আমাদের প্রিয় বাংলা মা হতে পারে অনেক ছোট একটা দেশ , হতে পারে অনেক গরীব একটা দেশ - কিন্তু ছোট্ট সবুজ এই দেশটা অপরিসীম প্রাণশক্তিতে ভরা। আর তার প্রমাণ ই আমরা দিলাম গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আর ন্যাশনাল প্যারেড গ্রাউন্ডে একই দিনে দুই দুইটা বি...শ্ব রেকর্ড করে। ফেব্রুয়ারিতে রাজাকারের ফাসির দাবিতে যেভাবে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ছুটে এসেছিল বাংলার মানুষ, গতকাল ঠিক একইভাবে বাংলা মায়ের পরিচয় সারা বিশ্বে তুলে ধরার প্রচেষ্টার অংশ হতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছিল লাখো জনতার ঢল। গণজাগরণ মঞ্চ , সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম , বিজয় ২০১৩ মঞ্চ , মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ ,বিজয় ৪:৩১ মঞ্চের ডাকে বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিলেন বাঙ্গালিরা , বাংলাদেশের পরিচয় বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ছিল বাঙালি পরিচয় , সব স্লোগানের উপরে ছিল জয় বাংলা স্লোগান।
একটি দেশের একজন মানুষও যখন সারা বিশ্বে নাম লেখানোর মত বড় কোন অর্জন করে , তখন সেই দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের একটা নৈতিক দায়িত্ব থাকে সেই মানুষটাকে সমর্থন জানানো। একটা ছোট্ট দেশ বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ যখন নিজেদের দেশের পরিচয় সারা বিশ্বে তুলে ধরতে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় , তখন আমার মনে হয় বাংলাদেশের যে কোন মানুষের উচিত এই পাঁচ লক্ষ মানুষের সঙ্গে থাকা। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি গতকাল বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে ৫ লাখ মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে যে বিশ্ব রেকর্ড আমরা করেছি , সেটাকে সাপোর্ট দেয়ার বদলে এই বাংলাদেশের ই কিছু মানুষ সেটার বিরোধিতাই করে যাচ্ছে -সত্যি কষ্ট লাগে।
গতকালের বিজয় -২০১৩ প্রোগ্রামের প্রস্তুতি চলেছে অনেক অনেক দিন ধরে। শেষ মুহূর্তে কাদের কসাইয়ের ফাসি হটাত স্থগিত করা , আবার অসহ্য অপেক্ষা - এরপর চুরান্ত কলঙ্কমুক্তি ফাসি , ভেন্যু চেঞ্জ সবকিছুর মধ্যেও ইমরান ভাই , বাধন ভাই , আরও সহযোদ্ধারা যেভাবে কাজ করে গেছেন আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি এই মানুষগুলোর সহযোদ্ধা হওয়ার অযোগ্য। রাসএল ভাই , আবীর , অর্ণব ভাইরা যখন রাতের আধার ভেদ করে তীরহারা এই ঢেউ এর সাগর পাড়ি দেব রে গেয়ে দেয়ালে দেয়ালে প্রচারনা চালিয়ে যান শুধু বাংলা মায়ের নামটা বিশ্বের মানচিত্র উজ্জ্বল করার জন্য তখন সত্যি আমার ভাইদের জন্য গর্বে আমার বুক ফুলে ওঠে। এরকম সহযোদ্ধা পাওয়া , ভাই পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
যেকোন আন্দোলনের সমালোচনা হতে পারে , কারণ বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু সেই সমালোচনা যখন দেশদ্রোহিতায় রুপ নেয় , তখন সেখানে অনেক কিছু বলার থাকে। গণজাগরণ মঞ্চকে জামাতিরা অপমান করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দেয়া কেউ যখন এমন একটা আন্দোলনের বিরোধিতা করে যে আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা কে আওয়ামী গণ্ডি থেকে বের করে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার মুখে তুলে দিয়েছে , যে আন্দোলনের কারনে আইন সংশোধন করে রাজাকারের ফাসি সম্ভব হয়েছে , যে আন্দোলনের কারনে সারা বিশ্ব নতুন করে বাংলাদেশ কে চিনেছে - তখন এই দানব দেরকে আমি কখনই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলতে পারি না।
কাদের সিদ্দিকিও কিন্তু একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন। কিন্তু এখন কি করছেন তিনি? কাদের সিদ্দিকির বর্তমান রুপ দেখার পরও কি আমরা একাত্তরের ভূমিকার জন্য তাকে সম্মান করতে পারব ?উত্তর হল -না , পারব না। দেশের প্রশ্নে যে আপোষ করতে পারে সে যেই হোক না কেন তাকে আমরা শ্রদ্ধা করতে পারি না। কিন্তু কাদের সিদ্দিকি যে যুগে যুগেই জন্ম নেয়। মীরজাফর যেমন ফিরে এসেছিল গোলাম আজম হয়ে , ঠিক তেমনি কাদের সিদ্দিকি ফিরে এসেছে সিপি গ্যাং হয়ে। তাদের কাজ প্রথমে নিজেদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি পরিচয় দিয়ে মানুষের বিশ্বাস আদায় করা। এরপর ঘরের সদস্য হয়ে ঘরের সদস্যকে ছুরি মারা। বাইরের মানুষের পক্ষে ঘরের কারো ক্ষতি করা কঠিন , কিন্তু ঘরের মানুষের পক্ষে অনেক সহজ - যেমন সহজ ছিল খন্দকার মোশতাকের জন্য। সিপি গ্যাং এই কাজ টাই করছে - তা আমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি ততই মঙ্গল।
গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে সেই তথাকথিত আওয়ামী লিগার দের সমস্যা - জয় বঙ্গবন্ধু বলে না কেন। সবার প্রথমে বলতে চাই , গতকালের প্রোগ্রাম এ এ কে খোন্দকার স্যারের বক্তৃতা , পুরো প্রোগ্রামটায় সকাল থেকে বারবার ই জয় বাংলার পর জয় বঙ্গবন্ধু বলা হয়েছে। এরপরেও যদি প্রশ্ন তুলতে চান তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করেন এক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা টা কি। বঙ্গবন্ধুকে আপনারা যেভাবে দলীয়করণ করেছেন ৪২ বছরে , তা থেকে বের হয়ে আসা দশ মাসের কাজ নয়। এখন বঙ্গবন্ধুকে আস্তে আস্তে বের করে আনতে হবে দলীয় গণ্ডি থেকে আর সে দায়িত্ব আমরা গণজাগরণ মঞ্চের প্রত্যেকটা যোদ্ধা মাথা পেতে নিয়েছি। অনলাইন আওয়ামী লিগাররা কি মনে করেন ? মঞ্চের প্রোগ্রাম এ সারাক্ষন জয় বঙ্গবন্ধু বললেই বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানানোর ষোলকলা পূর্ণ হয়ে গেল ? তাহলে বলতেই হয় - খন্দকার মোশতাকও কিন্তু জয় বঙ্গবন্ধু ছাড়া কথা বলত না। শিবিরও কিন্তু নিজের পরিচয় ঢাকতে জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মিছিল করে।
তারপরেও কি গনজাগরন মঞ্চ নেয়নি আপনারা বিয়াল্লিশ বছরে যে ভুল ধারনা মানুষের মধ্যে গেথে দিয়েছেন যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামি লিগের সম্পত্তি , সেই ভুল ধারনা পরিষ্কারের দায়িত্ব ? আর অনলাইন লিগার রা যে বলেন গণজাগরণ মঞ্চ জাতির পিতার নাম নিতে লজ্জা পায় , তাহলে কেন গতকাল মঞ্চের প্রত্যেকজন বক্তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন ? কেন ব্যাকড্রপে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল ? কেন গানে বার বার বঙ্গবন্ধুর কথা ঘুরে - ফিরে আসছিল ? আমি একটা কথাই বলতে চাই যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের ভালবাসা , শ্রদ্ধা এতটা হালকা নয় যে বারবার জয় বঙ্গবন্ধু বলে তা প্রমান করতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চ যখন সাতই মার্চ এ , ১৫ ই আগস্টে সম্পূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর উপর প্রোগ্রাম করে তখন আপনাদের