সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪

You may say I am a dreamer , but I am not the only one...

প্রিয় উপন্যাসের সবচেয়ে সুন্দর ঘটনাটির চেয়েও একজন মানুষের গল্প অনেক বেশি আপন , অনেক বেশি সুন্দর।প্রতিটা জীবনের এক একটি গল্প থাকে, প্রতিটা মানুষের একটা করে গল্প শোনাবার থাকে।একজন কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে ফসল ফলান , সেই প্রত্যেক কণা ফসলের দানার মাঝে এক একটি গল্প লুকিয়ে থাকে, লুকিয়ে থাকে এক একটি জীবনের স্বপ্ন। প্রজন্ম চত্বরের প্রত্যেকটা হাতের উদ্যত মশালের মাঝে এক একটি স্বপ্ন থাকে - রাজাকারমুক্ত নতু...ন আগামীর স্বপ্ন। ছোট্ট শিশুর এক একটি পদক্ষেপ আর আধো আধো বুলিতে মা ডাকের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যৎ জীবনের অজানা কত স্বপ্ন। শিশু জানেনা পৃথিবী কত কঠিন, তবুও তো নতুন স্বপ্ন খেলা করে তার অবুঝ দুই চোখের মাঝে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে শেখে, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিশেলে সাজাতে চায় জীবনকে।

হয়ত একটা ঘটনা , দশ কি পনের মিনিট - সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টার একটি ঘটনা - রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসি। কিন্তু এই আধা ঘণ্টার ঘটনাটির পিছনে কত জীবনের , কত স্বপ্নের ইতিহাস যে লুকিয়ে আছে - ইতিহাস তার পাতায় হয়ত লিখে রাখবে সেসব স্মৃতি। আজ প্রায় একমাস হতে চলেছে , শত সহস্র প্রজন্ম যোদ্ধার ঘর্মাক্ত হাতে উদ্যত মশাল, মা -বোনের অশ্রুজল , প্রেমিক নব্য রাজাকার জেনে প্রেম ভেঙ্গে দিয়ে শাহবাগে ছুটে আসা প্রেমিকার অঝোর অশ্রুজল আর দীপ- রাজীব - শান্ত - জগতজ্যোতি - জাফর মুন্সির জীবনের বিনিময়ে পাওয়া বিজয় - রাজাকারের ফাসির। কিন্তু এখনও সেই আনন্দ এতোটুকু ম্লান হয়ে যায়নি আমার কাছে। বিজয়ানন্দ হয়ত একেই বলা হয়। জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয় অনুষ্ঠানের প্রতিটা মুহূর্ত অন্তরে গেঁথে আছে এখনও। প্রতিশোধ নিয়েছি আমরা , পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম প্রতিশোধ। শহীদের রক্তের প্রতিশোধ , মায়ের অশ্রুর প্রতিশোধ...

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি আমি। জীবনের ছোট ছোট ঘটনাকে অনেক বড় করে দেখতে ভালোবাসি , তার বিশ্লেষণ করতে ভালোবাসি। ভালোবাসি বড় বড় কষ্টের ঘটনাগুলোকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ছোট ছোট সুখের স্মৃতিকে আপন করে নিতে। চুপ থাকা আমার স্বভাবে নেই। তাই হয়ত প্রতিবাদ করি খুব ছোটবেলা থেকে - কখনও ফেসবুক বা ব্লগের পাতায় , কখনও নিজের ডায়েরীর পাতায়। তবে ফেসবুক আর ডায়েরীর মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল , ফেসবুকে আমার একটা চিন্তাধারা কে ছিঁড়ে - কুঁড়ে দেয়ার জন্য হাজির হবে হাজার হাজার কালো হাত। যুক্তি তর্ক আর বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষের মিলনমেলা হলেও , এখানে নেই নিজের একটা জগত গড়ে নেয়ার স্বাধীনতা। এইদিক থেকে ডায়েরী সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। সেখানে নেই কোন কালো ছায়ার আঘাত ; কোন কালো হাতের নির্লজ্জ আক্রমণ। যুদ্ধক্ষেত্রে বসেও ডায়েরীতে রচনা করা যায় প্রথম প্রেমের স্মৃতি ...

প্রজন্ম চত্বর নতুন এক আমিকে চিনতে শিখিয়েছে আমাকে - যে "আমি"র জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের একটি অংশ হতে পারা , সেই শাহবাগ আন্দোলন - ৪২ বছরের অভ্যস্ত নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে যে শাহবাগ চিৎকার করতে শিখিয়েছে জয় বাংলা বলে। সময়ের স্রোতে হয়ত অনেকে ছিটকে পরব অনেক দূরে , হয়ত আমার পরিচিত জগত থেকে একদিন চলে যেতে হবে অনেক দূরে - কিন্তু একটাই ভালবাসার স্মৃতি থাকবে আমার - শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর। একদিন হয়ত ছিন্নভিন্ন কথাগুলো ব্লগ কিংবা ফেসবুকের পাতা ছেড়ে আবার সম্পূর্ণভাবে আশ্রয় নেবে ডায়েরীর পাতায় , কিন্তু জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি হয়ে সবসময় থাকবে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর। এক একজন রাজাকারের ফাঁসির আনন্দে , কিংবা বাণিজ্য মেলায় পাকিস্তানি স্টল না থাকার আনন্দে , কিংবা প্রজন্ম চত্বরের যে কোন সাফল্যে একইভাবে সব দুঃখ ভুলে হেসে উঠব আজীবন। এই বাংলাদেশ আমার মা। জন্মদাত্রী মায়ের মতই ভালবাসি একে। জীবনের যে কোন অবস্থায় , যে কোন পদক্ষেপে প্রজন্ম চত্বরে নেয়া অমর শপথ রক্ষা করব , কথা দিলাম মা...

সময় এগিয়ে চলবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলবে প্রজন্ম চত্বরের জয়যাত্রার রথ। মায়ের জ্বালিয়ে দেয়া প্রদীপটাকে যে আর নিভতে দেয়া যাবে না , স্বপ্নের সিঁড়িটাকে যে রক্ষা করতে হবে আমাদেরকেই। জয় বাংলা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন