সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩

সবুজের বুকে লাল , সে তো উড়বেই চিরকাল...।

  • ৫ ফেব্রুয়ারি রাত। রাজধানীর রাজারবাগে বাগানবিলাসে ঢাকা দোতলা বাড়িটার উপরের তলায় আলো জ্বলছে। খাবার টেবিলে আলোচনা চলছে রাজাকার কাদের কসাইয়ের রায় নিয়ে। মৃন্ময়ী , কিশোর আর মৃন্ময়ীর মা চন্দ্রকথা কে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার। মৃন্ময়ীর মা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন তাঁর একমাত্র ছেলে সাগরকে। স্বামী একাত্তরের পর বেঁচে ছিলেন আরও এগারো বছর , কিন্তু কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের অত্যাচারের স্মৃতি কখনও মুছে ফেলতে পারেন নি। মৃন্ময়ীর জন্ম একাত্তরের অনেক পরে - ১৯৮২ সালে। তার জন্মের কিছুদিন পরই মারা যান বাবা। মেয়ে মৃন্ময়ীকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকেন মা চন্দ্রকথা। এই মেয়েটাই যে পৃথিবীতে তাঁর একমাত্র অবলম্বন। মৃন্ময়ীকে বাঁচানোর জন্য গার্মেন্টস এ চাকরি নেন মা , অকথ্য পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে বড় করে তোলেন মেয়েকে। মেয়ের দিকে তাকালে তিনি শুধু নিজের মেয়েকেই দেখতে পান না - দেখতে পান একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে। দেশ মায়ের জন্য পরিবারের মায়া ত্যাগ করে যে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল , নির্ভুল নিশানায় আঘাত হেনে যে পরাজিত করত পাকিস্তানি হায়েনাদের - সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার ছায়া দেখতে পান চন্দ্রকথা মৃন্ময়ীর মাঝে। মৃন্ময়ীকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা - মা ডাক শেখানোর আগে শিখিয়েছেন জয় বাংলা বলতে। মৃন্ময়ী যখন বাসায় সাজিয়ে রাখা ফ্যামিলি ফটো থেকে বাবার কিংবা ভাইয়ের ছবি বের করে জানতে চেয়েছে এরা কে , অশ্রুজলে ঝাপসা চোখে মেয়েকে মা জানিয়েছেন এদের পরিচয়। ছোট্ট শিশু মৃন্ময়ীর বুকে বাসা বেঁধেছে এক নিদারুন প্রতিশোধস্পৃহা। রাজাকারদের প্রতি এক তীব্র ঘৃণা।

শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলার পলিমাটির বুকে পায়ের ছাপ পরে গেছে প্রজন্ম চত্বরের। এ ইতিহাস মোছে কার সাধ্য ?

মহাকালের কাঁটা ঘুরে চলে তার নিজস্ব গতিতে , দিনের পর দিন -মাসের পর মাস -বছরের পর বছর - শতাব্দীর পর শতাব্দী হয়ে। এই গতিশীল জীবন প্রবাহের মাঝেই লেখা হয় অনেক ইতিহাস , সময়ের ডায়রিতে কিছু বিশেষ দিন অক্ষয় হয়ে থাকে চিরকাল। একটি জাতির পথচলায় নানারকম ঘটনার মাঝে অক্ষয় হয়ে থাকার মত কিছু ইতিহাস থাকে , যা ঠাই পায় কালের সংরক্ষণাগারে। হয়ত বা অনেক বছর, অনেক শতাব্দী পরে এই ঘুমিয়ে থাকা ইতিহাস কথা বলে উঠবে আবার , জাত...িকে জানিয়ে দেবে তার নিজস্ব আত্মপরিচয়ের কথা। বায়ান্ন যেভাবে জাগ্রত হয়েছিল উনসত্তরে , উনসত্তর যেভাবে জাগ্রত হয়েছিল একাত্তরে এসে, একাত্তরের ইতিহাস যেভাবে জাগ্রত হয়েছিল ২০১৩ তে এসে ... 

ফেব্রুয়ারি মাস আরও অনেক আসবে , কিন্তু ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারি আর কখনও আসবে না। সেই উত্তাল মিছিল , রাত -দিন শাহবাগে অবস্থান, লক্ষ কণ্ঠে এক ই দাবি -"রাজাকারের ফাসি চাই" , এই আগুনঝরা দিনগুলোকে হয়ত প্রত্যেক ফেব্রুয়ারিতেই আমরা স্মরণ করব - কিন্তু দিনগুলোকে আর ফিরে পাব না। ডিসেম্বর বার বার আসবে , কিন্তু ২০১৩ সালের ১২ ই ডিসেম্বর বারবার আসবে না। প্রথম কোন রাজাকারের ফাসি হয়েছে , এবং সেই ফাসি আদায় করতে দশ মাস ধরে আন্দোলন করতে হয়েছে প্রজন্ম চত্বরে - এই গৌরব বারবার আসবে না। দুই শুন্য এক তিন - সালটা আসলেই একটা ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের পর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়ের ইতিহাস... 

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ , চুনি উঠলো রাঙ্গা হয়ে

  1. জীবনের প্রতি পাতায় পাতায় ছড়িয়ে থাকে যুদ্ধের ইতিহাস , সাদা - কালো পাতা রং তুলির ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে জীবন্ত। কখনও সে রং বিপ্লবের ,আবার কখনও বা বন্ধুত্বের, কখনও প্রেমের , কখনও বা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের। প্রতিটা ইট -কাঠ কিংবা পাথরের মাঝে লুকিয়ে থাকে এক একটি জীবন যুদ্ধের ইতিহাস, নরম সবুজ পলিমাটির বুকে চিরন্তন পথচলায় মাটির বুকে পায়ের ছাপ থেকে যায় অন্ধকারে খাঁ খাঁ সীমান্তে বুকে হেঁটে শত্রুর আস্তানার দিকে ছুটে... যাওয়া মুক্তিসেনার। বন্ধুর হাতে তারার মত জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার যে শহীদ বন্ধুর রক্তের দামেই লেখা। কিংবা কোন এক নিভৃত পল্লীতে ছোট্ট কুঁড়েতে বসে স্বামী- হারা , সন্তানহারা মা গোনেন অপেক্ষার প্রহর। মায়ের একজন সন্তানের মৃতদেহের উপরে তত দিনে জমা হয়ে গেছে আরও শত শত সন্তানের মৃতদেহ। স্বাধীন বাংলাদেশ হয়েছে , খুনির ফাঁসি হয়েছে - পার হয়ে গেছে অনেকটা সময়।

    বিয়াল্লিশ দিন , বিয়াল্লিশ মাস , বিয়াল্লিশ বছর চলে যায় , মায়ের অপেক্ষার প্রহর যে আর শেষ হয়না। "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়" বলে যে সন্তান মুক্তির সংগ্রামের সন্ধানে ঘর ছেড়েছিল - নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হেনে মুক্ত করেছিল বাংলার মাটিকে, নিস্তব্ধ রাতের নীরবতা ভেদ করে শত্রুর বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়ে গেছে তার বুক। মা , মা করে ষোল বছর বয়সের সেই কিশোর টি আর ছুটে আসবে না দুঃখিনী মায়ের কোলে , যেমনভাবে আর কখনও মায়ের কোলে ফিরে আসবে না ক্র্যাক প্লাটুনের শহীদ দুর্ধর্ষ গেরিলারা। "আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়" -হ্যা বাংলায় বারবার ফিরে আসেন বটে শহীদ রুমী - বদি -আজাদ - আলতাফ মাহমুদ , কখনও পুলিশের উদ্যত অস্ত্রের মুখে জয় বাংলা স্লোগানে রাজপথ কাঁপানো তরুণী হয়ে , কখনও রাতের অন্ধকার ভেদ করে রাজাকারের আস্তানায় হানা দিয়ে "রাজাকার" তিলক পরিয়ে আসা অকুতোভয় তরুণ হয়ে। 

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

Merry Christmas and Happy New Year to all...

  1. আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশ নরম পলিমাটিতে হাজারো মানুষের দৃপ্ত পদচারণা। ধর্ম - বর্ণ -জাতি বিভেদ সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমাদের বাঙালি পরিচয়। এদেশে চিরকাল হিন্দু - বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান - মুসলমান সব ধর্মের মানুষ একসাথে কেঁদেছে , হেসেছে , মেতেছে উৎসবের আনন্দে। আমি জানি ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী চায়না বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকুক - সেজন্য তারা ধর্মকে পুঁজি করে প্রতি মুহূর্তে ছড়াতে চায় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। কিন্ত...ু তারা কখনই সফল হতে পারবে না কারণ , এই দেশটার নাম বাংলাদেশ। হিন্দু - বৌদ্ধ - মুসলিম - খ্রিষ্টান সবাই এই বাংলা মায়ের সন্তান। বাঙালি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে , বাঙালি দল -মত - পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে শাহবাগ আন্দোলন করে রাজাকারের ফাসি নিশ্চিত করেছে। বাংলার হিন্দু , বাংলার বৌদ্ধ , বাংলার খ্রিষ্টান - আমরা সবাই বাঙালি।

    আজ লড়াই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সাথে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির। প্রজন্ম চত্বর বাঙ্গালিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কে আমাদের বন্ধু আর কে আমাদের শত্রু। তাই লড়াই সে শত্রুদের বিরুদ্ধে। আজকে যুদ্ধটা সরাসরি পাকিস্তানের সাথে। খুনি পাকিস্তানিদের তো মাতৃভূমি থেকে একাত্তরেই বিতাড়িত করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আজ ২০১৩ তে এসে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর নিশ্চিত করেছে রাজাকারের ফাসি। ফাসি হয়ে গেছে কিছুদিন আগে বারই ডিসেম্বরে, আনন্দ রয়ে গেছে এখনও। আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারি একাত্তরের হায়েনাদের আমরা ক্ষমা করিনি , কখনও করব না। রাজাকারের ফাসি হয়েছে , দাবি জানানো হয়েছে পাকিস্তানের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার । দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন চলছে পাকিস্তানি পন্য বর্জনের জন্য। এ প্রজন্ম যে হারতে জানে না , মাতৃভূমির প্রশ্নে কোনরকম আপোষ করতে জানে না।

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

প্রজন্মকে পিছনে ঠেলে দিতে চায় কে বা কারা ?

প্রজন্ম চত্বর একটি মহাবিস্ফোরণের নাম যে বিস্ফোরণ ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সবরকম অহংকারকে। প্রজন্ম চত্বর শুধু একটি জায়গার নাম নয় , এটি একটি চেতনার মহাসমুদ্রের নাম যা ঘর থেকে বাইরে বের করে এনে প্রাণের দাবি জানাতে উৎসাহী করেছে বিয়াল্লিশ বছর ধরে অভ্যস্ত নীরবতায় আচ্ছন্ন থাকা জাতিকে। প্রজন্ম চত্বর সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়ার নাম যে বাঙালি এ...খনও জেগে আছে , চিরকাল জেগে থাকবে। প্রজন্ম চত্বর লাল - সবুজে আচ্ছন্ন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের অক্ষয় চেতনার নাম , প্রজন্ম চত্বর মা জাহানারা ইমামের স্বপ্ন পূরণের নাম , প্রজন্ম চত্বর লাল -সবুজ শাড়ি পরা তরুণীর কণ্ঠে দুর্জয় স্লোগানের নাম , প্রজন্ম চত্বর দেশদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে জেগে থাকার নাম , প্রজন্ম চত্বর খুনি রাজাকারের গলায় ফাঁসির দড়ির নাম।

প্রজন্ম চত্বরে বাঙ্গালির নবজাগরণের কারণেই আদায় হয়েছে রাজাকার কাদের কসাইয়ের ফাঁসি। পাঁচ লক্ষ মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ - প্রজন্ম চত্বরের জন্যই। প্রজন্ম চত্বর ঘুম ভাঙ্গা জাতির কণ্ঠে তুলে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অমর স্লোগান - জয় বাংলা। রাজাকাররা আর তাদের দোসর জামাত - শিবির প্রজন্ম চত্বরের বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক , তাদের নির্মম আক্রমনে শহীদ হয়েছেন রাজীব - দীপ - জগতজ্যোতি - জাফর মুন্সিরা , স্লোগান দিতে দিতে মৃত্যুবরণ করেছেন শান্ত ,প্রজন্ম চত্বরের কতজন যোদ্ধা যে আহত হয়েছেন আন্দোলনের পথযাত্রায় তার নির্দিষ্ট সংখ্যা করাও সম্ভব না। সবশেষে কিছুদিন আগেই পুলিশ নির্লজ্জ আক্রমন চালিয়েছে এই যোদ্ধাদের উপর। কিন্তু এ প্রজন্ম যে জীবন বাজি রেখেই লড়াই এ নেমেছে , জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার হলেও বাঙালি যে মাথা নোয়াবার নয়।

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩

প্রজন্মের আহ্বান , নিপাত যাক পাকিস্তান

ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে এসেছে গণজাগরণ মঞ্চ। আন্দোলনের পথযাত্রায় শহীদ হয়েছেন যোদ্ধারা, সহযোদ্ধার মৃত্যুশোককে শক্তিতে পরিণত করে পরমুহূর্তেই রাজপথ কাঁপিয়েছেন আবার প্রজন্মযোদ্ধারা। স্বাধীনতাবিরোধীদের বার বার আক্রমণ , স্বার্থান্বেষীদের অযৌক্তিক বিরোধিতা - কোন কিছুই শাহবাগের এই মুক্তির পথযাত্রাকে থামাতে পারেনি। আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারি আমরা মা জাহানারা ইমামের স্বপ্ন সফল করতে পেরেছি , স্বাধীন বাংলাদেশে খুনি রাজাকারের ফাসি কার্যকর হয়েছে । স্বপ্নের সিঁড়ি নির্মাণের যে প্রত্যয় নিয়ে প্রজন্ম চত্বরের যাত্রা শুরু হয়েছিল সে সিঁড়ি নির্মাণের শেষ ধাপটি সম্পন্ন  হয়েছে রাজাকারের ফাসির মধ্যে দিয়ে - সময় এই সিঁড়িটিকে স্থায়ী করে ধরে রাখার , সময় সেই সিঁড়ি বেয়ে নতুন আগামীর পথযাত্রার।

সেই নতুন পথযাত্রার পথেই বাধা হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল একাত্তরের পরাজিত হায়েনার দল পাকিস্তান। কিন্তু সে প্রচেষ্টা সফল হতে দেয়নি বাংলার প্রজন্ম। পুলিশের নির্লজ্জ আক্রমন সত্ত্বেও তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন, জয় বাংলা স্লোগানে কাঁপিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানিদের ভিত। এই প্রজন্মযোদ্ধাদেরকে হারাতে পারে এমন আগ্নেয়াস্ত্র এখনো আবিষ্কার হয়নি। শত শত আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়েও স্লোগানকন্যা শাম্মি আপু জয় বাংলা স্লোগানে সেদিন কাঁপিয়ে তুলেছেন গুলশান চত্বরকে। এক একজন সহযোদ্ধার উপরে পুলিশ কিরকম নির্মমভাবে আক্রমন করেছে , তারপরেও প্রজন্ম চত্বর জেগে আছে , জেগে থাকবে। শাহবাগ জেগে থাকবে প্রতিবাদের অগ্নিশিখা হয়ে , বাংলাদেশের হৃদয়স্পন্দন হয়ে।

শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩

শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না ...

স্বাধীন বাংলাদেশ , স্বাধীন লাল -সবুজ পতাকা আমাদের অগ্রজেরা রক্তের বিনিময়ে অর্জন করে দিয়ে গেছেন আমাদের। হাতের মুঠোয় মৃত্যু , চোখে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ছিলেন। নিশ্চিত জীবনের আশ্বাস , মা - বোনের অশ্রুসজল চোখ সবকিছুকে দূরে সরিয়ে দেশ মায়ের ডাকে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, আমাদের জন্য এনে দিয়েছেন সোনালি স্বদেশ - যার প্রতি কনা মাটিতে মিশে... আছে শহীদের রক্ত , বীরাঙ্গনা মায়ের অশ্রু। স্বর্গের চেয়ে প্রিয় এ জন্মভূমির স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব আজ আমাদের , ২০১৩ সালের নবপ্রজন্মের। অন্ধকারে খা খা সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক জেগে আছে আজও। এ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি , রাজাকাররাও এ প্রজন্মের যুদ্ধ দেখেনি - দেখিয়ে দেয়ার এখনি সময়।

একাত্তরের রনাঙ্গনে যুদ্ধাহত একজন মুক্তিযোদ্ধা - শত্রুর বুলেটের আঘাতে মারা যাচ্ছেন তিনি। মৃত্যুর আগে সহযোদ্ধাদের কাছে তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল , মুক্ত ভূমিতে যাতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। সহযোদ্ধারা এই বীর শহীদের লাশ কাঁধে নিয়ে খুঁজতে লাগলেন মুক্ত ভূমি। একজন প্রশ্ন করলেন , এখানে মুক্ত ভূমি কোথায় পাওয়া যাবে , মুক্তিযোদ্ধারা উত্তর দিলেন , মুক্ত ভূমি না থাকলে এই শহীদকে কবর দেয়ার জন্য আমাদের এক খণ্ড মাটি হলেও মুক্ত করতে হবে। এসব ইতিহাস শুনলে নিজের অজান্তে কাঁদি আর বলি , এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করতেই হবে। মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রান হল বলিদান , লিখা আছে অশ্রুজলে...। এই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জেগে আছে , জেগে থাকবে যুগ যুগ ধরে।

'হাত দিয়ে বলো সূর্যের আলোকে রুধিতে পারে কি কেউ / আমাদের মেরে ঠেকানো যাবে না গনজোয়ারেরে ঢেউ

অদৃশ্য বাধা ভাঙ্গার কোন মন্ত্র এখনও আবিস্কার হয়নি কেন ?আমি সত্যি আর সহ্য করতে পারছি না ... এসব কি হচ্ছে কিছু মানতে পারছি না। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা , সহিংসতা যে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা করেনা এটা সারা বাংলাদেশ ভাল করেই জানে। সেই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর এইরকম আক্রমন এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। পরিবারের শৃঙ্খলে হাত -পা বাধা আমার , এক্ষনি ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে আমার ভাইদের আড়াল করে দাড়াই ... নিজের উপ...র লজ্জা হচ্ছে চরম -কেন মেয়ে হয়ে জন্মালাম ? কেন পারছি না ভাইদের মত জয় বাংলা চিৎকারে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করতে ছুটে যেতে ? কেন পারছি না বাংলা মায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য পুলিশের আঘাত বুক পেতে নিতে।

বিবেকের শাস্তি কখনও আমাকে ক্ষমা করবে না আজকে আমার ভাইদের উপর পুলিশ যখন লাঠিচার্জ করছে তখন আমি ঘরে বসে আছি এ অপরাধে । কিন্তু বিবেক কি সেই পুলিশকে ক্ষমা করবে যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আঘাত করল , গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর আঘাত করল। কাকে দোষ দিব ? স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আজকে ইমরান ভাই , বাধন ভাই আই সি ইউ তে - শাম্মি আপু ,শিপ্রা আপু অনন্য আজাদ সহ আরও সহযোদ্ধারা গ্রেফতার - অর্ণব ভাই , আরিফ নূর ভাই আরও অনেকে আহত। সান্ত্বনার কোন ভাষা নাই , শুধু এই প্রশাসনের প্রতি ধিক্কার জানানোর আর ঘৃণা জানানোর ভাষা আছে।

গণজাগরণ মঞ্চ - এক চির উন্নত মমশির

গণজাগরণ মঞ্চের প্রত্যেকটা যোদ্ধা জীবন বাজি রেখে প্রতিবাদ জানাতে জানে, বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়কে তুলে ধরে ন্যায্য দাবি জানাতে জানে তার প্রমাণ আজকের পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচী। রাজাকারের ফাসির জন্য রাজীব, দীপ, জগতজ্যোতি , জাফর মুন্সি , শ...ান্ত ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিলেন - আজকে পাকিস্তানী পার্লামেন্টে কাদের কসাইয়ের ফাসি নিয়ে অযাচিত নিন্দা প্রস্তাব পাশের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী , বাপ্পাদা , বিন্দু ,অর্ণব , অনু , রিয়াজ , জিসান , আকাশ ভাইরা আহত হলেন।কিন্তু এই রক্ত যে বাঙ্গালির রক্ত - এই প্রজন্ম যে হার মানতে জানে না আর সেজন্যই সব বাধা অতিক্রম করে মিছিল এগিয়ে গেল পাকিস্তান দূতাবাসের দিকে। ঘেরাও হল পাকিস্তান দূতাবাস। পরবর্তীতে পুলিশ এসে ক্ষমা চাইল তাদের ভূমিকার জন্য ।

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ।

আমাদের প্রিয় বাংলা মা হতে পারে অনেক ছোট একটা দেশ , হতে পারে অনেক গরীব একটা দেশ - কিন্তু ছোট্ট সবুজ এই দেশটা অপরিসীম প্রাণশক্তিতে ভরা। আর তার প্রমাণ ই আমরা দিলাম গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আর ন্যাশনাল প্যারেড গ্রাউন্ডে একই দিনে দুই দুইটা বি...শ্ব রেকর্ড করে। ফেব্রুয়ারিতে রাজাকারের ফাসির দাবিতে যেভাবে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ছুটে এসেছিল বাংলার মানুষ, গতকাল ঠিক একইভাবে বাংলা মায়ের পরিচয় সারা বিশ্বে তুলে ধরার প্রচেষ্টার অংশ হতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছিল লাখো জনতার ঢল। গণজাগরণ মঞ্চ , সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম , বিজয় ২০১৩ মঞ্চ , মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ ,বিজয় ৪:৩১ মঞ্চের ডাকে বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছিলেন বাঙ্গালিরা , বাংলাদেশের পরিচয় বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ছিল বাঙালি পরিচয় , সব স্লোগানের উপরে ছিল জয় বাংলা স্লোগান।

একটি দেশের একজন মানুষও যখন সারা বিশ্বে নাম লেখানোর মত বড় কোন অর্জন করে , তখন সেই দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের একটা নৈতিক দায়িত্ব থাকে সেই মানুষটাকে সমর্থন জানানো। একটা ছোট্ট দেশ বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ যখন নিজেদের দেশের পরিচয় সারা বিশ্বে তুলে ধরতে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় , তখন আমার মনে হয় বাংলাদেশের যে কোন মানুষের উচিত এই পাঁচ লক্ষ মানুষের সঙ্গে থাকা। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি গতকাল বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে ৫ লাখ মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে যে বিশ্ব রেকর্ড আমরা করেছি , সেটাকে সাপোর্ট দেয়ার বদলে এই বাংলাদেশের ই কিছু মানুষ সেটার বিরোধিতাই করে যাচ্ছে -সত্যি কষ্ট লাগে।

বিজয় -২০১৩ ; বিজয়ের সূর্যোদয় , বাংলাদেশ বিশ্বময়

ইতিহাস আমাদের আত্মপরিচয় জানায় , আমাদের গৌরবময় ইতিহাস আমাদের বলতে শেখায় - "আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি।" বাংলাদেশের ইতিহাস এক সাগর রক্তরাঙ্গা ইতিহাস। সেই রক্তের সমুদ্রে স্নান করে জন্ম নিয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে আমাদের জন্য এনে দিয়েছেন সোনালি স্বাধীন দেশ। সেই আত্মত্যাগের ফলেই আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। স্বাধীনতা...র আনন্দে আজ আমরা গাইতে পারি -জয় বাংলা বাংলার জয় , হবে হবে হবে - হবে নিশ্চয়। কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে নতুন সূর্য ওঠার এইত সময়।

একাত্তরে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কেটে গেছে বিয়াল্লিশটি বছর। বর্তমান প্রজন্মের জন্য , আমাদের জন্য জীবনের শ্রেষ্ঠ বিজয় দিবস হল ২০১৩ সালের আজকের দিনটি ।২০১৩ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর -স্মৃতির পাতায় অক্ষয় হয়ে থাকবে কারন এবারের বিজয় দিবসের আগে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর অর্জন করেছে মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রেষ্ঠ বিজয় - রাজাকার কসাই কাদেরের ফাসি। আর এবারের বিজয় দিবসেই তিন লাখ বাঙালি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেই ঐতিহাসিক বিজয়ের ক্ষন বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে সমবেত কণ্ঠে গেয়েছি আমাদের প্রানের জাতীয় সঙ্গীত , গড়েছি নতুন বিশ্ব রেকর্ড - অতিক্রম করেছি ভারতকে।

সকালে হেঁটে যাওয়ার কারনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছাতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। যাওয়ার পর পরই কোথা থেকে একখানা আইডি কার্ড ম্যানেজ হয়ে গেল , Fariha তাহার গেঞ্জি আমাকে দিয়ে দিলেন আর এরপর আমি কাজ খুঁজতে থাকলাম কি করা যায়। ছেলে সহযোদ্ধাদের উপর মাঝে মাঝে আসলেই রাগ হয়। এনারা এক একজন সব কাজ করে করে জ্বর বানায় ফেলছেন , আর মেয়ে হওয়ার কারনে আমি ফ্যামিলির বাধা পার হয়ে আসতে আসতেই শেষ। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের যে সমুদ্র ছিল তা সত্যি প্রমাণ করে বাঙালি জেগে আছে। বাঙালি জেগে থাকবে আজীবন। জেগে থাকবে পাঁচ লক্ষ মানুষের শপথ - "যারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করবে , আমরা তাদের বর্জন করব।"

আমরা ভলান্টিয়াররা দাঁড়িয়ে আছি , বাঁশের বেড়া ভেঙ্গে মানুষ ঢুকে যাচ্ছে ভিতরে। এত মানুষ , বিভিন্ন প্রবেশপথে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু বাঙালি। ছোট শিশু থেকে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধা মা সবার কণ্ঠে মুহুর্মুহু স্লোগান - জয় বাংলা। সামনে মঞ্চে কখনও চলছে কনসার্ট ফর ফ্রিডম , কখনও চলছে জাগরনের গান , কখনও চলছে স্লোগান। এইদিকে আমরা ভলান্টিয়াররা হিমশিম খাচ্ছি এই জনতার স্রোতকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে। বিকাল ৪ টা ১৫ মিনিটে দেখানো হল পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের উপর প্রামান্য অভিনয়। সেই দলিল সাক্ষর হয়ার সাথে সাথে সারা উদ্যান যেভাবে জয় বাংলা বলে চিৎকার করে উঠেছিল তাতে স্বাধীনতাবিরোধী যে কোন অপশক্তি কেঁপে উঠতে বাধ্য।

এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষন। বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিট। যে যেখানে আছি সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। গাইলাম আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত , অদ্ভুত মায়াভরা সেই গান -"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।" এরপর শপথ গ্রহণ - শপথ পাঠ করালেন মহান মুক্তিযুদ্ধের উপ- অধিনায়ক বীর উত্তম এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খোন্দকার। সত্যি এই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া আর শপথ গ্রহণের সময় চোখের কোণে নিজের অজান্তে অশ্রু জমা হচ্ছিল আর মনে হচ্ছিল , আমরা পেরেছি। আমরা আর কখনও হারব না। বাংলাদেশকে আর কেউ কখনও হারাতে পারবে না। বাংলাদেশ রক্তের দামে স্বাধীন হয়েছে , বাংলাদেশ অশ্রুর দামে স্বাধীন হয়েছে , বাংলাদেশ আন্দোলনের দামে রাজাকার কসাইমুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ জেগে আছে।

শপথ গ্রহনের পর পতাকা হস্তান্তর। একাত্তরের দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম শফিউল্লাহ এবং বীর উত্তম এ কে খোন্দকার পতাকা হস্তান্তর করলেন এই প্রজন্মের দুইজন বীরযোদ্ধা ইমরান ভাইয়া এবং বাধন ভাইয়ার কাছে। প্রতীকী অর্থে তাঁরা রক্তের দামে কেনা এই পতাকা হস্তান্তর করলেন ২০১৩ এর প্রজন্মের কাছেই। এই পতাকার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য আমাদের জেগে থাকতে হবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য প্রতি মুহূর্তে। এবারের বিজয় দিবস রাজাকারের ফাসির আনন্দ নিয়ে প্রথম বিজয় দিবস। এবারের বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিজয় দিবস। কারন সেই পরাজিত হায়েনাদের উপর প্রতিশোধ আমরা নিতে পেরেছি। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা মায়ের অশ্রুর বদলা আমরা নিতে পেরেছি। সময় এখন নতুন আগামীর পথযাত্রার।

সব দেশের সেরা দেশ - বাংলাদেশ , বাংলাদেশ।
সব গানের সেরা গান -স্লোগান , স্লোগান।
জামাত শিবিরের রাজনীতি , আইন করে বন্ধ কর।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা , হারিয়ে যেতে দেব না।
একাত্তরের হাতিয়ার , গর্জে উঠুক আরেকবার।
আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালবাসি।
জয় ... বাংলা...।

বিজয় আজ প্রজন্ম চত্বরের , বিজয় আজ শহীদজননীর , বিজয় আজ বাঙ্গালির...।

২১ফেব্রুয়ারি , ১৯৫২  - স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম হয়নি তখনও। পাকিস্তানিরা কেড়ে নিতে চেয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি বাঙ্গালির মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার , মা বলে ডাকার অধিকার। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠলো বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের আমতলায় সমবেত হল তারা। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারিতে পথে নেমে আসলো বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানেরা। মায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য , মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রাজপথে নামলো দামাল সন্তানেরা। এক একটা বাংলা অক্ষর যে এক একজন বাঙ্গালির জীবন। আন্দোলন ছড়িয়ে পরল দেশের প্রতি প্রান্তে। রাজপথে নামলো ছাত্র -জনতার মিছিল। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগানে মুখরিত বাংলাদেশ। পাকিস্তানি পুলিশ গুলি চালাল মিছিলের উপর। বাংলা মায়ের বুকে শেষ আশ্রয় নিলেন শহীদ রফিক -শফিক-বরকত -জব্বার। রক্তে প্লাবিত হল বাংলার মাটি। একসময় আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাঙালি পেল মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। আজ আমরা মাকে যে মা বলে ডাকি , সে অধিকারটাও রক্তের দামে আদায় করা।
 
৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৩ - যুদ্ধাপরাধীদের ফাসির দাবি জানিয়েছিলেন আম্মা জাহানারা ইমাম ১৯৯২ সালেই। গণআদালত গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাসির রায়ও দিয়েছিলেন। এজন্য তৎকালীন স্বাধীনতাবিরোধী সরকারের হাতে শহীদজননীকে সহ্য করতে হয়েছে অনেক নির্যাতন , পেতে হয়েছে দেশদ্রোহীর অপবাদ। অনেক বছর পরে হলেও যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শুরু হয়েছে  , ৪০০ এরও অধিক বাঙালি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কাদের কসাই এর ফাসি হলনা সেই বিচার প্রক্রিয়ায়। প্রতিবাদে ফুসে উঠলো বাংলার জনতা। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে আবার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার শপথ নিয়ে পথে নামলো তারা - জানিয়ে দিল -"এই পথে আজ জীবন দেব , রক্তের বদলা ফাসি নেব"। রক্ত , হ্যা অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে এই পথে। শহীদ রাজীব , দীপ , জগতজ্যোতি , জাফর মুন্সি , শান্ত - ত্রিশ লাখ শহীদের সাথে মিশে আছেন দূর আকাশের নক্ষত্রগুলোর মধ্যে। আর দেখছেন , তাদের রক্তদান সফল হয়েছে। কাদের কসাইয়ের ফাসির জন্য দশ মাস ধরে  আম্মা জাহানারা ইমামের সন্তানেরা মায়ের স্বপ্ন বুকে নিয়ে চালিয়েছে আন্দোলন। কত বাধা , কত আঘাত সবকিছুকে দূরে ঠেলে দিয়ে বাংলার আপামর জনতা ছুটে এসেছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে , একবার নয় বারবার। ফাসির রায় থেকে শুরু করে ফাসি -আন্দোলন করে আদায় করতে হয়েছে সবকিছুই। তারপরেও , শাহবাগ জেগে আছে -শাহবাগ ঘুমায় না।

সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

কোটি প্রান একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে নতুন সূর্য ওঠার এইত সময়

সেই ফেব্রুয়ারি থেকে আজ ডিসেম্বর ... যুগ যুগান্তর ধরে অক্ষয় থাকার মত একটা ইতিহাস । কাদের কসাইয়ের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে , এখন যে কোন দিন ফাঁসি ...। দশ মাসের আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। এখন অনুভূতিটা অনেকটা সেই সময়ের মত , ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে যখন একের পর এক স্বাধীন হচ্ছিল বাংলাদেশের এক একটি এলাকা, স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছিল গোটা জাতি , যে কোন সময় পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করবে ...... মুক্তিবাহিনী -মিত্রবাহিনী প্রবেশ করেছে ঢাকায় ...। এখন ঠিক সেই অনুভূতিটা মনে হচ্ছে অনুভব করতে পারছি। কাদের কসাইয়ের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে... যে কোন সময় ফাঁসি।।

বায়ান্ন দেখিনি , উনসত্তর দেখিনি , একাত্তর দেখিনি ... দেখেছি শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর। তাই হেলায় হারাতে পারিনি ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার এই দুর্লভ সুযোগটিকে ...। অনেক অপপ্রচার , প্রতি পদে পদে অনেক বাধা সব উপেক্ষা করে বারবার ছুটে গিয়েছি শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে। আজকে মনে হচ্ছে সেই সব অপমান , সব শাস্তি সবকিছুর বদলা নেয়া হয়ে গেছে ... আজকে মনে হচ্ছে শহীদ দীপ , রাজীব , জাফর মুন্সি , জগতজ্যোতি , শান্ত তো এই দিনগুলোর জন্যই জীবন দিয়েছিলেন। আজকে দূর আকাশের কোন নক্ষত্র থেকে মা জাহানারা ইমাম আমাদের দিকে চেয়ে আছেন আর হাসছেন তাঁর পাগল ছেলেমেয়েদের কাজ দেখে...।

রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

আলোকের পথে শুভযাত্রা ...।

বিজয়ের মাসে একের পর এক বিজয় সংবাদ...।রাজাকার কাদের কসাই এর মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে ... জলপাই রঙ ট্রাকে করে লাল কাপড়ে মোড়ানো এই মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো হয়েছে ...। লাল কাপড়ে মোড়া পরোয়ানা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে গেছেন ট্রাইব্যুনালের উপনিবন্ধক অরুণাভ চক্রবর্তী ।---তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের কাছেও অনুলিপি পাঠিয়েছেন। বাকি আনুষ্ঠানিকতা কারা কর্তৃপক্ষ করবে। এই সুখবর শোনার পর অন্তর থেকে আপনাআপনি বের হয়ে আসে বুকফাটা চিৎকার ... জয় বাংলা...।

নিয়ম অনুযায়ী,এখন কারা কর্তৃপক্ষ কাদের মোল্লার কাছে জানতে চাইবে সে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে কি না।ক্ষমা ভিক্ষা চাইলে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতাকে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যে আবেদন জানাতে হবে। তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এখন শুধু ফাসির অপেক্ষা...। দশ মাসের আন্দলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ...শুধু ফাসির অপেক্ষা...। যে কোন দিন এখন কার্যকর হবে কাদের কসাইয়ের ফাসি...।

প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন আর বীরাঙ্গনা মা মোমেনা বেগমের সাক্ষ্যেই মূলত রচনা হচ্ছে বাংলা মায়ের বিয়াল্লিশ বছরের কলঙ্কমুক্তির এই পথ ...। দুই বছরের ছোট ভাইকে আছড়ে মারা, দুই বোনকে জবাই, এক বোনকে ধর্ষণ, মাকে গুলি করে মারা- এতগুলো দৃশ্য দেখে নিজে ধর্ষিত হওয়ার পর মোমেনা বেগমের স্বাভাবিক থাকাটাই হতো অস্বাভাবিক।একাত্তরে একদিনে এতগুলো ঘটনার পর পাগলই হয়েছিলেন এই নারী। তবে সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে হাজির হয়েছিলেন তিনি।

চোখের সামনে মা-ভাই-বোনদের মৃত্যু দেখলেও সেদিন ধরে নেয়ার পর বাবা হযরত আলী লস্করের কোনো খবর আর পাননি মোমেনা। তাই সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো কাদের মোল্লার প্রতি মোমেনার প্রশ্ন ছিল- “আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই- আমার বাবা কোথায়?” বীরাঙ্গনা মা মোমেনা বেগম হয়ত জানতে পারবেন না কখনই তাঁর বাবা কোথায় ... কিন্তু সেই খুনির ফাসি তো দেখতে পারবেন... এই ফাসিটাই হল ২০১৩ এর প্রজন্মের পক্ষ থেকে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা -বীরাঙ্গনাদের প্রতি উপহার ...।

জয় বাংলা ... জয় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ...।

স্বপ্নের পথযাত্রা

স্বপ্নের সিঁড়ি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে আজ ... জলপাই রঙ ট্রাকে করে কাদের কসাই এর ফাঁসির রায় আপীল বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে গেছে আজ দুপুর ১২ টায়। জলপাই রঙ ট্রাকে করে একদিন এই পাকিস্তানিরা , রাজাকারেরা ভেঙ্গে তছনছ করেছিল বাঙ্গালির স্বপ্নের বাগান ... শিশু -কিশোর -যুবক -বৃদ্ধ কাউকে ছেড়ে দেয়নি এরা ... মা -বোনদের উপর অত্যাচার করেছে... কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে..। গুলিতে -বোমা -বেয়নেটে রক্তের সমুদ্র বইয়েছে সবুজ বাংলার বুকে...।

চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করেছে শহীদ মুনির চৌধুরী , শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ... আরও অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে ...। এই জলপাই রঙ ট্রাকে করে আজকে এল রাজাকার কাদের কসাই এর ফাসির পূর্ণাঙ্গ রায়। ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে গেছে রায় , এখন শুধু মৃত্যু পরোয়ানা জারির পালা... এরপরই কোন এক শুভ সকালে দেখব স্বাধীন বাংলার আকাশে নতুন সূর্য ... রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশের সূর্য ...।

যাক , অবশেষে আমরা পারলাম। সেই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ... স্লোগান , মিছিল , রাতভোর অবস্থান ... সবকিছু আজ মনে হচ্ছে সার্থক । অপেক্ষায় আছি কবে ফাসিটা কার্যকর হবে ...। গতকাল ফেসবুকেই দেখলাম যে কাদের কসাই এর ফাসির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ঐতিহাসিক ফাসির মঞ্চ ... সেই ফাসির মঞ্চ যেখানে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাসি দেয়া হয়েছিল , বালির বস্তা দিয়ে হচ্ছে ফাসির প্র্যাকটিস। সবকিছু নির্দেশ করছে , অচিরেই ফাসিতে ঝুলবে কাদের কসাই...।

কাদের কসাইয়ের ফাসি কার্যকরের মধ্যে দিয়ে ৪২ বছরের কলঙ্কমুক্তি হবে বাংলাদেশের ... এরপর পিছনের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে নতুন আগামীর দিকে। ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ বীরাঙ্গনা মা পাবেন ন্যায়বিচার ... স্বপ্ন পূরণ হবে শহীদজননীর ... স্বপ্ন পূরণ হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সন্তানহারা লক্ষ লক্ষ জননীর ... স্বপ্ন পূরণ হবে প্রজন্মযোদ্ধার রক্তের ... স্বপ্ন পূরণ হবে কলেজ পালিয়ে শাহবাগে ছুটে আসা কিশোর -কিশোরীর । সে শুভদিনের অপেক্ষায় এখন প্রতি মুহূর্ত...।

ভাবছি যে কয়েদি কসাই কাদেরের ফাসি কার্যকরের ভার পাবেন তিনি কত বড় ভাগ্যবান। যাই হোক এখন প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের ... কাদের কসাইয়ের কবর স্বাধীন বাংলার মাটিতে হবে না। আজকে একটা কথা বারবার মনে পড়ছে ... রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা- "যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তখনি সে / পথকুক্কুরের মত সঙ্কোচে সত্রাসে যাবে মিশে।" আসলেই, বাঙালি জেগে উঠেছিল দেখেই তো পাকিস্তানিরা বিতাড়িত হয়েছিল , আজ রাজাকারের ফাসিও হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে সেই জাগরনের কারনেই...।

জয় বাংলা ... জয় বাংলা... জয় বাংলা... কত মধুর না এই স্লোগানটা...।

শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

হাতে কোন সময় নাই , ডিসেম্বরে কাদের কসাইয়ের ফাসি কার্যকর চাই।

ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তেভেজা বাংলার মাটি ... রক্তের দাম দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ কে স্বাধীন করেছেন ... দুই লক্ষ মা -বোন হয়েছেন নির্যাতিতা ...। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে , বাবার সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করেছে পাকিস্তানি হায়েনা আর তাদের দোসর রাজাকার -আল বদরেরা। মায়ের কোল থেকে সদ্য জন্ম নেয়া শিশু সন্তানকে কেড়ে নিয়ে বেয়োনেটের আঘাতে রক্তাক্ত করেছে সদ্য জন্ম নেয়া প্রাণকে ... পবিত্র কুরআন ...পাঠরতা মহিলার কোল থেকে কুরআন শরীফ ফেলে দিয়ে হায়েনারা সেই মাকে ধর্ষণ করেছে , হত্যা করেছে। হিন্দু - মুসলিম - বৌদ্ধ -খ্রিষ্টান সব ধর্মের , কামার -কুমার -জেলে -চাষি -মজুর সব শ্রেণী পেশার মানুষের ভালোবাসার বাংলাদেশকে এরা রক্তাক্ত করেছে বোমা -গুলি -বেয়োনেট ... ধ্বংসযজ্ঞের সবরকম মারণাস্ত্রের আঘাতে ...।

এই হায়েনাদের হাত থেকে বাংলা মাকে রক্ষা করার জন্য হাসিমুখে নিজেদের সন্তানদের দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন বাংলার মায়েরা। বলেছেন, "যা তোকে দেশের জন্য কুরবানি করে দিলাম , যা তুই যুদ্ধেই যা।" ছেলের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছেন মা , ভাইয়ের জন্য অপেক্ষায় বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছে বোন , স্বামীর জন্য স্ত্রী ...। এদিকে তীরহারা ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে লড়ে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ঘরবাড়ির ঠিকানা নাই , দিনরাত্রি জানা নাই - যুদ্ধ , শুধুই যুদ্ধ ... দেশ মায়ের মুক্তির জন্য যুদ্ধ । নিশ্চিত ভবিষ্যৎ কে নিজ হাতে দূরে সরিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন শহীদ রুমী -আজাদের মত অনেক মুক্তিযোদ্ধা ... নববধূকে ঘরে রেখে মুক্তিযুদ্ধে ছুটে এসেছেন স্বামী...নিজের সর্বোচ্চ সাধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন বাংলার আপামর জনতা ...।

শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমি একবার দেখি , বারবার দেখি ... দেখি বাংলার মুখ

চেতনায় একাত্তর ... হৃদয়ে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ...। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে । আজকে মনে পরছে প্রজন্ম চত্বরের সেই আগুনঝরা দিনগুলোকে ... চারপাশে যেদিকে চোখ যায় শুধুই জনসমুদ্র ... সে জনসমুদ্রের মাঝে আমি চিনি না কাউকেই , কিন্তু সবাইকে মনে হচ্ছিল জন্ম -জন্মান্তরের আপন ... স্লোগান , মিছিল , শপথ , অশ্রুভেজা জাতীয় সঙ্গীত , বীর শ...হীদদের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা , লক্ষ লক্ষ মোমবাতির আলোয় আলোকিত শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর ... স্মৃতির পাতাতে অক্ষয় হয়ে থাকবে আজীবন ...। সেই প্রজন্ম চত্বর , জেগে ওঠার গণজাগরণ মঞ্চ ...।

Eshita মনে আছে সিস্টার আমাদের করা প্রথম ব্যানার টা যেদিন নিয়ে গিয়ে আটকে রাখলেন আর অভিভাবক ডাকলেন , সেদিনই আমরা দুইজন গিয়ে আবার কাপড় কিনলাম - আবার ব্যানার বানালাম মাত্র একদিনের মধ্যেই প্রজন্ম চত্বরে যাওয়ার জন্য ? মনে পড়ে আমাদের বানানো সায়েন্স ভিত্তিক স্লোগানগুলোর কথা ? সমাকলন , ব্যবকলন , আইনস্টাইনের সূত্র সব কিছুর রাজাকারের ফাসি সংস্করন বানানোর কথা ? আমার উপর তখন কি এসে ভর করেছিল জানতাম না , শুধু জানতাম যত বাধাই আসুক আমাকে প্রজন্ম চত্বরে যেতেই হবে । জানিস সেই ব্যানার টা এখনও আছে আমার কাছে । তোর স্মৃতি , আমার শাহবাগের স্মৃতি ...।

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

নতুন সূর্য ওঠার এইত সময় ...।

ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত আন্দোলন চলছে বাংলা মায়ের কলঙ্কমুক্তির দাবিতে ... আন্দোলন চলছে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে রাজাকারের ফাসির দাবিতে। বিজয়ের ধারাবাহিকতায় আরেকটি বিজয় আসলো আজ , কাদের কসাই এর ফাসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হল আপিল বিভাগ থেকে ফাসির রায় আসার আড়াই মাস পরে। বাংলা মাকে রাজাকারমুক্ত করার এই সংগ্রামের সূচনা মা জাহানারা ইমামের হাত ধরে ... এবার হয়ত মায়ের সেই বিশ্বাস আমরা রক্ষা করতে পারব ...। চারপাশে শুধু মৃত্যুর খবরের মধ্যে এই রায় প্রকাশ একটা শান্তির প্রলেপ ... একটা আশার বাণী ...।

পাঁচ ফেব্রুয়ারিতে কসাই এর হাতে বিজয় চিহ্ন মানতে না পেরে যে সংগ্রামের সূচনা তা আজ প্রায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা হোক রাজাকারের দম্ভকে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে কার্যকর চাই কাদের কসাইয়ের ফাঁসি। বিশ্ব দেখুক একাত্তরের স্মৃতি বহন করে প্রজন্ম চত্বরে জেগে থাকা বাঙ্গালির বিজয় ... দেখুক বাঙালি জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার হলেও মাথা নোয়াবার নয় ।বাঙালি যে জীবন দিয়ে হলেও দাবি আদায়ের জাতি...। শাহবাগ জেগে আছে , শাহবাগ ঘুমায় না। ফাসি কার্যকর হোক কসাইয়ের ... ন্যায়বিচার পাক ত্রিশ লাখ শহীদ , দুই লাখ বীরাঙ্গনা মা।

সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলাদেশ , অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে।

স্বপ্ন দেখি ... ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে দাঁড়িয়েও আমরা স্বপ্ন দেখি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ... যে বাংলাদেশে স্থান হবে না কোন রাজাকার - আলবদরের। ইস , পনেরই আগস্ট , ১৯৭৫ দিনটা যদি আসলেই একটা দুঃস্বপ্ন হত শুধু - যদি সত্যিকারেই এমন হত যে আমরা পুরো বাঙালি জাতি একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম আসলে ... বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন , তাজউদ্দিন আহমেদ বেঁচে আছেন , জাতীয় চার নেতা বেঁচে আছেন - কত সুন্দর ই না হত তাহলে ব্যাপারটা । তাহলে আর আমাদের দেখতে হত না রাজাকারের বিচারের জন্য গণআদালত গঠন করায় শহীদজননীকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেয়া , আমাদের দেখতে হত না রাজাকারদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা ... অনেক কিছুই দেখতে হত না - বাবা তার সন্তানদের আগলে রাখতেন দেশদ্রোহীদের হাত থেকে ...। যদি সেদিন ফারুক - রশিদ - মোশতাক - জিয়া - নূর - ডালিম -হুদারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করত , তাহলে আজকে হয়ত আমাদের দেখতে হত না মনির -নাহিদ দের লাশ , অন্তঃসত্ত্বা মায়ের গায়ে পেট্রোল বোমা ছোড়া হত না ... স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি দেশের প্রধান বিরোধী দল হতে পারত না ...। বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ করেছিলেন জামাত -শিবিরকে , স্বাধীন বাংলায় আর কখনও শুনতে হত না রাজাকারদের দম্ভভরা পদধ্বনি ...।

কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট দুঃস্বপ্ন নয় , সত্য। . স্বাধীনতা নামক লাল -সবুজ পাখিগুলো নীল আকাশের বুকে উড়তে উড়তে কোথায় হারিয়ে যায় ... শেষ পাখিটা চলে যাবার আগে বলে যায় , কেউ নেই আর... বঙ্গবন্ধু নেই , তাজউদ্দিন আহমেদ নেই , জাতীয় চার নেতার কেউ বেঁচে নেই , মেজর খালেদ মোশাররফ নেই ... মুক্তিযোদ্ধারা , বীরাঙ্গনারা বেঁচে আছেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে , বেঁচে আছেন জীবনযুদ্ধের মধ্যে । শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন বাঙ্গালির অন্তরে ... স্মৃতিসৌধে ... শহীদ মিনারে। দেশের হালটা ধরার জন্য নেই সত্যিকার অর্থে কেউ ...। মা জাহানারা ইমাম ছিলেন , চলে গেছেন এদেশের মানুষের প্রতি শেষ চিঠি রেখে - " এই আন্দোলনকে সুদূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। আমি জানি জনগণের চেয়ে বিশ্বস্ত কেউ নেই । জয় আমাদের হবেই...।" এরপর বাংলাদেশ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে ঝরে গেছে অনেকগুলো পাতা ... ক্ষমতার পালাবদল , রক্তের নেশায় উন্মাতাল রাজনীতি আর তার বলি সাধারন মানুষ ... এসবের মধ্যে দিয়ে কেটে গেছে বিয়াল্লিশ টি বছর ...। বিয়াল্লিশটি বছর নীরবতার , সহ্য করার - এর মধ্যে ১৯৯২ সাল একটা আলোর ঝলক , একটা সাক্ষী যে বাংলাদেশ বেঁচে আছে...।।

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাংলাদেশের ছবি এঁকে দিও মাগো , আমার দুটি চোখে ...।

রক্তের সমুদ্রের মাঝখান থেকে একদিন পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় সবুজ একটি বদ্বীপ। সেদিন রাত্রিশেষে ভোরের সূর্যটা ওঠে আরও বেশি লাল হয়ে - ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত হয়ে , দুই লাখ বীরাঙ্গনা মাএর সাক্ষী হয়ে। রাতের কালিমা মুছে অবুঝ শিশুর মত হেসেছিল রাঙ্গা সকাল , আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম হায়েনার আক্রমন থেকে - প্রাণের স্বদেশটাকে ফিরে পেয়েছিলাম একান্ত আপন করে। এই বাংলাদেশ , যার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা । এই আমাদের বাংলাদেশ ... যার প্রতিটা ধূলিকণায় মিশে আছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত , বীরাঙ্গনা মায়ের কান্না...। এই আমার বাংলাদেশ...।।