চোখে পরে না ? চোখে পরে শুধু এমন একটা স্লোগান না বললে যেটার উপর আওয়ামি ট্যাগ আপনারাই লাগিয়েছেন বিয়াল্লিশ বছর ধরে। বঙ্গবন্ধুকে সত্যিকারে ভালবাসলে জানতেন যে বাংলার মধ্যে বঙ্গবন্ধু এমনভাবে মিশে আছেন যে আলাদা করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্লোগান দিয়ে প্রমান করার কিছু নেই। আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ভিডিও সং "জয় বাংলা বলে আগে বাড়" তেও কিন্তু জয় বঙ্গবন্ধু কথাটা নেই - মাইন্ড ইট।
মনে রাখবেন মানুষ কিন্তু এখনও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে শেখ সাব বলে ডাকে। গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার চিন্তা করার আগে নিজেদের প্রশ্ন করুন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম , মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বীর উত্তম এ কে খোন্দকার স্যার ,কে এম শফিউল্লাহ স্যার এর চেয়েও কি এই তথাকথিত লিগার রা বড় দেশপ্রেমিক? গতকালের বিশ্বরেকর্ড কে বিতর্কিত করার চেষ্টা করতে গিয়ে তথাকথিত আওয়ামী লিগার রা যে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করছেন এটা কি তারা বুঝতে পারছেন না?গতকাল এর বিজয় উত্সব নিয়ে যারা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে কটুক্তি করছেন তারা শুধু গণজাগরণ মঞ্চ নয় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে একটি ইভেন্টকে নিয়ে কটুক্তি করছে ! মুক্তিযোদ্ধাদের আইন সংবিধান দেখাতে এসেছেন !বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে এরা নাকি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন!
গনজাগরন মঞ্চ গত দশ মাসে যা কিছু অর্জন করতে পেরেছে , মুক্তিযুদ্ধের পর এবং শহীদজননীর গনআদালত এর পর কোথায় এর সাথে তুলনীয় কোন অর্জন ? প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন না হলে কাদের কসাইয়ের ফাসি যেমন ছিল কল্পনাতীত তেমনি কল্পনাতীত ছিল জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করা ।এত কিছুর পরও যারা গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করবে তারা দেশের প্রতি ভালবাসা নয় বরং বাঙ্গালির বিজয় সহ্য করতে না পেরে বিরোধিতা করছে এ কথা এখন দিনের আলোর মতই পরিষ্কার। তাদেরকে বলছি মনে রাখবেন আমরা সেই আন্দোলনের পথে নেমছি যার সূচনা করেছিলেন মা জাহানারা ইমাম নিজে। কাজেই গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করা মানে শহীদজননীর আন্দোলনের বিরোধিতা করা , মায়ের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো।
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে রাজাকারের ফাসি হয়েছে , জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। জন্ম নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঁকড়ে ধরা একটি প্রজন্ম যারা জীবন দিবে কিন্তু জয় বাংলা স্লোগান ছাড়বে না। শাহবাগ আন্দোলন , বিজয় ২০১৩ সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে নতুনভাবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর , ১৯৯২ এর গণআদালতের পর ২০১৩ এর চেয়ে , শাহবাগ আন্দোলনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অর্জন বাঙ্গালির আর নেই। অনলাইন আওয়ামী লিগার , সিপি গ্যাং সবাইকে বলছি , শাহবাগের সাথে তুলনা করা যায় , গণজাগরণ মঞ্চের সাথে তুলনা করা যায় আপনাদের এরকম একটা অর্জন সামনে আনুন। আর গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে কথা বলছি সেজন্য অনেক কথা শুনতে হবে জানি , যাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি তাদের মুখের ভাষা মানুষের চেয়ে পশুর সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ তাও জানি। তবুও বলব কারন আমি গণজাগরণ মঞ্চের একজন যোদ্ধা এন্ড আই এম প্রাউড টু বি এ সোলজার অফ শাহবাগ মুভমেন্ট।
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি । জয় বাংলা।আরো দেখুন
একটি দেশের একজন মানুষও যখন সারা বিশ্বে নাম লেখানোর মত বড় কোন অর্জন করে , তখন সেই দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের একটা নৈতিক দায়িত্ব থাকে সেই মানুষটাকে সমর্থন জানানো। একটা ছোট্ট দেশ বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ যখন নিজেদের দেশের পরিচয় সারা বিশ্বে তুলে ধরতে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় , তখন আমার মনে হয় বাংলাদেশের যে কোন মানুষের উচিত এই পাঁচ লক্ষ মানুষের সঙ্গে থাকা। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি গতকাল বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে ৫ লাখ মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে যে বিশ্ব রেকর্ড আমরা করেছি , সেটাকে সাপোর্ট দেয়ার বদলে এই বাংলাদেশের ই কিছু মানুষ সেটার বিরোধিতাই করে যাচ্ছে -সত্যি কষ্ট লাগে।
গতকালের বিজয় -২০১৩ প্রোগ্রামের প্রস্তুতি চলেছে অনেক অনেক দিন ধরে। শেষ মুহূর্তে কাদের কসাইয়ের ফাসি হটাত স্থগিত করা , আবার অসহ্য অপেক্ষা - এরপর চুরান্ত কলঙ্কমুক্তি ফাসি , ভেন্যু চেঞ্জ সবকিছুর মধ্যেও ইমরান ভাই , বাধন ভাই , আরও সহযোদ্ধারা যেভাবে কাজ করে গেছেন আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি এই মানুষগুলোর সহযোদ্ধা হওয়ার অযোগ্য। রাসএল ভাই , আবীর , অর্ণব ভাইরা যখন রাতের আধার ভেদ করে তীরহারা এই ঢেউ এর সাগর পাড়ি দেব রে গেয়ে দেয়ালে দেয়ালে প্রচারনা চালিয়ে যান শুধু বাংলা মায়ের নামটা বিশ্বের মানচিত্র উজ্জ্বল করার জন্য তখন সত্যি আমার ভাইদের জন্য গর্বে আমার বুক ফুলে ওঠে। এরকম সহযোদ্ধা পাওয়া , ভাই পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
যেকোন আন্দোলনের সমালোচনা হতে পারে , কারণ বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু সেই সমালোচনা যখন দেশদ্রোহিতায় রুপ নেয় , তখন সেখানে অনেক কিছু বলার থাকে। গণজাগরণ মঞ্চকে জামাতিরা অপমান করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দেয়া কেউ যখন এমন একটা আন্দোলনের বিরোধিতা করে যে আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা কে আওয়ামী গণ্ডি থেকে বের করে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার মুখে তুলে দিয়েছে , যে আন্দোলনের কারনে আইন সংশোধন করে রাজাকারের ফাসি সম্ভব হয়েছে , যে আন্দোলনের কারনে সারা বিশ্ব নতুন করে বাংলাদেশ কে চিনেছে - তখন এই দানব দেরকে আমি কখনই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলতে পারি না।
কাদের সিদ্দিকিও কিন্তু একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন। কিন্তু এখন কি করছেন তিনি? কাদের সিদ্দিকির বর্তমান রুপ দেখার পরও কি আমরা একাত্তরের ভূমিকার জন্য তাকে সম্মান করতে পারব ?উত্তর হল -না , পারব না। দেশের প্রশ্নে যে আপোষ করতে পারে সে যেই হোক না কেন তাকে আমরা শ্রদ্ধা করতে পারি না। কিন্তু কাদের সিদ্দিকি যে যুগে যুগেই জন্ম নেয়। মীরজাফর যেমন ফিরে এসেছিল গোলাম আজম হয়ে , ঠিক তেমনি কাদের সিদ্দিকি ফিরে এসেছে সিপি গ্যাং হয়ে। তাদের কাজ প্রথমে নিজেদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি পরিচয় দিয়ে মানুষের বিশ্বাস আদায় করা। এরপর ঘরের সদস্য হয়ে ঘরের সদস্যকে ছুরি মারা। বাইরের মানুষের পক্ষে ঘরের কারো ক্ষতি করা কঠিন , কিন্তু ঘরের মানুষের পক্ষে অনেক সহজ - যেমন সহজ ছিল খন্দকার মোশতাকের জন্য। সিপি গ্যাং এই কাজ টাই করছে - তা আমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি ততই মঙ্গল।
গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে সেই তথাকথিত আওয়ামী লিগার দের সমস্যা - জয় বঙ্গবন্ধু বলে না কেন। সবার প্রথমে বলতে চাই , গতকালের প্রোগ্রাম এ এ কে খোন্দকার স্যারের বক্তৃতা , পুরো প্রোগ্রামটায় সকাল থেকে বারবার ই জয় বাংলার পর জয় বঙ্গবন্ধু বলা হয়েছে। এরপরেও যদি প্রশ্ন তুলতে চান তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করেন এক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা টা কি। বঙ্গবন্ধুকে আপনারা যেভাবে দলীয়করণ করেছেন ৪২ বছরে , তা থেকে বের হয়ে আসা দশ মাসের কাজ নয়। এখন বঙ্গবন্ধুকে আস্তে আস্তে বের করে আনতে হবে দলীয় গণ্ডি থেকে আর সে দায়িত্ব আমরা গণজাগরণ মঞ্চের প্রত্যেকটা যোদ্ধা মাথা পেতে নিয়েছি। অনলাইন আওয়ামী লিগাররা কি মনে করেন ? মঞ্চের প্রোগ্রাম এ সারাক্ষন জয় বঙ্গবন্ধু বললেই বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানানোর ষোলকলা পূর্ণ হয়ে গেল ? তাহলে বলতেই হয় - খন্দকার মোশতাকও কিন্তু জয় বঙ্গবন্ধু ছাড়া কথা বলত না। শিবিরও কিন্তু নিজের পরিচয় ঢাকতে জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মিছিল করে।
তারপরেও কি গনজাগরন মঞ্চ নেয়নি আপনারা বিয়াল্লিশ বছরে যে ভুল ধারনা মানুষের মধ্যে গেথে দিয়েছেন যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামি লিগের সম্পত্তি , সেই ভুল ধারনা পরিষ্কারের দায়িত্ব ? আর অনলাইন লিগার রা যে বলেন গণজাগরণ মঞ্চ জাতির পিতার নাম নিতে লজ্জা পায় , তাহলে কেন গতকাল মঞ্চের প্রত্যেকজন বক্তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন ? কেন ব্যাকড্রপে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল ? কেন গানে বার বার বঙ্গবন্ধুর কথা ঘুরে - ফিরে আসছিল ? আমি একটা কথাই বলতে চাই যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের ভালবাসা , শ্রদ্ধা এতটা হালকা নয় যে বারবার জয় বঙ্গবন্ধু বলে তা প্রমান করতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চ যখন সাতই মার্চ এ , ১৫ ই আগস্টে সম্পূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর উপর প্রোগ্রাম করে তখন আপনাদের চোখে পরে না ? চোখে পরে শুধু এমন একটা স্লোগান না বললে যেটার উপর আওয়ামি ট্যাগ আপনারাই লাগিয়েছেন বিয়াল্লিশ বছর ধরে। বঙ্গবন্ধুকে সত্যিকারে ভালবাসলে জানতেন যে বাংলার মধ্যে বঙ্গবন্ধু এমনভাবে মিশে আছেন যে আলাদা করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্লোগান দিয়ে প্রমান করার কিছু নেই। আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ভিডিও সং "জয় বাংলা বলে আগে বাড়" তেও কিন্তু জয় বঙ্গবন্ধু কথাটা নেই - মাইন্ড ইট।
মনে রাখবেন মানুষ কিন্তু এখনও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে শেখ সাব বলে ডাকে। গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার চিন্তা করার আগে নিজেদের প্রশ্ন করুন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম , মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বীর উত্তম এ কে খোন্দকার স্যার ,কে এম শফিউল্লাহ স্যার এর চেয়েও কি এই তথাকথিত লিগার রা বড় দেশপ্রেমিক? গতকালের বিশ্বরেকর্ড কে বিতর্কিত করার চেষ্টা করতে গিয়ে তথাকথিত আওয়ামী লিগার রা যে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করছেন এটা কি তারা বুঝতে পারছেন না?গতকাল এর বিজয় উত্সব নিয়ে যারা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে কটুক্তি করছেন তারা শুধু গণজাগরণ মঞ্চ নয় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে একটি ইভেন্টকে নিয়ে কটুক্তি করছে ! মুক্তিযোদ্ধাদের আইন সংবিধান দেখাতে এসেছেন !বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে এরা নাকি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন!
গনজাগরন মঞ্চ গত দশ মাসে যা কিছু অর্জন করতে পেরেছে , মুক্তিযুদ্ধের পর এবং শহীদজননীর গনআদালত এর পর কোথায় এর সাথে তুলনীয় কোন অর্জন ? প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন না হলে কাদের কসাইয়ের ফাসি যেমন ছিল কল্পনাতীত তেমনি কল্পনাতীত ছিল জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করা ।এত কিছুর পরও যারা গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করবে তারা দেশের প্রতি ভালবাসা নয় বরং বাঙ্গালির বিজয় সহ্য করতে না পেরে বিরোধিতা করছে এ কথা এখন দিনের আলোর মতই পরিষ্কার। তাদেরকে বলছি মনে রাখবেন আমরা সেই আন্দোলনের পথে নেমছি যার সূচনা করেছিলেন মা জাহানারা ইমাম নিজে। কাজেই গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করা মানে শহীদজননীর আন্দোলনের বিরোধিতা করা , মায়ের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো।
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে রাজাকারের ফাসি হয়েছে , জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। জন্ম নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঁকড়ে ধরা একটি প্রজন্ম যারা জীবন দিবে কিন্তু জয় বাংলা স্লোগান ছাড়বে না। শাহবাগ আন্দোলন , বিজয় ২০১৩ সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে নতুনভাবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর , ১৯৯২ এর গণআদালতের পর ২০১৩ এর চেয়ে , শাহবাগ আন্দোলনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অর্জন বাঙ্গালির আর নেই। অনলাইন আওয়ামী লিগার , সিপি গ্যাং সবাইকে বলছি , শাহবাগের সাথে তুলনা করা যায় , গণজাগরণ মঞ্চের সাথে তুলনা করা যায় আপনাদের এরকম একটা অর্জন সামনে আনুন। আর গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে কথা বলছি সেজন্য অনেক কথা শুনতে হবে জানি , যাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি তাদের মুখের ভাষা মানুষের চেয়ে পশুর সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ তাও জানি। তবুও বলব কারন আমি গণজাগরণ মঞ্চের একজন যোদ্ধা এন্ড আই এম প্রাউড টু বি এ সোলজার অফ শাহবাগ মুভমেন্ট।
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি । জয় বাংলা।আরো দেখুন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন