বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৪

"বাংলাদেশ" অনন্ত -অক্ষত মূর্তি জাগে ...

  • সাদা কাশফুলের মত মেঘগুলো শুভ্র আকাশে এলোমেলোভাবে উড়ে জানিয়ে দেয় ঋতুর রাণী শরতের আগমনবার্তা। সেই সাদা মেঘগুলোই কখনো ঘন কালো হয়ে বর্ষা হয়ে ঝরে পরে , কখনো বা রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ ঘোষণা দেয় গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা। কৃষকের মুখে সোনালি হাসি আর গোলাভরা সোনালি ধান সাক্ষ্য দেয় হেমন্তের , কুয়াশাচ্ছন্ন পথঘাট জানিয়ে দেয় শীতের আর বেশি দেরি নেই। ঋতুরাজ বসন্ত হাজির হয় কৃষ্ণচূড়ার রক্তলাল রঙ সারা অঙ্গে মেখে। এমনি ঋতু বৈচিত্রের দেশ , অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। একই অঙ্গে নানা রকম আভরণে প্রতিনিয়ত সেজে ওঠে বাংলা মা , কিন্তু সবকিছুর উপরে চিরন্তন শাশ্বত বাংলা মায়ের মূর্তি , লাল -সবুজের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের চিত্র। বাংলাদেশ , বাঙালি পরস্পরের সাথে এক সুতীব্র ভালোবাসার বন্ধনে বাধা। সে বন্ধন মায়ের সাথে সন্তানের বন্ধন। জন্মদাত্রী মাকে একজন বাঙালি যতটা ভালবাসে-ঠিক ততটাই ভালোবাসে জন্মভূমি বাংলা মাকে। স্বর্গের চেয়েও এই মাতৃভূমি আমাদের কাছে প্রিয় , তাই মুক্তির মন্দির সোপানতলে প্রাণ বলিদান করতে প্রতি মুহূর্তে প্রস্তুত থাকে বাংলাদেশের মানুষ। সেরকম অনেক ত্যাগ , অনেক অশ্রুর বিনিময়েই আজকের বাংলাদেশ। তাই বাঙালি এক ফিনিক্স পাখির নাম , মাতৃভূমির প্রশ্নে যে অনন্ত প্রহরী হয়ে জেগে থাকে আজীবন। আর সেজন্যই এত দারিদ্র্য , দুর্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম সুখী দেশগুলোর একটি।
  • বাংলা মা জন্মের পর থেকেই আমাদের মুখে বাঙালিত্বের এমন একটা পবিত্র ছাপ মেরে দিয়েছেন যা কোন আবরণ দিয়েই কখনো মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এদেশের মানুষ শত দুঃখ - দুর্দশা , শত দারিদ্র্য , দুর্যোগের মধ্যেও হাসতে জানে। যে বয়সে পড়াশুনা করার কথা , জীবন নিয়ে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখার কথা - সে সময়ে যে শিশুগুলো পথে - ঘাটে ঘুরে বেড়ায় জীবিকার সন্ধানে ; কই তাদের মুখে কেউ কখনও জীবন নিয়ে কোন অভিযোগ শুনেছে ? কিংবা যে কিশোরী মেয়ে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য এই শীতের সকালে ভোর হওয়ার সাথে সাথে গার্মেন্টস এর পথে যাত্রা করে সে কি হাসতে হাসতে জীবনযুদ্ধকে আলিঙ্গন করে না ? এই ভূখণ্ডের মানুষ জন্ম থেকেই গাঁটছড়া বাধে জন্মযুদ্ধের সাথে , লড়াইকে আলিঙ্গন করেই তো বাঙ্গালির বেঁচে থাকা। তাইত অফুরান প্রাণশক্তি এদেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে। একাত্তর থেকে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে লড়াই করার প্রতিজ্ঞা বাঙালি আজো ভুলে নাই। আর সেজন্যই বন্যার পানিতে ঘর -বাড়ি , মাঠের ফসল সবকিছু ভেসে যাওয়ার পরও জীবন যুদ্ধে হার মানেনা এদেশের মানুষ। একটি কম্বল পেয়ে , একটু উষ্ণতার প্রলেপ পেয়ে বাংলাদেশের একজন বৃদ্ধার মুখে যে পবিত্র হাসি ফুটে ওঠে, সারা বিশ্বে তার নজির নেই। লাল - সবুজ পতাকাটাকে এতটা ভালবাসার ইতিহাস পৃথিবীতে নেই। সোনার বাংলাকে অনেক অনেক ভালবাসি আমরা।
  •  ১৯৫২ সাল - মায়ের মুখের ভাষার জন্য রাজপথে নেমে আসলো একদল তরুণ - তরুণী । সামরিক জান্তার ঘৃণ্য ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকল বাংলা মাএর দামাল ছেলে -মেয়েরা। একসময় সেই জন জোয়ার পরাস্ত করল হিংস্র বর্বর পাকিস্তানি পুলিশ কে। রাজপথে নেমে এল ছাত্র - শিক্ষক - তরুণ - বৃদ্ধ । সবার কণ্ঠে দাবি একটাই - "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" । ছাত্র -জনতার মিছিলের উপর গুলি চালাল পুলিশ , বুকের রক্তে রাজপথ রাঙ্গালেন শহীদ রফিক - শফিক - বরকত -জব্বার -শফিউরেরা । রক্ত দিয়ে এনে দিলেন মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। সেই মহান বিপ্লবীদের নাম বাংলাদেশ। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথের মিছিল - মীটিং - স্লোগানের নাম বাংলাদেশ। মায়ের মুখের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য শহীদ ভাইএর রক্তমাখা শার্ট বুকে চেপে বোনের অঝোর কান্নার নাম বাংলাদেশ। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি ; শত শত বুলেটের চেয়েও যে সঙ্গীত শক্তিশালী হয়ে পাকিস্তানিদের আঘাত হানে , সে অমর সঙ্গীতের নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ , অনন্ত - অক্ষত মূর্তিতে জাগ্রত এক ইতিহাসের নাম; মায়ের মুখের ভাষাতে কথা বলার অধিকারটাও যাদের লড়াই করে ছিনিয়ে আনতে হয়েছে।  
  • ১৯৬৯ সাল - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছেন বাঙ্গালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি। পাকিস্তান সরকার এই ছয় দফাকে বিচ্ছিন্নতার ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে বাঙ্গালিকে অবদমিত করতে চাইছে। বঙ্গবন্ধু সহ আরও নেতা -কর্মীদের উপর চাপানো হয়েছে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা । প্রতিবাদে মিছিলে উত্তাল রাজপথ - রক্তে আগুন ধরানো স্লোগান - "জেলের তালা ভাংব , শেখ মুজিব কে আনব ..." মিছিল এগিয়ে চলেছে - দাবি একটাই , বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই। পাকিস্তানি স্বৈরাচারের জুলুম আর অত্যাচারের সিংহাসনে আগুন জ্বালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মিছিল ... পুরো ঢাকাই তখন মিছিলের নগরী। ছাত্র- শিক্ষক, তরুন - বৃদ্ধ সবার এক ই দাবি , বাঙ্গালির নেতা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে হবে। শেখ সাহেবকে মুক্তি দিতে হবে। এক মুজিব থেকে লক্ষ মুজিব আজ মিছিলে। হটাত বৃষ্টির পানির মত ছুটে আসে গুলি , পাকিস্তানি হায়েনাদের গুলি। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের রক্তে রাঙ্গা হয় বাংলার রাজপথ। শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট উড়তে থাকে বাংলার আকাশ - বাতাস রক্তে লাল করে দিয়ে ... শহীদ আসাদ হয়ে থাকে বাংলার ভবিষ্যৎ আন্দোলনের , বিপ্লবের প্রতিমূর্তি। বাংলা মায়ের সেই অকুতোভয় বীর সন্তানের নাম বাংলাদেশ। সেই শহীদ আসাদের নাম বাংলাদেশ ...।
  • ১৯৭১ সাল -৭ ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দিয়েছেন "এবারের সংগ্রাম , আমাদের মুক্তির সংগ্রাম - এবারের সংগ্রাম , স্বাধীনতার সংগ্রাম" । মিছিলের নগরী ঢাকা ;সবার মুখে এক ই কথা - "ছয় দফা নয় এক দফা - বাংলাদেশের স্বাধীনতা ...।" এলো ২৫ শে মার্চের কালরাত্রি। বাঙ্গালির আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হল ... নির্বিচারে হত্যা করা হল বাঙ্গালিদের ।নিরস্ত্র বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে পাক হায়েনার দল নামলো অত্যাধুনিক ট্যাংক , গোলাবারুদ নিয়ে।  প্রতিবাদে ফুসে উঠলো বাঙালি জাতি ... যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে শুরু হল সংগ্রাম। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে অবরুদ্ধ শহর সবখানে ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে লাগলো প্রতিরোধ। তরুন - যুবকেরা রাতের আঁধারে সীমান্ত পার হয়ে গেলেন ভারতে , মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে প্রবেশ করলেন অবরুদ্ধ বাংলাদেশে। মেজর খালেদ মোশাররফ এর ক্রাকড বয়েরা ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে চালাতে থাকল একের পর এক সফল অপারেশন। পুতুল খেলার হাতে অস্ত্র তুলে নিল বোন ... লাঙ্গল ফেলে রাইফেল কাধে নিলেন কৃষক ... হাতুরি ফেলে অস্ত্র হাতে নিলেন মজুর ... বই -খাতা -স্কুল -কলেজ ফেলে মুক্তিযুদ্ধে ছুটে গেল কিশোর - তরুন ...। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা মায়ের অশ্রুর বিনিময়ে ১৬ ই ডিসেম্বর , ১৯৭১ এ স্বাধীন হল বাংলাদেশ। একাত্তরের রনাঙ্গনের প্রত্যেকটা মুক্তিযোদ্ধার নাম বাংলাদেশ ... সেই জয় বাংলা কণ্ঠে অকুতোভয় কিশোর গেরিলার নাম বাংলাদেশ ... সেই বীরাঙ্গনা মা এর নাম বাংলাদেশ ...।
  • ১৯৯২ সাল - একাত্তরে শহীদ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা রুমীর মা জাহানারা ইমাম জন্ম দিলেন রাজাকারবিরোধী আন্দোলনের। স্বাধীন বাংলার মাটিতে রাজাকারের দম্ভ মেনে নেয়া যাবে না - গোলাম আজম এর নাগরিকত্ব মেনে নেয়া যায় না ... মা জাহানারা ইমাম জন্ম দিলেন "একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি" । গড়ে তুললেন গনআদালত ... গনআদালতের গনরায়ে রাজাকার কম্যান্ডার গোলাম আজমের রায়টা ছিল ফাসির। আজ মা জাহানারা ইমাম আমাদের সবার মা ... মা আমাদের জন্য রেখে গেছেন একাত্তরের দিনগুলি ...জানিয়ে গেছেন সেই রক্তঝরা দিনের ইতিহাস। আম্মা রেখে গেছেন আমাদের জন্য শেষ খোলা চিঠি , জানিয়ে গেছেন বাংলাদেশের মানুষের উপর তাঁর অগাধ বিশ্বাসের কথা। শহীদজননী বলে গেছেন -"এই আন্দোলনকে সুদূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। আমি জানি জনগণের চেয়ে বিশ্বস্ত কেউ নেই। জয় আমাদের হবেই।" ছেলের রক্তে স্বাধীন করা বাংলাদেশে মা কে পেতে হয়েছে দেশদ্রোহীর অপবাদ। কিন্তু আম্মা দমে যান নি , জ্বালিয়ে গেছেন প্রতিবাদের দীপশিখা , যে প্রদীপ এখন জ্বলছে প্রত্যেকটা বাঙ্গালির অন্তরে। শত বাধা এবং প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যেও জেগে থাকা এই মা এর নাম বাংলাদেশ... শহীদ রুমীর রক্তে , ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে স্বাধীন করা বাংলাদেশ...।
  • ২০১৩ সাল - এক অভূতপূর্ব নবজাগরণ দেখল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে আবার একতাবদ্ধ বাংলার তরুন সমাজ ।একাত্তরের হায়েনাদের ফাসি হয়নি; এই ক্ষোভ থেকে জন্ম নিল নতুন বিপ্লব ... নতুন আশা যার নাম শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর। সেই এক ই প্রতিপক্ষ , এক ই স্লোগান -" তোমার আমার ঠিকানা , পদ্মা -মেঘনা - যমুনা"। অনেক বছর পর আবার ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি ...একটাই দাবি , ফাসি - ফাসি ... অন্য কোন শাস্তি নাই... ফাসি ছাড়া বিচার নাই...।" পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকার - আলবদর - জামাত -শিবির আঘাত হানল এই প্রজন্ম যোদ্ধাদের উপর। শহীদ হলেন রাজীব , দীপ, জাফর মুন্সি , জগতজ্যোতি - স্লোগান দিতে দিতে মৃত্যুকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করলেন শান্ত। জামাতের আক্রমন , পুলিশের আক্রমন সবকিছুর মুখেও বেঁচে রইলেন আরিফ নূরেরা।  পুলিশের উদ্যত অস্ত্রের মুখে জয় বাংলা স্লোগানে রাজপথ কাঁপালেন শাম্মি আপুরা , লাকি আপুদের  কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে দুর্জয় স্লোগানে প্রকম্পিত হল শাহবাগ । মা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী ভালোবেসে এর নাম দিলের প্রজন্ম চত্বর।  আবার একাত্তর ...আবার রক্তঝরা রাজপথ। কত আন্দোলনকারীর রক্ত, কত যোদ্ধার কত ত্যাগের স্মৃতি যে জড়িয়ে আছে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। এতকিছুর বিনিময়ে একদিন এল সেই কাঙ্খিত বিজয়। রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসি হল , কলঙ্কমুক্ত হল বাংলাদেশ। সফল হল শহীদজননীর স্বপ্ন , সফল হল প্রজন্ম চত্বর। সেই উত্তাল শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে জয় বাংলা স্লোগানে জাগ্রত জনতার নাম বাংলাদেশ ...। পারিবারিক শৃঙ্খল তুচ্ছ করে প্রজন্ম চত্বরের মিছিলে ছুটে আসা কিশোরীর নাম বাংলাদেশ... প্রেমিক নব্য রাজাকার জেনে প্রেম ভেঙ্গে দিয়ে শাহবাগে ছুটে আসা তরুণীর নাম বাংলাদেশ।
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা , সহিংসতা , ক্ষমতার লড়াইয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা - সবকিছুর মধ্যে থেকেও কিন্তু খুব নীরব একটা বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আর সে বিপ্লবের কারিগর ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার। স্যারের নেতৃত্বে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন বিজ্ঞানীরা একের পর এক দেখিয়ে যাচ্ছেন বিপ্লব। এবার বাংলাদেশ তৈরি করতে যাচ্ছে ড্রোণ। আমাদের নিজস্ব  ড্রোণ এবার পাহারা দিবে আমাদের সীমানা। একদিন রণতরী বানাব আমরা। আমাদের নিজস্ব মিগ বিমান চক্কর দেবে মুক্ত আকাশে। রাডারকে ফাঁকি দিয়ে ঘুরে আসবে পাকিস্তান , ভারতের আকাশ। গর্বভরে চেয়ে থাকব সেই বিমানগুলোর দিকে। শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের বীর সেনানী এর মধ্যেই রেখেছে গৌরবের সাক্ষর। আফ্রিকার একটি দেশে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে বাংলা - সে দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বীর সেনানীর অভূতপূর্ব অবদানের জন্য। প্রতি বছর গণিত অলিম্পিয়াড , পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বিশ্বজয় করছে বাংলাদেশ। লাল - সবুজ পতাকাটা উঁচিয়ে ধরছে সারা বিশ্বের মাঝে। হার্ভার্ড , এম আই টির মত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা তাদের প্রতিভা দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে বিশ্বমানের প্রফেসরদের। বিপ্লব ঘটে চলছে প্রজন্মের দেশ নিয়ে চিন্তাধারায় , বিপ্লব ঘটে চলছে বিজ্ঞানমনস্ক এক প্রজন্ম গড়ার। আর সে বিপ্লবেরই প্রমাণ শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর , সে বিপ্লবেরই প্রমাণ গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের রৌপ্যপদক বিজয়। কিছুদিন আগেই দুই দুইটা বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ - পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে আর সর্ববৃহৎ মানব পতাকা তৈরি করে। যে তরুণ - তরুণী ভালোবাসার আহ্বান উপেক্ষা করে প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে রাজাকারের ফাসির দাবি করেছিল, তাদের হাতে থাকলে কোনোদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ ...।
  • লাল - সবুজ জার্সি গায়ে দিয়ে খ্যাপাটে কিছু তরুন কিছুদিন পর পরই এনে দেয় বিজয়ানন্দ। হ্যা , আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমের কথা বলছি। এই এগারোটা ছেলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মায়ের সন্তান। সাকিব -মুশফিকদের কান্নার সাথে কাঁদে পুরো বাংলাদেশ , তাদের এক একটা চার - ছক্কায় হাসে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ। সাকিব যখন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয় তখন বিজয়ী কিন্তু শুধু সাকিব হননা , বিজয়ী হয় বাংলাদেশ। যখন এক বা দুই রানের জন্য বাংলাদেশ হারে , তখন অশ্রুজলে শুধু ক্রিকেট টীমের এগারোজন বাঘ ভাসে না , অশ্রুজলে ভাসে প্রত্যেকটা বাঙালি। আবার যখন নয় নাম্বার উইকেটে জাদু দেখায় শফিউল , ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিতে যায় বাংলাদেশ - কিংবা বার বার হোয়াইটওয়াশ করে নিউজিল্যান্ডকে ; তখন আসলেই প্রমাণ হয়ে যায় একসময়ের বাঘের বাচ্চা এখন পরিপূর্ণ বাঘ হয়ে গেছে। একদিন ফুটবলেও একই অবস্থানে পৌঁছাবে বাংলাদেশ। ফিফা বিশ্বকাপে  আমি কখনও ব্রাজিল - আর্জেন্টিনা নিয়ে অযৌক্তিক উল্লাস , তর্ক করতে পারিনা। কারণ , বাংলাদেশের লাল -সবুজ পতাকাটা বাদে অন্য কোন দেশের পতাকা নিয়ে উন্মাদনা আমি কক্ষনো সাপোর্ট করি না , করতে পারিনা। একদিন বাংলাদেশ খেলবে ফিফা বিশ্বকাপে , সেদিন ব্রাজিল - আর্জেন্টিনা সব সমর্থক এসে মিলবে বাংলাদেশ নামক বিন্দুতে। আজ ক্রিকেট গ্যালারিতে বিদেশীরাও চিৎকার করে ওঠে - "বাংলাদেশ , বাংলাদেশ" বলে। বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব , শুনেছে বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হুংকার।
  • এত বিপ্লবে ভরা ইতিহাস , এত আশায় ভরা প্রতিদিন যে জাতির , সামান্য হরতাল - অবরোধ সে জাতিকে কক্ষনো দমিয়ে রাখতে পারবে না। আর মাত্র তিন মাস পরেই এইচ এস সি পরীক্ষা আমার ।অনলাইনে হয়ত অনিয়মিত হয়ে যাব কিছুদিনের মধ্যেই। কিন্তু শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে নেয়া প্রতিজ্ঞা , বিজয় দিবসে এ কে খোন্দকার স্যারের সাথে করা প্রতিজ্ঞা সারাজীবন রক্ষা করব। জীবনের প্রত্যেকটা পদক্ষেপে থাকব প্রজন্ম চত্বরের সাথে , মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে , বাংলাদেশের সাথে। গণজাগরণ মঞ্চের যে কোন কর্মসূচীতে সাথে থাকব সাধ্যমত। গণজাগরণ মঞ্চের এগারো মাসের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে এসেছে বিয়াল্লিশ বছরের কলঙ্কমুক্তির আনন্দ , রাজাকারের ফাসির বিজয়োৎসব। প্রজন্ম চত্বর , শাহবাগ নিজেই একটি জ্বলন্ত ইতিহাস। আই এম প্রাউড টু বি এ পার্ট অফ দি হিস্টোরি। এখন সময় এই নবনির্মিত স্বপ্নের সিঁড়িটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করার। আমি জানি আজকে আমি যদি ভাল কোন রেজাল্ট না করতে পারি তাহলে আমার স্থান খালি থাকবে না। হয়ত স্বাধীনতার বিপক্ষের কেউ সে স্থান দখল করে নেবে - যেটা হতে না দেয়া আমার কর্তব্য। আর তাই শুধু নিজের জীবন গোছানোর জন্য নয় , দেশের একজন সুযোগ্য সন্তান হয়ে ওঠার জন্যেও ভাল একটা ফলাফল করতে হবে আমাকে। হয়ত অনলাইনে এখন থেকে আর তেমন একটিভ থাকব না , কিন্তু নিজ সাধ্যমত গণজাগরণ মঞ্চের পাশে থাকব সবসময় , শরীরে শেষ রক্তবিন্দুটি থাকা পর্যন্ত। বায়ান্ন থেকে একাত্তরের রক্তেভেজা পথ পেরিয়ে ২০১৩ পর্যন্ত সকল শহীদের প্রতি , সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। বাংলাদেশ জেগে আছে , জেগে থাকবে অনন্ত অক্ষত মূর্তিতে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা ; আমরা তোমাদের ভুলবো না। 
  • 'বিয়াল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে' এভাবে না ভেবে আমি ভাবতে ভালবাসি - 'মাত্র তো বিয়াল্লিশ বছরই পার হয়েছে। অনন্তকাল সামনে পরে আছে।' জয় বাংলা...।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন