মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০১৪

আমরা করব জয় একদিন...

"স্বাধীনতা" অনেক প্রিয় কিছু শব্দের মধ্যে অন্যতম একটি। স্বাধীনতা, একটি জাতির জন্মের ইতিহাস। স্বাধীনতা, একটি দেশের জন্মের স্মারক।স্বাধীনতা সেই জীয়নকাঠির নাম যার স্পর্শে নিদ্রামগ্ন জাতির অন্তরে জাগে ঘুমভাঙ্গার অবিনাশী গান। শান্ত নিরীহ একটি জাতি হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদী সংগ্রামী। শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলেমেয়েরা কোমল হাতে তুলে নিতে পারে অস্ত্র।যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরার অমোঘ আহ্বান কোটি কোটি প্রাণকে এক সুতায় গেঁথে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে স্বাধীনতার ...লক্ষ্যে। স্বাধীনতা, ঘুমভাঙ্গা জাতির সুতীব্র চিৎকারের নাম। বোনের হাতে বজ্রমুষ্টির স্লোগানের নাম।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনেক জীবনের দামে পাওয়া, কারো দানে পাওয়া নয়। আমি একাত্তর দেখিনি, জন্মাইনি তখনও। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সেই অমোঘ ঘোষণা আমাকে চোখের জল মুছে জয় বাংলা বলে চিৎকার করার সাহস যোগায়। আমি একাত্তর দেখিনি, কিন্তু শহীদ রুমী, বদি, আজাদ, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল দেরকে অনেক শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। প্রতিটা মানুষের জীবনের একটা আদর্শ থাকে। শহীদ রুমীকে আমি আমার আদর্শ বলে মানি। লাল- সবুজকে ভালবাসি। ভালবাসি রক্তের দামে অর্জিত এ পতাকাকে। একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ শে মার্চ, ১৬ ই ডিসেম্বরে আমিও যাই শহীদ মিনারে, স্মৃতিসৌধে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে। আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি।

একাত্তরের দিনগুলি বইটা প্রথম পড়েছিলাম ক্লাস সেভেনে থাকতে। এরপর থেকে রাতে ঘুমানোর সময় আমার ডায়েরির পাশাপাশি একাত্তরের দিনগুলি বইটি পাশে না থাকলে ঘুম হয়না। ২৯ মার্চ শহীদ রুমীর জন্মদিন। একাত্তরের দিনগুলি পড়ার পর থেকে প্রতি বছর এই দিনটা আলাদা করে মনে রাখি। কাউকে না জানিয়ে একটা মোম জ্বালাই নিজের ঘরে। হয়ত এসব কিছু পাগলামি বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আমার ভাল লাগে। মনে হয়, এক টুকরো একাত্তর সবসময় আমার সাথে আছে। "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি" গাই নিজের অন্তর থেকে। এই জাতীয় সঙ্গীতের প্রতিটা লাইন আমার মনে হয় যেন আমার মনের কথাগুলোই রবীন্দ্রনাথ লিখে দিয়েছেন...

এই শহীদদের স্বপ্ন সফল করার জন্য যে আমিও কিছু করতে পারি, এই অনুভবটা পেয়েছিলাম প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে। প্রথম যেদিন শাহবাগে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে অগণিত বাঙালি জাতীয় সঙ্গীত গাইলাম, জানি আমার মত অনেকেই সেদিন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। আর লক্ষ কোটি মানুষের সেই শপথ গ্রহণ যেন সেই কথাগুলোকেই আমাদের সামনে তুলে এনেছিল, বিয়াল্লিশ বছর ধরে বারবার যে কথাগুলো আমরা বলতে চেয়েও পারিনি। জয় বাংলা স্লোগান আবার ফিরে এসেছিল মানুষের মুখে মুখে, ঠিক একাত্তরের মত। কাদের কসাইয়ের ফাঁসি হয়েছে ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩ তে। রচিত হয়েছে শাহবাগের প্রথম বিজয় সোপান। আর সেই বিজয়ের পর ১৬ ই ডিসেম্বরে নতুন করে শপথ গ্রহণ আর প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় মনে যে কথাটি বারবার আসছিল তা হল- "আমরা পেরেছি, আমরা পারব।"

শাহবাগের মিছিলে যখন যাই, মনে হয় আকাশ ছুঁয়ে ফেলব। এই মিছিল, এই শপথ, এই সমাবেশ, জাতীয় সঙ্গীত চিরজীবনের জন্য মনের মাঝে ধারণ করে রাখার স্মৃতি আমার। শাহবাগ, শুধু একটা জায়গার নাম নয়। শাহবাগ, কোটি কোটি বাঙ্গালির হৃদয়ের স্পন্দনের নাম। কাদের কসাইয়ের গলায় ফাঁসির দড়ির নাম। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আর বিপক্ষের শক্তির মধ্যে সুস্পষ্ট বিভেদের নাম। একাত্তরকে ভালবাসি, শাহবাগকে ভালবাসি, ভালবাসি বাংলাদেশকে। এবারের স্বাধীনতা দিবসের শপথ হোক বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে রাজাকারমুক্ত করার।২৬ শে মার্চে আবার যাব প্রজন্ম চত্বরে, শহীদদের প্রতি, বীরাঙ্গনা মায়েদের প্রতি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর রাজাকারের ফাসির দাবি নিয়ে। আর শহীদ রুমীর জন্মদিনে নতমস্তকে স্মরণ করব সেই অকুতোভয় তরুণকে, নিশ্চিত ভবিষ্যতের স্বপ্নকে নিজের হাতে ভেঙ্গে দিয়ে যে বলেছিল-

"মা, দেশের এই অবস্থায় তুমি যদি আমাকে জোর করে আমেরিকায় পাঠাতে চাও তাহলে আমি হয়ত যাব শেষ পর্যন্ত। আমেরিকা থেকে বড় ডিগ্রী নিয়ে এসে হয়ত বড় ইঞ্জিনিয়ার হব, কিন্তু নিজের বিবেকের কাছে কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তুমি কি তাই চাও আম্মা?" নাহ, আম্মা তা চাননি। তাইত দেশের জন্য কুরবানি করে দিয়েছিলেন নিজের ছেলেকে। রুমী শহীদ হয়েছে, শহীদ হয়েছেন আরও ত্রিশ লক্ষ মানুষ। কিন্তু শহীদেরা যে অমর। আর তাইত প্রজন্ম চত্বরের শ্লোগানরত সেই তরুন- তরুণী, কিশোর- কিশোরীর মধ্যে আবার ফিরে এসেছিলেন এই বীরেরা। শহীদ রুমীর ছবিটির নিচে মা জাহানারা ইমাম যে লিখেছিলেন, "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়..."

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন