শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

হাতে কোন সময় নাই , ডিসেম্বরে কাদের কসাইয়ের ফাসি কার্যকর চাই।

ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তেভেজা বাংলার মাটি ... রক্তের দাম দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ কে স্বাধীন করেছেন ... দুই লক্ষ মা -বোন হয়েছেন নির্যাতিতা ...। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে , বাবার সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করেছে পাকিস্তানি হায়েনা আর তাদের দোসর রাজাকার -আল বদরেরা। মায়ের কোল থেকে সদ্য জন্ম নেয়া শিশু সন্তানকে কেড়ে নিয়ে বেয়োনেটের আঘাতে রক্তাক্ত করেছে সদ্য জন্ম নেয়া প্রাণকে ... পবিত্র কুরআন ...পাঠরতা মহিলার কোল থেকে কুরআন শরীফ ফেলে দিয়ে হায়েনারা সেই মাকে ধর্ষণ করেছে , হত্যা করেছে। হিন্দু - মুসলিম - বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান সব ধর্মের , কামার -কুমার -জেলে -চাষি -মজুর সব শ্রেণী পেশার মানুষের ভালোবাসার বাংলাদেশকে এরা রক্তাক্ত করেছে বোমা -গুলি -বেয়োনেট ... ধ্বংসযজ্ঞের সবরকম মারণাস্ত্রের আঘাতে ...।

এই হায়েনাদের হাত থেকে বাংলা মাকে রক্ষা করার জন্য হাসিমুখে নিজেদের সন্তানদের দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন বাংলার মায়েরা। বলেছেন, "যা তোকে দেশের জন্য কুরবানি করে দিলাম , যা তুই যুদ্ধেই যা।" ছেলের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছেন মা , ভাইয়ের জন্য অপেক্ষায় বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছে বোন , স্বামীর জন্য স্ত্রী ...। এদিকে তীরহারা ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে লড়ে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ঘরবাড়ির ঠিকানা নাই , দিনরাত্রি জানা নাই - যুদ্ধ , শুধুই যুদ্ধ ... দেশ মায়ের মুক্তির জন্য যুদ্ধ । নিশ্চিত ভবিষ্যৎ কে নিজ হাতে দূরে সরিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন শহীদ রুমী -আজাদের মত অনেক মুক্তিযোদ্ধা ... নববধূকে ঘরে রেখে মুক্তিযুদ্ধে ছুটে এসেছেন স্বামী...নিজের সর্বোচ্চ সাধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন বাংলার আপামর জনতা ...।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পরাজিত হয়ে একদিন বাংলা ছেড়েছে পাকিস্তানি হানাদাররা। রেসকোর্স ময়দান , যেখানে ৭ ই মার্চ ,১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন ঠিক সেখানেই রচিত হয় নতুন ইতিহাস ... একটি বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস ...। জীবন বাজি রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই , ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা মায়ের অশ্রুর দামে লিখা হয় বাংলাদেশের নাম। এই বাংলাদেশের প্রতি কণা মাটি রক্তের দামে কেনা ... সেই রক্তে লেখা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে জেগে থাকে শহীদ মিনার , স্মৃতিসৌধ ... বায়ান্ন থেকে একাত্তরে রক্তভেজা পথের সাক্ষী হয়ে কি রোদে , কি বৃষ্টিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে স্মৃতির মিনার ... রক্তের স্মৃতি , শহীদের স্মৃতি , বিজয়ের স্মৃতি ...।

আজ ২০১৩ সাল ... সময়ের পরিক্রমায় আবার এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর । মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিয়াল্লিশ টি বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে এবারের ডিসেম্বর অনেকটাই আলাদা। কারণ স্বপ্নের সিঁড়ি নির্মাণের কাজ যে প্রায় শেষপ্রান্তে ...। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে একাত্তরের ঘাতকেরা ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে যে অতল অন্ধকারে নিক্ষেপ করেছিল তা থেকে উত্থানের প্রথম পদক্ষেপ রচিত হয়ে গেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে। এখন রক্তে লেখা বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে সেই জাগরণের চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষা ... কসাই কাদেরের ফাসি কার্যকরের অপেক্ষা । যে রাজাকারেরা আমাদের বাংলা মায়ের বুকে রক্তের খেলায় মেতেছিল , এই দেশেই তারা একসময় মন্ত্রী হয়েছিল ... তাদেরকে আজ শোনানো সম্ভব হয়েছে ফাসির রায় , তারা আজ জেলে গুনছে মৃত্যুর প্রহর ... এর চেয়ে বড় আনন্দ বাঙ্গালির জন্য আর কি হতে পারে ?

তাই এ বিজয়ের মাস কলঙ্কমুক্তির ... এ বিজয়ের মাসেই কার্যকর চাই কাদের কসাই এর ফাঁসি ... স্বপ্নের সিঁড়ির শেষ ধাপের নির্মাণকাজ শেষ হোক এই ডিসেম্বরেই ... সে সিঁড়ি ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সুখী -সমৃদ্ধ আগামীর দিকে। আর সবচেয়ে বড় কথা এই মুহূর্তে যেটা তা হল রাজাকারের জন্য কোন রকম মানবতার প্রশ্ন নয়। কসাই কাদেরের কবর স্বাধীন বাংলার মাটিতে হতে দেয়া যাবে না। মানুষের লাশ সম্মানের দাবি রাখে , রাজাকারের লাশ না। কাদের কসাই যখন আমাদের বাবা -মা -ভাই -বোনদের গুলি করে , বেয়োনেট দিয়ে মেরেছিল তখন কোথায় ছিল মানবতা ? এদের জন্য আমরা জানি না মা জাহানারা ইমামের সন্তান শহীদ রুমীর কবর কোথায় ... আমরা জানি না কোথায় শুয়ে আছেন মা সাফিয়া বেগমের একমাত্র সন্তান শহীদ আজাদ ... জানি না কোথায় আছেন সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ ... জানিনা কোথায় আছেন মোমেনা বেগমের বাবা হযরত আলী ...।

কাদের কসাই কে বাংলার মাটিতে কবর দেয়া যাবে না কারন এই বাংলার মাটিতে ত্রিশ লাখ শহীদ শুয়ে আছেন , বঙ্গবন্ধু শুয়ে আছেন , শহীদজননী শুয়ে আছেন। যারা কাদের কসাই এর কবর বাংলার মাটিতে হলে কোন ক্ষতি দেখেন না তারা কি পারবেন আমাদেরকে একবার বলতে শহীদ রুমী -বদি -আজাদ -আলতাফ মাহমুদ এর কবরটা কোথায় ? উত্তর দিতে পারবেন মোমেনা বেগম কে তাঁর বাবার কবরটা কোথায় ? পারবেন না। আর এইজন্যই রাজাকারের কবর স্বাধীন বাংলায় হতে দেয়া যাবে না। এই বিজয়ের মাসে কার্যকর হোক রাজাকারের ফাসি ... শুভসূচনা হোক নতুন আগামির । এবারের বিজয় দিবসে বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে সারা বিশ্বের সকল বাঙালি এক হয়ে গাইব আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত , গড়ব নতুন বিশ্ব রেকর্ড । জয় বাংলা ...।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন