শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৩

একাত্তরের হাতিয়ার , গর্জে উঠুক আরেকবার । শহীদজননীর বাংলায় , রাজাকারের ঠাই নাই

তোমরা কি জান আমার প্রথম ভালোবাসার নাম কি ? জানো আমার ভালোবাসা আমার হাতে গোলাপ ফুল নয় , পতাকা তুলে দিয়েছে । আমাকে কাঁদতে নয় , দুর্জয় স্লোগান তুলতে শিখিয়েছে ।আমাকে নীরবতা ভেঙ্গে চিৎকার করে উঠতে শিখিয়েছে । আমাকে পুতুল খেলার হাতে বাঁশের লাঠি ধরতে শিখিয়েছে । আমাকে সব বাধা উপেক্ষা করে "জয় বাংলা" বলতে শিখিয়েছে ।আমাকে দৃপ্ত পদক্ষেপে মিছিলে হাঁটতে শিখিয়েছে ।তোমরা কি জান সেই ভালোবাসার নাম কি ?তোমরা কি জান সেই অমর চিরন্তন প্রেমের নাম কি ?সেই প্রেমের নাম বাংলাদেশ , সেই প্রেমের নাম শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ।

জানো , এই প্রেম আমার একার নয়। বাংলাদেশ আমার মা , শাহবাগ আমার এক টুকরো বাংলাদেশ । এই প্রেমের সম্পর্ক মা এর সাথে সন্তানের যেই সম্পর্ক , ঠিক তাই । জানো , এই শাহবাগ না তোমাদের সবাইকেই ডাকে , মাতৃস্নেহে তোমাদের সবাইকেই বুকে জড়িয়ে নিতে চায় । কিন্তু মা এর সন্তান হয়েও মা এর ডাকে যে তোমরা অনেকেই সাড়া দাওনা - আমাদের পাশে না দাড়াও , বাংলা মা এর পাশে দাঁড়ানোর আহবান টাও কি নিজেদের মধ্যে অনুভব কর না ?


জানো , তোমাদেরকে শাহবাগে আসতে বলি আমাদের জন্য না , মা এর জন্য বলি। শহীদজননী জাহানারা ইমাম আমাদের মা , অন্তত মা এর জন্য হলেও একদিন বান্ধবীকে নিয়ে রমনা পার্কে হাঁটতে না গিয়ে তার হাতে হাত রেখেই চলে এসো না শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে । কি বললে ? রাজনীতির থেকে দূরে থাকতে চাও? আচ্ছা , তোমার দেশের নাম টা যেন কি ? বাংলাদেশ ই তো , তাইনা ? সেই বাংলাদেশের কলঙ্ক মোচনের ই দায়িত্ব নিয়েছি আমরা - বিশ্বাস কর , শাহবাগে আমরা কোন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করি না - বাংলা মা এর কলঙ্কমোচনের লড়াই করি। রাজাকারের ফাসির দাবি তুলি । একে তুমি কোন যুক্তিতে রাজনৈতিক কাজ বলবে ? কোন যুক্তিতে উপেক্ষা করবে ?

তোমরা কি জানো , সেই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আন্দোলন করছি আমরা -অনলাইনে , রাজপথে সমান তালে। যতক্ষণ শাহবাগে থেকেছি , থেকেছি স্লোগানে -মিছিলে উত্তাল রাজপথে , বাসায় যতক্ষণ থেকেছি - থেকেছি অনলাইনে শাহবাগের পক্ষে কাজ করতে। নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের দিকে তাকানোর সময় পেয়েছি খুব কম। জানো , এসবের কিছুতে ব্যাক্তিগত খ্যাতি , লাভ কিচ্ছু নেই আমাদের , কিন্তু নতুন এক ইতিহাস গড়ার আকাঙ্খ্যা আমরা কেউ সামলাতে পারি নি। জানো , এই নতুন ইতিহাস টার নাম কি ? বাংলার মাটিতে রাজাকারের চূড়ান্ত পরাজয়ের ইতিহাস , জামাত -শিবির - যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের অভূতপূর্ব জাগরনের ইতিহাস ।

জানো , এই আট মাসে অনেক কিছুই অর্জন করেছি আমরা । সাইদি , কামরুজ্জামান , মুজাহিদ , সাকা এবং সর্বশেষে কাদের কসাই টার ফাসির রায় ও পেয়েছি আমরা - সেই কসাই , যার হাতে বিজয় চিহ্ন সহ্য করতে না পেরে আমাদের আন্দোলনের সূচনা । গোলাম আজম আর আব্দুল আলিম ও বেচে যাবে না , আপিল বিভাগের রায়ে ইনশাআল্লাহ ওদের ও ফাসি হবে । জানো , যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচন করার অধিকার , ভোট দেয়ার অধিকার বাতিল হয়েছে , জামাতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে , যুদ্ধাপরাধের প্রমান পাওয়া গেছে দলটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে। কি বললে ? এসব খবরে তোমার কিছু যায় আসে না ? শোন , নিজেকে বাঙালি বলে যদি দাবি কর , তাহলে এসব খবরে তোমার অনেক কিছুই যায় - আসে। দেশ মা কে রাজাকার মুক্ত করার সংগ্রাম থেকে আর কতদিন পিছিয়ে থাকবে ?

একবার নীরবতা ভেঙ্গে জেগে ওঠো না , আর কতদিন নিরপেক্ষ হয়ে থাকবে ? তুমি কি জান না ভাল আর খারাপের যুদ্ধে নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই। একবার খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসে শাহবাগের মিছিলে দাঁড়িয়ে যাও না , প্রানের দাবি টা কণ্ঠে তুলে নিতে কিসের এত ভয় ? মৃত্যুভয় ? মৃত্যুভয় কে অতিক্রম করেই তোমার অগ্রজেরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন , তুমি পারবে না ? ২০১৩ এর সংগ্রামে শাহবাগের পাশে এসে দাড়াও না তুমি যে অবস্থানে আছ সেখান থেকেই। কি - বোর্ড টাকে সংগ্রামের হাতিয়ার করে একবার হাতে তুলে নাও না। রাস্তায় নেমে আস না একবার , দেশ মা এর ডাকে একবার সাড়া দাও না।

জানো , স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি রাজাকার দের বাচাতে মরনকামড়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওদের প্রতিরোধ করতে আমাদের পাশে এসে দাড়াও না নিজ নিজ অবস্থান থেকে। লড়াই তো অনেক দিন হল , এসো না হাতে হাত রেখে একে একটা চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে নিয়ে যাই । এসো না আমরা এক হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে নিজেদের মন থেকে নিষিদ্ধ করে দেই , জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে ওদের কে প্রতিহত করি , তাহলে একদিন আমাদের দেশ জামাত -শিবির - যুদ্ধাপরাধী মুক্ত হতে বাধ্য । এসো না বন্ধু , পাশে দাড়াও না আমাদের । সব বাঙালি হাতে হাত রেখে এসো না লড়াই টাকে বিজয়ের পথে নিয়ে যাই ।

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গনজাগরন মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন