মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৩

কসাই এর ফাসির আনন্দে বিজয় মিছিল করতে চাই। আর কত দেরি ?????

একটা আন্দোলন , একটা দাবি - রাজাকারের ফাঁসি , আর তাই নিয়ে একটানা রাজপথে থাকা আমাদের । কখনও দীপ্ত শপথ , কখনও একসাথে সারা দেশে জাতীয় সঙ্গীত , কখনও পতাকা উত্তোলন - সারা দেশে , সারা বাংলায় এক ই সাথে। আবার কখনও শাহবাগে একটানা অবস্থান , স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ , স্লোগানে উত্তাল বাংলার প্রতিটা প্রান। এত সুন্দর , সুশৃঙ্খল একটা জাগরন -১৯৭১ এর পর আক্ষরিক অর্থেই বাংলায় হয়নি। এই জাগরন ছুয়ে গিয়েছিল দেশের প্রত্যে...কটা প্রাণকে , বাঙ্গালি পরিচয়ে গর্বিত প্রত্যেকটা মানুষ মাঠে নেমে আসছে বারবার - এক একটা রায় , এক একটা বিজয় ঘোষণা , এক একবার চরম উত্তেজনা, বাংলার সাধারন খেটে খাওয়া মানুগুলোর রাস্তায় নেমে আসা , শাহবাগে অবস্থান নেয়া - রাজাকারের ফাসি না নিয়ে ঘরে ফিরব না -দৃপ্ত শপথে জ্বলে ওঠা।

আমি ১৯৭১ দেখিনি , কিন্তু আমি ২০১৩ দেখেছি -২০১৩ তে আন্দোলনের অংশ হয়েছি। শাহবাগে একটা ব্যানার লাগানো ছিল - "এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি , রাজাকার রাও এই প্রজন্মের যুদ্ধ দেখেনি , দেখিয়ে দেয়ার এখন ই সময়"- কথাটা সম্পূর্ণ ভাবে আমাদের সবার মনের কথা , শাহবাগের প্রত্যেকটা আন্দোলন কারীর মনের কথা। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর রাস্তায় নামিয়েছে বাংলার সাধারন , একেবারে সাধারন জনতা বলতে যে মানুষ গুলোকে বোঝানো হয় সেই মানুষগুলোকে । খেটে খাওয়া সাধারন মানুষের এই জাগরন বৃথা যাবার নয় , এই গনজোয়ার কক্ষনো বৃথা যেতে পারে না ।

প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারী কারা ? আমি , আপনি - আমরা। নাহ , এটা কোন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়। এখানে কেউ কোন ব্যাক্তিগত লাভের জন্য আসে না। প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে কেউ কিন্তু রাজনৈতিক নেতা -নেত্রী হয়ে যাচ্ছে না বা কোন আয় -উপার্জন , বাড়ি -গাড়ি পাচ্ছে না । প্রজন্ম চত্বরে কারা যায় ? প্রেমিক শাহবাগের রাজাকার বিরোধী আন্দোলনের বিরোধী , রাজাকারের মুক্তি চায় জেনে প্রেমিকা প্রেম ভেঙ্গে দিয়ে শাহবাগের মিছিলে ছুটে আসে। অন্তরে রাজাকারের ফাসির দাবি নিয়ে জাগ্রত মেয়েটি কলেজ থেকে সাময়িক অথবা সম্পূর্ণ ভাবে বহিষ্কৃত হলেও নিজের জীবনের দিকে না তাকিয়ে শাহবাগে ছুটে আসে। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে বাংলার বোনেরা হুইলচেয়ারে করে হলেও শাহবাগে ছুটে আসে মধ্যরাতের মিছিলে ।

শাহবাগের দাবিকে স্বাগত জানিয়ে বাংলার মাএরা শিশু সন্তান কে নিয়ে প্রজন্ম চত্বরে আসেন , বাবারা অফিস -আদালত সব বাদ দিয়ে দিনের পর দিন , রাতের পর রাত শাহবাগে বসে থাকেন , স্লোগান দেন। তরিকুল ইসলাম শান্ত -রাজীব হায়দার - আরিফ রায়হান দীপ - জগতজ্যোতি - জাফর মুন্সিরা জীবন দেন এই আন্দোলনের জন্য - ব্যাক্তিগত কি লাভ তাদের ? কিংবা অনলাইনে সারাক্ষন জামাত -শিবিরের নানা রকম অপপ্রচারের জবাব দিচ্ছেন যারা, তথ্য -উপাত্ত সংগ্রহ করছেন নিজেদের সব কাজ বাদ দিয়ে - ব্যাক্তিগত কি লাভ তাদের এখানে ?

কোন কিছুই না - কিন্তু লাভ সমগ্র বাঙালি জাতির । বাঙালি জাতিস্বত্বার একজন মানুষ হিসেবে এই দেশটার প্রতি , দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি , দেশের মাটির প্রতি ঋণ রয়েছে এই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের যোদ্ধাদের । আর তাই হৃদয়ের রক্তক্ষরন থেকে তারা ছুটে এসেছিলেন , ছুটে আসেন বার বার । এই প্রজন্ম যে জাহানারা ইমাম , প্রীতিলতা , সুফিয়া কামাল , ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী , রমা চৌধুরী , ত্রিশ লাখ শহীদ , দুই লাখ বীরাঙ্গনার প্রজন্ম। এই প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর প্রজন্ম এরা হার মানতে জানেনা । আর তাই আমরা হার মানি না , মানব না। রাজাকারের ফাঁসি নিয়েই আমরা ঘরে ফিরব , আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলছে , চলবে -বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে এই জাগরনের ঢেউ। আর এটাই হল শাহবাগের মূল সার্থকতা।

শাহবাগ আন্দোলনের , গনজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান ভাই এর (ইমরান এইচ সরকার ) জন্মদিন আজকে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল Dr.Imran H Sarker ভাইয়া। আসলেই আমরা অনেক সৌভাগ্যবান , স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরে এসেও ইমরান ভাই এর মত একজন কে পেয়েছি - জীবনের হুমকি নিয়েও যিনি এই আন্দোলন কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন । জন্মদিনে পার্টি চাইব না ইমরান ভাই এর কাছে , কসাই কাদের এর ফাসি হলে বিজয় মিছিল করব সবাই মিলে। সেই শুভদিনের অপেক্ষায় রইলাম। জানি ইমরান ভাইয়াও অপেক্ষা করে আছেন , গনজাগরন মঞ্চের প্রত্যেকটা আন্দোলনকারী অপেক্ষা করে আছেন সেই শুভদিনের জন্য ।

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু । জয় প্রজন্ম , জয় শহীদজননী , জয় শাহবাগ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন