সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪

এসো হে বৈশাখ...

বৈশাখ, বাংলা বছরের প্রথম মাস। আজ সেই বৈশাখের প্রথম দিন। বাংলা বছরের প্রথম দিন। ১৪২১ সালের প্রথম দিন। নববর্ষ এলেই মানুষ চায় নতুন করে ভাবতে, নতুন করে স্বপ্ন দেখতে, নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করতে। আর বাঙালি চিরকালই উৎসবপ্রিয় জাতি। বার মাসে তের পার্বণের এই বাঙালি জানে নতুনকে কিভাবে বরণ করে নিতে হয়। তাইত নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চারপাশে আজকে শুনি দুঃখ তাড়ানিয়া পদধ্বনি। লাল সাদার মেলা যেন বসে পহেলা বৈশাখে বাংলার ঘরে ঘরে। গ্রামীণ জীবনে পহেলা বৈশাখ কেমন হয়, কখনও কাছ থেকে দেখা হয়নি। তবে হালখাতা আর বৈশাখী মেলার গল্প শুনে নিজের মধ্যে যে চিত্রটা কল্পনা করে নিয়েছে গ্রামীণ বর্ষবরণের, তা অনেক বাস্তবতার চেয়েও অপরুপ। বাংলার পথে প্রান্তরে যেন সেই প্রাচীন রুপকথার যুগের রাণী আর রাজকন্যাদের মেলা বসে এই পহেলা বৈশাখে। অপূর্ব রকম স্নিগ্ধ পবিত্রতায় তারা বরণ করে নেন নতুন বছরকে।

আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে চারদিকে উৎসারিত নব প্রাণ কোলাহলের বার্তা। আজ দিনটা উৎসবের রঙ্গে রাঙ্গা হওয়ার। আজ দিনটা বাঙ্গালিয়ানার, দিনটা পান্তা- ইলিশের। দিনটা বাংলাদেশের। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা পৃথিবীর সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা যে আমাদের হাজার বছরের লালিত ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি কে ভুলে যাইনি, বরং হৃদয় গভীরে ধারণ করে রেখেছি - তার সমুজ্জল প্রকাশ এই পহেলা বৈশাখ। আমরা একদিনের বাঙালি না। আমরা হাজার বছর ধরে বাঙালি। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের ছোঁয়া রয়েছে আমাদের হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে। আর তাই, কর্পোরেট বিশ্বায়নের যুগে যতই আমরা সারা দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলি না কেন, এই একটা দিন আমাদেরকে ফিরে আসতে হয় একদম নিজেদের সংস্কৃতির কাছে। আর এই বাঙালি সংস্কৃতি, পৃথিবীর মানচিত্রে উজ্জল নক্ষত্রের মত জানিয়ে দেয় চিরটা কাল ছোট্ট সবুজ এই বাংলাদেশের নাম। এই সেই বাংলাদেশ, কৃষাণ- মজুর- জেলে- মুটে- কামার- কুমারের এই সে বাংলাদেশ। ষোল কোটি প্রাণের বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর।

আজ বিকালে ঘুরে আসলাম বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর। প্রথমেই দেখলাম একের পর এক কামান সাজিয়ে রাখা হয়েছে, খুব গর্ব হল যখন এগুলোর অধিকাংশের গায়েই লেখা দেখলাম মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের স্মারক এই কামানগুলো। এরপর দেখলাম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ডকুমেন্টারি। ৭ ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটা যখন দেখানো হচ্ছিল, স্থান কাল পাত্র ভুলে "জয় বাংলা..." বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম যে জায়গাটা শাহবাগ... প্রজন্ম চত্বর না! আসলে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, রক্তে আগুনধরা এ স্লোগানগুলো শুনলে সাথে কণ্ঠ মেলানোর।প্রিয় গণজাগরণের আগে এমনটা করা হয়ত কল্পনাতীত ছিল।

সত্যি, ঐ ডকুমেন্টারি দেখতে গিয়ে আমি চোখের পানি আটকাতে পারিনি। নিজেকে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম বারবার কিন্তু যখন দেখানো হল একটি বীরাঙ্গনা মেয়েকে, পাক বাহিনী পাশবিক লালসা চরিতার্থ করার পর যার মাথায় গুলি করে ফেলে গিয়েছে, সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে নাম লিখিয়েছে শহীদের খাতায়; কিংবা শরণার্থী শিবিরের আট লাখ মৃত শিশু, বাংলার আনাচে কানাচে, রণক্ষেত্রে ছড়িয়ে থাকা ত্রিশ লক্ষ শহীদ... এক জন নয়, দুইজন নয়, ত্রিশ লক্ষ। কারাগারে বন্দী জাতির পিতা, সেলের সামনে খোড়া হচ্ছে কবর। তারপরেও পিতা বলে যাচ্ছেন, "আমার মৃত্যুর পর লাশটা আমার বাঙ্গালির কাছে দিয়ে দিও..."

সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৪

স্বপ্নশিখা...

নীল আকাশের নিচে খোলা রাস্তায় একা একা হাঁটার মাঝে আনন্দটা কেমন ! জানি না, জানার সুযোগ হয়নি কখনও। যেমনিভাবে কখনও সুযোগ হয়নি রাতের বেলা তারাঢাকা চাদরের নিচে ছাদে বসে তারা গোনা। কিংবা উন্মুক্ত জ্যোৎস্নালোকে স্নান করা। কোনটা করারই সুযোগ হয়নি কখনও। মেয়েদের এতটা বেশি স্বাধীনতা পেতে নেই হয়ত। একটা ছেলে...র মন খারাপ হলে সে খোলা রাস্তা দিয়ে ঘুরতে পারে, নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকতে পারে, বন্ধুর সাহচর্যে দুঃখ ভুলতে পারে। কিন্তু একটা মেয়ে! ইচ্ছা করলেই পারেনা ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে নদীর পাড়ে বসে থাকতে। যত মন খারাপই হোক, ঘরের ঐ নিভৃত কোণটাই কিন্তু তার ঠিকানা। সমাজের একটা অলিখিত শেকল ছোটবেলা থেকেই যেন পরানো থাকে পায়ে।

মানুষ মনে হয় আত্মদ্বন্দ থেকে মুক্তি চায়। নিজের অপারগতাকে, ব্যর্থতাকে নিজের যুক্তি দিয়েই ঢেকে দিয়ে আত্মতৃপ্তি পেতে চায়। নিজের মনকে সম্পূর্ণভাবে বাইরে প্রকাশ করতে পারে এমন বীর দুনিয়ায় কয়জন আছে! নারীত্বের ঐ আবরণটা খসে পরে মানুষ চেহারাটা সামনে আনলে খুব সহজেই চোখে পরে আঘাতের চিহ্নগুলো। রাস্তার এক ধারে বসে ভাইয়ের সাথে খেলা করতে থাকা মেয়েটির চোখে মুখে কি যেন এক অপার্থিব আনন্দ খেলা করে! অথবা কর্পোরেট শহরের ইট পাথরের দেয়ালের মাঝে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে শিলাবৃষ্টি দেখতে থাকা মেয়েটির চোখেও তো কত রকম স্বপ্ন খেলা করে। মানুষ আত্মনাশি নীল পতঙ্গ। একদিন পাঁজরের হাড় দিয়ে গড়েছিল এ পৃথিবী, একদিন মানুষই ধবংস করবে তাকে। তারপরেও তো মানুষ স্বপ্ন দেখে...

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪

আলোকপ্রদীপ।

রক্তে আগুন ধরা সেই স্লোগানে, স্বাধীনতা এনেছিল কোটি কোটি প্রাণে। রক্তে কাঁপন তোলো সেই প্রিয় গানে, স্বাধীনতা এনেছিল শত কোটি প্রাণে। এবারের সংগ্রাম, ন্যায়বিচারের সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম ন্যায়বিচারের এক বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম..."আজকে বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা ছিল।প্রশ্নপত্র খুলে "বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম" নামে রচনাটা দেখা মাত্রই আমার মাথায় এই লাইনগুলি চলে আসল।আর সাথে সাথেই যেন চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি ঝরতে লাগল। কোনোরকমে চোখের পানি আড়াল করে লিখতে বসলাম। তখনই আমি ঠিক করেছিলাম যে এই রচনাটাই লিখব। কিন্তু এই রচনা শুরু করার সাথে সাথে আমি কিছুতেই কান্না আটকাতে পারছিলাম না। বুঝলাম যে আমার পক্ষে সম্ভব না বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে লেখার সময় একদম স্বাভাবিক থাকা। এত জীবন, এত রক্ত, এত অশ্রুর স্মৃতি এই স্বাধীনতা সংগ্রামে। তার কতটুকুই বা আমি জানি আর কতটুকুই বা ধারণ করতে পেরেছি ? যতটুকু জানি তাই তো আমাকে স্থির থাকতে দেয়না। হাসতে হাসতে রচনা লিখতে দেয়না। কোন মানে নেই হয়ত, কিন্তু তারপরেও আমার যে প্রতিমুহূর্তে মনে হয় আমরা যাতে হাসতে পারি, বাঁচতে পারি সেইজন্যে, শুধু সেইজন্যে ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। এই যে আমি ভাল আছি, এই ভাল থাকার পিছনে আমার মত, আমারই বয়সী অসংখ্য মেয়ের আত্মদান জড়িয়ে আছে। যে ছেলেটা বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগকে নিজ হাতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমাদের জন্য স্বাধীন মানচিত্র আনতে ছুটে গিয়েছিল, যে মেয়েটা নির্যাতিত শরীর নিয়ে মৃত্যুর আগে শেষ কম্পিত উচ্চারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়ে গিয়েছিল...

নাহ, আমি আর ভাবতে পারিনা। চোখ ফেটে জল আসে আমার। রচনা পরিবর্তন করতে বাধ্য হই। এক ঘণ্টার মধ্যে এই রচনা লিখা সম্ভব না। যুগ যুগ ধরে লিখলেও বাদ থেকে যাবে এই আত্মদানের অসংখ্য না জানা কথা। পরীক্ষা শেষ করে ফিরে এসে ভাবছিলাম, আচ্ছা আমি কতোটুকু পারলাম আসলে ? এই শহীদেরা, বীরাঙ্গনারা আমাদের এত কিছু দিয়েছেন...নাহ, এর পর আমি আর ভাবতে পারিনা। আমি তো ছুটে গিয়েছিলাম ন্যায়বিচারের দাবিতে। স্লোগানে, গানে, লেখায় আমরাই তো জাগিয়ে তুলেছিলাম খুব নিষ্ঠুর রকম নীরব একটা সময়কে। মা এখনও বলেন, "গত একটা বছর তুই যেন একদম অন্য মানুষ ছিলি। হাসতি না, কারো সাথে কথা বলতি না। শুধু তোর শাহবাগ আর লেখালেখি। তোর লাইফে যে আরও কেউ আছে, এই জিনিসটা তো তোর খেয়ালই ছিল না এতদিন!" মা তো তাও পুরো দৃশ্যটা জানেন না। অনলাইনে লেখালেখির কারণে যে হ্যারাসমেনটগুলো সহ্য করতে হয়েছে তার কানাকড়িও মা জানেন না। মা ভয় পাবেন এগুলো জানলে। তাই জানাতে চাইনা। নিজের কষ্ট নিজের মাঝে সহ্য করার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে...যাহ্‌, কোন কথা থেকে কই চলে গেলাম। বলছিলাম, এসব ভাবলে মনে হয় নাহ, আমি অকৃতজ্ঞ না। আমরা অকৃতজ্ঞ না। নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছিলাম। বিয়াল্লিশ বছরের ঘুমন্ত জাতি জেগেছিল আমাদের শাহবাগের হাত ধরেই। আমি হুইলচেয়ারে করে বৃদ্ধা মাতাকে শাহবাগে ছুটে আসতে দেখেছি,জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে বৃদ্ধ বাবাকে চোখ মুছতে দেখেছি।

শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৪

নব ইতিহাসের সাক্ষী রইল প্রজন্ম চত্বর।

প্রজন্ম চত্বর আমার প্রতিবাদের ভাষা। আমার অস্তিত্বের একটা অংশ। আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর। খুব মনে পরে গত ফেব্রুয়ারিতে অনেক কষ্ট করে এক একটা দিন মাকে শাহবাগে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করানোর দিনগুলোকে।জন্মদিনের উপহার হিসেবে একদিন শাহবাগে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া। আরও কত কি ছোট বড় স্মৃতি যে এই শাহবাগের সাথে জড়িয়ে আছে তার হয়ত সংখ্যা নেই। যুদ্ধাপরাধীগুলোর ফাঁসি চেয়েছিলাম আমরা, জামাত শিবির... নিষিদ্ধ চেয়েছিলাম আমরা। কালের পরিক্রমায় এগিয়ে যেতে থাকল আন্দোলন, এগিয়ে যেতে থাকল গণজাগরণ মঞ্চ। গত এক বছর এক মাসে শাহবাগের প্রতি মুহূর্ত আমার অন্তরে অক্ষয় হয়ে আছে। প্রতিটা অনুভূতি, উৎকণ্ঠা, অশ্রুমোছা হাসি সবকিছু আমার জীবনের সবচেয়ে পবিত্র স্মৃতি। সবচেয়ে ভালোবাসার স্মৃতি।

রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসি না হওয়ার ক্ষোভ থেকে যে গণজাগরণের জন্ম, এক বছর এক মাসে তা পার হয়েছে অনেক দূর পথ। এই সুদূরের পথচলায় গণজাগরণ মঞ্চের রঙ্গিন ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে কতশত হাসিকান্নার ছবি। আমি শাহবাগে গিয়েছি। আমার মত আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ শাহবাগে গিয়েছে। শাহবাগের প্রতিটা ধূলিকণা সাক্ষী এই নব ইতিহাসের। রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসির দিনটা কিংবা লক্ষ লক্ষ মানুষ একসাথে বিজয় দিবসে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার দিনটা খুব মনে পরে আজ। আমি নিজের অশ্রু লুকাতে পারিনি, চারপাশে অসংখ্য মানুষকে দেখেছি জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শেষে চোখ মুছতে। এক হাতে কোলের শিশুকে আঁকড়ে ধরে অন্য হাত তুলে শপথ নিতে দেখেছি কোন এক মাকে। সত্যি বলছি, এই দৃশ্যটা দেখে কিছুক্ষনের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।

রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৪

বিস্মৃতিবৃষ্টি

রজনীগন্ধার সৌরভে আর রাতের আকাশে হাজার তারার মেলায় আমি স্নিগ্ধতার প্রতিমূর্তি দেখতে পেয়েছিলাম। মাধবীলতা ফুলের চারপাশে অবিরাম উড়ে বেড়াতে দেখেছি  কালো ভ্রমরের দলকে। প্রকৃতির এ যে  এক অমোঘ নিয়ম, যোগ্যতমের জয় হোক। সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেস্ট। পৃথিবী নিজেই তো এক অক্লান্ত অবিরাম সংগ্রামের ভূমি। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, সময়ের প্রয়োজনে ধূলি মাটির এ পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে কত লড়াই চিত্রিত হয়েছে, কেই বা লিখে রেখেছে সে সব না বলা কথা। অস্ফুট কিছু গোলাপের পাপড়ি হয়ত চিরকাল ধরে গেয়ে গেছে আদি অকৃত্রিম মানবপ্রেমের গান। আবদ্ধ শহরে মায়ের জন্মদিনে বনি প্রিন্সের আধ ফোঁটা কলি উপহার দিয়ে শহীদ রুমী বোঝাতে চেয়েছিলেন, এরকমই অনেক রক্ত ঝরিয়ে অবশেষে স্বাধীনতার রাজপুত্র আসবে।

আত্মমগ্ন কবি, তুমি নার্সিয়াস হতে যেও না। চারপাশে চেয়ে দেখ, আদি অকৃত্রিম প্রাণের প্রবাহ তোমাকে ঘিরে। প্রতিটা প্রাণের সাথে কত স্বপ্ন, কত আঘাত, কত হাসি কান্নার ইতিহাস মিশে আছে জানি না মহাকাল তার পাতায় লিখে রাখে কিনা সেসব অজানা স্মৃতি। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাসের মাঝে ইট কাঠ পাথরের শহরে বসেও আমি কল্পনা করেছিলাম নক্ষত্রখচিত রাতে জ্যোৎস্নাস্নান করার দৃশ্য। তারাদেরকেও কি জীবন সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়! হয়ত বা, কারণ ওরাও তো প্রকৃতির বাইরে নয়। ধুমকেতু আর দূরের নক্ষত্রের ছবি এঁকেছি নিজের মনে। উচ্চ মাত্রার দর্শন ক্ষমতা সম্পন্ন টেলিস্কোপ দিয়ে নক্ষত্র দেখার চেয়ে এভাবে দেখা অনেক বেশি আনন্দের। জীবনটা আরেকটু সহজ হলে কি ক্ষতি হত জানা নেই। তবু তো জীবন এগিয়ে যায়...

শিরোনামহীন কিছু কথা...

তবু স্বপ্ন দেখি। কিছু ঘটনা এমনই, কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়না। মনে হয়, যদি পারতাম এইসব লজ্জাজনক ঘটনাগুলোকে মুছে ফেলতে! সত্যি খুব লজ্জা হয় যখন শুনি যে কেউ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিতর্ক তোলে। যখন ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের দামে আর দুই লাখ মায়ের সম্ভ্রমের দামে স্বাধীন করা বাংলাদেশের কোন মন্ত্রী বলেন,ক্ষমা চাইলে জামাত নিষিদ্ধের প্রয়োজন নেই! খুব খারাপ লাগে তখন। নিজের মনকে সেই সময়ে প্রবোধ দ...েই এই বলে যে,আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরা এখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রেখেছি আর যতদিন বাঙ্গালিরা বেঁচে থাকবে, বাংলাদেশ কে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। কখনই না।

আমরা গণজাগরণ মঞ্চে দাবি তুলি, রাজাকারের ফাঁসি চাই। জামাত শিবির নিষিদ্ধ চাই। কিন্তু ক্ষমতার লোভ আর রাজনীতির জটিল সমীকরণ হয়ত বা রাজনীতিবিদ দের মানুষ থাকতে দেয়না। কত আন্দোলন করে, কত রক্তের দামে একজন কাদের কসাইয়ের ফাঁসি আদায় করতে হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। তারপরও আমরা তো পিছু হটি নি। নিজেদের দাবি থেকে এক পা সরি নি আমরা। শাহবাগের কর্মী দের উপর একের পর এক আক্রমণ হয়েছে জামাত শিবির দ্বারা, পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে পুলিশের নির্লজ্জ আক্রমণের কথাও আমরা ভুলিনি। এত কিছুর পরও শাহবাগ জেগে আছে, জেগে থাকবে।

শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০১৪

আমার সোনার বাংলা,আ মি তোমায় ভালোবাসি।

শ্রাবন্তী মেঘের কারুকার্য ছেয়ে ফেলেছিল তোমার আকাশটিকে।আকাশজুড়ে জমা হয়েছিল ঘন কাল মেঘমালা। একসময় তারা ঝরে পরেছিল অঝোরে বৃষ্টি হয়ে।সেই বৃষ্টি, বিধাতার আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল কাঠফাটা রৌদ্রের পরে। এক নবযৌবন লাভ করেছিল তোমার প্রকৃতি।এ বৃষ্টিকে দেখে নতুন ফসলের আশায় বুক বেঁধেছিল কৃষাণ। কবি রচনা করেছিল নতুন কোনও কবিতা। কোথাও হয়ত একটি একাকী কিশোরী বালিকা লুকিয়ে লুকিয়ে ছাদে উঠে গিয়েছিল বৃষ্টিতে ভিজতে।অবাক হয়ে ...বিস্ময় ভরে তোমার সে রুপ দেখেছিলাম জানালার গরাদ ভেদ করে। আর নিজের মনেই বলেছিলাম, ভালবাসি।

অপরুপ রোদ্দুরে স্নান করা প্রকৃতি নিয়ে উজ্জ্বল হাসিতে উদ্ভাসিত ছিলে তুমি। কাকের চোখের মত কালোচুল এলিয়ে রাঙা উৎপলকে তোমার উপমা হিসেবে ব্যাবহার করে গেছেন কবি।কৃষ্ণচূড়ার লালে পুরো শরীর আবীর রাঙ্গা করে পৃথিবীর মানচিত্রে তুমি গৌরবের হাসি হাসছ। বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল তোমার প্রকৃতিতে। শীতের বৈরাগ্যের পর পরই বসন্তের পুস্পশোভিত ডালি নিয়ে সারা বিশ্বকে তুমি যেন জানিয়ে দিচ্ছ তোমার গৌরবময় উপাখ্যান। স্নেহময়ী তোমার সেই মাতৃরুপ আমি দেখেছি একান্ত অনুভবে। আর অন্তর থেকে উচ্চারন করেছি, ভালবাসি।

মুক্তির মন্দির সোপানতলে...

মুক্তির মন্দির সোপানতলে বীরদের নাম যেন অশ্রুজলেই লেখা থাকতে হয়। তাইত ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের মাঝেই মিশে আছে কত শত মায়ের বুক ফাটা কান্না আর বোনের অশ্রু সজল আর্তনাদ। অনেক জীবনের দামে পাওয়া এ দেশ, অনেক মূল্য দিয়ে পাওয়া। সত্যি, এ ব্যাপার গুলো ভাবতে বসলে নিজেই কখন কাঁদতে শুরু করি ভেবে পাইনা।

"মা, দেশের এই অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠাও তাহলে আমি হয়ত যাব শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আমার বিবেক ...চিরকালের মত অপরাধী করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে হয়ত বড় ইঞ্জিনিয়ার হব, কিন্তু নিজের বিবেকের কাছে কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।তুমি কি তাই চাও, আম্মা?"

নাহ, আম্মা তা চাননি। আম্মা তা চাইতে পারেননা। আর তাই দেশের জন্য কুরবানি করে দিয়েছিলেন শহীদ রুমীকে। সেই উজ্জ্বল প্রতিভাবান সাহসী বীর মুক্তিসেনা শহীদ রুমীর জন্মদিন কাল। শহীদ রুমী আমাদের আদর্শ হয়ে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।

শুভ জন্মদিন, শহীদ রুমী। আকাশের প্রথম শুকতারা হয়ে আশীর্বাদ করো আমাদের। শহীদ রুমী হয়ত জানেন তাঁর খুনি মুজাহিদ রাজাকারের ফাঁসির রায়ের কথা। কাদের কসাইয়ের ফাঁসির কথা। রুমীরা যে বারবার ফিরে আসেন বাংলায়। ইতিহাস হয়ে, ইতিহাসের নির্মাতা হয়ে, ইতিহাসের যোদ্ধা হয়ে...

জয় বাংলা...

সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি...

রজনীর নিকষ কালো আঁধার ভেদ করেও তো এক সময় আলোকমালার একটি সূক্ষ্ম কিরণ দেখা দেয় পূর্ব দিগন্তে। সেই রেখাটি ধীরে ধীরে বিস্তৃত হতে থাকে, আকার নেয় উজ্জ্বল এক আলোকের গোলকের যার নাম সূর্য। রক্তলাল আভা এক সময় ছড়িয়ে পরতে থাকে পুরোটা আকাশ জুড়ে। প্রকৃতিতে লাগে আলোর দোলা। হয়ত বা নতুন সূর্যের সাথে নতুন কোন এক স্বপ্নে বুক বাধে আশাহত ভাগ্যপরাহত কোনো এক মানুষ।হয়তবা ফসলের মাঠের পথ ধরতে লাঙল জোয়াল কাঁধে গ্রামীণ কৃষক...ের মনেও তখন নতুন জীবনের স্বপ্ন জাগে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৪

স্মৃতির পাতা ও কিছু স্বপ্ন।

একটা সময় ছিল...

অনেক ছোট ছিলাম তখন। মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতাম। ক্লাসে বসে মাকে না দেখতে পেয়ে কান্নাকাটি করতাম। জেদ করতাম মাকে ক্লাসের ভেতরে বসিয়ে রাখার জন্য। একটা নাম্বারের জন্য প্রথম না হতে পারলে আর কিছু ভাল লাগত না।ছবি আঁকতাম, সেখানেও প্রতিযোগিতা। সবচেয়ে বড় কথা, সে সময় প্রতিযোগিতাকে উপভোগ করতাম। অনেক ছোট ছিলাম, কিন্তু অনেক বড় বড় পাগলামি করতাম। স্কুলে একদিন না গেলে অসহ্য লাগত তখন।স্কুলের মাঠ, ...অযথা দৌড়াদৌড়ি, ক্লাস সবই অনেক ভাল লাগত তখন।

সেই ছোটবেলার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে একদিন চলে আসলাম ভিকারুন্নিসায়। বড় স্কুল, ভাল স্কুল, টিচাররাও অন্যরকম। কেমন যেন অন্য সবার থেকে দূরে সরে যেতে থাকলাম ধীরে ধীরে। ছোট ছোট ব্যাপারকে তখন উপেক্ষা করতাম। সবকিছুকে অতিক্রম করে নিজের লক্ষ্যে অটল থাকার স্বভাব ছিল তখন থেকেই। একসময় স্কুল লাইফের শেষে দাঁড়িয়ে দেখলাম, ফেয়ারওয়েল এর দিনটা তে আমার পাশে একটু দাঁড়ানোর মত কেউ নেই।

বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০১৪

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে প্রজন্ম চত্বর।

প্রজন্ম চত্বর, শাহবাগ। অদ্ভুত এক ভালবাসায় বেঁধে রেখেছে আমাকে। শাহবাগে গেলে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। আমি আমার আমিকে খুঁজে পাই। এখানে আমি বুঝতে পারি আমার সাধ্য কত টুকু এবং কি করতে পারি। শাহবাগ, আমাকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়।সে স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য লড়ে যেতে শেখায়। স্বাধীনতা দিবসে শাহবাগে যাব না, তাও কি হয়!!! তাই রওনা হয়ে গেলাম শাহবাগের পথে। এই পথ, এই জাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরি সব যেন আমার কত জনমের আপন। কত... যুগ যুগান্তরের আত্মার সম্পর্ক যেন রচিত হয়ে আছে এই প্রজন্ম চত্বরের সাথে। যত বার শাহবাগের মাটিতে পা রাখি, এই কথাগুলোই ঘুরে ফিরে মনে আসতে থাকে যে আমরা পেরেছি, আমরা পারব।

মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের শাহবাগ ছিল লাল - সবুজে রাঙ্গা এক অক্ষয় উপমা। যখন গিয়ে পৌছালাম, অনুষ্ঠান তখনও শুরু হয়নি। মাইকে বাজছে দেশের গান। ফুল ভলিউমে "তীরহারা এ ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে' বাজছিল তখন। চারপাশে ঘোরাফেরা করলাম কিছুক্ষণ। Imran ভাইয়ার সাথে কথা হওয়াটা আজকের সবচেয়ে স্মরণীয় দিক আমার। ভাইয়া নিজেও হয়ত জানেন না ঐ দুই মিনিটের কথা বলাটাই আমার কাছে কতটা আপন করে রাখার স্মৃতি। কতোটা আনন্দের স্মৃতি। Fida ভাইয়া, Jebtik ভাইয়াদের সাথেও আজকেই প্রথম কথা হল। আর এইসব আলাপ পরিচয়ের সময় মঞ্চে চলছিল রাজপথ সংলাপ। বিষয়ঃ যুদ্ধাপরাধের বিচার ও গণজাগরণ মঞ্চের ছয় দফাঃ আমরা এখন কোথায়?

সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০১৪

একটি পতাকা মিছিল ও ভালবাসার জয় বাংলা...

একটি পতাকা মিছিল ও ভালোবাসার "জয় বাংলা"...

স্বাধীনতা দিবস আজ। ২৬ মার্চ। সালটা ২০১৪। বেণীতে বেলি ফুলের মালাটা জড়াতে গিয়ে নিজের অজান্তেই হাসছিল দোলা।মহান স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এই দিনগুলো এগিয়ে এলে হটাত করেই কেমন যেন মন ভাল হয়ে যায় তার। ঘন সবুজ জমিন আর লাল পাড়ের শাড়িটা অনেক যত্ন করে পরেছে দোলা আজকে।কপালে বেঁধেছে স্বাধীন বাংলার পতাকা।কি ভাববে পাগলটা এই সাজ দেখলে! সাগর কি বুঝবে এই সাজের মর্মার্থ!নাকি বরাবরের মত আজকেও গল্প করতে করতে কোন অজানায় হারিয়ে যাবে! এসব ভাবতে ভাবতেই চোখে কাজল লাগায় দোলা। চুড়ির সংগ্রহ থেকে লাল- সবুজ চুড়ির গোছাটা বের করে। আজকে সব কিছুই যেন বেশি সুন্দর লাগছে। তৈরি হয়ে ঘর থেকে বাইরে পা বাড়ায় দোলা।

সাগরের বাসা গুলশানে। দোলাকে অনেক ভালোবাসে সে। মাঝে মাঝে তার মনে হয়, মেয়েটা যেন একটু বেশি পাগল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কি এক শাহবাগ নিয়ে পরে আছে, আজ পর্যন্ত বিরাম নেই। ফেসবুকে আগে ওর প্রতিটা স্ট্যাটাসে কত আনন্দ করত দুইজনে মিলে। আর এখন ? দোলার স্ট্যাটাসের মর্মার্থ সাগরের মাথার দুই মাইল উপর দিয়ে যায়। এই শান্ত শিষ্ট মেয়েটার মধ্যে এত তেজ কোথা থেকে আসল সাগর তা ভেবে পায়না। হয়ত শাহবাগ থেকেই। দোলা তো তাই বলে। নিজে সে "আই হেইট পলিটিক্স" ধরণের ছেলে। কিন্তু দোলার কাজে কখনও বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি। পাগলিটা আজকে জানি আবার কি আবদার করে বসে! মনে মনে এই ভাবতে ভাবতে বাড়ি থেকে বের হয় সাগর।

শনিবার, ২২ মার্চ, ২০১৪

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি

জাতীয় সঙ্গীত আমাদের বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। এটা এমন একটা আবেগ যা কোন শব্দ দিয়ে কক্ষনো বোঝানো সম্ভব না। গত বছরের মহান বিজয় দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিংবা গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে লাখ লাখ কণ্ঠে একই সাথে আমার সোনার বাংলা গাওয়ার যে অনুভূতি, তা যে অনুভব না করেছে তাকে বোঝানো সম্ভব নয়। জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্বরেকর্ড হোক বা না হোক, আমি শুধু জানি যে বিজয় ২০১৩ অনুষ্ঠানে ...এ জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে আমার চোখে পানি এসেছিল, ইচ্ছা করছিল পতাকাটা আঁকড়ে ধরে অঝোরে কাঁদি। বড় মধুর সেসব স্মৃতি আমার, বড় ভালোবাসার এই বাংলাদেশ, এ ইতিহাস, প্রজন্ম চত্বর আর অমর এই জাতীয় সঙ্গীত।

বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরবার সময় বিমানে পরম ভালবাসা নিয়ে গাইছিলেন এ গানটি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।" একাত্তরে এই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার "অপরাধে" কত বাঙ্গালিকে যে গুলিতে, বেয়নেটে ঝাঁঝরা করেছে তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। কারণ, লক্ষ লক্ষ মিসাইলের চেয়েও এ জাতীয় সঙ্গীত অনেক বেশি শক্তিশালী। জাতীয় সঙ্গীত, বাংলাদেশকে ভালোবাসার উচ্চকিত ঘোষণা। অনেক জীবনের দামে পাওয়া এ অমূল্য সম্পদ। প্রতিটা লাইনে মিশে আছে শহীদের রক্তের ঘ্রাণ, বীরাঙ্গনা মায়ের অশ্রু। ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালবাসি এ জাতীয় সঙ্গীতকে। আর তাই সহ্য করতে পারিনা জাতীয় সঙ্গীতের কোনরকম অপমান।

বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০১৪

মারণাস্ত্র, মনে রেখ ভালোবাসা তোমার আমার...

মায়াবী পূর্ণিমার আলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হয়, আজ কিছু সময় প্রয়োজন একান্ত নিজের জন্য। কিছু সময় প্রয়োজন নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য। একবার নতুন করে শুরু করবার জন্য। বৃষ্টি দেখার জন্য, পূর্ণিমা দেখার জন্য আমার কিছু সময় চাই। ছোট কিছু আনন্দের জন্য, কিছু অবসরের জন্য, দুচোখ ভরে চারপাশটা দেখার জন্য কিছু সময়ের খুব প্রয়োজন আজ।ঘুরে বেড়াতে চাই অজানা অদেখা জায়গাগুলোতে। চাঁদের আলোয় একাকী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ...থাকার জন্যও কিছু সময় চাই। সময় চাই নগর জীবনের ব্যস্ততা থেকে দূরে সরে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্য। বুকের মাঝে একাত্তরকে, শাহবাগকে ধারণ করে বেঁচে থাকার জন্যই কিছুটা অবসরের আজ খুবই প্রয়োজন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত, বলতে গেলে শাহবাগ, রাজাকারের ফাঁসি এই বিষয়গুলোকে ছাড়া আর কিছুকে মনে তেমন একটা স্থান দেইনি। কলেজ থেকে সাসপেন্ড হলাম, ক্লাসের বান্ধবীরা সব একে একে দূরে সরে গেল, মাথায় এখনো সেলাইয়ের অসহ্য ব্যাথা যখন তখন জানান দিয়ে যায় প্রজন্ম চত্বরের কথা। এসব কিছুর বিনিময়ে প্রাপ্তি একটাই, বিয়াল্লিশ বছরের কলঙ্কমুক্তির প্রথম ধাপ, রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসি। এই ফাঁসির জন্য আমার যতটুকু করার সাধ্য ছিল করেছি। যখন শাহবাগে যাওয়ার দরকার, শাহবাগে গিয়েছি। যখন লেখালেখি করার দরকার, করেছি। আর এসব কিছুর মধ্যে প্রজন্ম চত্বরকে ভালবেসে ফেলেছি নিজের চেয়েও অনেক বেশি।

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০১৪

আমরা করব জয় একদিন...

"স্বাধীনতা" অনেক প্রিয় কিছু শব্দের মধ্যে অন্যতম একটি। স্বাধীনতা, একটি জাতির জন্মের ইতিহাস। স্বাধীনতা, একটি দেশের জন্মের স্মারক।স্বাধীনতা সেই জীয়নকাঠির নাম যার স্পর্শে নিদ্রামগ্ন জাতির অন্তরে জাগে ঘুমভাঙ্গার অবিনাশী গান। শান্ত নিরীহ একটি জাতি হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদী সংগ্রামী। শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলেমেয়েরা কোমল হাতে তুলে নিতে পারে অস্ত্র।যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরার অমোঘ আহ্বান কোটি কোটি প্রাণকে এক সুতায় গেঁথে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে স্বাধীনতার ...লক্ষ্যে। স্বাধীনতা, ঘুমভাঙ্গা জাতির সুতীব্র চিৎকারের নাম। বোনের হাতে বজ্রমুষ্টির স্লোগানের নাম।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনেক জীবনের দামে পাওয়া, কারো দানে পাওয়া নয়। আমি একাত্তর দেখিনি, জন্মাইনি তখনও। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সেই অমোঘ ঘোষণা আমাকে চোখের জল মুছে জয় বাংলা বলে চিৎকার করার সাহস যোগায়। আমি একাত্তর দেখিনি, কিন্তু শহীদ রুমী, বদি, আজাদ, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল দেরকে অনেক শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। প্রতিটা মানুষের জীবনের একটা আদর্শ থাকে। শহীদ রুমীকে আমি আমার আদর্শ বলে মানি। লাল- সবুজকে ভালবাসি। ভালবাসি রক্তের দামে অর্জিত এ পতাকাকে। একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ শে মার্চ, ১৬ ই ডিসেম্বরে আমিও যাই শহীদ মিনারে, স্মৃতিসৌধে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে। আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি।

কিংবদন্তির কথা বলছি...

বাংলাদেশ এমনই একটা দেশ, যেখানের অনেক সাধারণ একজন মানুষও হয়ে উঠতে পারেন অসাধারণ। বিশ্বের আনাচে- কানাচে ছড়িয়ে দিতে পারেন বাংলাদেশের নাম। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ যে পিছিয়ে নেই তার প্রমাণ বাংলাদেশের হিমালয় জয়, সম্প্রতি নিজস্ব ড্রোন আবিস্কার আরও কত কি। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিজয় ইতিহাসে হয়ত যোগ হতে চলেছে আরেকটি বিজয়। লাল গ্রহ মঙ্গলের প্রথম পদার্পণকারীদের একজন হওয়া...র পথে রয়েছেন বাংলাদেশের নারী লুলু ফেরদৌস।

জিডি পাইলট হবার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু, ২০০০ সালে বাংলাদেশে নারী হওয়ার অপরাধে পূরণ করতে পারেননি স্বপ্নটা। কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি তিনি। ভিকারুন্নেসা স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। এগারো বছর চাকরি করে অর্থ জমিয়েছেন বিদেশে যাওয়ার জন্য। অবশেষে পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকায়। এরোস্পেস সায়েন্সে অর্জন করেছেন ডক্টরেট ডিগ্রি। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার একটি সম্মানজনক পদে চাকরি করছেন তিনি।

বুধবার, ১২ মার্চ, ২০১৪

ভালবাসি বাংলাদেশ...

প্রাচীন রাজকুমারীর বেশে যদি একবার নিজেকে আবিস্কার করতে পারতাম!!! চারপাশটা যদি হটাত করে একদম নীরব হয়ে যেত! শুধু নিশ্ছিদ্র নীরবতা থাকত আমাকে ঘিরে। কাজের চাপ, দায়িত্ববোধ, পরীক্ষার টেনশন, প্রতিটা ব্যস্ততা, নানামুখী নানা মতের প্রতিটা তর্ক- বিতর্ক সব যদি কিছু সময়ের জন্য একটু বন্ধ করা যেত। নিজের আদর্শের জন্য যদি আর প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধ করতে না হত! লড়াই করেই বাঁচতে চাই, তবে কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু একেবারে... স্তব্ধ হয়ে যদি অসীম শূন্যতার মাঝে হারিয়ে যেতে পারতাম আর চারপাশে শুধু ভেসে আসত সঙ্গীতের মৃদু মধুর স্বর! ফুলের বাগানে ঘুমাতাম, প্রজাপতির পিছনে দৌড়ে বেড়াতাম আর এক মুঠো রোদ ধরার আনন্দ অনুভব করতাম! স্বপ্ন দেখতে যে আজো ভালবাসি... 
নগরজীবনের ব্যস্ততা থেকে অনেক দূরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে কিছুদিনের জন্য। কিন্তু নিজে খুব ভালভাবেই জানি যে পুরো পৃথিবী ঘুরে আসার সুযোগ পেলেও এর পরিবর্তে একবার শাহবাগে যাওয়ার অনুমতিকেই আমি বড় করে দেখব। হ্যা, আমি শাহবাগকে অন্ধভাবেই ভালবাসি। বাংলাদেশকে অন্ধভাবেই ভালবাসি। আর এভাবেই ভালবাসতে চাই। কাদের মোল্লার ফাঁসির জন্য শাহবাগে গিয়েছি। কাদের মোল্লার ফাঁসি আদায় করে ছেড়েছি। একইভাবে একদিন কলঙ্কমুক্ত হবে বাংলাদেশ সব রাজাকারের কবল থেকেই। আর যতদিন তা না হবে ততদিন একাকী হলেও চিৎকার করে যাব "রাজাকারের ফাসি চাই" বলে।

রবিবার, ৯ মার্চ, ২০১৪

তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে...

ভালবাসি, অনেক ভালোবাসি মা তোমাকে। কখনও মুখ ফুটে বলা হয়নি ভালবাসি। কিন্তু তুমি তো মা, তুমি তো জানো আমি তোমাকে কত ভালবাসি। যেকোন কাজ করার আগে ভাবি, এই কাজে সফল হলে আম্মু কতটা খুশি হবে। এরপরই কাজটা করার অন্যরকম একটা শক্তি চলে আসে নিজের মাঝে। মা, তোমার মুখের এক একটা হাসি যে আমার কতোটা প্রিয় তা হয়তবা কখনই বোঝাতে পারব না। কিন্তু, আমার মনে হয় মায়ের সাথে মেয়ের সম্পর্কটাই এমন যে না বলেও অনেক কিছু বলা হয়ে য...ায়। জন্মের পূর্ব থেকেই যে মায়ের সাথে রচিত হয়ে আছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভালবাসার বন্ধন।

বুঝতে শুরু করেছি যখন তারও আগে থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটা মুহূর্তে প্রতি পদক্ষেপে পাশে পেয়েছি তোমাকে। দুনিয়ার সবাই যখন দূরে সরে গেছে, তখনও মা তুমিই আমাকে বাঁচার সাহস দিয়েছ। তোমার অনুপ্রেরণা পেয়ে আর জাতীয় পতাকাটা বুকে নিয়েই তো বারবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছি, আশায় বুক বেঁধেছি। ভুল বন্ধুত্ব, ভুল ভালবাসা সবকিছু যখন বারবার আঘাত করে ক্ষত- বিক্ষত করেছে আমাকে, ছায়া হয়ে তুমিই পাশে দাঁড়িয়েছ আমার। শাহবাগে যেতে বাধা দাওনি কোনদিন, বাঁধা দাওনি আমার কোন ইচ্ছার পথে কখনও। তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা...

কত ভুলই না করি প্রতিদিন। রাগের মাথায় কত কিছুই না করে বসি, কত খারাপ ব্যবহার করে ফেলি তোমার সাথে কতবার। কিন্তু, তুমি বারবার আমাকে সময় দাও, সাহস দাও নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আবার নতুন করে শুরু করার জন্য। মা, তোমার জন্য আর প্রজন্ম চত্বরের জন্যই আমি বেঁচে আছি এখনও। নাহলে হয়ত বেঁচে থাকার অর্থ কবেই হারিয়ে ফেলতাম। মা, আরেকবার নতুন করে শুরু করছি সবকিছু। যেখানে শুধু থাকব আমি, তুমি, আমাদের ছোট্ট পবিত্র আর প্রজন্ম চত্বর। সবার উপরে আমাদের সাথে থাকবে বাংলাদেশ। মা, তুমি কি জানো তুমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল, সবচেয়ে লক্ষ্মী মা।

জানো না, তাইত? ঠিক আছে, আজকেই জানাব তোমাকে। উপরের কথাগুলো চিঠিতে লিখে খামে ভরে তোমার কাপড়ের ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি। আজকে সারাদিন তোমাকে চোখে চোখে রাখব। যেই তুমি চিঠিটা পড়বে, সাথে সাথে গিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরব। তারপর? নাহ, তারপরের কথা আর ফেসবুকে শেয়ার করব না। সে মুহূর্তগুলো শুধু তোমার, আমার আর ঐ লাল- সবুজের। মাতৃস্নেহে যে আজো আগলে রেখেছে প্রতিটা সন্তানকে। কি রোদে, কি বৃষ্টিতে আর কি ঝড়- ঝঞ্ঝায়; চিরকালই আগলে রাখবে এমনি করে...

জয় বাংলা..

শনিবার, ৮ মার্চ, ২০১৪

আমার বাংলাদেশ, আঁধার পথে চলতে দেব না...

স্বপ্নজয়ী তুমি। তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ। রক্তগঙ্গায় স্নান করে অগ্নিঝরা এই মার্চেই তোমার জন্মদিন। একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাত্রি তোমাকে বিভীষিকায় আচ্ছন্ন করেছিল, কিন্তু তা শুধুই কিছু মুহূর্তের জন্য। অচিরেই তোমার সন্তানেরা প্রতি নগরে- বন্দরে- গ্রামে সবখানে গড়ে তুলেছিল প্রতিরোধ। পুতুল খেলার হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল বোন, বই খাতা ফেলে মুক্তিযুদ্ধে ছুটে গিয়েছিল কিশোর। নিশ্চিত জীবনের স্বপ্নকে নির্দ্বিধা...য় নিজের হাতে ভেঙ্গে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল শহীদ রুমী- আজাদেরা। আরও কত অজানা ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ নামক অমর স্মারকের পেছনে লুকিয়ে আছে, আজও হয়ত তার সব আমরা জানিনা।

আর এসব কিছুর ফলশ্রুতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় লাভ করেছিল লাল- সবুজের এ অমর পতাকা। আমার সোনার বাংলা, তোমাকে অনেক ভালবাসি। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, দুই লক্ষ বীরাঙ্গনা মায়ের আত্মদানের বিনিময়ে তুমি স্বাধীন হয়েছ। তোমার সন্তানেরা চিরকাল জেগে থাকবে তোমাকে রক্ষা করতে। তোমাকে রাজাকারমুক্ত করে, খুনি হায়েনাদের কবল থেকে তোমাকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে তবেই থামব কথা দিলাম মা। কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে মা। অন্য সবারও হবে। এই বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যে ঘুম নেই, শান্তি নেই। লড়াইকে কখনও শেষ না করে ছাড়তে নেই বলেই আমি বিশ্বাস করি।

কাজেই যে করেই হোক, এ লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে আমাদেরই। যে শপথ শাহবাগ আমাদের প্রাণে পৌঁছে দিয়েছে, কণ্ঠে তুলে দিয়েছে তাকে আমরা ভুলিনি, ভুলব না। কালরাত্রির আঁধার দূর করে নতুন সূর্যোদয় তোমার বুকে হয়েছে মা। আম্মার স্বপ্ন সফলের পথেই হাঁটছি আমরা। এখন শুধুই লক্ষ্যে অবিচল থাকার সময়, সবকিছুর আগে বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করতে হবে এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার সময়। এই বাংলাদেশ আমাদের, এই দেশকে যে ভালবাসে এই দেশ তার। এই দেশ বাঙ্গালির, এই দেশ চাকমা - মারমা- বাঙ্গালির। এ দেশ বঙ্গবন্ধুর, মুক্তিযোদ্ধাদের, আম্মা জাহানারা ইমামের, শহীদের, বীরাঙ্গনাদের আর দেশপ্রেমী বাঙ্গালির। এ দেশ লাল- সবুজের। কোন স্বাধীনতাবিরোধীর "না"।

আমার বাংলাদেশ, আঁধার পথে চলতে দেব না,
আমার বাংলাদেশ, বিভাজনে জ্বলতে দেব না।
জয় বাংলা...

বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০১৪

আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে ...

প্রিয় শাহবাগ,

বৈশাখ সন্ধ্যার ঝড়ো বর্ষণের মত করে বিস্মৃতিবৃষ্টিগুলোকে নিঃশেষ করার ইচ্ছা নিয়ে তোমার কাছে লিখছি। জানো, আজও তোমার নাম উচ্চারণের সাথে সাথে আমার চোখে ভেসে আসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির সেই উত্তাল দিনগুলোর ছবি। কোথায় জাদুঘর, কোথায় বা টি এস সি আর কোথায় কাঁটাবন কোন সীমানা ছিল না যেন। সকল সীমার ঊর্ধ্বে উঠে পুরো জায়গাটির নাম হয়েছিল শাহবাগ। নবজাগরনের জোয়ার জাগানো শাহবাগ। দিনরাত স্লোগান আর অবস্থান...ের শাহবাগ।বাংলাদেশের মাটির স্পর্শে ধন্য হয়ে "জয় বাংলা" বলে চিৎকার করার শাহবাগ। জানো, তোমার বুকে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার মনে খোদাই করা আছে।

তোমার বুকে এসে পৌঁছালে একদম অপরিচিত মানুষও হয়ে যায় আত্মার আত্মীয়। সেই এক বছর আগের কথা এগুলো। আজো তোমার বুকে মিছিল হয় রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে। আজো তোমার বুকে জেগে আছে গণজাগরণ মঞ্চ। তোমার কাছে যতবার আসি, মনে হয় এই জাদুঘর, মামুলি ফুলের দোকান -এগুলোর সাথে কত যুগ যুগান্তরের যেন আত্মীয়তার বাঁধন রচিত হয়ে গেছে। শাহবাগ, তোমার প্রতিটি ধূলিকণায় শহীদের রক্তের ঘ্রাণ মিশে আছে। তুমি যে বাংলাদেশের হৃদয়; আর বাংলাদেশের হৃদয়কে চিরকাল বাংলাদেশের সন্তানেরা রক্তের দামেই রক্ষা করেছে, করবে। তোমার বুকে আজো ওঠে স্লোগানের ঝড়, দৃপ্তকণ্ঠের শপথ।

মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়...

মিছিলটা এগিয়ে চলেছিল কাঁটা বিছানো পথ ধরে। দুর্গম কাঁটাভরা সে পথে প্রতি মুহূর্তে ছিল মৃত্যুর হাতছানি। এইতো, চোখের সামনেই তো জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিলেন একের পর এক যোদ্ধারা। কিন্তু, এই যোদ্ধারা যে মৃত্যুঞ্জয়ী। দৈহিক মৃত্যুর পরও যে তারা অমর। আর তাই মিছিলটা এগিয়ে চলেছিল সেই রক্তেভেজা পথ ধরে। সাথীদের খুনে রাঙা পথ ধরে হায়েনার আনাগোনা আর সহ্য করা যাবে না। একটি নয়, হাজার হাজার- লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে স্লোগান যেন সমুদ্রের গর্জনের মত সবকিছু ছাপিয়ে গর্জন করে উঠছে। উত্তাল সাগরের ঢেউএর মতই জনতার সমুদ্র এগিয়ে চলেছে সমুদ্রের চেয়েও গভীর, গতিময় হয়ে। ঢেউগুলো আছড়ে পরছে তীরে, একের পর এক উদ্যত বজ্রমুষ্টির স্লোগানগুলো  প্রতি মুহূর্তে কাঁপিয়ে দিচ্ছে বাংলার আকাশ- বাতাস। বাঙালি বীরের জাতি, লড়াই করেই মরতে জানে তারা। পরাজয় না মানা এই তরুনেরা মিছিলটাকে এগিয়ে নিচ্ছে রক্তাক্ত সেই পথ ধরে। লাল -সবুজ পতাকার লাল বৃত্তটা যোদ্ধাদের রক্তে যেন আরও বেশি লাল হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। আর সবুজের মাঝে মিশে আছে চিরন্তন বাংলার প্রাণের স্পন্দন। সবুজের বুকে লাল, উড়বে চিরকাল। মিছিলটা এগিয়ে চলছে। চলছে স্লোগান, চলছে গণসংগীত। প্রতি ছত্রে ছত্রে, প্রতি পদক্ষেপে লুকিয়ে আছে এক একটি বিপ্লবের দিয়াশলাই। এক দিয়াশলাই থেকে আগুন ছড়িয়ে গেছে লক্ষ দিয়াশলাইয়ে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে দাউ দাউ করে জ্বলছে বিপ্লবের সেই বহ্নিশিখা। স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালির চিরকালের প্রাণের স্পন্দন যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে আজ...
 

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৪

নতুন আশার নাম দিয়েছি প্রজন্ম চত্বর ...

ছিন্নভিন্ন কথাগুলোকে আবার সাজিয়ে নিতে খুব ইচ্ছে করে। কাঁদতে চাই, আমি প্রাণ খুলে কাঁদতে চাই। নীরবে- নিভৃতে দুই ফোঁটা অশ্রুজল ফেলা নয়, বধ্যভূমির সারি সারি শহীদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ -বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে চাই। কাঁদতে চাই অজ্ঞাতনামা সেই বীরদের স্মরণে। দুটো গোলাপের পাপড়ি নয়, এক বুক ভালোবাসায় ভরা রক্ত দিয়ে রাঙ্গাতে চাই সবুজ মেঠোপথ। হাতে রক্তলাল গোলাপ নিয়ে নয়, রাজাকারের রক্তে পুণ্যস্নান করে রক্তাক্ত দেহ নিয়ে শ্রদ্ধাবনত মস্তকে পড়ন্ত বিকালের আলোয় দাঁড়াতে চাই শহীদ মিনারের পাদদেশে। রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসির দিনের স্বর্গীয় আনন্দ আজো জাগ্রত অন্তরে। সে রকম কলঙ্কমুক্তির আনন্দে আবার ভাসতে চাই। এটা কোন প্রার্থনা নয়। এটা দাবি , এটা অধিকার। ত্রিশ লাখ শহীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার। বীরাঙ্গনা মায়ের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার। রক্তের বন্যায় চারপাশের প্রান্তর ভেসে যেতে হলে যাক, জীবনের মূল্যে হলেও বাংলা মায়ের কলঙ্কমুক্তি চাই। ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই।জয়... বাংলা...।

কি এক অমোঘ স্লোগান তাইনা!! কি এক অবিশ্বাস্য প্রাণের টান এই প্রজন্ম চত্বরের প্রতি।  রাতের নিকশ কালো আঁধার ভেদ করে সোডিয়াম বাতিগুলো জ্বলে আছে কিছু পরপর।ব্যস্ত নাগরিক জীবনের যে এখনও সমাপ্তি হয়নি। চারপাশে অবিরাম জীবনের প্রবাহ আর সেই প্রবাহের মাঝে দাঁড়িয়েই একটু বৃত্তের বাইরে বের হবার চেষ্টা। কি আর করা, আমরা যে বাঙালি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়েও আমরা যে ঘুরে দাঁড়াই আর একবার বাঁচার জন্য, নতুন করে আর একবার স্বপ্ন দেখার জন্য। সত্যি,  আরেকবার নতুন করে স্বপ্ন দেখার আশা খুঁজে পাচ্ছি ধীরে ধীরে। স্বপ্নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রানা প্লাজার  ধ্বংসস্তূপে এখনও মিলতে থাকা মানুষের খুলি কিংবা সন্তানের মৃতদেহটা পাওয়ার আশায় অপেক্ষারতা মাতার করুণ মুখটি। তারপরেও আশায় বুক বাঁধি- বাংলাদেশের নিজস্ব  ড্রোণ বিমান আগামীকাল উড়তে যাচ্ছে আকাশে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক সচেতনতায়ও। আমার বাংলাদেশ আর কখনও পথ হারাবে না।

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৪

পুরনো সেই দিনের কথা...

দূরে , বহুদূরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে এখন মাঝেমাঝে। চারপাশের ব্যস্ত জীবনের কোলাহল যেখানে থাকবে না ; কোন আশা - আকাঙ্ক্ষার চাপ যেখানে থাকবে না। ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ান যাবে তেপান্তরের মাঠ জুড়ে। ইচ্ছে পাখির সোনালি ডানায় চেপে ছুটে যাওয়া যাবে যান্ত্রিকতা থেকে অনেক দূরে।কর্মব্যস্ততার লেশমাত্র থাকবেনা। নিজ খুশিমত সাজিয়ে নেয়া যাবে নিজের জীবন। একটা পাতার কুটির , পা ডুবিয়ে বসে থাকার জন্য একটা নীল সরোবর , আর কিছু ...বই। অনেক সুন্দর করে কাটিয়ে দেয়া যেত ছোট্ট জীবনটা। কিন্তু না , বাস্তবতা অতদূর কল্পনা করার শক্তিটাও কেড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। তারপরেও পুরাতন ছবির এলবামের পাতায় সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণের ছবি দেখে আজও দীর্ঘশ্বাস ফেলি। সতের বছরের যান্ত্রিকতার মাঝে এ যে এক টুকরো প্রকৃতির ছোঁয়া ...

সত্যি ২০১০ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজার ভ্রমণের স্মৃতিটুকু আজকে কেন যেন অনেক বেশি মনে পড়ছে। হয়ত বা পুরনো এলবাম হটাত করে খুঁজে পাওয়ার কারণেই। ক্লাস নাইনে পড়তাম তখন। অনেকদিন থেকেই প্ল্যান ছিল বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই কক্সবাজার যাব। সেইমত কাজ শুরু হল। এক সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু গোছগাছ করে , একুরিয়ামের মাছদের পাশের বাসায় একুরিয়ামে রেখে এসে , রাস্তায় পড়ার জন্য গল্পের বই কিনে সব রেডি করা শেষ। তবে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার ছিল মোবাইল কেনা। যদিও তখন সিম ব্যবহারের পারমিশন পাইনি ; তবে তখন ফেসবুক ইউজ করতাম না। কাজেই সিম জিনিসটা তেমন বেশি দরকারিও ছিল না আমার কাছে। মোবাইল ক্যামেরা আর অনেক অনেক গান নিয়েই খুশি ছিলাম। একদিন রাতের বাসে আমি , আম্মু , ছোট ভাই আব্বু যাত্রা করলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।

সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৪

একটা নতুন শুরু , আজ যে বড় প্রয়োজন...

রক্তকরবী বৃক্ষের ডালে নতুন ফুল এসেছে নববসন্তের। কৃষ্ণচূড়ার লালে প্রকৃতি আকুল ঋতুর রাণীর আগমনবার্তায়। পাখিদের কলতান চারদিকে।কুহেলিকার চাদর ভেদ করে এইতো আর কিছুদিনের মধ্যেই পাতায় পাতায় দেখা দিবে নতুন মুকুল । রক্তিম গোলাপ , সাদা বকুল আর শুভ্র বর্ণা রজনীগন্ধার মিষ্টি সুবাসে প্রকৃতি বরণ করে নেবে তার চির আরাধ্য বসন্তকে।বাঙালি হৃদয়ের রক্তপলাশ ফোটার মাস এ বসন্ত । অমর একুশের ঋতু , প্রজন্মের জাগরণের অক্ষয় স্মারক, জাগ্রত ইতিহাস এই বসন্ত । চির সবুজ বাংলার বুকে বসন্ত চিরকাল বেজেছে গণদাবী হয়ে। জানিয়ে দিয়েছে বাঙালি রক্তকমলে মালা গাঁথতে জানে। রক্তের দামে আদায় করতে জানে প্রাণের চেয়ে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে। বসন্ত ভালবাসার , বসন্ত বিপ্লবের। বসন্ত শীতের রিক্ততাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নব অরুণোদয়ের পথে শুভযাত্রার। গণদাবী বেঁচে আছে , বেঁচে থাকবে চিরকাল।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সারা বাংলাদেশ যে নতুন সূর্যের পথে যাত্রা শুরু করেছিল , প্রায় এক বছর পর দাঁড়িয়ে আজ দেখতে পারছি সেই যাত্রার প্রাপ্তি গুলো। কিশোর - কিশোরী স্কুল -কলেজ ফাঁকি দিয়ে , শাহবাগ যাওয়ার অপরাধে (!!!) কলেজ থেকে বহিস্কার হয়ে , কিংবা আরও অনেক বাধা অতিক্রম করে ছুটে গেছে প্রজন্ম চত্বরে। তরুন - তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস , পরীক্ষা বর্জন করে এসে সামিল হয়েছে নবজাগরণের জয়যাত্রায়।সত্যি , সেই আগুন ঝরা দিন গুলোর কথা আজও অক্ষয় হয়ে আছে। সারা জীবন থাকবে। প্রজন্ম চত্বরে যতক্ষণ থাকি - সব কষ্ট ভুলে যেতে পারি আমি। জানি , এই দেশ আমার মা। মায়ের বুক থেকে মায়ের খুনিদের তাড়াতে আমাদের সংগ্রাম। অগনিত মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া , শপথ নেয়া - দিনগুলো কক্ষনো ভুলার মত নয়। নিজেকে খুব বেশি ভাগ্যবান মনে করি এই আন্দোলনের অংশ হতে পেরে।

রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৪

অন্ধকারে পূবাকাশে উঠবে আবার দিনমণি ...

প্রভাতী সূর্যের প্রথম কিরণে সূচনা হয় একটি দিবসের। একটি দিন , অল্প কিছু সময় ; তার মধ্যেও কত স্বপ্নের ইতিহাস লেখা হয় কে তার হিসাব রাখবে। সাদা পায়রাগুলো এলোমেলো উড়তে থাকে আকাশ জুড়ে। নীল আকাশটাকে একেবারে আচ্ছন্ন করে রেখেছে কুহেলিকার চাদর। এর মধ্যেই আবছায়ার মত চোখে পরে দূরের গাছপালা , দূরের শহর। শুভ্র মায়াচ্ছাদন ভেদ করে প্রভাতী সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পরেছে নিঝুম ধরণীটিতে। নিদ্রাকাতর পৃথিবী জাগতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। বারান্দার পাশে নারিকেল গাছটির দুটো পাতার মাঝখান থেকে রাতে উঁকি দিয়েছিল গোল রুপালি থালার মত একটা চাঁদ। এখন সেখানেই সূর্যালোকের রঙিন বর্ণচ্ছটা। এক সুতীব্র আঁধারের পর আলোকের বহ্নিশিখা। সাদা পায়রাদুটি যদি একটু বিশ্রাম নিতে চাঁদের আলোয় এসে বসত নারিকেল গাছটার উপর ; রুপালি চাঁদ আর এই পুরো দৃশ্যকল্পটা কেমন হত ? মনের ক্যানভাসে ধরে রাখতাম চিরকাল সেই ছবিটিকে - যেমনভাবে ধরে রেখেছি প্রজন্ম চত্বরকে।

দূরের শহরটা অনেক বেশি দূরে তো নয়। নদীর ওপারেও হয়ত এপারের মতই লক্ষ দীর্ঘশ্বাসের মাঝে মায়াবী স্বপ্ন বোনে কোন তরুণী। চার দেয়ালের বাইরে পা রাখার একটা স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা। চারপাশে অবিরাম জীবনের প্রবাহ। সংগ্রাম , শুধুই সংগ্রাম চারদিকে। প্রজন্ম চত্বরের সংগ্রাম , মা বাংলাদেশের জন্য। পথে - প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো একটা শিশুর সংগ্রাম , পরিবারের জন্য দুমুঠো অন্ন যোগানোর। চতুর্দিকে বিচিত্র রকম ভালোবাসা , আর সে ভালোবাসার জন্যই অনন্ত সংগ্রাম। এদেশের মানুষগুলোর যে লড়াইয়ের সাথে জন্ম-জন্মান্তরের  ভালবাসার সম্পর্ক। জন্মেই শিশুরা এখানে দেখে ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি। অবাক পৃথিবী বারংবার অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয় ; চারিদিকে এত মৃত্যুর কারবারের মধ্যেও এ মানুষ গুলোর মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দেখে। অবিরাম বোমার আঘাতের মাঝেও প্রজন্ম যোদ্ধারা দুচোখ মেলে এগিয়ে যান লক্ষ্যের দিকে। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রক্তমাখা ব্যান্ডেজ মাথায় আবার স্লোগান তোলেন সন্তানের সাথে - জয় বাংলা বলে। এই প্রিয় মাতৃভূমির নাম বাংলাদেশ...
 

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪

এক মুঠো রোদ ধরতে চাই...

মায়াবী জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলো পরম মাতৃ মমতায় আচ্ছাদিত করে রেখেছে সমগ্র সৈকত টিকে। সাগরের উন্মাতাল জলরাশি আছড়ে পরেছে সমুদ্রতীরে , বালুবেলাকে স্নান করিয়ে দিয়ে আবার ফিরে চলেছে সমুদ্রগর্ভে । জ্যোৎস্নার মায়াবিনী আলোয় ভিজতে আসা জীবনের ভিড় চারপাশে। জীবনগুলো বারবার ঝাঁপিয়ে পরছে উত্তাল ঢেউএর সাগরের মাঝে, আহরণ করছে কিছু অমূল্য ঝিনুক কিংবা মুক্তো। পর্যটক দল হয়ত পরদিন খুব ভোরে এসে অর্থের বিনিময়ে খুব সহজেই নি...জেদের করে নিতে পারবে এই মুক্তো গুলোকে। কিন্তু , মাঝরাতে স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় চরাচরব্যাপী জ্যোৎস্নার মাঝে সমুদ্রে ডুবসাঁতার কেটে একটি মুক্তো আহরণ করে সঙ্গিনীর হাতে তুলে দেয়ার স্বর্গীয় আনন্দ তাদের অনুভবের জগত থেকেও অনেক দূরে। শিউলি মালা গাঁথতে গিয়ে গ্রাম্য কিশোরীর মুখে ফুটে ওঠা হাসি , কিংবা দাওয়ায় বসে নকশী কাঁথার বুকে নিজের জীবনের স্বপ্নকে ফুটিয়ে তোলার অপার্থিব আনন্দ খুঁজে পাওয়া যাবে না কোন ফাইভ স্টার হোটেল বা অত্যাধুনিক পার্টি হলে...

মৌসুমি হাওয়া হয়ত শুনতে পায় অগ্রসরমান জাহাজের পদধ্বনি ; অনাগত ভবিষ্যতের দুর্নিবার জলস্রোতের আশায় পথ গোনে হাজার ক্লান্ত পথিক। জাহাজ একদিন এসে কূলে পৌঁছায় , মাঝিমাল্লারা নেমে আসে ; নেমে আসে জাহাজের ক্যাপ্টেন। অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যতের মধ্যে সুনির্দিষ্ট যোগসূত্র রেখাই যে যোদ্ধাদের টেনে এনেছে এই বর্তমানে। তীরহারা ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিয়ে ৪২ বছরের সমুদ্রযাত্রা শেষে জাহাজ এসে পৌঁছেছে প্রজন্ম চত্বরে। দুর্যোগের ঘনঘটা ছাপিয়ে আকাশ -বাতাস কাঁপিয়ে আজ শুধুই মুক্তির গান। তিমিরবিদারী তারুন্য যে আজ পৌঁছে গেছে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে। মানবতার মুক্তির জয়গান গেয়ে জাগ্রত প্রজন্ম বিজয় এনেছে আবার , অগ্রজ মুক্তিসেনার আশীর্বাদ আর বীরাঙ্গনা মায়ের অমর কণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগান এই প্রজন্ম যোদ্ধাদের পথের পাথেয়। হাতিয়ার ? অক্ষয় দেশপ্রেম আর দুর্জয় স্লোগান ; যে স্লোগান যুগে যুগে ভিত কাপিয়ে দিয়েছে শাসকের , শোষকের , পাকিস্তানের আর রাজাকারের।

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৪

স্বপ্ন দেখব বলে , আমি দুচোখ পেতেছি...

স্বপ্নচারী মায়ার চাদরে আচ্ছন্ন শহরটাতে প্রতি মুহূর্তে লেখা হচ্ছে কত সহস্র স্বপ্নের ইতিহাস। কত আশা ভালোবাসার কত ভাঙাগড়া এই ইট পাথরের শহরটাতে প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে মহাকাল হয়ত বা তার সময়ের পাতায় লিখে রাখে চিরকাল নীরব হয়ে থাকা অস্পৃশ্য মানব মানবীর সেই অনুচ্চারিত উপাখ্যানগুলো। জানি না অজানা কোন এক জগতে কখনও লেখা হয়ে থাকে কিনা স্বপ্নগুলোর এই সব ভাঙ্গা গড়ার গল্প। নিজের অজান্তে অজানায় অতীত কখন সামনে এ...সে দাঁড়ায় জীবনের সাঁঝ বেলায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের। হয়ত , আমাদের পরিচিত জগত থেকে ; পরিচিত পৃথিবী থেকে অনেক দূরে কোন এক সংরক্ষানাগারে লিপিবদ্ধ হয় কালের অক্ষত ইতিহাস। ভবিষ্যৎ মানবের সামনে এগুলো যে হয়ে দাঁড়াবে প্রাচীন পুঁথি। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় অতীতের গুহামানবের; পাথরের বুকে যারা জন্ম দিয়েছিল চিত্রকলার। চরম বাস্তবতা হয়ে একদিন হয়ত তাঁরাই দাঁড়াবে বর্তমানের সামনে ...

অস্ত্রের ঝংকার ছাপিয়ে একদিন গর্জন করে উঠবে শাশ্বত মানবপ্রেমের বাণী। বন্দী বালিকা , জেনে রেখ - সময় আসবে তোমার রুদ্ধদ্বার খুলে যাওয়ার। জেনে রেখ , বুলেট আর বোমার ধ্বংসের সীমা ছাড়িয়ে একদিন তোমার চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ ঝংকার তুলবে। সেদিন আবার প্রেম হবে মানুষের সাথে মানুষের। বালিকা , জেনে রেখ একদিন তুমিও মানব পরিচয় পাবে। রাত পোহাবার কত দেরি জানি না , শুধু জানি জীবনের রথ চলমান। চলমান জীবনস্রোতেই ভেসে থাকতে হবে তোমাকে , একাকীত্বকে সঙ্গী করে ; কঠিন বাস্তবতাকে দুহাতে আঁকড়ে ধরে। বালিকা , চেয়ে দেখ - কুয়াশার চাদর ভাদ করে সূর্যের দুটি আলোকরশ্মি যেন তোমার কারাগারে এসে পরেছে !!! বালিকা , দুফোটা জ্যোৎস্নার জন্য না তুমি ছটফট কর; জানালার শিকগুলোর ফাঁক দিয়ে কিছু জ্যোৎস্নাও যেন আজ তোমার হাতে এসে পৌঁছেছে। দুচোখ ভরে দেখ বালিকা , তোমার সীমা যে এতোটুকুই। উন্মুক্ত প্রান্তরে চন্দ্রস্নান করার অধিকার তোমার থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে বহুকাল আগেই...

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪

প্রজন্মের আহ্বান , নিপাত যাক পাকিস্তান...

আসছে এশিয়া কাপ ২০১৪...

বরাবরের মত ক্রিকেটপাগল আমাদের বাংলাদেশে আবার লাগবে উৎসবের ঢেউ। দল -মত পরিচয় নির্বিশেষে সব বাঙালি এক হতে পারে এই একটা মাত্র বিন্দুতে , আর তা হল ক্রিকেট। সাকিব - মুশফিকদের সাথে সারা বাংলাদেশ এক সুরে কাঁদে , হাসে। এগারোজন ক্রিকেটার হয়ে দাঁড়ান আমাদের প্রত্যেকের পরম আপনজন , এদেশের প্রত্যেকটা মায়ের সন্তান...

এবারের এশিয়া কাপে আবারও বিস্ফোরণ ঘটবে বাংলাদেশের প্রতি বাঙ্গালিদের পর...ম ভালবাসার। লাল - সবুজ পতাকা বেঁধে আবার স্টেডিয়ামে যাব আমরা , মেতে উঠবো বাংলাদেশ , বাংলাদেশ বলে। খেয়াল রাখতে হবে - এবারে যেন আমরা কেউ কোনরকম যুক্তিতে পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে সাপোর্ট করার কথা না ভাবি...

মনে রাখবেন , পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে সাপোর্ট দেয়া মানে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের দামে কেনা পতাকাকে অবমাননা করা। পাকিস্তানিদের হাতে ধর্ষিতা বীরাঙ্গনা মাকে অবমাননা করা। মনে রাখবেন , আপনি যদি "ম্যারি মি আফ্রিদি" লিখে ব্যানার নিয়ে স্টেডিয়ামে যান , তাহলে ঠিক আপনার বয়সী সেই মেয়েটির রক্তের উপর দিয়ে পা ফেলে গেলেন , যে মেয়েটিকে ছিঁড়ে -কুঁড়ে খেয়েছিল এই পাকিস্তানি হায়েনারাই...

You may say I am a dreamer , but I am not the only one...

প্রিয় উপন্যাসের সবচেয়ে সুন্দর ঘটনাটির চেয়েও একজন মানুষের গল্প অনেক বেশি আপন , অনেক বেশি সুন্দর।প্রতিটা জীবনের এক একটি গল্প থাকে, প্রতিটা মানুষের একটা করে গল্প শোনাবার থাকে।একজন কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে ফসল ফলান , সেই প্রত্যেক কণা ফসলের দানার মাঝে এক একটি গল্প লুকিয়ে থাকে, লুকিয়ে থাকে এক একটি জীবনের স্বপ্ন। প্রজন্ম চত্বরের প্রত্যেকটা হাতের উদ্যত মশালের মাঝে এক একটি স্বপ্ন থাকে - রাজাকারমুক্ত নতু...ন আগামীর স্বপ্ন। ছোট্ট শিশুর এক একটি পদক্ষেপ আর আধো আধো বুলিতে মা ডাকের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যৎ জীবনের অজানা কত স্বপ্ন। শিশু জানেনা পৃথিবী কত কঠিন, তবুও তো নতুন স্বপ্ন খেলা করে তার অবুঝ দুই চোখের মাঝে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে শেখে, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিশেলে সাজাতে চায় জীবনকে।

হয়ত একটা ঘটনা , দশ কি পনের মিনিট - সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টার একটি ঘটনা - রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসি। কিন্তু এই আধা ঘণ্টার ঘটনাটির পিছনে কত জীবনের , কত স্বপ্নের ইতিহাস যে লুকিয়ে আছে - ইতিহাস তার পাতায় হয়ত লিখে রাখবে সেসব স্মৃতি। আজ প্রায় একমাস হতে চলেছে , শত সহস্র প্রজন্ম যোদ্ধার ঘর্মাক্ত হাতে উদ্যত মশাল, মা -বোনের অশ্রুজল , প্রেমিক নব্য রাজাকার জেনে প্রেম ভেঙ্গে দিয়ে শাহবাগে ছুটে আসা প্রেমিকার অঝোর অশ্রুজল আর দীপ- রাজীব - শান্ত - জগতজ্যোতি - জাফর মুন্সির জীবনের বিনিময়ে পাওয়া বিজয় - রাজাকারের ফাসির। কিন্তু এখনও সেই আনন্দ এতোটুকু ম্লান হয়ে যায়নি আমার কাছে। বিজয়ানন্দ হয়ত একেই বলা হয়। জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয় অনুষ্ঠানের প্রতিটা মুহূর্ত অন্তরে গেঁথে আছে এখনও। প্রতিশোধ নিয়েছি আমরা , পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম প্রতিশোধ। শহীদের রক্তের প্রতিশোধ , মায়ের অশ্রুর প্রতিশোধ...

রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৪

আমার বাংলাদেশ -আঁধার পথে চলতে দেব না / আমার বাংলাদেশ - বিভাজনে জ্বলতে দেব না...

হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাসের পাতা থেকে জেগে ওঠা একটি দেশের নাম বাংলাদেশ , সেই সংগ্রামী জাতির নাম বাঙালি জাতি। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বাঙালি কখনও পিছপা হয়নি - ইতিহাস সাক্ষী। আর সেজন্যেই বাংলাদেশটাকে নিয়ে কখনও আশা হারাই না , আশা হারাবার জন্য যে বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। সাম্প্রদায়িক হানাহানি , বিদ্বেষ , নারী নির্যাতন - অনেক অনেক খারাপ খবরের মাঝেও আশার আলো খুঁজে পাই। বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষগুলোকে দেখে কাঁদি , কিন্তু জানি সোনার বাংলার গল্পটা এখানেই শেষ নয়। এইসব হামলাকারী কিংবা দেশবিরোধী , স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে মানুষের জাগরণ এই মুহূর্তে দেখায় আশার আলো। ২০১৪ সালের শুরুটাই হল সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদের ইতিহাস হয়ে। আমার সোনার বাংলাদেশ এভাবেই জেগে থাকবে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে আজীবন।

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধে গণজাগরণ মঞ্চের রোডমার্চ ও নির্যাতিতদের সাহায্য প্রদান কর্মসূচীতে বিভিন্ন জায়গায় , এক একটি পথসভায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের খবরগুলো দেখছি , পড়ছি , জানছি - আর নিজে যেতে না পারার কষ্টটা আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে। পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি যেতে পারিনি। কিন্তু আমার ভাইয়েরা , বোনেরা , বন্ধুরা , সহযোদ্ধারা সেখানে আছেন। গণজাগরণ মঞ্চ পাশে দাঁড়িয়েছে যশোরের সেই মানুষগুলোর - হয়ত একটু হলেও আঘাতপ্রাপ্ত মানুষগুলো মানুষের উপর বিশ্বাস ফিরে পাবেন আবার। প্রজন্ম চত্বর যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলো দেশের কোটি কোটি তরুণের মনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল - সেই আলো এখনও নিভে যায়নি - জেগে আছে জামাত -শিবির , রাজাকার , দেশবিরোধী - স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৪

Let there be light....

  • প্রতিদিন ব্যস্ত নাগরিক জীবনে কত ঘটনার অবিরাম প্রবাহ আমাদের চারপাশে। কত হাসি - কান্নার খেলা , কত স্বপ্নের কত রকম ভাঙ্গাগড়া। কখনো রাজাকারের ফাঁসি হওয়ার আনন্দে ভাসি সারা দেশ, কখনও বাংলাদেশের কোন গৌরবময় অর্জন শত দুঃখের মাঝেও হাসি ফোটায় আমাদের যান্ত্রিক হৃদয়গুলোতে। আবার কখনও সাভার ট্র্যাজেডি , রামু , ফেলানি কিংবা ক্ষমতার লড়াইয়ে বলি অসংখ্য মানুষের চিত্র অসহায় আক্রোশে কাঁদায়। সত্যি বিচিত্র এক জাতি আমরা। নীরবতায় আমরা অভ্যস্ত , কিন্তু বাঙালি একবার যখন জেগে ওঠে তখন দাবি আদায় করেই সমাপ্তি ঘটায়। বাঙ্গালির জাগরণ মানে অনেকদিনের পুঞ্জীভূত বেদনার অশ্রুজল একসাথে সামনে চলে আসা। বাঙ্গালির জাগরন মানে অনেক অনেক দিনের লুকিয়ে রাখা ক্ষোভ , যন্ত্রণা স্লোগানে স্লোগানে মূর্ত হয়ে ওঠা। আর সেজন্যেই বাঙালির জেগে ওঠা বিষয়টা শোষকশ্রেণীর জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। যার প্রমাণ বায়ান্ন , উনসত্তর , একাত্তর কিংবা ২০১৩। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বারবার জেগে উঠেছে বাংলা মায়ের জন্য - কখনও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় , কখনও প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য , কখনও প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে - কখনও বা পরাজিত হায়েনার দল রাজাকারের ফাসির দাবিতে। বলাবাহুল্য , কোন জাগরণই বৃথা যায়নি বাঙ্গালির - বরং এক জাগরণ পথ দেখিয়েছে আরেক জাগরণের , এক জাগরন ইতিহাস হয়ে প্রতিবাদের বহ্নিশিখা ছড়িয়ে দিয়েছে সহস্র কোটি অন্তরে। সারা বাংলার আকাশ -বাতাস জুড়ে যুগে যুগে বারবার ধ্বনিত -প্রতিধ্বনিত হয়েছে "জয় বাংলা" স্লোগান।

বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৪

একটি বাংলাদেশ , তুমি জাগ্রত জনতার...

  • বাংলাদেশ আমাদের সবার , বাংলাদেশ প্রত্যেকটা বাঙালির প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি। আর তাই যুগে যুগে একতাবদ্ধ হয়ে সবরকম অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে বাঙালি। আজ সময় এসেছে আবার রুখে দাঁড়ানোর , সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের , হানাহানির বিরুদ্ধে। রক্তের দামে বোনের সিঁথির সিঁদুর রক্ষা করার শপথ নেয়ার মাহেন্দ্রক্ষন আজ। প্রিয় , ফুল খেলবার দিন নয় আজ , ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা। ধ্বংসের মুখোমুখি আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস , ঐতিহ্য , ভ্রাতৃত্ববোধ , সম্প্রীতি। ধ্বংসের মুখোমুখি মানবতা , ধ্বংসের মুখোমুখি পারস্পারিক সকল সুসম্পর্ক , শুভকামনা আর হাসি - খেলার ইতিহাসের পাতা। রাম রহিমের দেশে আজ ছড়ানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প। নির্বাচন , গণতন্ত্র , রাজনীতি , ক্ষমতার লড়াই - এসব থেকে অনেক দূরে বাংলাদেশের নিভৃত পল্লীতে যে সজলা মাসী আর রহিমা বুবু একসাথে বসে নকশী কাঁথা বুনেছে আজীবন ধরে , সেই সরলা মাসীর ঘরে আজ আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সজলা মাসীর অপরাধ , সে হিন্দু। সজলা মাসীর অপরাধ , সে ভোট দিতে গিয়েছিল। হ্যা , ভোট দিতে রহিমা বুবুও গিয়েছিল - কিন্তু ঐযে , সজলা মাসী হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সমাজ তার গায়ে লাগিয়ে রেখেছে "সংখ্যালঘু" নামের এর ঘৃণ্য পরিচয়। সমাজ তাকে "আশ্রিত" বলে অভিহিত করতে স্বস্তিবোধ করে , মানুষ বলে নয়। রহিমা বুবু হয়ত কাঁদেন সজলা মাসীকে জড়িয়ে ধরে , পাশে থাকতে চান মাসীর। কিন্তু সজলা মাসীরা যে আর পারছেন না। পূর্বপুরুষদের রক্তের দামে , জীবনের দামে স্বাধীন করা বাংলাদেশে ঘাতক জামাত -শিবির আজও তাদেরকে চিহ্নিত করে আক্রমণ করে , সেই একাত্তরের মতই। একাত্তরে হয়ত সজলা মাসীর বাবা গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে , মা ছোট ছোট দুটি সন্তান নিয়ে অবরুদ্ধ বাংলাদেশ আর পার্শ্ববর্তী ভারতে ছুটে বেড়িয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। আজকে বাংলাদেশ তো স্বাধীন , কিন্তু সজলা মাসীদের কেন থাকতে হবে নিজ দেশে পরবাসী হয়ে ?

"বাংলাদেশ" অনন্ত -অক্ষত মূর্তি জাগে ...

  • সাদা কাশফুলের মত মেঘগুলো শুভ্র আকাশে এলোমেলোভাবে উড়ে জানিয়ে দেয় ঋতুর রাণী শরতের আগমনবার্তা। সেই সাদা মেঘগুলোই কখনো ঘন কালো হয়ে বর্ষা হয়ে ঝরে পরে , কখনো বা রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ ঘোষণা দেয় গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা। কৃষকের মুখে সোনালি হাসি আর গোলাভরা সোনালি ধান সাক্ষ্য দেয় হেমন্তের , কুয়াশাচ্ছন্ন পথঘাট জানিয়ে দেয় শীতের আর বেশি দেরি নেই। ঋতুরাজ বসন্ত হাজির হয় কৃষ্ণচূড়ার রক্তলাল রঙ সারা অঙ্গে মেখে। এমনি ঋতু বৈচিত্রের দেশ , অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। একই অঙ্গে নানা রকম আভরণে প্রতিনিয়ত সেজে ওঠে বাংলা মা , কিন্তু সবকিছুর উপরে চিরন্তন শাশ্বত বাংলা মায়ের মূর্তি , লাল -সবুজের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের চিত্র। বাংলাদেশ , বাঙালি পরস্পরের সাথে এক সুতীব্র ভালোবাসার বন্ধনে বাধা। সে বন্ধন মায়ের সাথে সন্তানের বন্ধন। জন্মদাত্রী মাকে একজন বাঙালি যতটা ভালবাসে-ঠিক ততটাই ভালোবাসে জন্মভূমি বাংলা মাকে। স্বর্গের চেয়েও এই মাতৃভূমি আমাদের কাছে প্রিয় , তাই মুক্তির মন্দির সোপানতলে প্রাণ বলিদান করতে প্রতি মুহূর্তে প্রস্তুত থাকে বাংলাদেশের মানুষ। সেরকম অনেক ত্যাগ , অনেক অশ্রুর বিনিময়েই আজকের বাংলাদেশ। তাই বাঙালি এক ফিনিক্স পাখির নাম , মাতৃভূমির প্রশ্নে যে অনন্ত প্রহরী হয়ে জেগে থাকে আজীবন। আর সেজন্যই এত দারিদ্র্য , দুর্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম সুখী দেশগুলোর একটি।