সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

স্বপ্নবিলাস

জনমানব শূণ্য পথ , যানবাহনের আনাগোনাও তেমন একটা নেই । আকাশ পানে চেয়ে , সে পথিমধ্যে শুয়ে আছে । বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা তার মনকে ছুয়ে যাচ্ছে । সে হঠাত্‍ উপলব্ধি করল , তার পাশে এক নারীমূর্তি বসে আছে । তার চিনতে ভূল হলো না । তার প্রিয়তমাই তার পাশে বসে আছে । আজ তার রূপ যেন ঠিকড়ে পরছে । প্রিয়তমা আজ কালো শাড়ি পরেছে , চোখে কাজল দিয়েছে , চুলে কালো গোলাপ । তাকে দেখতে ঐ কালো গোলাপের মতই পবিত্র মনে হচ্ছে ।
মেয়েদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্যে কাজলই যথেষ্ট ।
এখন তারা পরস্পরের হাত ধরাধরি করে বসে আছে , পথিমধ্যেই বসে আছে । আশেপাশে কারও কোন অস্তিত্ব নেই । তারা একদম একা । বিন্দু বিন্দু জল এবং তার প্রিয়তমা ।
হঠাত্‍ তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো । এখনও সে ঘোড়ের মধ্যে আছে । স্বপ্নটাকে কিছুতেই ভূলতে পারছে না । এই প্রিয়তমার আশায় সে আর কত দিন পথ চেয়ে বসে থাকবে । আপাততো সে নিকোটিন পানে মনোনিবেশ করিলো । প্রিয়তমাকে নিয়ে আর ভাবতে পারছে না ।
রাতে আর ঘুম হল না । নিকোটিন পান করেই রাতটা পেড়োল । হঠাত্‍ পূর্ব দিগন্তে সূর্য উকি দিলো । সে কিছুক্ষণ সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করলো । রাতের স্বপ্নটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে । কিন্তু তার মনে পড়লো , তাকে তো জীবন যুদ্ধে নামতে হবে । এসব ভাবতে ভাবতেই সে অফিসের যাওয়ার জন্যে রেডি হল । প্রতিদিন তাকে বাইরেই নাস্তা করতে হয় । কারণ সে নিঃসঙ্গ একজন মানুষ । তার সাত পুরুষের কেউ নেই ।
নাস্তা শেষ করে অফিসের পথে রওনা দিলো । রিকশায় বসে বসে সে রাতের স্বপ্নটা নিয়ে আবার ভাবতে শুরু করলো । প্রিয়তমাকে নিয়ে সে প্রতি রাতেই স্বপ্ন দেখছে । প্রিয়তমার নাম মোহনা ।
আজ ১৭ বছর হল সে মোহনাকে ভালবাসে । কিন্তু মোহনাকে আর নিজের করে পাওয়া হল না । সে শুনেছে , মোহনা নাকি সুখেই আছে । মোহনার স্বামী সি.এস.ই ইঞ্জিনিয়ার । বুয়েটের স্টুডেন্ট ছিলো । ভালো চাকরি করে । প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক । মোহনাও ডাক্তার , শিশু বিশেষঞ্জ । কিছুদিন আগে তাদের নাকি একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে । মেয়ের নাম এলিসিয়া ।
এসব ভাবতে ভাবতেই সে অফিসে পৌছে গেলো । ভাবনা টাবনা বাদ দিয়ে অফিসের কাজে মননিবেশ করলো । সে একজন ফ্রিলেন্সার ফটোগ্রাফার এবং একটা প্রোডাকশন হাউজে গ্রাফিক্সের কাজ করে । টাকা পয়সা তেমন নেই । তবে তার মতে , সে সুখেই আছে । মাঝে মাঝে প্রিয়তমাকে নিয়ে ভাবা এবং অফিসের কাজকর্ম করা ছাড়া তার তেমন আর কোন কাজ নেই ।
অফিস শেষে রিকশা করে বাড়ি ফিড়ছিলো । সে আবার প্রিয়তমার চিন্তাভাবনা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল । ১৭ বছর আগে সে মোহনাকে তার ভালো লাগার কথা বলে ছিল । কিন্তু মোহনা বলে দিয়েছিল , সে মোহনার যোগ্য না । ১৭ বছর আগে সে মোহনাকে যতটা ভালবাসত । আজ ১৭ বছর পরও ঠিক ততটাই ভালবাসে । সে অন্য কোন মেয়ের সাথে প্রেমে জড়াতে পারে নি । মোহনার প্রতি তার ভালবাসা এতটাই প্রখর যে , অন্য মেয়েদের দিকে সে তাকাতেই পারে না ।
এসব ভাবতে ভাবতেই রাত ১১টা বেজে গেলো । হঠাত্‍ সে খেয়াল করলো , সে মোহনাকে নিয়ে বড্ড বেশী চিন্তা ভাবনা করছে । হঠাত্‍ কেন এত ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল ? পরক্ষণেই তার মনে পড়ল , আগামীকাল মোহনার জন্মদিন ।
রাত ১২টায় এস.এম.এস এর মাধ্যমে সে মোহনাকে উইশ করল । বেনামি এস.এম.এস । সে চায় না মোহনা তার ব্যাপারে জানুক । বিগত ১৭ বছর যাবত্‍ এমনটাই চলছে । এত চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়েই সে ঘুমাতে গেলো ।
হঠাত্‍ সে দেখলো , মোহনা তার পাশে শুয়ে আছে । পূর্ণিমা রাত । চাঁদের আলো মোহনার গাল ছুয়ে যাচ্ছে । মোহনাকে এক আনিন্দ্য সুন্দর কিশোরীর মত দেখাচ্ছে । সে মোহনার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে । মোহনা ঘুমাচ্ছে , তাকে সে যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে । কোন মানুষ এত সুন্দর হতে পারে ?
সে জানে , সে আবারও স্বপ্ন দেখছে । কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তার ভালো লাগছে । এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারার আনন্দে তার চোখের কোণ দিয়ে বিন্দু বিন্দু জল ঝর্ণাধারার মত বয়ে যাচ্ছে ।
সবাই ভালবাসতে পারে না , সবাই ভালবাসা বুঝে না

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন