মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

প্রজন্মকে পিছনে ঠেলে দিতে চায় কে বা কারা ?

প্রজন্ম চত্বর একটি মহাবিস্ফোরণের নাম যে বিস্ফোরণ ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সবরকম অহংকারকে। প্রজন্ম চত্বর শুধু একটি জায়গার নাম নয় , এটি একটি চেতনার মহাসমুদ্রের নাম যা ঘর থেকে বাইরে বের করে এনে প্রাণের দাবি জানাতে উৎসাহী করেছে বিয়াল্লিশ বছর ধরে অভ্যস্ত নীরবতায় আচ্ছন্ন থাকা জাতিকে। প্রজন্ম চত্বর সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়ার নাম যে বাঙালি এ...খনও জেগে আছে , চিরকাল জেগে থাকবে। প্রজন্ম চত্বর লাল - সবুজে আচ্ছন্ন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের অক্ষয় চেতনার নাম , প্রজন্ম চত্বর মা জাহানারা ইমামের স্বপ্ন পূরণের নাম , প্রজন্ম চত্বর লাল -সবুজ শাড়ি পরা তরুণীর কণ্ঠে দুর্জয় স্লোগানের নাম , প্রজন্ম চত্বর দেশদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে জেগে থাকার নাম , প্রজন্ম চত্বর খুনি রাজাকারের গলায় ফাঁসির দড়ির নাম।

প্রজন্ম চত্বরে বাঙ্গালির নবজাগরণের কারণেই আদায় হয়েছে রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসি। পাঁচ লক্ষ মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ - প্রজন্ম চত্বরের জন্যই। প্রজন্ম চত্বর ঘুম ভাঙ্গা জাতির কণ্ঠে তুলে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অমর স্লোগান - জয় বাংলা। রাজাকাররা আর তাদের দোসর জামাত - শিবির প্রজন্ম চত্বরের বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক , তাদের নির্মম আক্রমনে শহীদ হয়েছেন রাজীব - দীপ - জগতজ্যোতি - জাফর মুন্সিরা , স্লোগান দিতে দিতে মৃত্যুবরণ করেছেন শান্ত ,প্রজন্ম চত্বরের কতজন যোদ্ধা যে আহত হয়েছেন আন্দোলনের পথযাত্রায় তার নির্দিষ্ট সংখ্যা করাও সম্ভব না। সবশেষে কিছুদিন আগেই পুলিশ নির্লজ্জ আক্রমন চালিয়েছে এই যোদ্ধাদের উপর। কিন্তু এ প্রজন্ম যে জীবন বাজি রেখেই লড়াই এ নেমেছে , জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার হলেও বাঙালি যে মাথা নোয়াবার নয়।


সেজন্যেই এতকিছুর পরও প্রজন্ম চত্বর জেগে আছে , যোদ্ধারা জেগে আছে। পাকিস্তান এবং তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে , চলবে। দেশব্যাপী চলছে পাকিস্তানি পন্য বর্জনের ক্যাম্পেইন। তাতে অংশ নিচ্ছে আমার - আপনার মতই সাধারণ মানুষ। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি এত সুন্দর এবং স্বতঃস্ফূর্ত একটা আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য উঠে - পরে লেগেছে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। প্রজন্ম চত্বরের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ , জয় বঙ্গবন্ধু কেন বলা হয়না। বিজয় -২০১৩ অনুষ্ঠানে যখন বারবার জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেয়া হয়েছে , প্রতিজন বক্তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুর কথা এসেছে বারবার , বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গানে মুখরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান - কিংবা যখন ১৫ ই আগস্টে , সাত ই মার্চে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে - তখন সমালোচকদের চোখে পরে না। যৌক্তিক সমালোচনা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য , কিন্তু দেখেও না দেখার ভান করে যে সমালোচনা তা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।

এই অযৌক্তিক সমালোচনাকারীদের টাইমলাইন এ মাত্র এক বছর আগে গেলেই দেখা যায় যে বিজয় দিবসের স্ট্যাটাস এও এরা জয় বাংলা পর্যন্ত বলেনি - জয় বঙ্গবন্ধু তো অনেক দূরের কথা। এরাই আজকে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে স্লোগান নিয়ে অভিযোগ তোলে , আওয়ামী লীগ আর গণজাগরণ মঞ্চকে প্রতিপক্ষ প্রমাণ করতে চায়। তাহলে কি বুঝব ? প্রজন্ম চত্বরকে বিতর্কিত করার জন্যেই এরা স্লোগান সচেতনতার মুখোশ পরে আসছে , তাই নয় কি? স্পষ্ট করে বলতে চাই , আওয়ামী লীগ আর গণজাগরণ মঞ্চ কখনোই প্রতিপক্ষ নয় , বরং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ভিন্ন ভিন্ন দুটি শক্তি। একটি রাষ্ট্রক্ষমতায় , একটি রাজপথে। এরা কখনই একজন আরেকজনের প্রতিপক্ষ নয়। যারা গণজাগরণ মঞ্চ আর আওয়ামী লীগকে প্রতিপক্ষ প্রমাণ করতে চায় তাদের খন্দকার মোশতাক ছাড়া আর কিছুই আমি বলতে পারি না। সেই খন্দকার মোশতাক , আওয়ামী লীগ সেজে , মুহূর্তে মুহূর্তে জয় বঙ্গবন্ধু বলে যে ছুরি বসিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ই বুকে।

সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই -শাহবাগ আমাকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের তেজে জ্বলতে শিখিয়েছে দাবি আদায়ের পথে । শাহবাগ আমাকে বিদ্রোহী কবির বাণীর মত বিদ্রোহী ভাষা শিখিয়েছে। শাহবাগ আমাকে মানুষের তরে রক্ত দিতে শিখিয়েছে ।শাহবাগ আমাকে দাবি আদায়ের পথে রাস্তায় ঘুমাতে , প্রেসক্লাবের সামনে রাতভোর হাঁটতে শিখিয়েছে । বন্ধু আর দেশ এর মধ্যে বন্ধুকে দূরে ছুঁড়ে দিয়ে দেশ কে আপন করে নিতে আমায় শিখিয়েছে শাহবাগ। প্রজন্ম চত্বর শহীদজননীর স্বপ্ন সফল করেছে , রাজাকারের ফাসি কার্যকর হয়েছে স্বাধীন বাংলার মাটিতে। প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন ছাড়া যা ছিল অসম্ভব। এত কিছুর পরও কে বলবি শাহবাগ আন্দোলন ব্যার্থ? কে বলবি আমার বাংলাদেশ কে দিয়ে কিছু হবে না? আয় আমার সামনে এসে বল। জয় বাংলা ... জয় গণজাগরণ মঞ্চ।

"হাত দিয়ে বল রুধিতে পারে কি সূর্যের আলোকে কেউ ?
আমাদের মেরে ঠেকানো যাবে না গণজোয়ারের ঢেউ...।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন