রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৩

মায়ের বক্ষ ঝাঁজরা করিয়া হাসিয়াছ অট্টহাসি , বাঙালি হাসিবে পরান ভরিয়া দেখিয়া রাজাকারের ফাসি

কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে এসে ফেসবুকে লগ ইন করেই দেখলাম সুখবর। আলবদর নেতা চৌধুরী মইনুদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খানের ফাসির রায় হয়েছে।এক একটা রাজাকারের ফাঁসির রায় এক একটা বিজয় আমাদের। এক একটা কুলাঙ্গারের এক একটা রায় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের কলঙ্কমোচনের পথে এক একটা ধাপ পার হওয়া। সেই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আজকে নভেম্বর মাস - নয় মাস পার হয়ে গেছে এই রাজাকারের ফাঁসির দাবি নিয়ে। মাঝে মাঝে ভাবতে খুব অবাক লাগে আব...ার খুব গর্বও হয় যে আর কোন দাবি নিয়ে আমরা একটানা রাজপথে থাকতে পারি আর না পারি , একমত হই বা না হই- জামাত -শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিয়াল্লিশ বছর পরে এসে আবার এক হতে পেরেছি। আর কোন দাবি নাই , রাজাকারের ফাসি চাই স্লোগানে সমবেত হতে পেরেছি শাহবাগে , যেই শাহবাগের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের জাতীয় আন্দোলনের অনেক ইতিহাস। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর থেকে একটু পিছনে সরে এসো , খুজে পাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান - যেখানে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন বাঙ্গালির স্বাধীনতার ডাক। এই শাহবাগ ধারন করে রেখেছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি, ধারন করে রেখেছে বিয়াল্লিশ বছর পর বাঙ্গালির নব্জাগরনের ইতিহাস - নতুন আশায় , নতুন ভালোবাসায় মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী এই নবইতিহাস গড়ার চত্বর টির নাম দিয়েছেন প্রজন্ম চত্বর।

এই শাহাবাগে কারা ছুটে আসে জানেন ? বাংলাদেশের সাধারন তরুন - তরুণী , কিশোর - কিশোরী , শিশু , বৃদ্ধ - বৃদ্ধা। হ্যা , এখাানে অবশ্যই অনেক রাজনৈতিক দলের অনেক মানুষ আছেন - কিন্তু শাহবাগে সবার একমাত্র পরিচয় -"আমরা বাঙালি , আমরা যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই , আমরা ধর্মব্যবসার অবসান চাই , আমরা জামাত -শিবির নিষিদ্ধ চাই।" শাহবাগ হল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষের এক হয়ে দাবি জানানোর একটা প্ল্যাটফর্ম - একটা ভালোবাসার নাম , একটা চেতনার নাম , একটা মুক্তির নাম। বিয়াল্লিশ বছরের জড়তার অবসান ঘটিয়ে চিৎকার করে রাজাকারের ফাঁসির দাবি জানানোর নাম শাহবাগ। বাংলার আপামর জনতার মুখে একাত্তরের পর আবার জয় বাংলা ধ্বনির জয়গানের নাম শাহবাগ। প্রজন্ম চত্বর একটা চেতনার নাম যে চেতনা এখন ছড়িয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী প্রতিটা মানুষের অন্তরে। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের ভালোবাসার তাগিদে ছুটে আসেন বৃদ্ধা মা , একাত্তরের সন্তানহারা মা ছুটে আসেন সন্তানের খুনিদের ফাসির দাবি নিয়ে , ছুটে আসে একাত্তরের দিনগুলি পড়ে অঝোরে চোখের পানি ঝরানো তরুণী ।এই দাবি জানাতে স্লোগানে - মিছিলে শাহবাগে রাত ভোর হয়ে যায় , নব ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে জেগে থাকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর।

এই জাগরণের উপহার হয়ে জেগে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা একটা প্রজন্ম , নির্দ্বিধায় যারা সব বাধা , সব শৃঙ্খল ভেঙ্গে ঘোষণা করতে পারে -"ক তে কাদের মোল্লা , তুই রাজাকার , তুই রাজাকার।" এইসব কারণেই এখন যখন শাহবাগে যাওয়ার কারনে বাবার কাছে অহরহ খারাপ ব্যবহার সহ্য করতে হয় কিংবা কলেজ থেকে বহিস্কার হতে হয় কিংবা একসময়ের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয় কিংবা আক্রমনের শিকার হতে হয় - তখন কষ্ট পাওয়ার বদলে অদ্ভুত রকম একটা আনন্দ হয় আমার , আনন্দ এইজন্য যে আমি পারছি, আমরা পারছি। এইসব বাধা তো শুধু আমার না , শাহবাগের প্রত্যেকটা আন্দোলন কারীকে এসব সহ্য করতে হচ্ছে। আর তাই আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করি এক একটা রাজাকারের ফাসির রায়ের। দিনশেষে যখন শুনি কোন রাজাকারের ফাসির রায় হয়েছে , একটা পবিত্র আনন্দে মন ভরে যায় , সব দুঃখ - বেদনা কোথায় হারিয়ে যায়। নয় মাসের আন্দলনের ফলশ্রুতিতে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর এখন মিশে গেছে রক্তের প্রতি কণায় কণায়। রাজাকারের ফাসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই। শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না।

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের, জয় হোক স্বাধীনতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন