মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জামাত -শিবির রাজাকার , এই মুহূর্তে বাংলা ছাড় ।

জামাত একটা ধর্ম ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী দলের নাম , বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে যারা এই দেশ টির বিরোধিতা করে আসছে , এখন ও করছেই । এই দলটি ১৯৭১ এ মুক্তি যুদ্ধের বিরোধিতা করে এবং শান্তিকমিটি,রাজাকার আলবদর,আল-শামস বাহিনী গঠণ করে।মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু এ দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন।তিনি গোলাম আজম এর নাগরিকত্ব ও বাতিল করেন।এর নেতারা পাকিস্তানে চলে যায়।বঙ্গবন্ধু কে হত্যার পর জিয়াউর রহমান জামাতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।গোলাম আজম কে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেন।তারা বাংলাদেশে রাজনীতির অধিকার পায়। জামাতের কাজকর্মেই বোঝা যায় যে তাদের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো তালেবানি রাষ্ট্র বানানো।কিন্তু সুপ্রাচীন কাল থেকে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক,বাঙালি অসাম্প্রদায়িক।বাংলাদেশ কখনোই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিশ্বাস করে না যার প্রমাণ আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি,আমাদের ইতিহাস।আমাদের পতাকা।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইবুনাল গঠণের পর জামাতের ৮ জন নেতা র বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।এদের মধ্যে ছয় জনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং বাকিদেরটাও অচিরেই প্রমাণিত হবে। এইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি কাদের কসাই , সাইদি , কামরুজ্জামান , মুজাহিদ এর ফাসির রায় । গোলাম  আজম এবং মুজাহিদ এর রায় দেয়ার সাথে ট্রাইব্যুনাল জামাত কে সন্ত্রাসী , যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে্ন এবং এদের কে নিষিদ্ধ করতে সরকার কে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন । এর মধ্যেই জামাতের নিবন্ধন ও বাতিল হয়ে গেছে , শুধু চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ হবার অপেক্ষা এখন যুদ্ধাপরাধের জন্য । যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য জামাত যে নাশকতা চালিয়েছে তাতে অন্তত ৬০ জন মানুষ নিহত হয়েছে।১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের অবসানের পর থেকেই শহীদজননী জাহানারা ইমাম এর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি,জামাত নিষিদ্ধ এবং গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধীর পক্ষের দল তখন মা জাহানারা ইমাম কে দেশদ্রোহী আখ্যা দিতে দ্বিধা করে না । যেই মা এই বাংলাদেশের জন্য নিজের সন্তান কে হাসিমুখে কোরবানি দিয়েছিলেন , সেই মা কে দেশদ্রোহীর অপবাদ নিয়ে এই দেশ ছাড়তে হয়েছে, এর চেয়ে বড় লজ্জার ব্যাপার আর কি হতে পারে ?

তারপরেও মা এই আন্দোলন চালিয়ে গেছেন । মা আমাদের উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন , বলে গিয়েছেন - "জনগনের চেয়ে বিশ্বস্ত কেউ নেই । " মা জাহানারা ইমাম মৃত্যুর আগে শেষ চিঠি রেখে গেছেন আমাদের জন্য । মা বলেছেন - "আমার সহযোদ্ধা বন্ধুগণ, আপনারা গত তিন বছর একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন। এ লড়াই আপনাদের, দেশবাসীর অভূতপূর্ব একতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের অঙ্গীকার ছিল, লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছেড়ে যাবো না। মরণব্যাধি ক্যান্সার আমাকে মরণ কামড় দিয়েছে। আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি। রাজপথ ছেড়ে যাইনি। মৃত্যুর পথে বাধা দেবার ক্ষমতা কারোর নেই। তাই আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি এবং অঙ্গীকার পালনের কথা আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই। আপনারা অবশ্যই আপনাদের কথা রাখবেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে থাকবেন। আমি না থাকলেও আমি জানবো, আমার কোটি কোটি বাঙালি সন্তানেরা আপনাদের পুত্র-কন্যাদের নিয়ে মুক্ত সোনার বাংলায় বসবাস করছেন। এই আন্দোলন এখনো দূরপথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-মুক্তিযোদ্ধা-নারী-ছাত্র-যুবশক্তি-নারী সমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই লড়াইয়ে আছে। তবু আমি জানি, জনগণের মতো বিশ্বস্ত আর কেউ নয়। জনগণই সকল শক্তির উৎস। তাই গোলাম আযম ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে দায়িত্বভার আমি আপনাদের বাংলাদেশের জনগণের হাতে অর্পণ করলাম। নিশ্চিত জয় আমাদের হবেই।"

মা জাহানারা ইমামের বিশ্বাস রক্ষার লক্ষ্য নিয়েই শাহবাগ জেগে আছে , জাগে থাকবে সারা বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুন প্রানের স্পন্দন হয়ে । আমাদের কে আমাদের কথা রাখতেই হবে তা পক্ষে -বিপক্ষে যত বাধাই আসুক না কেন । আর মা এর সেই বিশ্বাস রক্ষার তাগিদেই আমাদের কে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধী কখন ও ছিল , জামাত - শিবির নামক সন্ত্রাসী দল কখন ও রাজীব , দীপ , তুহিন , তন্ময় , আরিফ নুর , ইমন আকন্দ , জগত জ্যোতি , জাফর মুন্সি , নিরীহ যাত্রী , বাসচালক দের উপর হামলা করত - এই ব্যপার গুলো পুরনো দিনের স্মৃতিতে পরিণত হয় । আর মা জাহানারা ইমামের সময় থেকে আজ পর্যন্ত চলা এই আন্দোলন সেদিন ই সম্পূর্ণ সার্থকতা পাবে । তবে একটা ব্যপার কিন্তু আমরা পেরেছি , আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সবাই যে যুদ্ধাপরাধী , জামাত - শিবির কে কতটা ঘৃণা করি তা আমাদের শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দেখিয়ে দিতে পেরেছি , কসাই , মুজাহিদ , সাইদি , কামরুজ্জামান এর জন্য ফাসির রায় আনতে পেরেছি । কাজেই শাহবাগ কে কোনোভাবেই ব্যর্থ বলা যাবে না বরং বলতে গেলে মা জাহানারা ইমামের আন্দোলনের পর সবচেয়ে সফল আন্দোলন বলতে হবে রাজাকার , জামাত -শিবিরের বিরুদ্ধে । আর প্রতিবাদের সেই প্রদীপ হাত নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব , যতদিন না বাংলার বুক থেকে রাজাকার - জামাত বিলুপ্ত হবে ততদিন এই আন্দোলন থামবে না । শাহবাগের গনজাগরন মঞ্চের যোদ্ধারাই এই প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবে , পক্ষে - বিপক্ষে যত বাধাই আসুক না কেন ।

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু । জয় জনতা , জয় গনজাগরন মঞ্চ। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের , জয় হোক স্বাধীনতার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন