শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৩

স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি , এস স্বদেশপ্রীতির মহা দীক্ষা লহি...

প্রজন্ম চত্বর - শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর কি এক অদ্ভুত ভালোবাসার টানে বেঁধে রেখেছে আমাদেরকে - এই ভালোবাসা মা এর সাথে সন্তানের ভালোবাসা , এই ভালোবাসা দেশের মাটির সাথে সেই মাটির সন্তানের ভালোবাসা। আর সে ভালোবাসা বারবার বাধ্য করে আমাকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ছুটে যেতে। শাহবাগের মাটি , শাহবাগের আকাশ - বাতাস আমাদের মহাজাগরনের স্মৃতিধারণ করে আছে। অদ্ভুত একটা ভালোলাগায় , অদ্ভুত একটা পবিত্রতায় মন ভরে যায় শাহবাগ...ের সীমানায় পা রাখলেই। আমাদের শাহবাগ - আমাদের প্রজন্ম চত্বর - আমাদের স্লোগান - মিছিল - দাবি আদায়ের মহান গণজাগরণ এক নিমিষে সব চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রতি মুহূর্তে , আর তাইত বার বার ছুটে যাই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে - জানাই প্রাণের দাবি - "রাজাকারের ফাসি চাই। আল্টিমেটাম ভুলি নাই , রাজপথ ছাড়ি নাই। শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না।"


আজ দুপুর বারোটা থেকে ছিল টেস্ট পরীক্ষা - পরীক্ষা দিচ্ছি , মন পরে আছে শাহবাগে। এক একটা অঙ্ক শেষ করি আর অস্থির হয়ে ঘড়ি দেখি , একসময় আড়াইটা বেজে গেল। কেমন লাগে ? এখন আমার শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে থাকার কথা , আমি কিনা কি এক পরীক্ষার খাতা সামনে নিয়ে বসে আছি। গুনে দেখলাম যে পাশ মার্ক্স আসবে কিনা। এরপর অস্থির অপেক্ষা করতে থাকলাম তিনটা বাজার। নানারকম চিন্তা হচ্ছিল প্রতি মুহূর্তে - শাহবাগে সবকিছু ঠিক আছে তো? কোন বোমা ফেলেনি তো আবার স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা ? সহযোদ্ধারা সবাই ঠিক মত পৌঁছেছেন তো? অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম অঙ্ক চেষ্টা করা বাদ দিয়ে আমি মনে মনে স্লোগান বলতেসি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঘণ্টা পরার সাথে সাথে খাতা জমা দিয়ে এক দৌড়ে আমি কলেজের বাইরে। মা অপেক্ষায় ছিলেন , মা কে সাথে নিয়ে সোজা প্রজন্ম চত্বরের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু। 


 সাড়ে তিনটায় রওনা দিয়েছিলাম , হেঁটে পৌছাতে বাজল সাড়ে চারটা। ততক্ষনে সমাবেশ শুরু হয়ে গেছে। চারপাশে দেখতে থাকলাম প্ল্যাকার্ড হাতে সহযোদ্ধাদের। মাকে নিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই একাত্ম হয়ে গেলাম শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের সাথে। সারাদিন পর যেন ফিরে পেলাম নিজেকে। বুঝতে পারলাম রাজাকারের ফাসির দাবি এখন রক্তের সাথে মিশে গেছে আমাদের। শাহবাগ এখন শুধুই একটা জায়গার নাম নয় , শাহবাগ বাঙ্গালির একটা নবচেতনার নাম। আর সেজন্যই শাহবাগের প্রতিটা যোদ্ধা শাহবাগে আসেন নিজেদের অন্তরের তাগিদে দেশপ্রেমের তাগিদে , ইতিহাসের দায়ভার শোধ করার তাগিদে। শাহবাগ কোন রাজনৈতিক দল নয় , শাহবাগ বাংলার প্রজন্মের স্বতঃস্ফূর্ত জাগরনে গড়া আন্দোলন। আর তাই বাংলাদেশের সাধারন মানুষ , সাধারন দেশপ্রেমিক তরুন - তরুণীর পদচারনায় , স্লোগানে , মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে শাহবাগে - একবার নয় বারবার।


 এই জাগরনের হাত ধরে এসেছে কাদের কসাই এর ফাসির রায় - প্রজন্ম চত্বরের জাগরন না হলে যা কল্পনাতীত ছিল। আরও এসেছে সাইদি , কামরুজ্জামান , মুজাহিদ , সাকা , মইনুদ্দিন , আশরাফুজ্জামান এর ফাসির রায়। নিবন্ধন বাতিল হয়েছে জামাতের , বাঙ্গালির ব্যালট পেপার মুক্ত হয়েছে দাঁড়িপাল্লা নামক ঘৃণ্য প্রতীকের হাত থেকে। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায় , স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে শেখায়। শাহবাগ আমাদের শেখায় বাঙালি এক হলে মহাবিস্ফোরণ ঘটতে বাধ্য। বাংলা মাএর কলঙ্কমুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামা, এক ই দাবিতে নয় মাস ধরে জেগে থাকা , একের পর এক দাবি আদায় করে নেয়া এসব আমরা করেছি - আমরা , যারা একসময় শুধুই পড়াশুনা , খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকা কিশোর - কিশোরী , তরুন - তরুণী- দেশ মা কে রাজাকারমুক্ত করার শপথে আজ তারাই অনভ্যস্ত কণ্ঠে দুর্জয় স্লোগান তুলে নিয়েছি , ফুলের মালা গাঁথার হাতে জ্বালিয়েছি আলোর মশাল - জানিয়ে দিয়েছি - জামাত শিবির রাজাকারের কোন স্থান এই বাংলার মাটিতে নেই।


"শহীদ যোদ্ধা বীরাঙ্গনারা ইতিহাস সুরে জাগে ,
যৌবন যায় ইতিহাস গড়ে আজকের শাহবাগে...।"


জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন