শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৩

একাত্তরের হাতিয়ার , গর্জে উঠুক আরেকবার - রাজাকারের ফাসি হোক , শহীদরা পাক ন্যায়বিচার

গত ৩০ অক্টোবর , ২০১৩ তারিখে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জালাল ভাইয়া, রাজু আঙ্কেল (রাজু আহমেদ) , হেলাল আঙ্কেল , সাইফুল ইসলাম রঞ্জু আঙ্কেল দের সাথে কিছু সময় কাটানোর, তাঁদের কাছ থেকে রনাঙ্গনের ইতিহাস , মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। বিচ্ছু জালাল ভাইয়া মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের ইতিহাস বলার এক পর্যায়ে বলেছিলেন, একবার মেলাঘর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন তাঁরা গেরিলা আক্রমনের উদ্দেশ্যে, রাতের অন্ধকারে এক গ্রামের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। দিনের আলো ফুটে উঠলে দেখতে পেলেন লাশের উপর দিয়ে হাঁটছেন। চারপাশে শুধু মানুষের লাশ আর লাশ । কি ব্যাপার এখানে কি হয়েছে ? আশেপাশে তাকালেন - কোন বাড়িঘরে মানুষ নেই। অনেক পরে একজন বৃদ্ধ মানুষের সাথে দেখা - তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানালেন , এখানে একটু আগে কাদের মোল্লা পাকিস্তানি বাহিনীকে নিয়ে এসে সবাইকে মেরে ফেলে গেছে। একবার চিন্তা করুন চোখ বন্ধ করে এই নৃশংস বর্বরতার কাহিনী, আপনি যত শক্ত মনের মানুষ ই হন না কেন , আপনি বাঙালি হলে আপনার অন্তর কেঁপে উঠতে বাধ্য।

এরপর ও কি সামান্য ফাঁসি টা হবে না এই কাদের কসাই এর ? এত এত মানুষ , বাংলার সাধারণ মানুষ , নারী - শিশু -বৃদ্ধ কাউকে এরা রেহাই দেয়নি। সেদিন আরও শুনলাম নিজামি -মুজাহিদ কর্তৃক বিচ্ছু জালাল ভাইয়া , শহীদ রুমি -বদি - আজাদ -আলতাফ মাহমুদ -জুয়েল এর উপর অকথ্য নির্যাতনের কাহিনী। এই মেধাবী তরুন মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে ফেলার কথা শুনতে পেয়েছিলেন তখনই ।বিচ্ছু জালাল ভাইয়া যখন হাতে সেই নির্যাতনের চিহ্ন দেখাচ্ছিলেন, চোখে পানি এসে গিয়েছিল -অনেক কষ্টে কান্না আটকিয়েছি। এত কষ্ট করে , এত নির্যাতন সহ্য করে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে এই বাংলাদেশ টাকে স্বাধীন করেছেন তাঁরা , আমরা অকৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি কতটা পেরেছি তাঁদেরকে উপযুক্ত সম্মান দিতে? কিছুই পারি নি আমরা। কই এরপরও তো এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে স্বপ্ন দেখান , আমাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন - যতদিন বেঁচে থাকবেন আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। আমাদেরকে শোনান আশার বাণী , বলেন "আমরা এখনও বেঁচে আছি। পাকিস্তানিরাই পারল না আর এই জামাত -শিবির কোন ছার। মুক্তিযোদ্ধারা এখনও মাঠে আছে। বাংলাদেশ কখনই তালেবান হবে না।"

বিচ্ছু জালাল ভাইয়া আরও বললেন , "আমি তোমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলছি , কোন বইয়ে পড়া ইতিহাস নয় - নিজের চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমি যদি সারা রাত ধরে বলি , তোমরা সারা রাত ধরেই শুনবা আমি জানি। কিন্তু এই প্রজন্মের ই যাদের শরীরে মাদকের বিষবাস্প ঢুকে গেছে ? তারা তো দূরে চলে গিয়ে মাদক নিতে ব্যাস্ত হবে। এই পথভ্রষ্ট দের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব তোমাদের।" আমরা কি পারব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিশ্বাস রক্ষা করতে? আমরা সেই বিশ্বাস রক্ষার শপথ নিয়েই তো পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করছি -কিন্তু বিজয় আসবে তো ? কাদের কসাই এর ফাসি টা কার্যকর হবে তো ? শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণের উপহার হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে ওঠা একটা প্রজন্ম , বিপথে যাওয়া মানুষগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের ই। তাই আমাদের মূলমন্ত্র হোক -"আগামী প্রজন্মের আর একটা শিশু ও যাতে শিবিরকর্মী না হয়।" জেগে থাকুক শাহবাগ , দ্রুত কার্যকর হোক কাদের কসাই এর ফাঁসি। সেদিন আমরা প্রত্যেকটা বাঙালি হাতে হাত রেখে বলতে পারব আমরা সেই খুনিদের , রাজাকারদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বদলা নিতে পেরেছি । আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি ...। 

জয় বাংলা  জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন