মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

শহীদযোদ্ধা বীরাঙ্গনারা ইতিহাস সুরে জাগে , যৌবন যায় ইতিহাস গড়ে আজকের শাহবাগে...

নীল আকাশের বুকেও তিল তিল করে জমতে থাকে ধুসর মেঘের কণা। একটি , দুটি , তিনটি , দশটি করে একসময় পুরো আকাশ ছেয়ে যায় ধুসর কালো মেঘে। বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পরে আকাশে জমা হওয়া সেই মেঘের দল। আগ্নেয়গিরির মধ্যেও হাজার বছর ধরে সঞ্চিত পদার্থ একসময় লাভা হয়ে বের হয়ে আসে , আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়। চিরদিনের শান্তিপ্রিয় একটি জাতিকেও একসময় অধিকার আদায়ের জন্য জেগে উঠতে হয় আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের মত । শান্তিপ্রিয় , ...নিরীহ একটা জাতিকেও দুর্জয় স্লোগানে একদিন রাজপথে নামতে হয় - দেশ মাকে রক্ষার শপথে গর্জে উঠতে হয়। তিল তিল করে জমতে থাকা ক্ষোভ একদিন মহাবিস্ফোরণে পরিণত হয় আর সেই মহাবিস্ফোরণের শক্তিতে সব অন্যায় ধুলিস্যাৎ হয়, রচিত হয় দাবি আদায়ের ইতিহাস। হ্যা , আমি বাঙালি জাতির কথাই বলছি।
 

ইতিহাস ফিরে আসে , ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। পলাশী থেকে ধানমণ্ডিতে ইতিহাস ফিরে আসে সুতীব্র বেদনা আর বুকফাটা আর্তনাদের ইতিহাস হয়ে। একাত্তর থেকে ২০১৩ তে ইতিহাস ফিরে আসে জাগরণের ইতিহাস হয়ে , মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হয়ে।  বুকের ভেতর হাজার বছর ধরে জমা হওয়া ক্ষোভ ইতিহাস হয়ে ফিরে আসে বারবার সুতীব্র স্লোগানের মাঝে , অন্ধকারে খা খা সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিকের মাঝে , বন্ধুর হাতে তারার মত জ্বলজ্বলে এক রাঙ্গা পোস্টারের মাঝে কিংবা শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভার মাঝে... কিংবা শাহবাগে সমবেত জনতার উত্তাল জনস্রোতে। '৫২ , '৬২ , '৬৬ , '৬৯ ,'৭১ , '৯২ , '১৩ তে সেই এক ই ইতিহাস বার বার ফিরে আসে - এক ই প্রতিপক্ষ , এক ই  স্লোগানের ভাষা ... "তোমার আমার ঠিকানা , পদ্মা মেঘনা যমুনা" , "জয় বাংলা..."
 

বাঙ্গালির জাগরণ কখনও বৃথা যায়না ... বাঙ্গালির ইতিহাস ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস , গনঅভ্যুত্থানের ইতিহাস , মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আর সেজন্যই বাঙালি কখনও হারতে জানে না , আপোষনামা লিখতে জানে না। বাঙালি  কৃষক - শ্রমিক - ছাত্র - তরুন - তরুণীরা প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে , মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে জানে , বাঙালি ছাত্র - শিক্ষক - কিশোর - কিশোরী মুক্তির গান গেয়ে প্রহরীর মত জেগে থাকতে পারে প্রজন্ম চত্বরে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাঙালি মা গণআদালত গঠন করতে পারেন রাজাকারদের বিরুদ্ধে , গোলাম আজমসহ সব রাজাকারের ফাসির দাবি করতে পারেন। এত প্রাণশক্তিতে ভরপুর একটা দেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে আমি গর্বিত। বাংলাদেশ আমার মা... আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালবাসি...
 

এক একটা রাজাকারের ফাসির রায় আমাদের আন্দোলনের এক একটা বিজয় , বাঙ্গালির এক একটা বিজয়।  এক একটি ফাসির রায় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বিয়াল্লিশ বছরের কলঙ্কমুক্তির পথে এক একটি ধাপ অগ্রসর হওয়া। আজ কাঁদতে আসিনি , আজ আমরা ফাঁসির দাবিতে একতাবদ্ধ হয়েছি। তাই যে কসাই কাদেরের বিজয় চিহ্ন না মানতে পেরে প্রজন্ম চত্বরের মহাজাগরনের জন্ম , এবারের বিজয় দিবসের আগে অন্তত সেই কসাই কাদেরের ফাঁসিটা কার্যকর চাই। এবারের বিজয় দিবস হোক রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবস ... এবারের বিজয় দিবস হোক বাঙ্গালির একতাবদ্ধতার ইতিহাস। পৃথিবীর যেখানেই বাঙালি সেখানেই ছড়িয়ে যাক বিজয় উৎসব -২০১৩। বিকাল চারটা একত্রিশ মিনিটে সবাই এক হয়ে গাইব -"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ..."
 

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন