বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৩

কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে নতুন সূর্য ওঠার এইত সময়

ফেব্রুয়ারি মাস , ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস - জীবনটা সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে এই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। সেই ৫ ফেব্রুয়ারিতে কসাই কাদেরের রায় , রায়ে ফাসি না হওয়া- বাঙালি নামক জ্বলন্ত দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে যেন বারুদ ঢেলে দিল। এরপর যা ঘটল তা ইতিহাস - শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে বাঙ্গালির বিগ ব্যাং - চেতনার মহাবিস্ফোরণ। বিয়াল্লিশ বছর ধরে অন্তরে ধারন করে রাখা দাবি কণ্ঠে তুলে নিয়ে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে নামলো বাঙ্গালির... জনসমুদ্রের মহাস্রোত। শাহবাগ এমন একটা জাগরনের নাম যেটার মূল উৎস চিরবিপ্লবী বাঙালি হৃদয়। প্রজন্ম চত্বর বিয়াল্লিশ বছরের অভ্যস্ত নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে বাঙ্গালির মহাজাগরনের নাম - স্লোগানে - মিছিলে উত্তাল ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের জাগরণের নাম। 
 

শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর আমাকে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিল সম্পূর্ণ অন্য এক "আমি"র সাথে। শাহবাগের জন্ম কোন রাজনৈতিক জনসভা থেকে হয়নি , কোন রাজনৈতিক নেতার হাত ধরে হয়নি। শাহবাগের জন্ম হয়েছে বাঙ্গালির অন্তর থেকে আসা দাবিকে প্রকাশ করার তীব্র প্রেরনা থেকে। তা না হলে কলেজ , পড়াশুনা এর বাইরে কখনও যাওয়ার কথা যে আমি চিন্তাই করতে পারতাম না - সেই আমি কিভাবে পারলাম মা কে নিয়ে শাহবাগ যেতে ? কিভাবে পারলাম বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ? কিভাবে পারলাম কলেজের শাস্তিকে তুচ্ছ করে শাহবাগে যেতে? শাহবাগ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের তেজে জ্বলে ওঠা বাঙ্গালির নবজাগরণের নাম , যে নবজাগরণের সবচেয়ে বড় সফলতা একাত্তরের চেতনায় একটি প্রজন্মের জাগরণ।
 

শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না - প্রজন্ম চত্বর দেখিয়ে দিয়েছে বাঙ্গালির অন্তরের বিপ্লবী সত্ত্বা এখনও জেগে আছে। রাজাকারের ফাসি বাঙ্গালির প্রাণের দাবি , ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বদলা নেয়ার দাবি। আমার সবচেয়ে অবাক লাগে কলেজ থেকে সাসপেন্ড করার সময় যখন স্বীকারোক্তি লিখতে বলেছিলেন সিস্টার তখন লিখেছিলাম -"ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বদলা নিতে চাই বলে শাহবাগ যাই , কোন রাজনৈতিক কারণে নয়।" কিন্তু সিস্টার এই কথাটাকেও রাজনৈতিক কথাই মনে করেছিলেন...। প্রজন্মের এই নবজাগরণের অংশ হতে পেরে , ২০১৩ সালের ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে আমি গর্বিত। জাফর ইকবাল স্যার শাহবাগে যে কথাগুলো বলেছিলেন সে রেকর্ড টা শুনলে এখনও আমার কান্না আসে - বিশেষ করে - "২০১৩ সাল ১৯৭১ হয়ে গেছে। তোমরা যারা ১৯৭১ দেখনি , এখন সুযোগ পেয়েছ , ২০১৩ সালকে ১৯৭১ করে দেখার জন্য।"
 

গত নয়টা মাস নিয়ে যদি ভাবতে বসি , অদ্ভুত একটা আনন্দ হয় এই ভেবে যে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বিয়াল্লিশ বছরে যা সম্ভব হয়নি তা আমরা করতে পেরেছি । যে রাজাকারগুলো একসময় মন্ত্রী হয়েছিল এই ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশে , তাদেরকে আমরা অন্তত ফাসির রায়টুকু তো শোনাতে পেরেছি , বাংলাদেশের মানুষ যে রাজাকারদের ঘৃণা করে অন্তর থেকে অন্তত এতটুকুর তো বহিঃপ্রকাশ করতে পেরেছি। বাংলাদেশে বিজয় চিহ্ন থাকবে বাঙ্গালির হাতে , কোন রাজাকারের হাতে নয় - এতোটুকু তো প্রমান করতে পেরেছি। যে রাজাকারের ফাসির দাবি তোলায় মা জাহানারা ইমাম কে দেশদ্রোহীর অপবাদ পেতে হয়েছিল সে দাবিকে আবার কণ্ঠে তুলে নিয়ে সেই স্মৃতিবিজড়িত শাহবাগেই আবার জাগতে তো পেরেছি। রাতে ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝে বলে উঠি আমি -"কসাই এর ফাসি কার্যকর কি হবে না?" সকালে উঠে নিজেকে সান্তনা দেই - যা পেয়েছি তাই বা কম কিসে? লাইফ ইজ বিউটিফুল
 

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন