজাকারের ফাসি কার্যকর কি আশা করতে পারিনা ? খুব বড় আশা হবে সেটা ? খুব বেশি চাওয়া হয়ে যাবে ?

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৩

তীরহারা এই ঢেউএর সাগর পাড়ি দেব রে...

রক্তপলাশে ঢাকা বাংলার প্রকৃতি প্রতিমুহূর্তে সেজে উঠতে পারে নতুন রুপে... প্রতিমুহূর্তে মনে করিয়ে দেয় প্রজন্ম চত্বরের আগুনঝরা স্লোগান। রাতের আকাশের কালো চাদর ভেদ করে কি ছোট্ট গোল থালার মত একটা চাঁদ উঠেছে ? চন্দ্রস্নানে কি ব্যস্ত পৃথিবী ? শহরের যান্ত্রিক জীবনের মধ্যেও কোন এক জলাশয়ে কি সবার অগোচরে জ্যোৎস্না অপূর্ব দৃশ্যপট সৃষ্টি করছে? জানি না। কর্পোরেট শহরের ইট - কাঠ - পাথরের দেয়াল ভেদ করে রূপালী জ্যো...ৎস্নার আলো আমাদের কাছে পৌছায় না। আর যতটুকুই বা পৌছায় , তা এখন আর মনকে কোন কল্পনা , কোন রোমান্টিসিজমে মুগ্ধ করে না। ইট - কাঠের খাঁচার মধ্যে দিয়ে একটু একটু করে মেঘলুপ্ত সূর্যের মত দেখা দেয়া জ্যোৎস্না আমাকে মনে করায় , ত্রিশ লাখ শহীদ এখন আকাশের নক্ষত্র হয়ে আমাদের দেখছেন , মা জাহানারা ইমাম হয়ত মিশে আছেন এই ফোঁটা ফোঁটা চাঁদের আলোর মধ্যেই , হয়ত হাসছেন তাঁর পাগল ছেলেমেয়েদের কাজ দেখে ...এরা যে তাঁরই স্বপ্ন সফল করার জন্য লড়ছে।

বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩

একদিন থেমে থাকা ঘড়ির কাঁটা আবার চলতে শুরু করবে... একদিন কসাই কাদেরের ফাসি কার্যকর হবে...।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের যেদিন ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল তখন পড়তাম ক্লাস সিক্সে / সেভেনে । একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পেপার টা হাতে নিয়ে দেখি বড় করে শিরোনাম - জাতির পিতা হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এরপরের কয়েকদিন নিজের মধ্যেই কেমন যেন অদ্ভুত একটা খুশি অনুভব করছিলাম , সেই আনন্দের সাথে আর কোন আনন্দের কোন তুলনা নেই। কবে বিচার শুরু হয়েছে , কবে শেষ হল - কি কি ঘটনা হল , কত অপেক্ষা করতে হল এত কিছু হিসাবে...র বয়স হয়ত তখনও হয়নি। এতকিছু ভাবার কথা চিন্তাও করতাম না। বাবা মাকে বলত মেয়ে রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়ে এত মাথা ঘামায় কেন , মা সবসময় আমার পক্ষেই কথা বলত। আর বাবা যত যাই বোঝাতে চেষ্টা করুক না কেন , আমার আনন্দের কারন ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাসি হয়েছে , ব্যস। আর কোন হিসাবের দরকার নাই। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হল "বাংলাদেশঃ এ লিগ্যাসি অফ ব্লাড" বইটা পড়া শেষ করে সেদিন রাতে ঘুমিয়েছিলাম , পরদিন সকালে উঠে শুনি ফাসি হয়ে গেছে ঐ কুলাঙ্গারদের।

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

শহীদযোদ্ধা বীরাঙ্গনারা ইতিহাস সুরে জাগে , যৌবন যায় ইতিহাস গড়ে আজকের শাহবাগে...

নীল আকাশের বুকেও তিল তিল করে জমতে থাকে ধুসর মেঘের কণা। একটি , দুটি , তিনটি , দশটি করে একসময় পুরো আকাশ ছেয়ে যায় ধুসর কালো মেঘে। বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পরে আকাশে জমা হওয়া সেই মেঘের দল। আগ্নেয়গিরির মধ্যেও হাজার বছর ধরে সঞ্চিত পদার্থ একসময় লাভা হয়ে বের হয়ে আসে , আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়। চিরদিনের শান্তিপ্রিয় একটি জাতিকেও একসময় অধিকার আদায়ের জন্য জেগে উঠতে হয় আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের মত । শান্তিপ্রিয় , ...নিরীহ একটা জাতিকেও দুর্জয় স্লোগানে একদিন রাজপথে নামতে হয় - দেশ মাকে রক্ষার শপথে গর্জে উঠতে হয়। তিল তিল করে জমতে থাকা ক্ষোভ একদিন মহাবিস্ফোরণে পরিণত হয় আর সেই মহাবিস্ফোরণের শক্তিতে সব অন্যায় ধুলিস্যাৎ হয়, রচিত হয় দাবি আদায়ের ইতিহাস। হ্যা , আমি বাঙালি জাতির কথাই বলছি।
 

ইতিহাস ফিরে আসে , ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। পলাশী থেকে ধানমণ্ডিতে ইতিহাস ফিরে আসে সুতীব্র বেদনা আর বুকফাটা আর্তনাদের ইতিহাস হয়ে। একাত্তর থেকে ২০১৩ তে ইতিহাস ফিরে আসে জাগরণের ইতিহাস হয়ে , মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হয়ে।  বুকের ভেতর হাজার বছর ধরে জমা হওয়া ক্ষোভ ইতিহাস হয়ে ফিরে আসে বারবার সুতীব্র স্লোগানের মাঝে , অন্ধকারে খা খা সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিকের মাঝে , বন্ধুর হাতে তারার মত জ্বলজ্বলে এক রাঙ্গা পোস্টারের মাঝে কিংবা শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভার মাঝে... কিংবা শাহবাগে সমবেত জনতার উত্তাল জনস্রোতে। '৫২ , '৬২ , '৬৬ , '৬৯ ,'৭১ , '৯২ , '১৩ তে সেই এক ই ইতিহাস বার বার ফিরে আসে - এক ই প্রতিপক্ষ , এক ই  স্লোগানের ভাষা ... "তোমার আমার ঠিকানা , পদ্মা মেঘনা যমুনা" , "জয় বাংলা..."

সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৩

নীরস দগ্ধ সময় শুধু বয়ে যায় ...।

রাতের আকাশের অন্ধকার দূর করে ধীরে ধীরে পূর্ব দিগন্তে উদিত হয় নতুন সূর্য। পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে থাকা ছোট্ট সবুজ একটা দেশের মানচিত্র দেখে সে অবাক চোখে। কত সংগ্রামে , কত রক্তের দামে কেনা এদেশের প্রতি কণা মাটি ... আশ্চর্য আকুলতায় সূর্য দেখে এদেশের সংগ্রামী মানুষগুলোকে। বাংলাদেশ - অনেক ছোট একটা দেশ , কিন্তু অনেক বেশি প্রাণসম্পদে ভরপুর। এদেশের মানুষ লড়তে জানে , মরতে জানে , ...জীবন দিয়ে গড়তে জানে। প্রতি মুহূর্তে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকা এদেশের মানুষ শত অন্ধকার ভেদ করেও হাসতে পারে... অনেক সুখী এদেশের মানুষগুলো - জীবন কে এরা গড়ে নিতে জানে ....। 
 

দিন শেষ হয় , অন্ধকার নেমে আসে। একসময় কালো চাদরে ঢাকা রাতের আকাশ ভেদ করে উঁকি দেয় রুপালি চাঁদ। চরাচর ব্যাপী জ্যোৎস্নাতে ছোট্ট বদ্বীপ বাংলাদেশটা একটা নতুন রুপে সেজে ওঠে। কোথাও সমুদ্রতীরে বসে জ্যোৎস্নাস্নান করে একাকী পাখি , কিংবা ইট - কাঠের খাঁচায় বন্দী তরুণী বারান্দা থেকে দেখে চন্দ্রালোকিত বাংলাদেশ। কোথাও যোদ্ধারা প্রস্তুতি নেয় নতুন কোন আক্রমনের , কোথাও সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর আধো - আধো বুলি শুনে হাসে মা , জানালা দিয়ে চাঁদ দেখায় শিশুকে ...। আকাশের একফালি চাঁদ অবাক চোখে দেখে এদেশের শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলেদের , শত্রু এলে তারাই অস্ত্র হাতে তুলে নেয় ... প্রতিবাদের বহ্নিশিখা হয়ে ওঠে ...।

রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৩

মুক্তির মন্দির সোপানতলে , কত প্রাণ হল বলিদান... লেখা আছে অশ্রুজলে...।

ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা মা ... কথাটাকে শুধু বইপত্রে পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একটু অন্তর থেকে ভাবতে চেষ্টা করুন... একবার নিজেকে কল্পনা করুন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার জায়গায় - নববধুকে ঘরে রেখে যিনি মুক্তিযুদ্ধে ছুটে গিয়েছিলেন.... কল্পনা করুন সেই নববধুর জায়গায়... পাকিস্তানি হানাদার আর রাজাকার রা যাকে ধর্ষণ করেছে , হত্যা করেছে। কিংবা কল্পনা করুন আপনার সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানটিকে আপনার সামনে ক...েউ বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারল ... কি , পারছেন কল্পনা করতে ? কিংবা আপনার সামনে আপনার পরিবারের সবাইকে গুলি করে মারল ... পরিবারের সদস্যদের মুখের দিকে একবার তাকান , এরপর নিজেকে প্রশ্ন করুন এই প্রিয় মানুষগুলোকে যদি কেউ গুলি করে মারে আপনি সহ্য করতে পারবেন কিনা...?? কিংবা পাকিস্তানিদের টর্চার সেলে কল্পনা করুন আপনাকে কিংবা আপনার সন্তানদের কাউকে....কিংবা আপনার কোন প্রিয়জনকে ... পারছেন কল্পনা করতে ? এত রক্ত , এত ত্যাগ , এত অশ্রুজলের বিনিময়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে।

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৩

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ...

১৯৫২ সাল - মায়ের মুখের ভাষার জন্য রাজপথে নেমে আসলো একদল তরুণ - তরুণী ... ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকল বাংলা মাএর দামাল ছেলে -মেয়েরা। একসময় সেই জনজোয়ার পরাস্ত করল পাকিস্তানি পুলিশ কে ... রাজপথে নেমে এল ছাত্র - শিক্ষক - তরুণ - বৃদ্ধ - দাবি একটাই - "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" । বুকের রক্তে রাজপথ রাঙ্গালেন শহীদ রফিক - শফিক - বরক্ত -জব্বার -শফিউরেরা । রক্ত দিয়ে এনে দিল...েন মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। সেই মহান বিপ্লবীদের নাম বাংলাদেশ ... সেই রাজপথের মিছিল - মীটিং - স্লোগানের নাম বাংলাদেশ ... ভাইএর রক্তমাখা শার্ট বুকে চেপে বোনের অঝোর কান্নার নাম বাংলাদেশ ...।

১৯৬৯ সাল - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছেন বাঙ্গালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি - পাকিস্তান সরকার এই ছয় দফাকে বিচ্ছিন্নতার ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে বাঙ্গালিকে অবদমিত করতে চাইছে - বঙ্গবন্ধু সহ আরও নেতা -কর্মীদের উপর চাপানো হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা । প্রতিবাদে মিছিলে উত্তাল রাজপথ - রক্তে আগুন ধরানো স্লোগান - "জেলের তালা ভাংব , শেখ মুজিব কে আনব ..." মিছিল এগিয়ে চলেছে ... পাকিস্তানি স্বৈরাচারের অত্যাচারের সিংহাসনে আগুন জ্বালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মিছিল ... পুরো ঢাকাই তখন মিছিলের নগরী - হটাত বৃষ্টির পানির মত ছুটে আসে গুলি - দামাল ছেলেদের রক্তে রাঙ্গা হয় বাংলার রাজপথ ... শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট উড়তে থাকে বাংলার আকাশ - বাতাস রক্তে লাল করে দিয়ে ... সেই শহীদ আসাদের নাম বাংলাদেশ ...।

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৩

রাজাকারের ফাসি দ্রুত কার্যকর চাই , সব কলঙ্কের অবসান চাই...।

আসছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর - আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে গণজাগরণ মঞ্চ দিনব্যাপী ‘বিজয় উৎসব ২০১৩’ পালন করবে। ওই দিন বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে (পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময়) সারাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী যেখানে বাঙালি আছে সবাই মিলে একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপন করা হবে। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে বিভিন্ন দেশীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর বিকালে ‘কনসা...র্ট ফর বাংলাদেশ’ এর আদলে বিদেশি বন্ধুদের অংশগ্রহণে বিদেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে।
 

দুপুরে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে শুনে গেলাম যে আজকে কসাই কাদেরের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে। কিন্তু এসে জানতে পারলাম যে আজকে রায় প্রকাশ হয়নি। এই কসাই এর রায় নিয়ে কত জল্পনা - কল্পনা আমাদের , তাইনা ? কবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হবে , কবে আমরা ফাসির জন্য কাউন্টডাউন শুরু করব - ৩০ দিন , ২৯ দিন , ২৮ দিন করতে করতে একদিন জিরো আওয়ারে এসে ঠেকবে সময়ের কাঁটা - কাদের কসাই এর ফাসি হবে , বাংলাদেশ হবে কলঙ্কমুক্ত - সেই সোনালি মুহূর্তের অপেক্ষায় প্রতি মুহূর্তে ... প্রতিটা পদক্ষেপে...।
 

একটা খবর দেখে লজ্জায় কাঁদতে ইচ্ছা করছে - মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী চলে গেলেন , চলে গেলেন তাঁরই স্বাধীন করা বাংলাদেশে নুন্যতম চিকিৎসা সেবাটুকু যথাসময়ে না পেয়ে। শেষ মুহূর্তে অনলাইনের অনেক সহযোদ্ধাই চেষ্টা করেছিলেন - তাঁদের স্যালুট জানাই - ইচ্ছা ছিল কলেজ থেকে এসে সেই সহযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করব - ওনাকে একবার হলেও দেখতে যাব - কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা বাবা আকবর আলী চলে গেলেন তার অনেক আগেই। এই বাংলাদেশের প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা আমার বাবা , প্রত্যেক বীরাঙ্গনা আমার মা - একজন বাবাকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না ....
 

এবারের বিজয় দিবস হোক সবরকম কলঙ্কমুক্তির , এবারের বিজয় দিবসের আগেই কার্যকর হোক কসাই কাদেরের রায় ...এবারের বিজয় দিবস স্মরণীয় হয়ে থাক সারা পৃথিবীর বাঙালি জাতির কলঙ্কমুক্তির বিজয় দিবস হিসেবে - ১৬ ই ডিসেম্বরের আগেই কার্যকর চাই কাদের কসাই এর ফাঁসি।
 

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৩

কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে নতুন সূর্য ওঠার এইত সময়

ফেব্রুয়ারি মাস , ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস - জীবনটা সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে এই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। সেই ৫ ফেব্রুয়ারিতে কসাই কাদেরের রায় , রায়ে ফাসি না হওয়া- বাঙালি নামক জ্বলন্ত দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে যেন বারুদ ঢেলে দিল। এরপর যা ঘটল তা ইতিহাস - শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে বাঙ্গালির বিগ ব্যাং - চেতনার মহাবিস্ফোরণ। বিয়াল্লিশ বছর ধরে অন্তরে ধারন করে রাখা দাবি কণ্ঠে তুলে নিয়ে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে নামলো বাঙ্গালির... জনসমুদ্রের মহাস্রোত। শাহবাগ এমন একটা জাগরনের নাম যেটার মূল উৎস চিরবিপ্লবী বাঙালি হৃদয়। প্রজন্ম চত্বর বিয়াল্লিশ বছরের অভ্যস্ত নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে বাঙ্গালির মহাজাগরনের নাম - স্লোগানে - মিছিলে উত্তাল ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের জাগরণের নাম। 

সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৩

১৩ নভেম্বর গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারনে 'মুক্ত আলোচনা'

শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর আমার , আপনার আমাদের সবার। প্রাণের শাহবাগ আবার ডাকছে আমাদেরকে। জাগরণের আলোয় রাজাকারের ফাসির দাবি নিয়ে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে সাড়া না দিয়ে কি থাকা যায়? না, অন্তত আমি থাকতে পারি না। আর আমি জানি শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে যারা অন্তর থেকে রাজাকারের ফাসির দাবি জানাতে যান , সব বাধা অতিক্রম করে তারাই এখনও বারবার ছুটে আসেন শাহবাগের ডাকে। যাদের ছবি তোলার দরকার ছিল তারা অনেক আগেই চলে গেছ...ে , যারা বিখ্যাত হবার জন্য এসেছিল তারা আন্দোলনের নিজস্ব গতিতেই চলতে পারেনি , পেছনে পরে গেছে। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর এখন আমাদের বিশুদ্ধ চেতনার নাম - সব দ্বিধার ঊর্ধ্বে উঠে রাজাকারের ফাসি চাওয়ার আন্দোলনের নাম।

মুক্তির মন্দির সোপানতলে , কত প্রাণ হল বলিদান – লেখা আছে অশ্রুজলে…

  • ২৫ শে মার্চ , ১৯৭১ সাল। বাইরে প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। রাজধানীর রাজারবাগে অবস্থিত তিনতলা বাসায় বসে রাত্রি সেই আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। চারপাশে শুধু মানুষের চিৎকার - আর্তনাদ। কি হচ্ছে আসলে ? গল্পগুচ্ছ টাকে রেখে দিয়ে রাত্রি লুকিয়ে লুকিয়ে রেডিও টা বের করে। ভাঙ্গাচোরা একটা রেডিও , কিন্তু এটাই একমাত্র সম্বল রাত্রি আর ওর মা সুলেখা বেগমের খবর শোনার। বাইরের ঘরে কয়েকজন মিলিটারি এসে রাত্রির বাবার সাথে কি কি যেন আলাপ করছে। প্রায় ই আসে এই খাকি পোশাক পরা মিলিটারিগুলো , জলপাই রঙ গাড়িতে চড়ে। রাত্রির খুব বিরক্ত লাগে এই মিলিটারি গুলো যখন তার বাবার সাথে গল্প করতে আসে। রাত্রি সতের বছরের মেয়ে , কলেজে উঠেছে এবার। বই পড়ার প্রচণ্ড নেশা তার - আর একটা অনেক ভালোবাসার জায়গা তার আছে , সেটা হল রাজপথ। এই ভালোবাসাটার কথা রাত্রির বাবা মোজাফফর আহমেদ কিংবা মা সুলেখা বেগম কেউ জানেন না। উনসত্তরে আন্দোলনের সময় বাবা - মাকে না জানিয়ে লুকিয়ে মিছিলে চলে গিয়েছিল রাত্রি। প্রয়োজন হলে আবার যাবে - এই শপথ আছে তার। সে বুঝতে পারে না বঙ্গবন্ধুর বিরোধীদের সাথে তার বাবার এত কিসের ভাব। কিছুদিন আগে রাত্রির বাবা ইলেকশনে দাঁড়িয়েছিল বলে শুনেছে রাত্রি। কি জানি হয়ত মুসলিম লীগ থেকে দাঁড়িয়েছিল - না হলে ওই পাঞ্জাবিদের সাথে এত খাতির থাকবে কেন তার?

রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৩

কাদের কসাই এর ফাসি দ্রুত কার্যকর চাই...।

কথা হইল এই নিউজটা দেখে চুপ করে কতক্ষন নিউজটার দিকে তাকায় ছিলাম। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নাকি কাদের কসাই এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হবে - সত্য মিথ্যা জানি না ভাই , খবর আমি দেই নাই - মানবজমিনে দিয়েছে। যে বিচারক মহাশয়ের রায় লিখতে দেরি হচ্ছিল ওনার হয়ত সুমতি হয়েছে। যাই হোক , মানবজমিনের খবর অনুযায়ী রায় প্রকাশের পর রিভিউ দায়ের করতে পারবে কি না পারবে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া নভেম্বরের মধ...্যেই শেষ হচ্ছে।

"জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশ হতে পারে। রায় প্রকাশের পরপরই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবে, না তাকে রিভিউ দায়েরের সুযোগ দেয়া হবে তা স্পষ্ট নয়। এরআগে সরকারের আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রিভিউির কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে, কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী কাদের মোল্লার রিভিউ দায়েরর সুযোগ রয়েছে।

কতটুকু ব্যাথা বুকে চাপালে তাকে বলি আমি ধৈর্য?

আজকে আপনি যদি ফেলানি হত্যা নিয়ে কথা বলেন , প্রশ্ন উঠবে মনির হত্যা নিয়ে কথা বলেন না কেন। আজকে আপনি যদি মনির হত্যা নিয়ে কথা বলেন , প্রশ্ন উঠবে বিশ্বজিৎ হত্যা নিয়ে কথা বলেন না কেন। যদি জামাতের হামলায় আহত স্কুলছাত্রীর কথা বলেন - প্রশ্ন উঠবে সাগর - রুনির কথা বলেন না কেন। কিন্তু এতে আসলে কি লাভ হচ্ছে ? কার লাভ হচ্ছে ? ফেলানি বলি , মনির বলি , বিশ্বজিৎ বলি আর সাগর -রুনি বলি তারা সবাই ই তো বাংলাদেশের সাধার...ণ মানুষ, তাইনা? তাদেরকে আমরা ন্যায্য বিচার দেয়ার কথা বলি - যত বিচার হোক আর যাই হোক, এই মানুষগুলোকে কি আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব ?
 

কোনোদিন পারব না। এদের হত্যার বিচারে যদি কয়েকজন খুনি কিংবা কলুষিত রাজনীতিবিদের ফাঁসিও হয় - তাতে কি ক্লাস ফাইভে পরা কিশোর মনির ফিরে আসবে নাকি কিশোরী ফেলানি ফিরে আসবে? কেউ ফিরে আসবে না। এই জীবনগুলোর কি কোন মূল্য নেই ? নাকি রাজনীতি করার জন্য লাশের প্রয়োজন হয় আর তাই একের পর এক লাশ পরতে থাকবে ? এক দল হরতাল হরতাল করে মানুষ মারবে আর আরেক দল সেই লাশকে ব্যবহার করবে নিজেদের পক্ষের কয়েকটা ভোট বাড়ানোর কাজে - এই লাশগুলো যে আরেকদলের সহিংসতার প্রমান । এরকম কয়েকটা লাশ না পরলে রাজনীতি হবে কি করে!

শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৩

স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি , এস স্বদেশপ্রীতির মহা দীক্ষা লহি...

প্রজন্ম চত্বর - শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর কি এক অদ্ভুত ভালোবাসার টানে বেঁধে রেখেছে আমাদেরকে - এই ভালোবাসা মা এর সাথে সন্তানের ভালোবাসা , এই ভালোবাসা দেশের মাটির সাথে সেই মাটির সন্তানের ভালোবাসা। আর সে ভালোবাসা বারবার বাধ্য করে আমাকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ছুটে যেতে। শাহবাগের মাটি , শাহবাগের আকাশ - বাতাস আমাদের মহাজাগরনের স্মৃতিধারণ করে আছে। অদ্ভুত একটা ভালোলাগায় , অদ্ভুত একটা পবিত্রতায় মন ভরে যায় শাহবাগ...ের সীমানায় পা রাখলেই। আমাদের শাহবাগ - আমাদের প্রজন্ম চত্বর - আমাদের স্লোগান - মিছিল - দাবি আদায়ের মহান গণজাগরণ এক নিমিষে সব চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রতি মুহূর্তে , আর তাইত বার বার ছুটে যাই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে - জানাই প্রাণের দাবি - "রাজাকারের ফাসি চাই। আল্টিমেটাম ভুলি নাই , রাজপথ ছাড়ি নাই। শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না।"

বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৩

নয় নভেম্বর শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ছাত্র -শিক্ষক সমাবেশ...। আর কোন দাবি নাই , রাজাকারের ফাসি চাই

প্রিয় প্রজন্ম , মনে আছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে কোটি কোটি সহযোদ্ধা আমরা একসাথে শপথ নিয়েছিলাম ? মনে আছে আমরা দিনরাত শাহবাগে অবস্থান করে স্বপ্নের সিঁড়ি নির্মাণের সূচনা করেছিলাম ? মনে আছে কোটি কোটি মোমবাতির আলো জ্বলে উঠেছিল রাতের আঁধার ভেদ করে ? মনে আছে সারা বাংলাদেশ নীরব হয়ে গিয়েছিলাম আমরা একসাথে? মনে আছে সেই সোনালি দিনগুলোর কথা - সেই মহাজাগরনের কথা। যে জাগরণ একে একে এনে দিয়েছে অনেকগুলো রাজাকারের ফাসির রায় , নিশ্চিত করেছে জামাতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার বিষয়টিও। এ অর্জন আমাদের আন্দোলনের , আমাদের স্লোগানের , আমাদের মিছিলের , আমাদের রক্তের।

প্রিয় সহযোদ্ধারা , শনিবারে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে আমাদের ছাত্র -শিক্ষক সমাবেশের কথা মনে আছে তো ? যদি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন , যদি রাজাকারের ফাসি চান তাহলে মনে রাখবেন প্রাণের শাহবাগ ডাকছে আপনাকে - প্রিয় দেশমাতৃকা আপনাকে ডাকছে। এই ডাক মা এর ডাক। মা এর ডাকে কি কোন সন্তান সাড়া না দিয়ে পারে ? না , পারে না। আর তাই ইতিহাস সাক্ষী দেয় আবহমানকাল ধরে বাঙালি বার বার মা এর ডাকে সাড়া দিয়ে , মা এর অধিকার আদায়ের জন্য মুক্তিসংগ্রামে ঝাপিয়ে পরেছে। সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালির জাতীয় জীবনে এসেছে ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬ , ১৯৬৯ , ১৯৭১ এবং ২০১৩।

শিক্ষিত এবং রাজাকারবিরোধী প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য চাই

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশ। অনেক রক্তের দামে , অনেক জীবনের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই বাংলাদেশ। আমরা এই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ আমাদের বাংলাদেশটাকে ভালোবাসি আর তাই আমরা চাই না কোন অশিক্ষিত মানুষের হাতে কখনও এই প্রিয় মাতৃভূমির নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা যাক। আমরা চাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে তাকে অবশ্যই হতে হবে শিক্ষিত এবং  মনে -প্রানে একাত্তরের রাজাকারবিরোধী। কোন রকম অশিক্ষিত কিংবা স্বল্প শিক্ষিত কিংবা রাজাকারদের সাথে আপোষকারী কারো হাতে যেন কক্ষনো বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা না যায়। অনেক হয়েছে সহ্য করা , বিয়াল্লিশ বছর ধরে অনেক সহ্য করেছি আমরা - আর নয়। আমরা আর কখনও কোন অশিক্ষিত কিংবা রাজাকারের সাথে আপোষকারীকে আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চাইনা। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ইতিহাসের অনেক দায়ভার শোধের পথে হাঁটছি আমরা - আর কখনও পিছিয়ে যেতে চাই না।
 

নয় নভেম্বর শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ছাত্র - শিক্ষক সমাবেশ ...

প্রজন্ম চত্বরের সেই আগুনঝরা দিনগুলোর কথা মনে আছে তো?  মনে আছে তো বিয়াল্লিশ বছরের অভ্যস্ত নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে বাঙ্গালির মহান গণজাগরণের কথা? সেই  হৃদয়ে আগুন ধরানো স্লোগান - স্মৃতিময় গণজাগরণ  - যুদ্ধাপরাধীদের ফাসির দাবিতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জাগরণ। সে আগুনঝরা দিনগুলোতে শাহবাগে ছুটে গিয়েছিলেন ছাত্র - শিক্ষক - পেশাজীবী- বুদ্ধিজীবী সব শ্রেণী - পেশার মানুষ। বিয়াল্লিশ বছর ধরে চেপে রাখা যন্ত্রণা বুকে ...নিয়ে রাজাকারদের ফাঁসি চাইতে শাহবাগে এসেছিলেন বীরাঙ্গনা মা, একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছুটে এসেছিলেন একাত্তরের পরাজিত হায়েনাদের বিচার চাইতে , রাজাকারের ফাসি চাইতে , কাদের কসাই এর ফাসি চাইতে। আমাদের জাগরণ, শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের জাগরণ প্রমাণ করে বাঙালি সংগ্রামী জাতি - বাঙালি লড়াই করে বাঁচতে জানে। সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে প্রজন্মের নবজাগরণ। আমাদের ধমনীতে শহীদের রক্ত , এই রক্ত কোনোদিনও পরাজয় মানে না...।।
 

বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৩

শাহবাগে রাতভোর , স্মৃতিতে একাত্তর - নব ইতিহাসের সাক্ষী রইল প্রজন্ম চত্বর

জেগে থাকার নয়টি মাস - জাগরণের শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যে লড়াই টা আমরা শুরু করেছি তা হল একটা চিরমুক্তির আকাঙ্খায় লড়াই - পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকার - আলবদর দের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে চিরস্থায়ী ভাবে মুক্ত করার লড়াই। আমাদের ছয় দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন - সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কেটে গেছে নয়টি মাস। আমাদের অগ্রজেরা ১৯৭১ এ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদ...ের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন। তাঁরা যে স্বপ্ন নিয়ে প্রিয় বাংলাদেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন তার অনেক কিছুই এখনও পূরণ হয়নি । সেই ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বদলা নেবার শপথ নিয়ে , বিয়াল্লিশ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ার কারনে মনের ভিতর জমা করে রাখা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে। সেই বিগ ব্যাং থেকে এখন শুরু হয়ে গেছে নতুন মহাবিশ্বের পদচারনা। এই মহাবিশ্বের নাম বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে স্থান হবে না কোন স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর।

২১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৪ তে গুগল ডুডলে ফুটে উঠুক আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলনের ছবি

একটা ছোট্ট অনুরোধ করব সবাইকে। একটু সাড়া দিবেন কি ? খুব বেশি সময় নিব না আপনাদের - একটা ই -মেইল সেন্ড করতে বলব শুধু। পাঁচ মিনিটের কাজ - কিন্তু আপনার এই পাঁচ মিনিটের কাজটি সারা বিশ্বে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের একটা গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় কে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। তাহলে কেন পিছিয়ে থাকবেন ? আসুন না মাতৃভূমির পরিচয় সারা বিশ্বে তুলে ধরার এই সুযোগ কে অবহেলা না করে একে কাজে লাগাই। সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেই আমা...দের গৌরবের কথা।

বর্তমান পৃথিবীকে বলা হয় তথ্য -প্রযুক্তির পৃথিবী। আর এই তথ্য -প্রযুক্তির যুগে আমাদের সবচেয়ে বড় সঙ্গী হল ইন্টারনেট। বর্তমানে ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হল গুগল। গুগল বিশেষ দিন সমূহে তার লোগো পরিবর্তন করে যাকে ডুডল বলা হয়। গত বছর ডিসেম্বর থেকে আমরা , এই বাংলাদেশের মানুষেরাই ই -মেইল করে গুগল কে অনুরধ করি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ এ তাদের ডুডল এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কে ফুটিয়ে তুলতে।

মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৩

আমি দেখিনি একাত্তর , দেখেছি শাহবাগ - নবীনের জাগরণে বাংলাদেশ হতবাক !

প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ , প্রাণের শাহবাগ আন্দোলন - নয় মাস পার হয়ে গেল কেমন করে, তাইনা? শাহবাগের এই নয় মাস আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ নয়টি মাস - মুক্তিযুদ্ধের বিয়াল্লিশ বছর পর এক ই চেতনায় বাঙ্গালির জাগরণের নয়টি মাস - জামাত -শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালির স্মরণাতীত জাগরণের নয় মাস। শাহবাগ এখন শুধু একটা জায়গার নাম নয় - এটি এখন একটা চেতনার নাম , একটা মুক্তির নাম  একটা ভালোবাসার নাম। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর - নামটা উচ্চারন করার সাথে সাথে অনেক স্মৃতি এসে ভিড় করে চোখের সামনে- সে স্মৃতি আন্দোলনের, সংগ্রামের। সে স্মৃতি মিছিল- স্লোগানে উত্তাল রাজপথ প্রকম্পিত করে রাখার। সে স্মৃতি তরুণ - তরুণী , কিশোর - কিশোরী , বৃদ্ধ - বৃদ্ধার মুখে দ্বিধাহীন জয় বাংলা ধ্বনির। সে স্মৃতি জাগরনের , সে স্মৃতি দাবি জানানোর , দাবি আদায়ের। নয় মাস ধরে চলা শাহবাগ আন্দোলনের দিনগুলোকে পর পর সাজাতে চেষ্টা করলাম এই লেখায়। এই শাহবাগ যে একটা জীবন্ত ইতিহাস , ইতিহাসের ধারক হয়ে শাহবাগের দিনগুলো বেঁচে থাকবে সারাজীবন।

সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৩

বাংলার হিন্দু , বাংলার বৌদ্ধ , বাংলার খ্রিষ্টান , বাংলার মুসলমান -আমরা সবাই বাঙালি।

দেশের সাধারন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? সাথিয়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলার ঘটনা হয়ত আমরা কিছুদিনের মধ্যেই ভুলে যাব - কিংবা এক দল অন্য দল কে দোষারোপ করতে থাকবে এই ব্যাপারে। আমরা অনেক সহজেই সবকিছু ভুলে যাই - এই হামলার খবর আমরা সেভাবেই ভুলে যাব যেভাবে ভুলে গেছি কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানির কথা , সীমান্তে অগণিত বাঙালি হত্যার কথা কিংবা তাজরিন গার্মেন্টস, রানা প্লাজার কথা। খুব বেশি হলে আর কতদূর হবে ? একবার আটক করা হবে অপরাধীদের , পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে আবার ছেড়ে দেয়া হবে - তারা বুক ফুলিয়ে ঘুরবে। আমাদের সমাজটাই যে এমন - এখানে ধর্ষিতা বোন কে প্রশ্ন করতে হয় -"আমি এখন মুখ দেখাব কি করে?" আর ধর্ষক মাথা উচু করে ঘুরে বেড়ায়।এটাই কি আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ? এই বাংলাদেশের জন্য কি ত্রিশ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছিলেন? দুই লাখ বীরাঙ্গনা সম্ভ্রম দিয়েছিলেন কি এই বাংলাদেশের জন্য?

কসাই কাদেরের ফাসি কার্যকর হতে আর কত দেরি ????

কাদের কসাই এর ফাঁসি চাই - সেই কবে থেকে এক ই দাবি জানাচ্ছি আমরা । এর মধ্যে আইন সংশোধন হল , রাষ্ট্রপক্ষের  আপিলের সুযোগ তৈরি হল , আপিল হল , কসাই এর ফাঁসির রায় ও হল - শেষে এসে এখন আটকে আছে একজন বিচারপতির রায় লিখা শেষ হয়নাই এজন্য। কেমন লাগে ? বাকি চার জন বিচারপতি লিখে শেষ করে ফেলতে পেরেছেন , আর ভিন্নমত পোষণকারী বিচারপতি কেবল গতকাল লিখা শুরু করলেন। কবে এই রায় লিখা শেষ হবে , কবে আপিল বিভাগে পৌঁছাবে , সেইখানে আবার যুক্তি - তর্ক হবে আপিল রিভিউ করতে পারবে কি পারবে না - এরপর কারাগারে পৌঁছাবে , এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আরও সাত দিন , তারপর একুশ থেকে আটাশ দিনের মধ্যে ফাসি কার্যকর হবে।

রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৩

মায়ের বক্ষ ঝাঁজরা করিয়া হাসিয়াছ অট্টহাসি , বাঙালি হাসিবে পরান ভরিয়া দেখিয়া রাজাকারের ফাসি

কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে এসে ফেসবুকে লগ ইন করেই দেখলাম সুখবর। আলবদর নেতা চৌধুরী মইনুদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খানের ফাসির রায় হয়েছে।এক একটা রাজাকারের ফাঁসির রায় এক একটা বিজয় আমাদের। এক একটা কুলাঙ্গারের এক একটা রায় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের কলঙ্কমোচনের পথে এক একটা ধাপ পার হওয়া। সেই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আজকে নভেম্বর মাস - নয় মাস পার হয়ে গেছে এই রাজাকারের ফাঁসির দাবি নিয়ে। মাঝে মাঝে ভাবতে খুব অবাক লাগে আব...ার খুব গর্বও হয় যে আর কোন দাবি নিয়ে আমরা একটানা রাজপথে থাকতে পারি আর না পারি , একমত হই বা না হই- জামাত -শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিয়াল্লিশ বছর পরে এসে আবার এক হতে পেরেছি। আর কোন দাবি নাই , রাজাকারের ফাসি চাই স্লোগানে সমবেত হতে পেরেছি শাহবাগে , যেই শাহবাগের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের জাতীয় আন্দোলনের অনেক ইতিহাস। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর থেকে একটু পিছনে সরে এসো , খুজে পাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান - যেখানে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন বাঙ্গালির স্বাধীনতার ডাক। এই শাহবাগ ধারন করে রেখেছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি, ধারন করে রেখেছে বিয়াল্লিশ বছর পর বাঙ্গালির নব্জাগরনের ইতিহাস - নতুন আশায় , নতুন ভালোবাসায় মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী এই নবইতিহাস গড়ার চত্বর টির নাম দিয়েছেন প্রজন্ম চত্বর।

চিরদিন এই স্মৃতি রবে অম্লান...

১৬ ই ডিসেম্বর , ১৯৭১ - বাঙ্গালির মহাকাব্যক বিজয়ের পর , বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশ টার জন্মের পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি নতুন চক্রান্ত করতে শুরু করল ছোট্ট সবুজ এই দেশ টার বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ কে একটু একটু করে গড়ে তুলছেন , ঠিক তখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর আঘাত হানল এই ঘাতকদল। সপরিবারে হত্যা করা হল জাতির পিতাকে, কারাগারে বন্দী করা হল জ...াতীয় চার নেতা - সৈয়দ নজরুল ইসলাম , তাজউদ্দিন আহমেদ , এ এইচ এম কামরুজ্জামান , এম মনসুর আলীকে। মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস ধরে এই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা , বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন ,অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন - আর সেই বাংলাদেশের ই কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষ সদৃশ প্রাণী এই জাতীয় চার নেতার উপর আঘাত হানল - আঘাত হানবে নাই বা কেন? এই সূর্য সন্তানেরা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করবে কিভাবে? দেশটাকে বিধ্বস্ত করার ষড়যন্ত্র ।

শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৩

জামাত -শিবির রাজাকার , এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। তিন বিচারকের স্বাক্ষরের পর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।শনিবার ওই রায় স্বাক্ষরের পর হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তা প্রকাশ করে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা দেখে ‘দ্রুত’ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। গত ১ আগস্ট উন্মুক্ত আদালতে তিন বিচারকের বেঞ্চ সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায়... জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়।সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেয়া ওই রায়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে মত দেন।তবে ওই বেঞ্চের প্রিজাইডিং বিচারক বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন তাতে ভিন্নমত পোষণ করেন।

যাক , নিবন্ধন তো বাতিল হল - এখন দ্রুত এই সন্ত্রাসী , রাজাকারদের সংগঠন জামাত -শিবিরকে নিষিদ্ধের অপেক্ষা। কোন দেশদ্রোহী রাজাকার - আলবদরের ঠাই নেই এই ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তভেজা বাংলার মাটিতে। আর তাই অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষায় আছি - আগামীকাল আল বদর নেতা চৌধুরী মইনুদ্দিন আর আশরাফুজ্জামান খানের যাতে ফাসির রায় হয়। এদের ক্ষেত্রেও যাতে আবার বয়স বিবেচনা শুনতে না হয়। একটা জিনিস খেয়াল করলাম - এখন প্রায় প্রত্যেকদিন ই কিছু না কিছু খুশির খবর আসছে । গত কয়েকদিনের মধ্যে পেলাম দুই আল বদর নেতার রায়ের তারিখ , গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচী, জামাতের নিবন্ধন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় ।

অপেক্ষায় আছি সেই সোনালি ভোরের , যেদিন ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে লগ ইন করেই শুনব সেই মহা বিজয়ের সংবাদটা , কাদের কসাই এর ফাসির সংবাদ টা। আর আমাদের কিন্তু মনে রাখতে হবে কসাই কাদেরের কবর কোনোভাবেই স্বাধীন বাংলার মাটিতে হতে দেয়া যাবে না। এই মাটিতে ত্রিশ লাখ শহীদ ঘুমিয়ে আছেন , বঙ্গবন্ধু ঘুমিয়ে আছেন , শহীদজননী মা জাহানারা ইমাম ঘুমিয়ে আছেন । কোন যুদ্ধাপরাধীর স্থান এই মাটিতে হবে না। বাংলার পবিত্র মাটি আমরা অপবিত্র হতে দেব না।



জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৩

শাহবাগ ডাকছে তোমায় , চলে এস বন্ধু - রুখে দাড়াও , আদায় করে নাও তোমার প্রাণের দাবি ।


মনে আছে ফেব্রুয়ারি মাসের কথা ? মনে আছে আমাদের প্রাণের দাবির কথা? মনে আছে রাজাকারের ফাঁসির দাবির কথা ? মনে আছে সারা বাংলাদেশ একসাথে নীরব হয়ে যাওয়ার কথা? মনে আছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে নেয়া সেই শপথের কথা? মনে আছে কোটি মোমবাতির আলোয় আলোকিত শাহবাগের কথা? আজকে শাহবাগ আবার ডাকছে আপনাকে -আমাকে , আমাদের সবাইকে। মনে আছে আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে কাদের কসাই এর ফাঁসির রায় হওয়ার কথা ? সাইদি - কামরুজ্জামান - মুজাহিদ - সাকার ফাঁসির রায়ের কথা? এই এক একটা রায় আমাদের এক একটা বিজয় - আর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে হলে রাজপথে থাকতে হবে আমাদের।

আজকে যখন আমাদের শাহবাগ আন্দোলন বিজয়ের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে, যখন কসাই কাদেরের ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় আস্থির পুরো জাতি - ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি মরণকামড় দিচ্ছে - তারা আক্রমণ চালাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কাণ্ডারি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের উপর , মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষদের উপর একের পর এক চলছে আক্রমণ। নিজেকে প্রশ্ন করুন এ অবস্থায় আপনার চুপ করে থাকা মানায় কিনা। আপনি যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হন , যদি রাজাকারের ফাঁসি চান - তাহলে নিশ্চয় অপেক্ষা করে আছেন কসাই এর ফাসি কার্যকরের জন্য , চৌধুরী মইনুদ্দিন , আশরাফুজ্জামান এর রায়ের জন্য।

একাত্তরের হাতিয়ার , গর্জে উঠুক আরেকবার - রাজাকারের ফাসি হোক , শহীদরা পাক ন্যায়বিচার

গত ৩০ অক্টোবর , ২০১৩ তারিখে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জালাল ভাইয়া, রাজু আঙ্কেল (রাজু আহমেদ) , হেলাল আঙ্কেল , সাইফুল ইসলাম রঞ্জু আঙ্কেল দের সাথে কিছু সময় কাটানোর, তাঁদের কাছ থেকে রনাঙ্গনের ইতিহাস , মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। বিচ্ছু জালাল ভাইয়া মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের ইতিহাস বলার এক পর্যায়ে বলেছিলেন, একবার মেলাঘর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন তাঁরা গেরিলা আক্রমনের উদ্দেশ্যে, রাতের অন্ধকারে এক গ্রামের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। দিনের আলো ফুটে উঠলে দেখতে পেলেন লাশের উপর দিয়ে হাঁটছেন। চারপাশে শুধু মানুষের লাশ আর লাশ । কি ব্যাপার এখানে কি হয়েছে ? আশেপাশে তাকালেন - কোন বাড়িঘরে মানুষ নেই। অনেক পরে একজন বৃদ্ধ মানুষের সাথে দেখা - তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানালেন , এখানে একটু আগে কাদের মোল্লা পাকিস্তানি বাহিনীকে নিয়ে এসে সবাইকে মেরে ফেলে গেছে। একবার চিন্তা করুন চোখ বন্ধ করে এই নৃশংস বর্বরতার কাহিনী, আপনি যত শক্ত মনের মানুষ ই হন না কেন , আপনি বাঙালি হলে আপনার অন্তর কেঁপে উঠতে বাধ্য।

বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩

গর্জে ওঠো বীর বাঙালি , গর্জে ওঠো বাংলাদেশ

আবারো জেগে উঠছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর , জেগে উঠছে গণজাগরণ মঞ্চ। গণজাগরণ মঞ্চের আজকের প্রেস ব্রিফিং থেকে ঘোষণা করা হয়েছে পরবর্তী কর্মসূচী - যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর এবং জামাত -শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আবার স্লোগানে মুখরিত হবার পথে আমাদের প্রাণের শাহবাগ। গণজাগরণ মঞ্চের পরবর্তী কর্মসূচী হল - আগামী ২ নভেম্বর বিকাল ৩ টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ , ৩ নভেম্বর সকাল ১০ টা থেকে দুই আলবদর নেতা চৌধুরী মইনুদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামানের রায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান এবং ৯ নভেম্বর বিকাল তিনটায় ছাত্র -শিক্ষক সমাবেশ। শাহবাগ আজ একটা জায়গার নাম ই শুধু নয় , শাহবাগ আমাদের দাবি আদায়ের কেন্দ্রবিন্দুর নাম। প্রজন্ম চত্বর আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের কলঙ্কমুক্তির স্লোগানমুখর সম্ভাবনার নাম। মনে করুন উত্তাল শাহবাগের কথা , সেই তিন মিনিটের নীরবতার কথা, কোটি কোটি সহযোদ্ধারা একসাথে শপথ নেয়ার কথা , কোটি মোমবাতির আলোয় প্রজ্জলিত শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের কথা।

আমরা যে যেই দল , যেই মতের ই অনুসারী ই হই না কেন - গণজাগরণ মঞ্চ হল আমাদের এক হওয়ার প্লাটফর্ম। বাংলাদেশ আমাদের সবার , আমরা সবাই দেশ টাকে যে যেভাবেই ভালোবাসি না কেন , রাজাকারের ফাসির দাবিটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রত্যেকটা মানুষের। তাই সব তর্ক - বিতর্ক সবকিছু ভুলে চলে আসুন শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে , যোগ দিন গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে, কণ্ঠে তুলে নিন রাজাকারের ফাসির দাবি । রাজপথে থেকে আমাদের আদায় করে নিতে হবে সব যুদ্ধাপরাধীর ফাসি। নভেম্বরে কসাই এর ফাসি কার্যকরের কথা রয়েছে। সেই বিজয় আনন্দে ভাসার জন্য এখন সবকিছু ভুলে আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের একটাই দাবি -রাজাকারের ফাঁসি। আমাদের জাগরনের মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে হবে আমরা এখনও আছি বাংলার রাজপথে , আছি শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে। কসাই কাদেরের ফাসি না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না। ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে আমাদের শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন আজ প্রায় বিজয়ের দোরগোড়ায়। আসুন প্রিয় সহযোদ্ধারা, হাতে হাত রেখে বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ করি লড়াইটা।

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী, জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

আর কোন দাবি নাই , রাজাকারের ফাসি চাই

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে অনেক অপেক্ষার নভেম্বর মাস। কেন অপেক্ষার? কারণ অনেকদিন আগে থেকে শুনছি, বিভিন্ন অনলাইন নিউজেও দেখছি যে নভেম্বরে কাদের কসাই এর ফাঁসি কার্যকর হবে। অনেক আশা করে আছি এই নভেম্বর কে নিয়ে। বাংলাদেশের কলঙ্কমুক্তির মাস হয়ে থাকুক ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসটা। সেই পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজাকারের ফাঁসির দাবি নিয়ে জেগে আছি শাহবাগের সৈনিকেরা, বিয়াল্লিশ বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা , পাকিস্তানিদের এবং রাজাকার - আলবদর দের অত্যাচারের চিহ্ন বহন করে বেঁচে আছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা , বীরাঙ্গনা মাএরা। ত্রিশ লাখ শহীদ চেয়ে আছেন দূর আকাশের নক্ষত্র থেকে , অপেক্ষায় আছেন মা জাহানারা ইমাম - এই সব প্রতীক্ষার অবসান চাই। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যত বাধাই দিক না কেন , নভেম্বরে রাজাকার কাদের কসাই এর ফাসি দেখতে চাই। 

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে , বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা – আমরা তোমাদের ভুলবো না

একাত্তরের আগুনঝরা দিনগুলির কথা শুনে কাটল আজকের দিনটা - আমার জীবনে চিরস্মরণীয় একটা দিন হয়ে থাকবে সারাজীবন এই দিন। আজকে শাহবাগে আমরা কয়েকজন অনেক সুন্দর কিছু সময় কাটালাম একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জালাল ভাইয়া ( আমরা আঙ্কেল , স্যার ইত্যাদি সম্বোধন করছিলাম - তিনি নিজেই বললেন কিসের স্যার , ভাইয়া বলবা ) , রাজু আঙ্কেল (রাজু আহমেদ) ,Helal আঙ্কেল , সাইফুল ইসলাম রঞ্জু আঙ্কেল ( Saif Raju ) এর সাথে। একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে শোনালেন যুদ্ধদিনের সেই পরশপাথর ছোঁয়ানো দিনগুলোর কাহিনী। পাশাপাশি আমাদের চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা হল তাঁদের সাথে। বিচ্ছু জালাল ভাইয়া এসেছিলেন লাল -সবুজ জামা গায়ে , বাংলাদেশের লাল -সবুজ পতাকা কপালে বেঁধে। তিনি আমাদের বলতে শুরু করলেন পহেলা মার্চ,১৯৭১  থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস- তাঁর নিজের চোখে দেখা পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার কাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী।

একাত্তরের পহেলা মার্চ থেকেই নিজ নিজ এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে থাকেন বিচ্ছু জালাল ভাইয়ারা। তাঁর বাবা ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের এস.পি। তখন উঁচু বিল্ডিং এর সংখ্যা ছিল খুব ই কম - বিচ্ছু জালাল ভাইয়াদের বিল্ডিং টা ছিল ছয় তলা। কাছাকাছি আর উঁচু বিল্ডিং ছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। আমাদের কয়েকজনকে দেখিয়ে তিনি বোঝালেন , "এইযে তোমরা যেমন পনের জন - বিশ জন করে সংগঠিত হয়েছ , আমাদেরও তেমন ছিল। আমরা বর্শা বানাতাম , মিলিটারি আসলে বর্শা দিয়ে আঘাত করব বলে।আমাদের বাসা এমন জায়গায় ছিল, সামনে দিয়ে যাতায়াত করত সব মিলিটারি ভ্যান। আমরা তাদের সামনে ছয় তলার ছাদে বাংলাদেশের লাল- সবুজ পতাকা তুলতাম , স্লোগান দিতাম -"লড়কে লেঙ্গে বাংলাদেশ"। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এ ভুট্টো থাকতে আসলে তাকে জুতা দেখাতাম , বাংলাদেশের লাল - সবুজ পতাকা দেখাতাম। মিলিটারি ভ্যান সামনে দিয়ে যেতে দেখলে আরও দ্বিগুণ উৎসাহে জুতা দেখাতাম, স্লোগান দিতাম, পতাকা দেখাতাম। "

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৩

বিজয় আনন্দ বুকে নিয়ে চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষা। কসাই কাদেরের ফাসি দেখার অপেক্ষা

একটানা দুইদিন পর অনলাইনে আসলাম । এসে অনেকগুলো খবরের মধ্যে সবচেয়ে খুশির যে খবর টা পেলাম তা হল - আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছে । যাক, একটা অনেক বড় অপমানের অবসান হল আমাদের - আর কখনও এই যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা দেখতে হবে না , আর কখনও ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলার রাষ্ট্রক্ষমতায় কোন যুদ্ধাপরাধীকে দেখতে হবে না। আর কোনোদিন দেখতে হবে না ত্রিশ ...লাখ শহীদের রক্তে ভেজা পথ মাড়িয়ে কোন যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে মাথা উঁচু করে আমরা বলতে পারব আমাদের বাংলাদেশে আর কখনও কোন যুদ্ধাপরাধী নির্বাচনের সুযোগ পাবে না।

রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

সবার চোখে স্বপ্ন একই মাতাল ভোর , বলছি তোকে তুই রাজাকার ফাঁসিতে ঝোল ...।

জমা করে রাখা গল্পের বইগুলো সব গতকাল শেষ হয়ে গেছে , আজকে আর কিছু না পেয়ে ডায়েরি পড়তে বসলাম । এই ডায়েরি জিনিসটা আসলেই অনেক বড় বিশ্বস্ত বন্ধু - সেই ক্লাস সিক্স থেকে আজ পর্যন্ত সব কথা সে জানে , কিন্তু কাউকে কোন দিন বলবে না - সাত বছরের স্মৃতি কি সুন্দর করে গোপনে রেখে দিয়েছে। সবকিছুই আছে সেখানে - কোন বই পড়ে হাসা , কোন বই পড়ে কান্না , কখনও রাস্তায় ছোট বাচ্চাকে ঠেলাগাড়ি ঠেলতে দেখে কষ্ট পাওয়া , কখনও পরীক্ষার ব্যপারে টেনশন , কখনও আম্মুর সাথে রাগ - আবার সেই রাগ ভাঙ্গাতে কোথাও বেড়াতে যাওয়া বা নতুন কোন গল্পের বই উপহার পাওয়া ...।


তবে সবচেয়ে অবাক করা এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলো হলো ২০১৩ সালকে ঘিরে , শাহবাগ আন্দোলনকে ঘিরে। জানুয়ারি মাসের শেষ দিনের ডায়েরিতে আছে সায়েন্স কংগ্রেস নিয়ে আলাপ - কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখ থেকেই সবকিছু কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে গেল। খবরটা দুপুরের হলেও আমি পেয়েছিলাম রাতে - অবাক বিস্ময়ে শুনেছিলাম কসাই কাদেরের ফাসি হয়নি। এরপর ? পরের দিন জানলাম শাহবাগ আন্দোলনের কথা। ব্যস , কোনোরকমে মা কে রাজি করিয়ে ছুটে গেলাম শাহবাগে। এরপর তো একটানা শাহবাগে থাকা , কলেজ টাইম বাদে আর বাবা বাসায় থাকার দিনগুলো বাদে প্রায় সবসময় ই।

একাত্তরের হাতিয়ার , গর্জে উঠুক আরেকবার - রাজাকারের ফাসি হোক , শহীদরা পাক ন্যায়বিচার

বাহ , শুরু হয়ে গেছে তাইলে ? সকালে ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে শুনলাম বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ। গতকাল একাত্তর টেলিভিশনের অফিস , দেশ টিভির অফিস , এয়ারপোর্ট রেলওয়ে ষ্টেশন লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ - তিন বছরের শিশুর মৃত্যু , একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক আহত - এই খবর গুলো শোনার পর মা কে বলেছিলাম যে হরতাল শুরুর আগেই এই অবস্থা - হরতাল শুরু করলে না জানি কি হবে । কি হবে তা তো সকালেই টের পেলাম - ভাগ্যিস কোন মানু...ষ মারা যায়নি চোখের সামনে - সহ্য করতে পারতাম না। ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি , দেখি অনেকগুলো ছেলে একসাথে কি যেন করছে রাস্তায়। ভাল করে দেখার জন্য সামনে আসলাম - ছেলেগুলো দৌড় দিল আর সাথে সাথে দুইটা ককটেল ফাটল পর পর। বলি শিবিরের সন্ত্রাসীরা , বাসার সামনে ককটেল মেরে শো - অফ করে বুঝি শাহবাগের একজন আন্দোলনকারীকে ভয় দেখানো যায় ?

শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৩

কসাই কাদের এর ফাসি কার্যকর হতে আর কত দেরি ????

সেই কবে থেকে শুনছি পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছানোর পর কাদের কসাই এর ফাঁসি কার্যকর হবে - সেই পূর্ণাঙ্গ রায় আর লেখা শেষ হয়না কেন? আর কত অপেক্ষা - খুব বেশি কিছু কি চেয়েছি আমরা ? কাদের কসাই যে স্বাধীনতার পর বিয়াল্লিশ বছর বাংলাদেশে বেঁচে ছিল এটাই তো তার ভাগ্য - আর কত , এইবার কি ফাঁসি টা দেয়া যায় না ? কি এমন পূর্ণাঙ্গ রায় যে দেড় মাস হয়ে গেল আপিল বিভাগ থেকে ফাসির রায় এসেছে, এখনও সেই পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা আর শেষ হয়না। আর কত অপেক্ষা - এই প্রতীক্ষার অবসান কোথায় ?

বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৩

জয় বাংলা বলে আগে বাড় , সময়ের লাগাম ধরে সামনে বাড় ...।

"কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই" - এই গানটা মনে হয় এমনই একটা গান , প্রত্যেকটা মানুষের কিছু না কিছু স্মৃতি জড়িয়ে থাকে এই গানটার সাথে। স্কুল লাইফের তখন প্রায় শেষ , মনে আছে আশেপাশের সবাই মিলে যখন -তখন এই গানটা গাইতাম , আর এই গানটার মধ্যে যেন সবার ই জীবনকাহিনী লেখা আছে । নিখিলেশ , মইদুল , সুজাতা , ডিসুজা চরিত্রগুলো হয়ে ওঠে যেন এক একজনের নিজেদের গল্প । আজও যে কোন সময় অনেক আগের বন্ধুদের নিয়ে চিন্তা করতে বসলেই সবার প্রথমে যেই গানটা মাথায় আসবে তা হল "কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই"। কফি হাউজে কত স্বপ্নের রোদ ওঠে , কত স্বপ্নই মেঘে ঢেকে যায় , তাইনা ? কতজন আসবে - যাবে , কফি হাউজটা ঠিক ই বেঁচে থাকবে আর বাঁচিয়ে রাখবে সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে কে ।

একজন সঙ্গীতশিল্পী , একজন লেখক - তাদের সুরের কিংবা লেখনীর কোন সীমানা নেই । আর সেজন্যই কবির সুমন গেয়ে ওঠেন , "সীমানা চিনিনা আছি শাহবাগে , আমার গীটারও আছে - বসন্ত আজ বন্ধুরা দেখ , গণদাবী হয়ে বাজে।" কিংবা একজন ভারতীয় হয়েও সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে বি এস এফ এর নিন্দা করে গেয়ে ওঠেন "রাইফেল তাক কর হে সিপাহী , দোয়েলেরও ভিসা নেই - তোমার গুলিতে বাংলার পাখি কাঁটাতারে ঝুলবেই।" আসলেই বি এস এফ জওয়ানেরা কি একের পর এক বাঙালি কে হত্যা করাকে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে নাকি ? যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানরা বাংলাদেশের এক বৃদ্ধকে নির্যাতনের পর হত্যা করে,তার লাশ সীমান্তবর্তী একটি গাছের উপর ঝুলিয়ে রেখেছে । অবাক লাগে - মানুষ কিভাবে এত বর্বর হয় ? কেন হয়?

বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৩

আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি ........

কলেজ লাইফ টা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল আসলেই। আগামীকাল কলেজের শেষ ক্লাস ,এরপর Rag Day , টেস্ট পরীক্ষা , এইত । অনেক তাড়াতাড়ি চলে গেল সময়টা - অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে দিয়ে গেল । সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা শিখিয়ে গেল তা হল , আমাদের প্রত্যেকের চারপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে আমাদের জগত । তাদের অধিকাংশই একটা বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে চায় । পড়াশুনা , চাকরি , কাউকে ভাললাগা -ভালোবাসা , কলেজের অধিকাংশ মেয়েই এ...ই চক্রের মধ্যে আটকে থাকতেই ভালোবাসে। এই বৃত্তের বাইরে কেউ যাওয়ার চেষ্টা করলে সবার কাছে সে হয়ে ওঠে অনেক দূর গ্রহের কোন প্রাণী । আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি , বাবা -মাকে কষ্ট দিয়ে প্রেম করা কলেজের মেয়েগুলোর কাছে যতটা স্বাভাবিক , মা এর হাত ধরে শাহবাগ যাওয়া তাদের কাছে ততটা স্বাভাবিক না। নকল করতে কিংবা কলেজে করা অন্যায় এরকম অনেক বড় বড় কাজ করতে এরা একজন আরেকজনকে সাহায্য করবে । কিন্তু তুমি শাহবাগ যাও , শাহবাগের পক্ষে লেখালেখি কর ? তোমাকে সিস্টারের কাছে ধরিয়ে দেয়া এই মেয়েদের পবিত্র দায়িত্ব। প্রেম আর সাজগোজ যাদের জীবনের সবকিছু তারা কিভাবে বিপ্লবের মর্মার্থ বুঝবে ?

মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে নতুন সূর্য ওঠার এইত সময়

বাঙালি সংগ্রামী জাতি , বাংলাদেশের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস , রক্তের ইতিহাস। তাই যুগে
যুগে বাংলা মা এর দামাল সন্তানেরা জীবন মায়া তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পরে দেশ মা কে মুক্ত করার সংগ্রামে। বায়ান্ন , বাষট্টি , উনসত্তর, একাত্তরের পর এখন ২০১৩ সাল। এখন যৌবন যার , মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময় - এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়। এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে আবারও বাংলার মাটিতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে - আবারও জীবন বাজি রেখে দেশ মা এর জন্য রাজপথে নেমে এসেছে একদল তরুন - তরুণী। প্রতিপক্ষ কিন্তু সেই এক ই - বায়ান্ন , বাষট্টি , ছেষট্টি  উনসত্তর , একাত্তরের সেই পরাজিত প্রতিপক্ষ।

একদল মানুষ যখন ঘরে বসে ছুটির দিনে টেলিভিশন দেখছেন পরিবার -পরিজন নিয়ে , তখন একদল তরুন প্রবল ক্রোধে - আক্রোশে - বিপ্লবের বহ্নিশিখা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসছে রাজাকারের ফাসির দাবিতে । কেউ যখন বিভিন্ন রকম অপারগতার দোহাই দিয়ে , অফিস -আদালত -স্কুল -কলেজ -পরিবারে বাধার দোহাই দিয়ে শাহবাগের সহযাত্রী হওয়া থেকে দূরে থাকতে চাইছেন , কোন কিশোরী তখন হুইলচেয়ারে বসে শাহবাগ ছুটে আসছে , কোন তরুন তখন খালি হাতে রাস্তায় নেমে পরছে , যে করেই হোক তাকে যে শাহবাগ পৌঁছাতেই হবে।

সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৩

কসাই এর ফাসি কার্যকর হতে আর কত দেরি ? জামাত -শিবির নিপাত যাক , জয় বাংলার জয় হোক

যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের অভূতপূর্ব জাগরন শাহবাগ আন্দোলন কে বিতর্কিত করার জন্য প্রথম থেকেই জামাত - শিবির নানা রকম অপপ্রচার চালিয়ে গেছে। কিন্তু আন্দোলন এগিয়ে গেছে তার নিজস্ব গতিতেই। গত ৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৩ তারিখে কসাই কাদেরের ফাঁসির রায় না হওয়ার ক্ষোভ থেকে যে শাহবাগ আন্দোলনের জন্ম , তা এর ই মধ্যে পার করেছে আটটি মাস। এই শাহবাগ আমাদেরকে দিয়েছে সাইদি , কামরুজ্জামান , মুজাহিদ , সাকা , কাদের... কসাই এর ফাসির রায় । বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ৪২ বছরে যা হয়নি , শাহবাগ আন্দোলনের কারনে তাই সম্ভব হয়েছে । একসময় যেই রাজাকারদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ত , সেই রাজাকারদের কে বিচারের মুখোমুখি করে ফাসির রায় দেয়া সম্ভব হয়েছে ।

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

বসন্ত আজ বন্ধুরা দেখ , গণদাবী হয়ে বাজে ......।

জানো , দূর আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র গুলোর মধ্যে আমাদের সবার একজন মা আছেন। আমার জন্মদাত্রী মা এর পর আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ , মা জাহানারা ইমাম । মা এর দেখানো পথ ধরে তার সন্তানেরা যখন দৃপ্ত পদক্ষেপে পতাকা হাতে এগিয়ে যায় , তখন হয়ত মা অনেক খুশি হন । যখন কসাই এর ফাসির রায় না হওয়াতে মা এর সন্তানেরা রাস্তায় নেমে আসে ৫ ই ফেব্রুয়ারিতে , স্লোগানে -মিছিলে রাজপথ কাপিয়ে তোলে , তখন মা হয়ত সন্তানদের দিকে চেয়ে থাকেন , হয়ত একটু তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলেন এই ভেবে যে বিয়াল্লিশ বছর পরে হলেও এক ই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই সন্তানেরা আবার জেগে উঠেছে। জানো , কোন রাজাকারের ফাসির রায়ের পর বিজয় মিছিলে সন্তানদের সাথে মা ও থাকেন , এখন তিনি সুদূর আকাশের বাসিন্দা হলেও , এই আন্দোলনের জন্ম যে মা এর হাতেই ।

শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩

রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি , বাংলাদেশের নাম

গতকাল থেকে একের পর এক মুভি দেখছি । দেখলাম "গেরিলা" , "পলাশী থেকে ধানমণ্ডি" , "একাত্তরের যীশু" । মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা গুলো যতবার ই দেখি , নিজের অজান্তে চোখে পানি চলে আসে। এই মুভিগুলোর মধ্যে একাত্তরের যীশু বাদে বাকি সবগুলোই আগে অনেক অনেক বার দেখা , তারপরেও বার বার দেখতে ইচ্ছা করে। বাঙ্গালি চিরন্তন সংগ্রামী জাতি - যার প্রমান ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬ ,১৯৬৯ , ১৯৭১ কিংবা ২০১৩। বার বার প্রতিপক্ষ কিন্তু সেই একই। পরাজিত হায়েনারা বার বার বাঙ্গালিকে আক্রমন করে ,নিঃশেষ করে দিতে চায় , কিন্তু বিপুল প্রানশক্তি আর দেশপ্রেমের অধিকারী বাঙালি জাতি যে হার মানতে শেখেনি । আর তাই বুকের রক্তে পিচঢালা রাজপথ , বাংলার সবুজ শশ্যক্ষেত রক্তিম করে তারা ছিনিয়ে আনেন বিজয় ।

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৩

একাত্তরের হাতিয়ার , গর্জে উঠুক আরেকবার । শহীদজননীর বাংলায় , রাজাকারের ঠাই নাই

তোমরা কি জান আমার প্রথম ভালোবাসার নাম কি ? জানো আমার ভালোবাসা আমার হাতে গোলাপ ফুল নয় , পতাকা তুলে দিয়েছে । আমাকে কাঁদতে নয় , দুর্জয় স্লোগান তুলতে শিখিয়েছে ।আমাকে নীরবতা ভেঙ্গে চিৎকার করে উঠতে শিখিয়েছে । আমাকে পুতুল খেলার হাতে বাঁশের লাঠি ধরতে শিখিয়েছে । আমাকে সব বাধা উপেক্ষা করে "জয় বাংলা" বলতে শিখিয়েছে ।আমাকে দৃপ্ত পদক্ষেপে মিছিলে হাঁটতে শিখিয়েছে ।তোমরা কি জান সেই ভালোবাসার নাম কি ?তোমরা কি জান সেই অমর চিরন্তন প্রেমের নাম কি ?সেই প্রেমের নাম বাংলাদেশ , সেই প্রেমের নাম শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ।

জানো , এই প্রেম আমার একার নয়। বাংলাদেশ আমার মা , শাহবাগ আমার এক টুকরো বাংলাদেশ । এই প্রেমের সম্পর্ক মা এর সাথে সন্তানের যেই সম্পর্ক , ঠিক তাই । জানো , এই শাহবাগ না তোমাদের সবাইকেই ডাকে , মাতৃস্নেহে তোমাদের সবাইকেই বুকে জড়িয়ে নিতে চায় । কিন্তু মা এর সন্তান হয়েও মা এর ডাকে যে তোমরা অনেকেই সাড়া দাওনা - আমাদের পাশে না দাড়াও , বাংলা মা এর পাশে দাঁড়ানোর আহবান টাও কি নিজেদের মধ্যে অনুভব কর না ?

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৩

শাহবাগের সেই নষ্ট ছেলে


-বলো তো
কোথায় দেখেছি ছেলেটাকে?
-দেখে থাকবে হয়ত
কোনো রাস্তার মোড়ে
কিংবা কোনো অলি গলিতে।
-তাই হবে,
দেখে তো মনে হয়
রাস্তারই ছেলে!
-কিন্তু পোশাক আশাক দেখো,
মনে হয় যেন ভদ্র ঘরের ছেলে।
-কিন্তু ওর চেহারা দেখো,
রোদে পুড়ে যেন কয়লা!
আর মাথার চুল দেখো
যেন পাখির বাসা!
-হবে হয়ত
কোনো ভাল ঘরের নষ্ট হওয়া ছেলে।
নাহলে কি অমন চেহারা হয়?
-কিন্তু
আমার মনে হচ্ছে
আমি ওকে অন্য কোথাও দেখেছি।
এভাবেই ছেলেটিকে নিয়ে
আলোচনার ঝড় ওঠে চায়ের আসরে,
আর ছেলেটি উপাধি পায়
"নষ্ট ছেলে"!
ছেলেটির রোদে পোড়া চেহারা,
মাথায় জটাযুক্ত এলোমেলো চুল,
আর এক জোড়া জ্বলজ্বলে চোখ,
তীব্র সেই চোখের চাহনি!
এ রকমই তো দেখেছিলাম আমরা
আজ থেকে বিয়াল্লিশ বছর আগে
উনিশ শ' একাত্তর সালে!
স্মৃতির পাতায়
ধূলো জমতে জমতে
আমরা ভুলতে বসেছিলাম
সেই চেহারাটিকে।
কিন্তু আজ আবার
মনের মাঝে উকি দিল
সেই চেহারাটি,
যখন সেই ছেলেটিকে দেখলাম
প্রজন্ম চত্বরে!
মাথার ওপর সূর্যের হাসি
ঝলসে দিচ্ছে তার দেহকে,
রাস্তার ধূলো ময়লা আর শরীরের ঘামে
মাথার চুল হয়ে উঠেছে জটাযুক্ত,
আর তার তীব্র কণ্ঠে
ঝলসে উঠছে রক্তে দোলা দেয়া
সেই স্লোগান,
"জয় বাংলা!"
"তুমি কে আমি কে?
বাঙালি বাঙালি!"
ছেলেটি একজন প্রজন্মযোদ্ধা,
তাই তো তার এত তেজ!
যখন কেউ তাকে বলে নষ্ট ছেলে,
সে মুচকি হেসে বলে,
"হ্যা, আমিই তো শাহবাগের সেই নষ্ট ছেলে!"