সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৩

মুক্তির মন্দির সোপানতলে , কত প্রাণ হল বলিদান – লেখা আছে অশ্রুজলে…

  • ২৫ শে মার্চ , ১৯৭১ সাল। বাইরে প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। রাজধানীর রাজারবাগে অবস্থিত তিনতলা বাসায় বসে রাত্রি সেই আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। চারপাশে শুধু মানুষের চিৎকার - আর্তনাদ। কি হচ্ছে আসলে ? গল্পগুচ্ছ টাকে রেখে দিয়ে রাত্রি লুকিয়ে লুকিয়ে রেডিও টা বের করে। ভাঙ্গাচোরা একটা রেডিও , কিন্তু এটাই একমাত্র সম্বল রাত্রি আর ওর মা সুলেখা বেগমের খবর শোনার। বাইরের ঘরে কয়েকজন মিলিটারি এসে রাত্রির বাবার সাথে কি কি যেন আলাপ করছে। প্রায় ই আসে এই খাকি পোশাক পরা মিলিটারিগুলো , জলপাই রঙ গাড়িতে চড়ে। রাত্রির খুব বিরক্ত লাগে এই মিলিটারি গুলো যখন তার বাবার সাথে গল্প করতে আসে। রাত্রি সতের বছরের মেয়ে , কলেজে উঠেছে এবার। বই পড়ার প্রচণ্ড নেশা তার - আর একটা অনেক ভালোবাসার জায়গা তার আছে , সেটা হল রাজপথ। এই ভালোবাসাটার কথা রাত্রির বাবা মোজাফফর আহমেদ কিংবা মা সুলেখা বেগম কেউ জানেন না। উনসত্তরে আন্দোলনের সময় বাবা - মাকে না জানিয়ে লুকিয়ে মিছিলে চলে গিয়েছিল রাত্রি। প্রয়োজন হলে আবার যাবে - এই শপথ আছে তার। সে বুঝতে পারে না বঙ্গবন্ধুর বিরোধীদের সাথে তার বাবার এত কিসের ভাব। কিছুদিন আগে রাত্রির বাবা ইলেকশনে দাঁড়িয়েছিল বলে শুনেছে রাত্রি। কি জানি হয়ত মুসলিম লীগ থেকে দাঁড়িয়েছিল - না হলে ওই পাঞ্জাবিদের সাথে এত খাতির থাকবে কেন তার?


  • অনেক কষ্টে ২৬ শে মার্চ সকালের দিকে রেডিও সিগন্যাল ধরতে পারে রাত্রি আর সুলেখা বেগম। রেডিও ধরতে পারার সাথে সাথে শুনতে পান দুসংবাদ - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে পাকিস্তানি বাহিনী এরেস্ট করেছে। সারা দেশে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চলেছে এই খবর শুনতে থাকেন পরিচিত মানুষদের মুখে। রাত্রি কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। তার কানে ভাসতে থাকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান - "তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। মনে রাখবা , রক্ত যখন দিয়েছি - রক্ত আরও দেব - এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম , আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম , স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।" রাত্রি ভাবতে থাকে - সসস্ত্র যুদ্ধ প্রয়োজন এখন , মুক্তির জন্য যুদ্ধ - কিন্তু কি নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবে সে ? সে একটা কিশোরী মেয়ে , মা কে কিছুতেই কিছু জানানো যাবে না তার পরিকল্পনার কথা। আর বাবা তো পাকিস্তানিদের ই দোসর। মুক্তিযুদ্ধ করবে এই কথা শুনলে হয়ত বাবা তাকে পাকিস্তানি মিলিটারির হাতেই তুলে দেবে! অসম্ভব কিছু তো নয়। বঙ্গবন্ধুর মত মানুষকে যে শ্রদ্ধা করে না তার পক্ষে সব ই সম্ভব।


  • দুপুরের দিকে বাবা - মা দুইজন ই কিছুক্ষনের জন্য ঘুমিয়ে থাকে। অন্যান্য দিন রাত্রিও এই সময় ঘুমিয়ে থাকে কিংবা গল্পের বই পড়ে , কিন্তু আজকে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বের হয় রাত্রি। উদ্দেশ্য সুমিদের বাসায় যাবে। সুমির ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত। হয়ত রাত্রিকে বলতে পারবে এই মুহূর্তে দেশের জন্য তার কি করা উচিত। রাস্তায় বের হয়ে একটা ধাক্কা খায় রাত্রি - চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ । গোলাবারুদ আর লাশে রাত্রির চিরপরিচিত শহরটার চেহারা পাল্টে গেছে একেবারেই। অনেক কষ্টে নিজেকে শক্ত রেখে রাত্রি সুমিদের বাসায় আসে। সেখানে তখন মীটিং বসে গেছে। সুমির বড় ভাই রতন , ভাইএর বন্ধুরা , সুমি আর তার কয়েকজন বান্ধবী। চলছে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার প্ল্যান। রাত্রি গিয়ে যোগ দেয় ওদের সাথে। সব আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে রাত্রি , সুমি আর তাদের বান্ধবীরা এখন ঢাকাতেই থাকবে। রতন তার বন্ধুদের নিয়ে বের হবে মুক্তিযুদ্ধের সন্ধানে। এরপর এক এক করে রাত্রিদের নিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধে।


  • সেদিন রাতেই মুক্তিযুদ্ধের সন্ধানে বেড়িয়ে যায় রতন আর তার বন্ধুরা। পথে দেখতে পায় অনেক অনেক মানুষ বাচ্চা শিশু , বস্তায় বেঁধে জিনিসপত্র এসব নিয়ে সীমান্তের দিকে চলছে। ওদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে রতন। ভয়ার্ত মানুষগুলোর মুখ থেকে যা শুনতে পায় তা হল এরা সবাই ভারতে চলে যাচ্ছে জীবন বাঁচাতে। রতনেরা বুঝতে পারে না মুক্তিযুদ্ধের সন্ধানে তাদের এখন কোথায় যাওয়া উচিত , কি করা উচিত। সেদিনের মত ঘরে ফিরে আসে তারা। পরদিন খবর পায় তাদের এলাকা থেকেই একটা দল ভারতে যাচ্ছে - আশ্রয় নিতে নয় , মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে। এবার যুদ্ধ হবে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ। খবরটা শোনামাত্র সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ওরা। বাড়িতে এসে বোনদের জানায় সেই সিদ্ধান্ত। ওরা সবাই মুক্তিযুদ্ধে যাবে। বোনদের কাছ থেকে বিদায় নিতে যায় ভাইয়েরা - প্রতিজ্ঞা করায় ওরা চলে যাওয়ার আগে কোন পরিবারের মা - বাবাই কিছু জানবে না। বোনেরা সে প্রতিজ্ঞা করে - কিন্তু তারাও যে মুক্তিযুদ্ধে যেতে চায়। তাদের কে এভাবে ঘরে ফেলে রেখে গেলে চলবে কি করে? শেষমেষ সুমি , সায়মা , অনামিকা , রাত্রিও রতন আর তার বন্ধুদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়ে। পিছনে পরে থাকে তাদের স্বপ্নের জীবন , তাদের পরিবার , তাদের ছোট্ট ছোট্ট অনেক ভালবাসার জিনিসগুলো।

  • মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেয় ওরা সবাই। এবার হল অবরুদ্ধ বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধ করার পালা। কিন্তু এখন দরকার আশ্রয় - অস্ত্রশস্ত্র রাখার আশ্রয় , মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার আশ্রয়। রাত্রি সিদ্ধান্ত নেয় সে এই কাজে সাহায্য করবে। যেহেতু তার বাবা মিলিটারিদের ই দালালি করে কাজেই এই বাড়িটা পাকিস্তানি মিলিটারির সন্দেহের বাইরে থাকবে। বাবাকে না জানিয়ে লুকিয়ে রাখতে হবে অস্ত্রশস্ত্র - যেভাবে অনেক যত্নে সে লুকিয়ে রেখেছে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী পোষ্টার - "সোনার বাংলা শ্মশান কেন?" অনেক গোপনে সেদিন বাড়িতে এসে প্রবেশ করে রাত্রি। মা সুলেখা বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। মায়ের মন তো , মা সব ই বোঝেন। সেদিন চুপি চুপি পায়ে রাত্রির বাইরে যাওয়া ও তিনি দেখেছিলেন - বাধা দেন নি। তিনি যে মা - তিনি তো মেয়ের মন জানেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কি অমোঘ ডাকে তাঁর সতের বছরের মেয়েটি মুক্তিযুদ্ধে ছুটে যাচ্ছে। বাধা দেন নি মা - দেশটাকে তো স্বাধীন করতেই হবে। মেয়ে যদি দেশের টানে ঘর ছাড়তে চায় তাহলে বাধা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। মা বরং বাবাকে বুঝিয়েছেন , মেয়ে তার বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গেছে।

  • আজকে রাত্রি ঘরে এসেছে আবার , সঙ্গে অনেক অস্ত্র আর গোলাবারুদ। এই বাসায় ই লুকিয়ে রাখতে হবে এগুলো। পাশাপাশি আর একটা কাজ দেয়া আছে রাত্রিকে। তার বাবা পাকিস্তানি মিলিটারিদের সাথে কি আলাপ করে , কি প্ল্যান করে সবকিছু জানতে হবে রাত্রিকে। সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা জেনে যাবেন পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির খবর , আরও অনেক দরকারি তথ্য। অতর্কিত আক্রমন চালিয়ে ধরাশায়ী করতে পারবেন এই পাকিস্তানি মিলিটারিকে। মা কে সবকিছু জানায় রাত্রি - সাহায্য চায় মা এর কাছে। মা মনে মনে খুশি ই হন বাঙ্গালির মুক্তিসংগ্রামের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়ে। আলমারিতে জামা - কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে অনেক যত্ন করে লুকিয়ে রাখেন এক একটি অস্ত্র। রাত্রিকেও সুযোগ করে দেন তার বাবা আর পাকিস্তানি মিলিটারির কথা শোনার। মিলিটারি বাসায় আসলে চা - খাবার নিয়ে যায় রাত্রি। যেতে আসতে কিংবা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক খবর জেনে যায় রাত্রি - জানিয়ে দেয় তার সহযোদ্ধাদের। রাতের আঁধারে এক একবার গেরিলা আক্রমন করে তারা , পাকিস্তানিদের এক একটা ঘাঁটি কিংবা গাড়ি , ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দেয় অতর্কিতে।

  • একদিন রাতে অপারেশন করে ফিরেছে রাত্রি আর তার সহযোদ্ধারা। সবাই যে যার বাড়িতে কিংবা যে যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে চলে গেছে। রাত্রির বাবা তখনও বাড়ি ফেরেনি। বিছানায় শুয়ে মাএর সাথে আজকের অপারেশনের গল্প করছিল রাত্রি। এমন সময় দরজায় করাঘাত। মা ভাবেন হয়ত রাত্রির বাবা এসেছে। দরজা খুলে দেখতে পান রাত্রির বাবার সাথে আরও এক ডজন মিলিটারি। এরকম প্রায় ই হয় , কিন্তু আজকে ব্যাপার টা ঠিক অন্যান্য দিনের মত নয়। সোজা বাড়ির ভিতরের ঘরে ঢুকে যায় মিলিটারি আর রাত্রির রাজাকার বাবা মোজাফফর আহমেদ। কুলাঙ্গার রাজাকার মেয়েকে মারতে থাকে মিলিটারিদের সামনে। এক সময় মেয়েকে তুলে দেয় মিলিটারিদের হাতে। মা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকেন - শেষ মুহূর্তে স্ত্রী হয়ে স্বামীর পায়ে ঝাপিয়ে পরেন মেয়েকে বাঁচাতে। মোজাফফর রাজাকার একটা লাথি মারে সুলেখা বেগমের গায়ে , মিলিটারিরা কয়েকটা গুলি চালায়। জীবনপ্রদীপ নিভে যায় মাএর। রাত্রিকে তারা নিয়ে যায় টর্চার সেলে। সেখানে চলতে থাকে অকথ্য অত্যাচার। রাত্রিকে চাপ দেয়া হয় সবার নাম বলে দেয়ার জন্য , অস্ত্র কোথায় রেখেছে বলে দেয়ার জন্য। রাত্রি শুধু তার মাএর মুখটা মনে করে - তার মাকে পাকিস্তানি মিলিটারি আর কুলাঙ্গার রাজাকার মোজাফফর মেরেছে( বাবা বলতে ঘৃণা হয় রাত্রির)। সে তার মাএর হত্যাকারীদের সামনে মাথা নিচু করবে না। জীবন দেয়ার শপথ নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে এসেছে রাত্রি , জীবন দিবে কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবে না সে।

  • এদিকে রাত্রির সহযোদ্ধারা খবর পেয়ে গেছে যে রাত্রিকে ধরে নিয়ে গেছে মিলিটারিরা। একদিন রাতে গোপনে পিছনের দরজা দিয়ে রাত্রিদের বাসায় প্রবেশ করে সুমি। আলমারির একটা এক্সট্রা চাবি মা সুলেখা বেগম সবসময় দিয়ে রাখতেন সুমির কাছে - কখনও হটাত করে অস্ত্র বের করার দরকার হলে যাতে সুমি বের করে নিতে পারে। সুমি কাপড়ের ভাঁজ থেকে বের করে প্রত্যেকটা অস্ত্র। এরপর রতন আর তার বন্ধুরে মিলে সেসব নিয়ে চলে যায় অন্য কোন নিরাপদ জায়গায়। সেখান থেকে প্ল্যান করে তারা - রাত্রিকে বাচিয়ে আনতেই হবে। যে ক্যাম্পে রাত্রিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একদিন রাতে সেই ক্যাম্প আক্রমন করে মুক্তিযোদ্ধারা। রাতে খাওয়ার পর মদের নেশায় মিলিটারি আর রাজাকার সবাই তখন ঢুলছে - তেমন কোন প্রতিরোধ করার সুযোগ পায়না তারা। ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয় রাত্রিসহ আরও বিশজন বিভিন্ন বয়সী কিশোরী - তরুণীকে। কেউ অর্ধমৃত , কেউ এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করছে। অত্যাচারের চিহ্ন সবার সারাদেহে। তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে হাইডআউটে ফিরে আসে মুক্তিযোদ্ধারা। রাত্রি কিছুটা সুস্থ হয়ে আবার অংশ নেয় মুক্তিযুদ্ধে। উদ্ধার করা অন্য মেয়েরা থেকে যায় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পেই। তাঁদের কেউ ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে , কেউবা ক্যাম্পে রান্না করার কাজ করে। সাথে সাথে চলতে থাকে পাকিস্তানি হানাদারদের উপর আক্রমন , চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ।

  • অবশেষে একদিন স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধারা বুকে জড়িয়ে ধরেন লাল - সবুজ জাতীয় পতাকাকে। মুক্ত দেশের মুক্ত মাটিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ধুলামাখা শরীরে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানান বাংলাদেশের লাল - সবুজ পতাকাকে। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় নতুন একটি দেশ - বাংলাদেশ। অনেক অশ্রু আর অনেক রক্তের দামে কিনতে হয়েছে এই বাংলাদেশকে - পুরো বাংলাদেশের মানুষ সেদিন এক ই সাথে কাঁদছেন আর হাসছেন , এত রক্তের দামে কিনতে হয়েছে এই স্বাধীনতা যে হাসিগুলো চাপা পরে যাচ্ছে কান্নার আড়ালে ,অশ্রুগুলো নির্গত হচ্ছে বিজয় আনন্দ হয়ে। বাংলাদেশ ...বাংলাদেশ... সেই সুমধুর স্লোগান - জয় বাংলা...

  • সেই মহান বিজয়ের পর , মহান মুক্তিযুদ্ধের পর পার হয়ে গেছে বিয়াল্লিশটি বছর। রাত্রি পড়াশুনা শেষ করেছেন , তাঁর বিয়ে হয়েছে আর একজন মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ আলীর সাথে। ছোট্ট ফুটফুটে একটা মেয়ে আছে রাত্রি আর শাহেদের - মেয়েটার নাম "স্বাধীনতা"। ২০১৩ সাল এখন। স্বাধীনতার বয়স এখন সতের বছর। ঠিক সেই বয়সটা , যে বয়সটাতে রাত্রি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতা মা - বাবার হাত ধরে যায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে। মেয়ের মধ্যে শাহেদ আর রাত্রি খুজে পান বিয়াল্লিশ বছর আগের নিজেদেরকে। সেই এক ই স্লোগান , এক ই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা দের লড়াই দেখেন রাত্রি আর শাহেদ। মেয়ের কণ্ঠে একাত্তরের স্লোগান দেখেন , প্রজন্ম চত্বরে উনসত্তরের মিছিল দেখেন , সেই মিছিলে দেখেন কোটি কোটি স্বাধীনতাকে। সতের বছরের স্বাধীনতা যখন স্লোগান তোলে "আর কোন দাবি নাই , রাজাকারের ফাসি চাই - এক দফা এক দাবি , রাজাকারের ফাসির দাবি - জয় বাংলা..." তখন পরম আনন্দে রাত্রি চেপে ধরেন শাহেদের হাত। মিছিল শেষে মুক্তিযোদ্ধা মা - বাবার কাছে ছুটে আসে স্বাধীনতা, জড়িয়ে ধরে বলে -" মা - বাবা আমরা তোমাদের স্বপ্ন সফল করবই।" চোখের পানি মুছে স্বাধীনতাকে জড়িয়ে ধরেন রাত্রি - কান্নাভেজা চোখে সামনে দেখতে পান পোষ্টার - "এ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি , রাজাকার রাও এই প্রজন্মের যুদ্ধ দেখেনি - দেখিয়ে দেয়ার এখনি সময়। "

  • জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু। জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গণজাগরণ মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন