শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৩

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা , আমরা তোমাদের ভুলবো না

পৃথিবীর মানচিত্রে অনেক ছোট্ট একটা দেশ বাংলাদেশ । এই দেশটি আয়তনে অনেক ছোট হলেও দেশটির আছে গৌরবময় ইতিহাস - আর সেই ইতিহাস রক্তের , সেই ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের , সেই ইতিহাস স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের গৌরবগাঁথা । ১৯৫২ , ১৯৬২ , ১৯৬৬ , ১৯৭১ এ বার বার এই দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে এনেছেন বিজয় । বার বার এদেশের সাধারন মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন , প্রিয় বাংলার মাটিকে রক্ষার শপথ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন ।১৯৭১ ...সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে গৌরবের অধ্যায়। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রানপ্রিয় স্বাধীনতা । ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন , দুই লাখ মা -বোন নির্যাতিত হয়েছেন এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য । আমাদের বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধ কে গভীর ভাবে উপলব্ধি করার মত কোন সুযোগ ই বলতে গেলে খোলা নেই।

পাঠ্যপুস্তক গুলোর ইতিহাস লেখা দেখলে মনে হয় ২৫ শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে , ১৬ ই ডিসেম্বর শেষ হয়েছে - এই । এর চেয়ে বেশি জানতে হলে , মুক্তিযুদ্ধ আসলে কি ছিল কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে হলে , ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা - কথাটা যে শুধু মুখের বুলি নয় , এটা যে আসলে কত বড় একটা ত্যাগ সেটা বুঝতে হলে যে জিনিস গুলো পড়া প্রয়োজন , আমাদের গতানুগতিক পাঠ্য ধারায় সেগুলো কিছুতেই সংযোজন করা হয়না। আচ্ছা ,পদ্মা নদীর মাঝির বদলে একটা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস উচ্চ মাধ্যমিকে পাঠ্য করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত ?

পাঠ্যবইয়ে থাক বা না থাক , আমরা বর্তমান প্রজন্ম কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঁকড়ে ধরতেই চাইছি । বিয়াল্লিশ বছর পর হলেও আমরা ১৯৭১ এর বিশ্বাসঘাতক , রাজাকারদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি । আমরা সপ্তাহে এক লক্ষ টাকা করে হাতখরচ পাওয়া সন্তান না , আমরা সাজগোজ - বন্ধুবান্ধব -কে এফ সি - নন্দন এ যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হইনা । আমরা সেই প্রজন্ম যারা আমার বন্ধু রাশেদ দেখে চোখের পানিতে একাকার হয় , টিফিনের টাকা বাচিয়ে জাফর ইকবাল স্যার এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেনে , অনেক বাধা কে অস্বীকার করে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে যারা ছুটে যায় আমরা সেই প্রজন্ম। ইতিহাস কে যতই আমাদের কাছ থেকে আড়াল করার চেষ্টা করা হোক , আমরা বাংলা মাএর ইতিহাস কে ভালোবেসে বুকে টেনে নেই বারবার ।

স্বাধীনতার ৪২ বছর পর কেমন আছেন ১৯৭১ এর সেই বীর সৈনিকেরা ? কেমন আছেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা - অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে যারা এই প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছেন - কেমন আছেন তাঁরা ? উত্তর হল , তাঁদের অনেককেই লিপ্ত হতে হয়েছে নতুন করে কঠোর জীবন যুদ্ধে । এরকম ই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা আজকে বলব । তিনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী । তিনি অস্ত্র চালাতে জানতেন না । রাজনীতিও বুঝতেন না তেমন । কিন্তু ১১ এপ্রিল ১৯৭১ যখন পাকি ও রাজাকাররা হার্ডিজ ব্রীজ ভাঙ্গতে আসে তখন তিনি একদিনের ট্রেনিং নিয়ে ব্রীজ রক্ষা কমিটিতে যোগ দেন । সেখান থেকে শিকারপুরে ট্রেনিং নেন ২ সপ্তাহ ।আবার শিকারপুর থেকে মালদোয়া একমাস ট্রেনিং নেন । এডভান্স ট্রেনিং । এরপর শিলিগুড়ির মেজর চক্রবর্তীর কাছে ট্রেনিং পান আরও একমাস । এর ভিতর চলে ছোট খাটো অপরেশন ।

মুক্তিযুদ্ধ তিনি ঠিক ই জয় করেছেন , কিন্তু জীবন যুদ্ধ , চিকিৎসা যুদ্ধ চালাতে পারছেন না । বাড়িতে পাট খড়ি দিয়ে বানানো ঘরে থাকেন । বড় ছেলে ও তার বৌ দুই সন্তান রেখে মারা যান । তার তুই নাতিই মেধাধী । মেজো ছেলে আত্মহত্যা করে দু বছর আগে । ছোট ছেলে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র । কিন্তু নিতমিত ক্লাশ করা হয় না টাকার অভাবে ।মুক্তিযোদ্ধা হয়দার আলীর সংসার চলে না সরকারী ভাতায় । প্যারালাইজড মাকে রাখতে হয় বারান্দায় কারণ ঘরে জায়গা নেই । বৃষ্টির সময় ঘরে পানি থৈ থৈ করে । জোছনায়ও । তিনি লজ্জায় বলতে চাননা তাঁর কুলিগিরির কথা । তাও বয়স বেশি এবং ছোট শহর বলে কাজও পাওয়া যায়না তেমন । ছোট ছেলেও বাবার সাথে কুলি কাজ করে মাঝে মাঝে পড়লেখার ফাঁকে ফাঁকে ।

আমরা কি পারিনা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সাহায্যে সবাই একটু করে হলেও এগিয়ে আসতে ? যেই দেশে একসময় রাজাকারদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়েছে , সেই দেশের ই মানুষ - আমরাই তো শাহবাগ আন্দোলন করেছি , স্লোগানে - মিছিলে রাজাকারের দম্ভ ধুলিস্যাৎ করেছি । আমরা তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই সারাজীবন , একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবন টা একটু সহজ করতে এগিয়ে আসা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য । এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের ঋণ অনেক , সেই ঋণ শোধ করা কক্ষনো সম্ভব নয়। কিন্তু একটু শান্তি তো দিতে পারি এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে - আজ যদি আমরা চুপ থাকি তাহলে আগামী ইতিহাস কখনও ক্ষমা করবে না আমাদের ।

ব্যাঙ্ক একাউন্ট নাম্বার দেয়া হল । একটু এগিয়ে আসবেন সবাই ? প্লিজ......

1.Irin Perven - Dhaka Bank - Acc. no. 022 320 0000017336

2.Irin Perven - UCB - Acc. No. 0056 121 00072369

3.Irin Perven - DBBL - Acc. No. 148 105 2140

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু । জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় গনজাগরন মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন