বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের যেদিন ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল তখন পড়তাম ক্লাস সিক্সে / সেভেনে । একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পেপার টা হাতে নিয়ে দেখি বড় করে শিরোনাম - জাতির পিতা হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এরপরের কয়েকদিন নিজের মধ্যেই কেমন যেন অদ্ভুত একটা খুশি অনুভব করছিলাম , সেই আনন্দের সাথে আর কোন আনন্দের কোন তুলনা নেই। কবে বিচার শুরু হয়েছে , কবে শেষ হল - কি কি ঘটনা হল , কত অপেক্ষা করতে হল এত কিছু হিসাবে...র বয়স হয়ত তখনও হয়নি। এতকিছু ভাবার কথা চিন্তাও করতাম না। বাবা মাকে বলত মেয়ে রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়ে এত মাথা ঘামায় কেন , মা সবসময় আমার পক্ষেই কথা বলত। আর বাবা যত যাই বোঝাতে চেষ্টা করুক না কেন , আমার আনন্দের কারন ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাসি হয়েছে , ব্যস। আর কোন হিসাবের দরকার নাই। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হল "বাংলাদেশঃ এ লিগ্যাসি অফ ব্লাড" বইটা পড়া শেষ করে সেদিন রাতে ঘুমিয়েছিলাম , পরদিন সকালে উঠে শুনি ফাসি হয়ে গেছে ঐ কুলাঙ্গারদের।
এরপর অনেক বছর পার হয়ে গেল। এখন পড়ি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। আগের চেয়ে অনেক কিছুই হয়ত বুঝতে শিখেছি , অনেক কিছু জেনেছি। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণাটাও আগের চেয়ে শত শত গুণ বেশি। আজকে একাত্তরের দিনগুলি পড়ি আর চোখের সামনে ভাসতে থাকে শাহবাগে থাকা মা জাহানারা ইমামের ছবিটা। কিংবা কল্পনায় ভেসে ওঠে শহীদ রুমী - বদি - আজাদদের ছবি। আজকে গেরিলা ছবি দেখি আর নিজের অজান্তেই মাথা নত করি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। আজকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে যাই দাবি জানাতে। রাজাকারের ফাসির দাবি জানাতে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বদলা নেয়ার দাবি জানাতে। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিটা সেই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চাইছি- এই রাজাকারদের একজন কে ফাসিতে ঝোলাতে কত আইনি প্রক্রিয়া ... কত কিছু। তারপরেও আশায় থাকি একদিন অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাসির মতই একদিন সকালে উঠে শুনব কসাই কাদেরের ফাসি কার্যকর হয়েছে।
প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধন হয়েছে , ফাসির রায় হয়েছে অনেকগুলো , জামাতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। অনেক প্রাপ্তি হলেও চূড়ান্ত বিজয়টা এখনও বাকি। এবার আমার কাছে আর এই খুশির সংবাদটা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাসির সংবাদটা যেমন সারপ্রাইজের মত এসেছিল সেভাবে আসবে না। কারন এই পথে অনেক সংগ্রাম , অনেক রক্ত ঝরানো হয়ে গেছে। মা জাহানারা ইমাম , কবি সুফিয়া কামাল এর হাত ধরে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের মশাল এখনও জ্বলছে। তাই এবার ফাসি হওয়ার সংবাদ আসবে একটা সুদীর্ঘ আন্দোলনের বিজয়ের ঘোষণা হয়ে। মাঝে মাঝে মনে হয় যদি জীবনের কাঁটাটা বন্ধ করে রাখা যেত কসাই এর ফাসি না হওয়া পর্যন্ত ...। প্রতি মুহূর্তে এ এক সুতীব্র প্রতীক্ষা। প্রতীক্ষার অবসান কোথায় জানি না। শুধু জানি এই ফাসি হতেই হবে। একদিন হয়ত আসলেই পূর্ণাঙ্গ রায়টা প্রকাশ হবে , একদিন হয়ত কসাই কাদের ফাসির দড়িতে ঝুলবে ... সব প্রতীক্ষার একদিন হয়ত অবসান ঘটবে ...।
জয় বাংলা ।।।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন