রিহান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । প্রতিরাতেই লোডশেডিং চলাকালিন সময়টুকু সে আকাশ দেখার কাজে ব্যায় করে । সে যে অযথাই আকাশ দেখে তাও কিন্তু না । সে আকাশ দেখার ফাকে নতুন নতুন গল্প প্রসব করে । তবে সে এখনো জানে না তার লেখা গুলো আদৌ গল্পের রূপ ধারণ করতে পেরেছে কিনা । তার ধারণা সে যেসব গল্প লিখে সবই নাকি জগাখিচুড়ীর একেকটা নতুন রেসিপি । জগাখিচুড়ী থেকে তার হঠাত্ মনে পড়ল , একদিন ডাকসুর খিচুড়ি খেতে হবে । এক বড় ভাইয়ের কাছে শুনেছে ডাকসুর খিচুড়ীর স্বাদ নাকি নান্নার বিরিয়ানীকেও হার মানায় । যদিও সে এখনও নান্নার বিরিয়ানীও খায় নি ।
রিহান হঠাত্ খেয়াল করল , সে তো আকাশ দেখছিল । এর মধ্যে খিচুড়ি আর বিরিয়ানী আসলো কোত্থেকে ? আপাততো খিচুড়ী আর বিরিয়ানীর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে । প্রতিদিনের মতো আজও সে ব্যালকনিতে এসেছিল রাতের আকাশ দেখার ফাকে ফাকে নতুন একটি গল্প প্রসব করার জন্যে । কিন্তু খাবার দাবারের চিন্তার ছলে লেখার মুড নষ্ট হয়ে গেছে । তাই সে ফেসবুকে ডু মারার সিদ্ধান্ত নিল ।
ফেসবুকে এমন কিছু মানুষ আছে , যাদের সাথে প্রতিনিয়তই তার কথা হয় । এবং তাদের সাথে কথা বলতেই সে ফেসবুকে লগইন করে । এসব মানুষের মধ্যে একটি মেয়েকে তার পছন্দ হয়েছে । সবার মনেই তার প্রিয় মানুষের ছবি আঁকা থাকে । রিহানের মনেও তেমন একটি ছবি আঁকা আছে । এবং ফেসবুকের ঐ মেয়েটি একেবারে রিহানের মনের ছবিটির মতোই । যদিও সে এখন আর মেয়েলি ঝামেলায় জড়াতে চায় না । কারণ তার ধারণা একাকিত্বই তার একমাত্র সঙ্গী এবং সে একাকিত্বকেই আপন করে নিয়েছে । ভালবাসা , মায়া , মমতা এসব অতিপ্রাকৃত বিষয় থেকে রিহান দূরে থাকার চেষ্টা করে । তবে সে মাঝে মাঝে ভালবাসায় সিক্ত হতে চায় , মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় , মমতা পেতে চায় । তখন ভালবাসার সন্ধানে বেড় হয় । কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেই আবার ক্লান্ত পথিকের মতো ঘরে ফিরে আসে । ভালবাসা পাক বা না পাক । এরপর থেকেই তার মনে হতে থাকে যে , ভালবাসা , মায়া , মমতা এসবই সাময়িক ব্যাপার । এসবের পেছনে ছুটোছুটি করে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না ।
ইদানিং সে অহেতুক বিষয়বস্তু নিয়ে বেশী চিন্তা ভাবনা করছে । এখনো তাই করছে । গল্প লিখতে বসে খাবার দাবার নিয়ে চিন্তা , আবার ফেসবুকে লগইন করে ভালবাসা , মায়া , মমতা নিয়ে চিন্তা । এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা মানেই সময় নষ্ট । এখন তার নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে । রাগ কমাতে হবে , কারণ মাত্রাতিরিক্ত সবকিছুই বিপদজনক । তার রাগ মাত্রা অতিক্রম করার লক্ষ্যে ছুটোছুটি করছে । বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দিলে রাগটা কমবে ।
মামার টং এর দোকানে যেয়ে একটা গোল্ডলিফ ধরালো এবং এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বন্ধুদের কল দিতে শুরু করল । চা খেতে খেতে সবাই চলে আসবে ।
সিগারেটে শেষ টানটা দেয়ার আগেই সবাই চলে আসল । সবার মুখে একটাই কথা , কিছুদিনের মধ্যেই তো এইচএসসির রেজাল্ট দিবে । কে কোথায় ভর্তী হবে । সিগারেট আর চা খাওয়ার পর রিহানের রাগটা কমেছিল । এখন আবার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল । কে কোথায় ভর্তী হবে , এই বিষয়কে কেন্দ্র করে আড্ডা দেয়া বিরক্তিকর । কারণ সবাই নাকি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে । কিন্তু রিহান এইচএসসিতে পাস করবে কিনা , এই ব্যাপারেও সে সন্দিহান । তাছাড়া ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কোন ইচ্ছা তার নাই । একসময় সে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল । কিন্তু তার পড়ালেখার যেই অবস্থা , তা দিয়ে কোন পাবলিক ভার্সিটিতেই সে চান্স পাবে না । এবং প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ানোর মতো সামর্থ্য তার পরিবারের নেই । তাই সে এই ব্যাপারে এখনো মনস্থির করতে পারে নি । তবে তার মনের কোনায় বেশ কিছু স্বপ্ন লুকিয়ে আছে । সে এসব স্বপ্নগুলো যত্ন করে আগলে রেখেছে । যদি কোন দিন সামর্থ্য হয় তাহলে স্বপ্নগুলো পূরণ করা যাবে ।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সে । তাই বড় বড় স্বপ্ন দেখা তার জন্যে মহাপাপ । মধ্যবিত্তরা সর্বদাই ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে । তারা তাদের চাহিদা পূরণের জন্যে মান সম্মানের বলি দিয়ে কারও কাছে হাত পাততে পারে না । আবার চাহিদা পূরণ না হলে বেশীক্ষণ গম্ভীর হয়েও থাকতে পারে না । তাহলে লোকে বলবে , যেটা পাওয়ার মুরদ নাই । সেটার দিকে হাত বাড়াও কেন ?
তাই রিহান বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে । তার চাওয়া পাওয়াকে সে একটি নির্দিষ্ট বাক্সে আটকে রেখেছে । এবং চুপিচুপি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে , যদি কোন দিন বাক্সটি খোলা যায় !!
রিহানের ধারণা সব স্বপ্নই সত্য হয় না । তবে কিছু কিছু সত্য স্বপ্নের মতোই । সে খুব ভালো অভিনয় করতে পারে । সুখী সুখী ভাব ধরে থাকায় সে পারদর্শী । কারণ বাস্তব জগতে সুখের পিছু নিলে নাকি দুঃখ পিছু ছাড়ে না । আবার দুঃখের পিছু নিলে নাকি সুখ পিছু ছাড়ে না । তাই সুখী থাকার ভান করে , দুঃখের পিছু নেয়াটাই উত্তম নয় কী ?
ভালো লিখেছেন।।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুন