বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৩

আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি ........

কলেজ লাইফ টা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল আসলেই। আগামীকাল কলেজের শেষ ক্লাস ,এরপর Rag Day , টেস্ট পরীক্ষা , এইত । অনেক তাড়াতাড়ি চলে গেল সময়টা - অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে দিয়ে গেল । সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা শিখিয়ে গেল তা হল , আমাদের প্রত্যেকের চারপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে আমাদের জগত । তাদের অধিকাংশই একটা বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে চায় । পড়াশুনা , চাকরি , কাউকে ভাললাগা -ভালোবাসা , কলেজের অধিকাংশ মেয়েই এ...ই চক্রের মধ্যে আটকে থাকতেই ভালোবাসে। এই বৃত্তের বাইরে কেউ যাওয়ার চেষ্টা করলে সবার কাছে সে হয়ে ওঠে অনেক দূর গ্রহের কোন প্রাণী । আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি , বাবা -মাকে কষ্ট দিয়ে প্রেম করা কলেজের মেয়েগুলোর কাছে যতটা স্বাভাবিক , মা এর হাত ধরে শাহবাগ যাওয়া তাদের কাছে ততটা স্বাভাবিক না। নকল করতে কিংবা কলেজে করা অন্যায় এরকম অনেক বড় বড় কাজ করতে এরা একজন আরেকজনকে সাহায্য করবে । কিন্তু তুমি শাহবাগ যাও , শাহবাগের পক্ষে লেখালেখি কর ? তোমাকে সিস্টারের কাছে ধরিয়ে দেয়া এই মেয়েদের পবিত্র দায়িত্ব। প্রেম আর সাজগোজ যাদের জীবনের সবকিছু তারা কিভাবে বিপ্লবের মর্মার্থ বুঝবে ?

এই কথাগুলো লিখতে সত্যি বলছি আমারও অনেক খারাপ লাগে। কিন্তু কি করব ? আজকে ইংরেজি ক্লাসে দেখলাম একজন শিক্ষক আমাদের কে বললেন "চেন্নাই এক্সপ্রেস" সিনেমাকে কেন্দ্র করে ডায়ালগ লিখতে। আমি জীবনে হিন্দি সিনেমা দেখেছি একটা তাও অনেক অনেক আগে । চেন্নাই এক্সপ্রেস দেখার প্রশ্নই আসে না। কাজেই কি লিখব কিছু বুঝতে না পেরে গল্পের বই নিয়ে বসলাম - সমরেশ মজুমদারের "উত্তরাধিকার" । পড়তে পড়তে মনে হল - আচ্ছা , ম্যাডাম কি "আমার বন্ধু রাশেদ" নিয়ে লিখতে বলতে পারতেন না ? একটা হিন্দি সিনেমা নিয়ে যদি ক্লাসে লিখতে বলা হয় - তাও আমার মনে হয়না এই সিনেমায় খুব শিক্ষণীয় কিছু আছে - এরকম একটা সিনেমাকে যদি শিক্ষকেরাই এভাবে হাইলাইট করেন , তাহলে আমরা কিছু মানুষের সচেতনতা দিয়ে কি করতে পারব? এরপর যা হল তা আমি কল্পনা করতে চাইনা আর - শিক্ষক , ছাত্রী সবাই মিলে এই মুভির গল্প খুবই উপভোগ করে আলাপ -আলোচনা চলতে লাগলো । আমি উত্তরাধিকারে মন দিলাম , জানি কলেজে বসে গল্পের বই পড়া অপরাধ -কিন্তু বাংলা সাহিত্য - সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে হিন্দি সংস্কৃতিকে গ্রহন করার চেয়ে বড় অপরাধ নিশ্চয়ই নয় ।

এখনও অনেক অসুস্থ আমি , মনের দিক থেকে যত শক্তই হই না কেন । ইঞ্জেকশন , ডাক্তার , কলেজ সব মিলিয়ে ভাল থাকার রাস্তা যেন সব একসাথে বন্ধ হয়ে গেছে । তবে এর মধ্যেও খুশির আমেজ বয়ে আনল দুইটা খবর - এক , নভেম্বরে কাদের কসাই এর ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনা । দুই , জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সাত নভেম্বর । তাহলে বি এন পি তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে আন্দোলন করুক যা খুশি তাই করুক সেটা আমার জন্মদিন মানে ২৫ অক্টোবরে করার কোন যৌক্তিকতা নেই। আর তারা কসাই এর ফাসি ঠেকানোর উদ্দেশ্যেও সফল হইতে পারবে না , স্বাধীন বাংলার মাটিতে মা জাহানারা ইমামের স্বপ্ন , বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন , আমাদের প্রজন্মের স্বপ্ন , মুক্তিযোদ্ধা - বীরাঙ্গনাদের স্বপ্ন সফল করে রাজাকারের ফাসি এবার হবেই। বাংলার মাটি রাজাকারমুক্ত হবেই।

আগামী নভেম্বরেই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছে বলে জানা গেছে। জার্মান থেকে আনা হচ্ছে ফাঁসির দড়ি। খোঁজা হচ্ছে জল্লাদ। অন্তত হাফ ডজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী জল্লাদ হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে কারাসূত্রে জানা যায়। তবে এখনো কাউকে জল্লাদ হিসেবে নির্বাচন করা হয়নি। একে একে সকল আসামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে একাধিক জল্লাদের প্রয়োজন হবে বলে বেশ কয়েকজন জল্লাদকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে বলে কারাগারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, এমাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। রায়ের কপি পেলেই কারা কর্তৃপক্ষ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করবে।

যাক , তাহলে আনন্দ মিছিল করার প্রস্তুতি নিতে পারি আমরা - কি বলেন ? আর একটা দাবি কিন্তু আছে - কসাই এর কবর স্বাধীন বাংলার মাটিতে কোনভাবেই হতে দেয়া যাবে না। এই মাটিতে ত্রিশ লাখ শহীদ ঘুমিয়ে আছেন , বঙ্গবন্ধু ঘুমিয়ে আছেন , শহীদজননী ঘুমিয়ে আছেন, ঘুমিয়ে আছেন আরও অনেক বীর সেনা। এই পবিত্র মাটিতে আমরা রাজাকার কাদের কসাই এর কবর হতে দেব না ।

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু । জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গনজাগরন মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন